নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেসবুকে রহস্য-২

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৫

আমার মৃত স্ত্রী আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দেয়া শুরু করেছিল মারা যাবার ঠিক দুই মাস পর থেকে। ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ থেকে।

-এতো রাতে ফেসবুকে কী কর?

তখন রাত একটা। কারেন্ট চলে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো কাঁচের জানালা আর পর্দার ফাঁক গলে ঘরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছিল। একটু পর পর মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জন শুনা যাচ্ছিল। এমন বৃষ্টি- বাদলার সময় শ্রবণী খুব ভয় পেতো। আর, আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজত এমন ভাবে যে এতেই হয়তো বাইরের পৃথিবীর সব ঝড়-তুফান থেমে যাবে। তার কথা তাই খুব মনে পড়ছিল। আর নিজেকে খুব একা লাগছিল। বিছানা থেকে নেমে মোমবাতি জ্বালিয়ে আবার বিছানায় গেলাম। ঘুম আসতে চাইছে না দেখে বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করতেই তার মেসেজ! শুরুতে খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তাইতো! এতো রাতে ফেসবুকে কী করছি আমি? ব্যাপারটা তার খুব অপছন্দ ছিল। একবার ট্রেনিং এর জন্য ঢাকায় গিয়ে হোটেলে উঠেছিলাম। রাতে ফেসবুকে ঢুকে সামাজিকতা করছি। আর তখনই সে মেসেজ দিয়েছিল। এতো রাতে ফেসবুকে কী কর? কার সাথে চ্যাট কর? আমি তৎক্ষণাৎ উত্তরে বলেছিলাম, তুমিই বা কী কর এতো রাতে? সেদিন এ কথা বলে পাল্টা আক্রমণ করেছিলাম। আজ কী করব? গা শিরশির করে উঠল আমার। আমি লগ আউট হয়ে গেলাম চট করে।

একুট পর ভয় কেটে গেলে ভাবতে থাকলাম। আর কে কে তার ফেসবুক পাসওয়ার্ড জানতে পারে? তার মা নয়তো? উনি জানলেও আমার সাথে এমন মজা কেন করতে যাবেন? নাহ! মা হবেন না। তার কোন বন্ধু-বান্ধব? তার খুব কাছের বান্ধবীদের মধ্যে আছে রীতা আর সুপ্তি। দুজনের সাথেই আমার সম্পর্কটা বেশ ভাল ছিল। এখন অবশ্য কোন যোগাযোগ নাই। শ্রাবণী মারা যাবার পর থেকে তারাও আমার কোন খোঁজ-খবর নেয় না। তবে তারা এমন কাজ করবে বলেও মনে হচ্ছে না।

তবে কি শ্রাবণীর প্রথম হাসব্যান্ড এমন করছে? জ্বি। আমি শ্রাবণীর দ্বিতীয় হাসব্যান্ড। শ্রাবণীর সাথে আমার যখন পরিচয় হয় তখনও অবশ্য তার বিয়ে হয় নি। সে ছিল আমার বন্ধু হারাধনের পিসাতো বোন। প্রথম দেখাতেই তাকে আমার ভাল লেগেছিল। কিন্তু কথাটা ঠিক ঐ কৈশোরে তাকে জানানোর যথেষ্ট সাহস ছিল না। তাই তার সাথে আমার পরিচয় হল; দু-একদিন দেখা হল; কিছুক্ষণ কথা হল। তারপর এক সময় বিদায় না নিয়েই চলে গেল সে। মন থেকেও দূর হয়ে গেল। কিন্তু অনেক দিন পর যখন সে মেডিকেল কলেজে পড়ছে, আর আমি একটা সরকারী চাকরীতে সবে ঢুকেছি তখন ইশ্বরের কৃপায় আবার তার সাথে আবার দেখা হল। ফেসবুকের পরিচালকরাই এক্ষেত্রে ইশ্বরের ভুমিকা পালন করলেন। আমার টাইমলাইনে হঠাৎ করেই পিপল ইউ মে নোউ শিরোনামে শ্রাবণীর ছবি আর ফেসবুক পেজ আমার সামনে ঝুলিয়ে দিলেন। মনে পড়ে গেল আমার পুরনো সেই ভাল লাগার কথা। হৃদয়ের গহীন গোপন কোন কুয়োতে যে এই মেয়েটির প্রতি আমার সেই ভালবাসা তখনো অটুট ছিল তা আমার একেবারেই জানা ছিল না। তাই অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠাতে বিন্দুমাত্র দেরী করলাম না। এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক তখনই নোটিফিকেশন আসল, শ্রাবণী দত্ত অ্যাকসেপ্টেড ইউর ফ্র্যান্ড রিকোয়্যাস্ট।

মেসেজ দিলাম। সেও রিপ্লাই দিল। জানাল, আমি নাকি তার ছেলেবেলার ফার্স্ট ক্র্যাশ ছিলাম। আমিও একই কথার পুনরাবৃত্তি করলাম। সে আবার জানাল, যদি ধর্ম এক থাকতো তবে সে আমাকে তখনই ব্যাপরটা জানাতো। চেপে যেতো না। আমি বললাম, ধর্মের ভিন্নতাতে তো আমার কোন সমস্যা নাই। সে বলল, তার সমস্যা আছে। আফটার অল, তার বাবা মাকে সে কষ্ট দিতে পারবে না।

তারপর থেকে নিয়ম করে তার সাথে চ্যাট হত। সে খুব সুন্দর গান গাইতে জানতো। মেসেঞ্জারেই আমাকে গান শুনাতো সে। আর আমি তাকে আমার লেখা গল্প পড়ে শুনাতাম। দুজনের চিন্তা ধারায় অনেক মিল আমাকে খুব অবাক করতো আর তাকে পাবার ইচ্ছাটা, নিজের মতো করে পাবার ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো। এমনই এক দিন সে জানাল তার একটা বিয়ের প্রপোজাল এসেছে। বোধ হয় বিয়ে হয়ে যাবে। সে আমার কাছে ক্ষমা চাইল। বলল, আমি যাতে কোন কষ্ট না পাই। আমি আমার চোখ মুছতে মুছতে জানালাম, নাহ। আমি মোটেও কষ্ট পাব না। ইনফ্যাক্ট তোমার সাথে আমার কোন ইমোশন্যাল বন্ডেজ আমি কখনো ফিল করিনি। আমার ফিলিং অব ইনফেচুয়েশনের পুরোটাই ছিল অভিনয়। তাকে জানালাম, গল্পের থিম খোঁজার জন্যই তার এতো কাছে যাওয়া। আমার কাছে একেকটা মানুষ মানে একেকটা গল্প। এভাবেই আমি অনেক মানুষের সংস্পর্ষে যাই কেবল গল্প খোঁজার জন্য। সে অবাক হল কি না জানি না। তবে কোন কথা বলল না। কলটা কেটে দিল।

তারপর দু'বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। আমি তখনও বিয়ে করি নি। কেন করি নি- আমি জানি না। তবে সেই হারাধনের কাছে শ্রাবণীর ডিভোর্সের খবর শুনে শ্রাবণীর ফেসবুকে টেক্স্ট দিয়ে বললাম, তোমার জন্য অপেক্ষায় আমি এখনো একা। জানি না এটা মিথ্যে কি না। তবে শ্রাবণীকে পাবার জন্য আমার আবার খুব যে ইচ্ছে হচ্ছিল, এটা সত্যি। ইশ্বরের কৃপায় আবার শ্রাবণীর সাথে যোগাযোগ শুরু হল। এবং অবশেষে একদিন ধর্ম-সমাজ সব কিছু উপেক্ষা করে শ্রাবণী আমার ঘরণী হতে রাজী হল।

কারো কারো জীবনে বোধ করি সুখের সময় খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। আমিও সেই অভাগাদের মধ্যেই পড়ি। শ্রাবণী রোড এক্সিডেন্টে মারা গেল। আমি দুঃখ সওয়ার জন্য বেঁচে গেলাম। বেঁচে রইলাম।

আর আমার দুঃখটাকে আবার বাড়িয়ে দেয়ার জন্যই বোধহয় শ্রাবণীর ফেসবুক আইডি থেকে আমার কাছে মেসেজ দেয়া হল। আমি জানি, এটা শ্রাবণীর আগের সেই হাসব্যান্ডটার কান্ড হবে। যদিও শ্রাবণীকে কোন দিন তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি, আমি জানতাম তার নাম কৌশিক সেন। সেও শ্রাবনীর মতোই একজন ডাক্তার ছিল। বস্তুত সরকারী ডাক্তার দেখেই বোধহয় শ্রাবণীর বাবা-মা তার সাথে শ্রাবণীর বিয়ে দিয়েছিলেন। ডিভোর্সের পরপরই আমি শ্রাবণীকে বিয়ে করে ফেলেছিলাম বলেই বোধ হয় সে আমাকে তার শত্রু ভাবা শুরু করেছিল। এতোদিন শ্রাবণী বেঁচেছিল বলে আমার সামনে আসে নি। আজ সে একা পেয়ে আমার কষ্ট বাড়িয়ে দেয়ার জন্য এমন কাজ করছে । আমি দেখে নেবো। আমি তাকে ঠিক দেখে নেবো।

পরদিন সকালে উঠেই ডাক্তার সাহেবের খোঁজ নেয়া শুরু করলাম। খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হল না। কারণ সিলেটের ডা. শিবলি আমার বন্ধু। তাকে জিজ্ঞেস করেই খোঁজ পেয়ে গেলাম ভদ্রলোকের। ভদ্রলোক বলছি একারণেই যে এখনও আমি নিশ্চিত না ঘটনাটা উনি ঘটিয়েছেন কি না। উনার ঠিকানা ও সেল নাম্বারটাও সংগ্রহ করে নিলাম।

জীবনে প্রথমবারের মতো তাকে কল দিলাম। হ্যালো। আমি আবীর বলছি। ঢাকা থেকে। নিজের পরিচয় দিয়ে খুব মনোযোগের সাথে তার প্রতিক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করলাম। কোন রকমের আলাদা কোন শব্দ বা কানে লাগার মতো কোন প্রতিক্রিয়া শুনতে পেলাম না। আমরা শ্রাবণীর দুই স্বামী জীবনে প্রথম কথা বললাম। শ্রাবণীর মৃত্যুর খবর যে তার কাছে সময়মতোই পৌছেছে সেটাও জানা হল। ফোন রাখার আগে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি শ্রাবণীর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানেন কি না। তিনি কোন প্রশ্ন না করেই বললেন, আগে জানতেন, এখন ভুলে গেছেন। হাহ! ভুলে গেছো না ছাই! আসলে ঠিকই মনে আছে তোমার। দাঁড়াও। একটা প্রমান পেয়ে যাই। তারপর বুঝাবো মজা!

পরদিন রাতে আমি নিজেই মেসেজ দিলাম, শ্রবণীকে। কই তুমি সোনা বউ? তোমাকে ছাড়া ভাল্লাগছে না।
এ কাজটা আমি খুব সচেতন ভাবে করলাম। কেন করলাম? যেন ঐ ডাক্তার ব্যাটা তার পরিকল্পনায় হোঁচট খায়। ব্যাটাকে একটা শিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত আসলে শান্তি পাচ্ছিলাম না।

যাই হোক। শ্রাবণীর পরবর্তী মেসেজ আসল দুই সপ্তাহ পর।
‘তুমি কোথায়? আমার একা একা ভাল্লাগছে না।’
এটাও গভীর রাতে পাঠানো। সময় দেখলাম ১২.২০ এ.এম। এবার কিন্তু ভয় পেলাম না। একটু গবেষণা শুরু করলাম। আমাদের কনভার্সেশন ঘেঁটে ঘেঁটে দেখলাম, এ মেসেজটাও আগেই পাঠানো। শ্রাবণী অনেক আগে কী একটা ওকেশনে জানি মেসেজটা পাঠিয়েছিল। তার মানে হল, যে মেসেজ পাঠাচ্ছে সে শ্রাবণীর আগের মেসেজটাই পাঠাচ্ছে যাতে বানানে কোন হেরফের থেকে আমি বুঝতে না পারি যে এটা শ্রাবণী না, অন্য কেউ! আরে ব্যাটা, এটা আমি। এটা আমি, যে ছোটবেলা থেকেই গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে পড়তে বড় হয়েছি। নিজেকে কিশোর মুসা রবিনের কিশোর ভেবে ভেবে বড় হয়েছি। আমাকে তুই ফাঁকি দিবি কিভাবে? হাহাহা। ভেবেছিস আমি বুঝবো না! কি যে বোকা তুই! তুই ডাক্তার হলি কিভাবে তাই ভাবছি!

পরের মেসেজটা পেয়েছিলাম আরো মাস খানেক পর।
‘এখানে আমার খুব ঠান্ডা লাগছে, আবীর।’
আমি তাড়াতাড়ি আমাদের কনভার্সেশন ঘাঁটতে শুরু করলাম। একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। নাহ! কোথাও পেলাম না। এবারই প্রথম নতুন কিছু লেখা হল। তবে কি এটা ডক্টর সেন না? আমি ফেসবুকে ব্যাপারটা জানিয়ে মেইল দিলাম। জানতে চাইলাম, এ মেসেজটা কোন জায়গা থেকে এসেছে। তারা উত্তর দিতে তেমন একটা দেরী করল না। জানাল এটা ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে দেয়া হয়েছে। সবাই বুঝি মেসেজ দিতে রাতের বেলাটাকেই বেছে নেয়! ফেসবুক কর্তৃপক্ষও তাই করল! আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম ঝরে পড়ল। কারণ ডক্টর সেন সিলেটে থাকেন।

‘হু দা হেল আর ইউ?’
এই প্রথম শ্রাবণীর মেসেজের উত্তর দিলাম আমি।
‘হু দা হেল আর ইউ? হোয়াই ডু ইউ প্ল্যায়িং সাচ অ্যা রুড গেইম? হোয়াই?’
রাগ আমাকে সে রাতে আর ঘুমুতে দিল না। তারপর বেশ কদিন আবার বেশ ভালই কাটল। কাজের চাপে মেসেজের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আবার যখন মেসেজ আসল, তাতে লেখা-
‘হু দা হেল আর ইউ? হোয়াই ডু ইউ প্ল্যায়িং সাচ অ্যা রুড গেইম? হোয়াই?’
আমার কথারই পুনরাবৃত্তি। কথার পুনারবৃত্তি শ্রাবণীর একটা প্রিয় খেলা ছিল। প্রায়ই আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিয়ে আমার মেজাজ খারাপ করে দিত। আর আমার সে রাগ দেখে শ্রাবণী খিল খিল করে হাসতে থাকতো।

আমি আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। এটা কি তবে শ্রাবণীর আত্মা? বিধাতার এ রাজ্যে তো কত অসম্ভব কিছুই হয়। এটাও হয়তো তেমন কিছুই। আমি এরপর থেকে নিয়ম করে ফেসবুক আইডিতে লগ ইন করতাম কেবল শ্রাবণীর কোন মেসেজ এসেছে কি না দেখতে। শ্রাবণীকে ছাড়া যে আমার এক মুহুর্তও চলতো না একসময়। কাজের ফাঁকে, দূরে কোথাও কোন কাজে গেলে মনের ভেতর সবসময় থাকতো শ্রাবণী। পনেরো বিশ মিনিট পর পর শ্রাবণীকে কল দিতাম। কিছু হয়ে গেল না তো ওর? ঠিক আছে তো ও? তার কণ্ঠ শুনে তবেই স্থির হতাম। আর এখন...এখন কি না তাকে ছাড়া, তার কণ্ঠ না শুনেই কাটাতে হচ্ছে মাসের পর মাস।

আরেকদিন মেসেজ পেলাম-
‘আবীর, এই আবীর... আমাকে তুমি এখন আর ভালবাসনা, তাই না?’
আমি রেগে গিয়ে ফিরতি মেসেজ দিলাম-
‘কিভাবে এটা ভাবলে তুমি? তুমি কি করছ আমার সাথে? এভাবে মেসেজ দিচ্ছ কেন? কেন? আমার সাথে এটা কী হচ্ছে?’

দু’দিন পর তার উত্তর আসল,
‘আমি জানি না কী হচ্ছে...
আমি জানি না কী হচ্ছে...
আমি জানি না আমার সাথে এটা কী হচ্ছে..’

এখন কিন্তু শ্রাবণী নিজে নিজেই লিখছে। আগের মেসেজগুলো ঘেঁটে দেখলাম এমন কোন মেসেজ সে আগে আমাকে দেয়নি। অবিকল শ্রাবণীর লেখার ভঙ্গি। ইংরেজী অক্ষরে বানানগুলোও সে এভাবেই করতো। এটা যদি শ্রাবণীর ভুত না হয়, আর কে হতে পারে? তার লেখার এমন ভঙ্গি আরেকজন মানুষের খুব ভাল করে জানার কথা। সে ডক্টর সেন। ডক্টর সেনকে সারাক্ষণ কড়া পাহাড়ায় রাখার জন্য আমি একটা ফন্দি আঁটলাম। বেড়ানোর নাম করে চলে গেলাম শ্রীমঙ্গল। কোন কিছু না বলে হুট করেই ডক্টর সেনের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম কয়েকদিন থাকার জন্য। ডক্টর সেন খুব অমায়িক মানুষ। অবাক হলেও তার গেস্ট রুমে আমার থাকার জায়গা করে দিলেন। আমি আর ডক্টর সেন- শ্রাবণীর দুই এক্স হাসব্যান্ড- এখন আমি নিজেকেও তো শ্রাবণীর এক্স-হাসব্যান্ড হিসেবে পরিচয় দিতে পারি, তাই না?- এক সাথে এক বাড়ীতে থাকা শুরু করলাম। উঠেছিলাম দুদিনের কথা বলে, কিন্তু শ্রাবণীর কোন মেসেজ আসছে না দেখে আরো কয়েকদিন থাকতে হল।

তার মেসেজ আসল, শ্রীমঙ্গলে থাকার পঞ্চম দিন।
‘আমাকে ফেলে খুব একা থাকা হচ্ছে, না? আর ঐ খারাপ মানুষটার সাথে থাকছো কিভাবে? তুমি জান না, লোকটা আমাকে কতোটাই না কষ্ট দিয়েছিল। কতোটাই না কষ্ট দিয়েছিল। কতোটাই না কষ্ট দিয়েছিল।’
খেয়াল করলাম মেসেজটার ডেলিভারী টাইম হল, গতকাল বিকেল পাঁচটা। আমার স্পষ্ট খেয়াল আছে গতকাল ঠিক ঐ সময় ডক্টর সেন পুকুরে মাছ ধরছিলেন। আর আমি পাশে বসে দেখছিলাম। না, তবে এই কালপ্রিটটা ডক্টর সেন না। এটা ডক্টর সেন না! আমি নিশ্চিত হলাম। তবে কে হতে পারে লোকটা? আমি যে এখানে এসে ডক্টর সেনের বাড়িতে আছি এটা তো আর কারো জানার কথাও না। ডক্টর সেনের প্রতি যে ঘৃণা মেসেজটাতে প্রকাশ পেয়েছে এটা তো শ্রাবণী ছাড়া আর কারো পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব না। আমি শ্রাবণীকে কখনো ডক্টর সেন সম্পর্কে জিজ্ঞেস না করলেও শ্রাবণীকে প্রথম দিকে প্রায়ই সেনের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করতে দেখেছি। তবে কি শ্রাবণীর আত্মা আমার সাথে সত্যি সত্যি যোগাযোগ করছে? আমার মাথা আর কাজ করছিল না। আমি ডক্টর সেনের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকা পৌছালাম পরের দিন।

তারপরের সময়টা আমার যে কেমন কাটছিল তা বলে বুঝাতে পারব না। সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে বসে থাকা। ফেসবুকে লগ ইন করে শ্রাবণীর মেসেজের অপেক্ষা করতে থাকা। অফিস কামাই করা, অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া- এসব ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। তখন আবার মেসেজ আসল-
‘আবীর আমাকে বাঁচাও। আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম। একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দিয়েছে। মাথায় চোট পেয়েছি। খুব ব্যাথা করছে। রক্ত বেরুচ্ছে। লোকগুলা সব কুত্তার বাচ্চা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে! তুমি কোথায় আবীর? আমাকে এক্ষনি হাসপাতালে নিতে হবে। আবীর প্লিজ আবীর। আমাকে বাাঁচাও...’

শ্রাবণী ঠিক এভাবেই মারা গিয়েছিল। তাকে সাথে সাথে যদি হাসপাতালে নেয়া যেত তাহলে হয়তো এটা ঘটতো না। কুত্তার বাচ্চাগুলা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্যু-দৃশ্য দেখেছে। একটা কুত্তা আবার মোবাইলে দৃশ্যটা ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করেছিল। দৃশ্যটা কল্পনা করলেও আমার সারা শরীর হিম হয়ে যায়। নাহ! নাহ শ্রাবণী আমি আর কিছুতেই তোমার মেসেজগুলো সহ্য করতে পারব না। তোমাকে আমি মেরে ফেলব। আজকেই মেরে ফেলব।

না, নিজের হাতে আমি কাজটি করতে পারব না। কোনভাবেই পারব না। একবার ওর অ্যাকাউন্টে ঢুকে চেষ্টাও করলাম তা ডিঅ্যাক্টিভেটেড করতে। কিন্তু নিজের হাতে নিজের প্রিয় মানুষকে খুন করা আসলেই অনেক কঠিন। তাই আমি নিজে এটা করতে পারব না। মরে গেলেও না। কয়েকদিন আগে ইন্টারনেটে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। মৃত কাউকে মেমোরিয়েলাইজ করার আর্টিকেল। ফেসবুকে নাকি কেউ মারা গেলে তার আইডিকে মেমোরিয়েলাইজ করার জন্য আবেদন করা যায়। একবার মেমোরিয়েলাইজড করা হলে ওই আইডিটা আর সচল থাকে না। আমি তাই ফেসবুকের সাহায্য নিলাম। ফেসবুকে সাহায্য চেয়ে মেইল করলাম। বিদায় শ্রাবণী। বিদায়।
*****************************************************************
আবীরের মুখে এই ভৌতিক গল্পটি শোনার পর কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। সত্য মিথ্যা কিছ্ইু বুঝতে পারছি না। আবীরের মুখ থমথমে। চোখ তার, হাতে থাকা নতুন কেনা স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোনের দিকে। তাতে কিছু একটা লিখছে সে। সোফা থেকে উঠে আবীরের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আবীর টের পেল বলে মনে হল না। আবীর বলে ডাকলাম। কোন সাড়া নেই। তারপর মোবাইলের দিক তাকিয়ে দেখি সে টাইপ করছে-
[email protected]
পাসওয়ার্ড দিল তারপর। লেখা ভেসে আসল- দ্যা ইমেল অ্যাড্রেস ইউ হ্যাভ এন্টার্ড ডাজন্ট ম্যাচ আ্যনি অ্যাকাউন্ট। আবীর পড়ল, তারপর আবার লিখল,
[email protected]
আবীরকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আবীর, কী করছ? এই আবীর! আবীর কোন সাড়া দিল না।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:০২

বিনিদ্র বলেছেন: গাঁজাখুরী গল্প। আর বাক্য গঠণে অনেক ভুল।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭

কয়েস সামী বলেছেন: বাক্যের ভুলগুলো দেখিয়ে দিলে ঠিক করে নিতাম। গল্প তো গাঁজাখুরী হয়ই যদি না বুঝেন।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

সভ্য বলেছেন: ঘটনা কতটুকু সত্য, তা বুঝতে পারছি না, এমন ও হতে পারে বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন, তবে যেটাই হউক, লিখনী বেশ ভালো লেগেছে, শুভ কামনায়।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭

কয়েস সামী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৫

শায়মা বলেছেন: ভয়ংকর গল্প!:(


কিন্তু অনেক ভালো লেগেছে।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপি।

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১৬

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: ভালো লাগল ।
অনেক ভাল লিখেছেন ।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আবার অাসবেন।

৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০১

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ভালো লাগলো সুলেখক। অনেক।

আমার শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন। সবসময়। অনেক ভালো।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৪

কয়েস সামী বলেছেন: মাত্র ভাবছিলাম অাপনি অনেক দিন আমার ব্লগে আসেন না। কি আশ্চর্য!

৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৩

রাজুমেহদী বলেছেন: গল্পটা সুন্দর তবে কষ্টের কাহিনী সত্যি হলে কষ্টের পরিমাণ অনেক বেসি

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৫

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য!

৭| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩০

পুলহ বলেছেন: অনেকদিন পর বোধহয় একটা ভৌতিক কাহিনী পড়লাম, আবেশটা খুব ভালো এনেছেন। এই দুপুরবেলাতেও কিঞ্চিত ভয় ভয় লাগছিলো ... গল্পে কি হতে পারে সেটা চিন্তা করে ভয় আর কি!
শুভকামনা।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শেষটুকু বুঝাতে পারলাম কি না জানি না।

৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৫

অন্তু নীল বলেছেন: বেশ বেশ.................।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৫৫

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.