নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি- একাদশ পর্ব

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৪৩


কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি- ১১ পর্ব

১৩.
এবারের বৈঠক রিয়াদের বাসায়। আমরা পঞ্চরত্ন যথারীতি উপস্থিত। রিয়াদ তার অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে বিছানায় বসে। রিয়াদের পাশে মাসুদ। সঞ্জয় আর আমি রিয়াদের বিছানার সামনে রাখা সোফায়। আর মাহমুদ বসেছে মেঝেতে।
রিয়াদ তার আজকের মাস্টার প্ল্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে।
-আমাদের সবার আগে যা করতে হবে তা হল জয়ীর ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড খুঁজে বের করা।
-এটা একেবারে অসম্ভব। আরেকজনের পাসওয়ার্ড তুই জানবি কিভাবে? মাহমুদ প্রশ্ন করল।
-ওয়েইট অ্যান্ড সি, ডিয়ার মাহমুদ। শুরুতেই হতাশ হয়ে গেলে চলবে না আমাদের।
-আমি লিপির পাসওয়ার্ড জানার অনেক ট্রাই করসিলাম। তাকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করসিলাম। সে দিতে চায় নি। তারপর তাকে আত্মহত্যার হুমকি পর্যন্ত দিসিলাম। সে আমাকে ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে আমাকে আত্মহত্যা থেকে আটকে রাখসিল। অনেক দিন পর, আই মিন, লিপির বিয়ের পর চেষ্টা করেও যখন সাইন ইন করতে পারি নি, তখন ব্যাপরটা ধরতে পারসিলাম।
মাহমুদের গল্প শুনে রিয়াদ বলল, সবাই আইনস্টাইন হতে পারে না। তুই লিপির ধোঁকা ধরতে পেরেছিলি লিপির বিয়ের পর। আর আমি জলিকে হাতে নাতে ধরেছি প্রেমের ছয় মাস বয়সেই। এইখানেই তোর আর আমার মেধার পার্থক্য। সবাই সব হতে পারে না। তোরা আপাততঃ চুপ কর। আমাকে কাজ করতে দে।
আমরা সবাই চুপ হলাম।
রিয়াদ তার বক্তব্য চালিয়ে গেল।
-প্রিয় কমরেড সকলে, আজকের এ যুদ্ধ প্রতিশোধের যুদ্ধ। আজকের যুদ্ধ পৃথিবীর সকল নারীদের বিরুদ্ধে পুরুষের যুদ্ধ। আজকের যুদ্ধ জলিকে...ওহ স্যরি... জয়ীকে শিক্ষা দেয়ার যুদ্ধ। জয়ী আমাদের আবীরকে প্রেমে ফেলে চুপচাপ অন্য কোথাও বিয়ে করে চলে যাচ্ছে। এ হতে পারে না। এ হতে দেয়া যায় না। যুগ যুগ ধরে এভাবেই জয়ীরা আবীরদের ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। এখন তাদের বুঝিয়ে দেয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে আমাদের মেধাকে কাজে লাগানোর। নয়তো জয়ীর মতো মেয়েরা এভাবেই আমাদের আজীবন ঠকিয়ে যাবে। হে কমরেডগণ, আমি আমাদের আজকের এ অপারেশনের নাম দিতে চাই- অপারেশন রিভেঞ্জ। কারো কোন দ্বিমত থাকলে হাত তুলো।
আমরা কেউ হাত তুললাম না।
-তোমরা সবাই আমার পাশে চলে আসো। আমার কাজ দেখে শিখে রাখো। ভবিষ্যতে অন্যদের সাহায্য করতে পারবে।
আমরা সবাই রিয়াদের বিছানায় উঠে বসলাম। সবার চোখ এখন রিয়াদের ল্যাপটপের স্ক্রীনে।
-এই দেখো।
আমরা দেখতে থাকলাম। রিয়াদ গুগলে ‘কমন পাওয়ার্ড অব ফেসবুক’ লিখে সার্চ দিল।
স্ক্রীনে ভেসে এল-
Password
Password1
123456
Iloveyou
Monkey
Name of a loved one
এমন আরো অন্তত বিশটা পাসওয়ার্ড।
-এখন কী করবি? জয়ীর লগ ইন আইডি জানিস? মাসুদ প্রশ্ন করল।
-জানি না। তবে জেনে নিতে কতক্ষণ? রিয়াদকে আজ যেন আরো বেশি কনফিডেন্ট লাগছে।
রিয়াদ এখন পাভেল রহমান আইডি দিয়ে লগইন করল ফেসবুকে। তারপর জয়ীর আইডিতে ক্লিক করল। এরপর অ্যাবাউটে ক্লিক করে ইমেইল আইডি খুঁজলো। না। নেই।
-এখন? তোমার সব জারিজুরি শেষ রিয়াদ। হাহাহা। সঞ্জয় টিপ্পনী কাটল।
-রিয়াদ তোমার মতো ওতো সহজে হার মানে না সঞ্জয়। দ্যাখ কী করি। এই দেখো এইটা কী?
-জয়ীর নাম। সঞ্জয় উত্তর দিলে রিয়াদ বলল, নামের উপর ক্লিক করছি আমি । দ্যাখ, কি হলো?
- এতো জয়ীর ফেসবুক ওয়াল।
-উপরে ইউআরএল দ্যাখ। এখানে মাঝামাঝি জায়গাতে অনেকগুলো সংখ্যা দেখতে পাচ্ছিস?
-হুম।
-তার মানে সে কোন ফেসবুক লগইন আইডি সেট করে নি। এই ডিজিটগুলোই তার লগইন আইডি।
-বুঝলাম। এখন কী করবি?
-দেখতে থাক।
আমরা দেখতে থাকলাম, রিয়াদ এবার সেই আইডিটি কপি করে একে একে সবগুলো কমন পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে কিছুক্ষণ বিরতি দিল। না হলে নাকি সাময়িকভাবে ফেসবুক আইডিটা লকড হয়ে যাবে। রিয়াদের ব্যর্থ চেষ্টা শেষে সঞ্জয় হাহাহা করে হেসে উঠল।
-এই বুঝি তোর টেকনোলজিক্যাল বুদ্ধি!
-আরে বাবা! সবুর কর। রিয়াদ এতো সহজে হাল ছাড়ে না।
এবার সে জয়ীর পুরো নাম দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করল। আবার আগের মতো লেখা ভেসে এল-
the password you have entered is incorrect. Forgotten password?
রিয়াদ ফরগটেন পাসওয়ার্ডে ক্লিক করলে রিসেট পাসওয়ার্ড পেইজ এল। সেখানে লেখা-
How would you like to reset your password? Send sms to this number:
নীচে একটা মোবাইল নাম্বার দেয়া। যার শেষ দুইটা ডিজিট দেখা যাচ্ছে। বাকিগুলো স্টার চিহ্ণের মাঝে লুকানো।
-আবীর, দেখতো জয়ীর মোবাইল নাম্বারের শেষ দুটো ডিজিট কী এটা?
-না।
-তাহলে রাজের নাম্বারটা চ্যাক করতো।
-হ্যা। এটা রাজের মোবাইল নাম্বারের শেষ ডিজিট।
-তাহলে তো হয়েই গেল!
-কী হল? কিছুই তো হয় নি। সঞ্জয় আবার টিপ্পনী কাটল।
-হয়ে গেছে, মানে অর্ধেক কাজ আমাদের শেষ। এখন আমি কন্টিনিউ এ ক্লিক করলেই নতুন পাসওয়ার্ড চলে যাবে রাজের নাম্বারে।
-তাহলে তো পাসওয়ার্ড রাজের কাছে পৌছালো। ওটা আমাদের হাতে পৌছাবে কী করে। মাসুদ জিজ্ঞেস করল।
-ওটা আমাদের হাতে পৌছে দেবে সঞ্জয়।
-আমি? সঞ্জয় আঁতকে উঠল।
-হ্যা। কাজটা সঞ্জয়কেই করতে হবে। কারণ আমাদের মধ্যে সঞ্জয়ের সাথেই রাজের ভাল সম্পর্ক। সঞ্জয় এখন রাজের সাথে দেখা করবে। কথায় কথায় ওর কাছ থেকে একটা কল করার জন্য মোবাইলটা হতে নেবে। তারপর আমাক মিসকল দিয়ে জানাবে মোবাইলটা ওর হাতে পৌছেছে। তখনই আমি কন্টিনিউ এ ক্লিক করব। যে মেসেজটা যাবে ওটা সঞ্জয় ফরওয়ার্ড করে দেবে আমার কাছে। তারপর মেসেজটা ডিলিট করে দিয়ে রাজের মোবাইল রাজকে ফেরত দেবে।
-নারে বাবা! এমন কাজ আমি পারব না। সঞ্জয় তার অক্ষমতা প্রকাশ করল।
-পারতে তোকে হবেই সঞ্জয়। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়। রিয়াদ জোর দিয়ে কথাগুলো বলল।
-না আমি পারব না। পরে ধরা খাব, আর রাজ আমাকে জেলে পুরে দিবে।
সঞ্জয়ের ভয় সেই জেলকেই।
-তোকে কাজটা করতেই হবে। নয়তো তোর বউকে বলে দিব।
রিয়াদ জানে সঞ্জয় জেলের চেয়েও ভয় পায় তার বউকে।
-কি বলবি তুই? কী বলবি?
-বলে দেব তোর ফেসবুক প্রোফাইলে এখনো নিজেকে সিঙ্গেল রেখেছিস। এই দ্যাখ।
আমরা সকলে দেখলাম আর হেসে উঠলাম। মাহমুদ তো হাসতে হাসতে বিছানা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেল। সঞ্জয় মুখ কাচুমাচু করে বলল, রিয়াদ, আমি তো ভুলে গেছি রিয়াদ। ওটা ঠিক করে দিয়ে দে না। আমি তো ফেসবুকে ওতো এক্সপার্ট না।
-দিব। তবে তার আগে কাজাট তোকে করতে হবে এক্ষুনি। যা। বের হয়ে যা তাড়াতাড়ি।
সঞ্জয় বের হয়ে গেল।
-সঞ্জয় গিয়ে পৌছাক। আমরা এখন নতুন একটা আইডি খুলবো। নাম দেব বাসন্তি দেবী।
-কেন? মাহমুদ জিজ্ঞেস করল।
-অনন্ত পাভেলের ফ্র্যান্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করতে কোন আগ্রহ বোধ করবে না। আগ্রহ বোধ করবে একটা মেয়ের কাছ থেকে রিকোয়েস্ট পেলে।
-ঠিক ঠিক। মেয়েদের ফ্রান্ড রিকোয়েস্ট পেলেই আমি সাথে সাথে এক্সেপ্ট করি।
মাহমুদ না বুঝেই তার দুর্বলতার কথা স্বীকার করল।
আমরা দেখতে পেলাম মি. অনন্তও বাসন্তি দেবীর রিকোয়েস্ট মিনিট খানেকের মধ্যে এক্সেপ্ট করে ফেলল। মাসুদ বলে উঠল, অ্যাক্সিডেন্ট করে বিছানায় শুয়ে আছে তো। তাই ডাক্তার বাবু এখন ফেসবুকেই সময় কাটাচ্ছেন।
এরই মধ্যে রাজের মোবাইল থেকেও জয়ীর পাসকোড চলে এসেছে রিয়াদের মোবাইলে।
রিয়াদ এখন জয়ীর ফেসবুক আইডিতে লগ ইন করল।
-যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। রাজ বাসায় পৌছার আগেই সবকিছু করতে হবে।
এ কথা বলতে বলতে রিয়াদ তার মোবাইল থেকে পাভেল রহমানের আইডিতে প্রবেশ করল। তারপর ল্যাপটপে জয়ীর আইডি থেকে জয়ীর সাথে পাভেলের আপত্তিকর কিছু মেসেজ লেনদেন করল। তারপর সেই মেসেজগুলোর স্ক্রীনশট নিয়ে সেভ করে রাখল।
সঞ্জয় তার কাজ শেষে যখন এসে পৌছাল ততোক্ষণে বাসন্তি দেবীর সাথে ডা. অনন্তের চ্যাট শুরু হয়ে গেছে।
বাসন্তি- আমি আপনার বিয়ে নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
অনন্ত-কী কথা।
বাসন্তি- আপনি যাকে বিয়ে করছেন তাকে নিয়ে কিছু কথা।
অনন্ত- কী?
বাসন্তি-জয়ী আরেকটা ছেলেকে ভালবাসে। আপনাকে আগে একটা মেসেজ দিয়ে জানিয়েছিলাম।
অনন্ত-আমি পাই নি।
বাসন্তি- না পেলেও ক্ষতি নেই। এখন তো আপনার সাথে কথাই হচ্ছে।
অনন্ত- বলুন।
বাসন্তি-ওদের খুব গভীর সম্পর্ক। যদিও ছেলেটা মুসলমান।
অনন্ত- আমি বিশ্বাস করছি না। শত্রুতা বশতঃ বিয়ে ভাঙার জন্য আপনার মতো মিথ্যে কথাবার্তা অনেকেই বলে থাকে।
বাসন্তি- আমার কাছে প্রমাণ আছে।
অনন্ত- কী প্রমাণ?
বাসন্তি- আমি এখন ওই ছেলের সাথে জয়ীর চ্যাটিং এর কিছু স্ক্রীণ শট পাঠাবো। ওখানে আপনাকে নিয়েও কথা আছে।
অনন্ত- আপনি সেই স্ক্রীণ শট কোথায় পেলেন?
বাসন্তি-আমি নিজেই সেই ছেলে। পাভেল রহমান।
অনন্ত- আপনি তো বাসন্তি। পাভেল না।
বাসন্তি- আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য আজকেই এই ফেক আইডিটা তৈরী করেছি।
অনন্ত- আচ্ছা পাঠান।
রিয়াদ তাড়াতাড়ি স্ক্রীন শটগুলো পাঠিয়ে লগ আউট হয়ে গেল।
আমি ছাড়া বাকি সবাই হাততালি দিয়ে উঠল।
-এইবার! এইবার বল্ সবাই, বিয়ে ভেঙে যাবে কি না?
-ভাঙবে!
-ভাঙবে!
-ভাঙবে!
সবাই চিৎকার দিয়ে উঠল।
-দোস্ত, আমার প্রোফাইলটা এবার একটু এডিট করে দে না। আমার বউয়ের চোখে পড়লে তো বারোটা বেজে যাবে!
সঞ্জয়ের ভয় দেখে আমরা সবাই হেসে উঠলাম আরেকবার। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.