নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি- ৯ম পর্ব

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৩৬


১২.
-আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই, আপনার কি সময় হবে?
-তোমার জন্যই তো আমার সকল সময়, জয়ী। তোমার যতো খুশী প্রশ্ন করতে পার।
-আচ্ছা আবীর ভাইয়া, ব্যাপারটা কি ঠিক হল?
-কোন ব্যাপার জয়ী?
-এই যে আপনি আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিলেন!
-দেখো জয়ী, তুমি ভুল বুঝছো। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে- এ তিন কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তার ভাগ্য নামক খাতায় লিখে রেখেছেন। কোথাও তোমার বিয়ে লেখা থাকলে, সেখানে বিয়ে হবেই । কেউ হাজার চেষ্টা করলেও তা ভাঙতে পারবে না। যেখানে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সেখানে আসলে তোমার বিয়ে হবার কথা না। তাই বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।
-আপনি জানেন, আমি অনন্তকে কী পরমিান ভালবেসে ফেলেছিলাম? সেও আমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।
-বাহ! বাহ! বলিহারি জয়ী! বলিহারি! আশীর্বাদ-টাশির্বাদ কিচ্ছু হয় নি, আর প্রেম শুরু করে দিলে তার সাথে? বেশ ভাল। বেশ ভাল।
-আমার হবু জামাইয়ের সাথে আমার যা খুশি তাই করবো। তাতে আপনার কী? আপনার কী শুনি? এই যে দেখেন, এটা কি? এটা একটা মোবাইল ফোন।স্যামসাঙ গ্যালাক্সি, হু! স্যামসাঙ গ্যালক্সি! এটা সে গিফট করেছিল আমায়। এই যে আমার পরনের ড্রেসটা, আনার কলি, এটাও সে আমাকে উপহার দিয়েছিল। কতো ভালবাসা থাকলে বিয়ের আগেই এমন উপহার দেয়া যায় আপনিই বলেন?
-জয়ী. তুমি এতো নিচে নেমে গেলে জয়ী ? এমন কখনো ভাবি নি তোমায়! উপহার দিয়ে তুমি ভালবাসা বিচার কর? তুমি এমন হতে পারো না। না, এটা তুমি না। তুমি অন্য কেউ। তুমি অন্য কেউ।
-ফাজলামি করেন আমার সাথে? ফাজলামি? আমি অন্য কেউ হতে যাব কেন? আমি জয়ী। এই যে দেখেন আমিই জয়ী। এই তুই আমার দিকে তাকাবি না? ভাল করে তাকা আমার দিকে। মাটির দিকে না তাকিয়ে আমার মুখের দিকে তাকা। তুই আমার বিয়ে ভেঙেছিস। তোকে শাস্তি পেতেই হবে আজ!
আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। ধীরে ধীরে জয়ীর চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কী বিভৎস দেখাচ্ছে তাকে! আরে! এ তো জয়ী না! এ যে একটা ডাইনী! বিকট দর্শন এক ডাইনী ! ডাইনী আমার দিকে তেড়ে আসছে। আমি দৌড় লাগালাম। প্রাণপন দৌড়। পেছনে ডাইনীটাও দোৗড়াচ্ছে। আরো জোরে দৌড়াতে হবে। আরো জোরে। ডাইনীটা কাছে চলে আসছে। আমার সামনের রাস্তাটা চার দিকে চলে গেছে এখন। এ রাস্তাতো আমি চিনি না। এ আমি কোন এলাকায় এসে পৌছালাম? আমি থমকে দাড়ালাম। কোন দিকে যাব এখন? কোন দিকে গেলে ডাইনীটা আমাকে পাবে না? ডাইনিটা চিৎকার করতে করতে আরো কাছে চলে এসেছে। আমি তবে ডান দিকেই যাই। কিন্তু এ কী ঘটছে এসব! আমার পা আটকে গেছে! আমার পায়ের তলায় এতো আঠা আসল কোথেকে? আমি এক চুলও নড়তে পারছি না। ওদিকে ডাইনীটা পৌছে গেল বলে! আমার বুক কাঁপছে। আমি চিৎকার করতে চাচ্ছি। গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না। ডাইনীটা চলে এল বলে! আমার দম বন্ধ লাগছে। আমার দম বন্ধ লাগছে। আমার দম বন্ধ লাগছে...

হঠাৎ চোখ খুলে দেখি আমি আমার ঘরে, আমার বিছানায়। টের পেলাম, ঘামে সারা শরীর আমার ভিজে গেছে। কী ভয়াবহ স্বপ্ন ছিল রে বাবা! এমন ভয়ানক স্বপ্ন এর আগে দেখছি বলে মনে পড়ে না। জয়ীকে নিয়ে এর আগেও স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু ওগুলোর সবই ছিল রোমান্টিক ধরণের। আজ আমি এ কী দেখলাম!

ও। আজ তো ১৬ তারিখ। আজকেই জয়ীর আশীর্বাদ। তাই আজ হাসাপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সারা দিন ঘুমাবো। প্রয়োজনে ট্রিপটিন খেয়ে ঘুমাবো। কিন্তু রাতে স্যার জানালেন, ছুটি হবে না। হাসাপাতালে সময়মতো যেতে হবে। বিছানা ছেড়ে উঠে তৈরী হওয়া শুরু করলাম। এখনো হাতে এক ঘন্টা সময় আছে।

মানুষের চেহারা আমার মনে থাকে না । এক- দুবার দেখেছি এমন কারো আবার দেখা হলে পরিচয় না দেয়া পর্যন্ত আমি তাকে চিনতে পারি না। কিন্তু এখন যে রোগীটা চেম্বারে ঢুকেছে, তাকে চিনতে আমার মোটেও অসুবিধা হয় নি। সেদিন নুসরাতের সামনে যে আমার নামে রিপোর্ট করার হুমকি দিয়েছিল লোকটা সেই সাংবাদিক। সৃষ্টিকর্তার কাজকর্ম দেখলে মাঝে মাঝে আমি খুব অবাক হই। এই লোকটা কি সেদিন আমাকে হুমকি দেয়ার সময় ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল খুব তাড়াতাড়ি তাকেই আবার রোগী হয়ে আমার কাছে আসতে হবে? আমার সাহায্য চাইতে হবে? না চেনার ভান করে তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম। দেখলাম, লোকটার ডান গালে কানের কাছাকাছি বেশ বড় রকমের একটা সিস্ট হয়েছে। ব্যথায় মরে যাচ্ছে লোকটা। এখনই অপারেশন করে ওটা কেটে ফেলে দিতে পারলে ব্যথা কমে যাবে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে রাজী কি না। লোকটার আসলে এ মুহুর্তে রাজী না হয়ে উপায়ও নাই।

সার্জারীর ডাক্তার না হলেও এমন ছোটখাটো সিস্ট কাটার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তাই তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে দিলাম। প্রথমে ভাবলাম, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া না দিয়েই অপারেশন শুরু করবো। তাহলে লোকটার খুব যন্ত্রণা হবে। যে লোকটা সেদিন আমাকে এতোটা অপমান করল, তার প্রতিশোধ কিছুটা হলেও নেয়া যাবে এতে। প্রতিশোধ! শব্দটা শুনলেই শরীর ও মন কেমন জানি উত্তেজিত হয়ে যায়। প্রাচীণ গ্রীকরা প্রতিশোধ নেয়াটাকে আইনি বিচার হিসেবে দেখতো। অ্যান আই ফর অ্যান আই, অ্যা টুথ ফর অ্যা টুথ। নাহ! আমি তো গ্রীক না, তার উপর আমি একজন ডাক্তার। প্রতিশোধ নেয়াটা আমাদের মেডিকেল এথিকস এর সাথে একেবারে যায় না। তাই সাংবাদিকটাকে বিছানায় শুইয়ে প্রথমেই গালে লোকাল অ্যানেস্থিসিয়া দিলাম। জায়গাটা অবশ হয়ে যাক। আমি এই ফাঁকে আমার যন্ত্রপাতি রেডি করি।

-ডাক্তার সাহেব, আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন?
সেদিনকার সেই জাঁদরেল কণ্ঠ আজ কতোই না মধুর!
-জ্বি সাংবাদিক সাহেব, আমি আপনাকে প্রথমেই চিনতে পেরেছি। আপনার আমাকে নিয়ে একচা রিপোর্ট লেখার কথা ছিল।
-আমি কিন্তু রিপোর্টটা লিখি নি।
-রিপোর্টটা লিখে ফেললেও আপনাকে ভয় পেতে হতো না মি...
-সফিক। আমার নাম সফিক।
-মি. সফিক। আমরা ডাক্তার মানুষ। কিছু এথিকস আছে যেগুলো আমাদের মেনে চলতে হয়। এগুলো না মানলে আমরা কখনো ডাক্তার হতে পারতাম না। বুঝলেন। আপনি নির্ভয় থাকুন। কথা বলার দরকার নাই। একটু পরে গাল ভারি হয়ে যাবে।

আমি অপারেশনের জন্য তৈরী হলাম। সিস্ট অপারেশন খুব শক্ত কোন জিনিস না। কিন্তু গালের এমন এক জায়গায় সিস্টটা হয়েছে যে একটু অসাবধানি হলেই ফেসিয়াল নার্ভটা কেটে যাবে।
-মি. সফিক। আপনার সিস্টটা এমন জায়গায় হয়েছে যে আমি চাইলেই এখন আপনার ফেসিয়াল নার্ভটা কেটে দিতে পারি অনায়াসে।
সফিক আমার দিকে ভয়ার্ত চোখে চাইলেন।
তার ভয়টা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়া যাক।
-ফেসিয়াল নার্ভ কেটে দিলে কী হবে জানেন? আপনার মুখ বাাঁকা হয়ে যাবে আজীবনের জন্য। যদি আমি এখন তাই করি, আপনি হয়তো আমার নামে একটা রিপোর্ট লিখে দিতে পারেন আপনার পত্রিকায়। অথবা আমাকে জেল জরিমানাও করতে পারেন। কিন্তু যাই করেন না কেন আপনার মুখটা কিন্তু বাঁকাই থেকে যাবে। হা হা হা।
লোকটার চোখ থেকে ভয় ঠিকরে বেরুচ্ছে যেন। হা হা হা।
-না সফিক সাহেব । বললাম না, ভয় পেতে হবে না। আমি এমনভাবে আপনার মুখের সিস্ট কেটে দেব যে আপনি টেরই পাবেন না।
সিস্ট কাটা শেষ হল। সৃষ্টি করার সময় মানুষের চোখকে দেখার ক্ষমতার পাশাপাশি ভাষা প্রকাশের ক্ষমতাটাও দিয়ে দেয়া হয়েছে। সফিক সাহেবের যে চোখে একটু আগে ভয় প্রকাশ পাচ্ছিল, সেই চোখেই এখন অফুরান কৃতজ্ঞতা!

সফিক সাহেব বের হবার পরই রিয়াদের কল।
-উই ডিড ইট আবীর। উই ডিড ইট!
রিয়াদের উচ্ছল কণ্ঠ শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
-কী করেছি আমরা, রিয়াদ? কী করেছি?
-জয়ীর বিয়ে ভেঙে দিয়েছি!
কথাটা শুনে আমার চরম পুলক যাবার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে। কিন্তু খারাপ লাগার তো কথা না।
-তুই জানলি কী করে?
-রাজের সাথে দেখা হয়েছিল। আশীর্বাদের কথা জিজ্ঞেস করলাম। বলল, ছেলে পক্ষ আসে নি । ছেলে নাকি মোটর সাইকেল আ্যাক্সিডেন্ট করেছে। বলেছে পরে আসবে।
-সাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করলে তো না আসারই কথা।
-ধুর! কাকে কি বলি? আরে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে কি না কে জানে। দেখ গে, ছেলে দিব্যি সুস্থ আছে। এমন কথা বিয়ে ভাঙার জন্যই বলেছে ওরা। দেখিস ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমিয়ে দেবে। ত্ইু তো কখনো কোন বিয়ে ডিল করিস নি। তোর এসব জানার কথা না।
আমি কলটি কেটে দিলাম। নিজেকেই যেন চিনতে পারছি না আমি। এই কিছুদিন আগেও মনে প্রাণে চেয়েছি জয়ীর বিয়েটা ভেঙে যাক। আর যখন সত্যি সত্যি বিয়ে ভেঙে গেল তখনই মনটা খারাপ হয়ে গেল।

আসলে আমি বোধ হয় চেয়েছিলাম বিয়েটা আপনাআপনি ভেঙে যাক। বিয়েটা আমার কারণে ভাঙুক এটা চাই নি। আমার কারণে জয়ীর কোন কষ্ট হোক আমি সেটা কখনো চাই না। (চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:১১

মোঃ জাফর আলম ভুইয়া বলেছেন: খুব ভাল লাগল

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:১০

কয়েস সামী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইটি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.