নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডেথ সার্টিফিকেট

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৫


-আমাকে একটা ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া যাবে?
ডাক্তার হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়াটা আমার কাজের একটা অংশ। তাই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, কার মৃত্যুর সার্টিফিকেট?
-আমার।
মেয়েটির উত্তর শুনে একটু নড়ে চড়ে বসলাম। পাগল নাকি মেয়েটি? নিজের মৃত্যুর সনদপত্র নিতে এসেছে!
বললাম, বসুন। ঘটনা কী, খুলে বলুন।
-ঘটনা খুলে বলতে পারব না। তাড়াতাড়ি করুন। আমার হাতে সময় নেই।
-তাড়াতাড়ি করলেও তো আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে অাপনাকে। কে মারা গেল? কিভাবে মারা গেল? চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট সাথে এনেছেন? এসব দেখে যাচাই করে তারপর আমরা সার্টিফিকেট লিখে দেই।
মেয়েটি ধমকের সুরে বলে উঠল, বললাম না, আমি মারা গেছি।
এতোক্ষণে মেয়েটির দিকে ভাল করে তাকালাম। হালকা গোলাপী রঙের জামা, দুহাত ভর্তি রেশমী চুড়ি, খোলা চুলে মেয়েটিকে অসম্ভব রূপবতী লাগছিল। এমন রূপবতী মেয়েদের একটু আধটু পাগলামী রোগ থাকেই। তাই মেয়েটির সাথে খুব সতর্কতার সাথে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
মেয়েটি আমার মনের কথা বুঝে ফেলল কি না জানি না। আমাকে সতর্ক হবার কোন সুযোগ না দিয়ে হাতে রাখা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ছোট্ট অথচ ভয়াল দর্শন রিভলবার বের করে আমার চোখ বরাবর তাক করে ধরে বলল,
-একদম চেঁচামেচি করবেন না। চুপচাপ ডেথ সার্টিফেকেটটা লিখে দিয়ে আমাকে বিনা রক্তপাতে বিদায় নিতে সাহায্য করবেন আশা করি।
মেয়েটির কম্পমান গলা শুনে মনে হল সে যথেষ্ট উত্তেজনার মধ্যে আছে। পিস্তল তাক করে ধরে রাখা হাতের কাঁপুনিও আমার নজর এড়াল না। বুঝলাম মেয়েটি এমন অবস্থায় যে কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই অগত্যা আমার প্রেসক্রিপশন প্যাডটি হাতে নিলাম।
-ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে হলে তো আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আপনাকে।
-প্রশ্ন করুন।
-নাম কি আপনার?
-সূচনা দেবী।
-সুন্দর নাম।
-বেশি কথা না বলে সার্টিফিকেট লিখুন।
বুঝলাম মেয়েটি কঠিন চরিত্রের।
-বয়স?
-২৩।
-বাবার নাম?
-কালিপদ দেব।
-স্বামীর নাম।
-আমার মাথায় কি সিঁদুর দেখতে পাচ্ছেন?
-ও। স্যরি। ঠিকানা?
-কাঠেরপুল, সূত্রাপুর, ঢাকা।
-কিভাবে মারা গেলেন? কী লিখব?
-লিখুন যা খুশি। আমার একটা ডেথ সার্টিফিকেট হলেই হল। না, দাঁড়ান। লিখুন, আত্মহত্যা।
সবকিছু লেখা শেষে মেয়েটিকে বললাম, এই নিন। কিন্তু একটা কথা। আপনি তো মারা যান নি। তাহলে এটা কেন করছেন?
মেয়েটা তীর্যক অথচ শীতল চোখে আমার দিকে তাকাল। রিভলবারটা এখনও তার হাতে ধরা।
-না। মানে, জানার ইচ্ছা হচ্ছে। তাই জিজ্ঞেস করছি। আপনার বলার সমস্যা থাকলে বলতে হবে না।
মনে হয় কাজ হল। মেয়েটা রিভলবারটি ব্যাগের ভিতর ঢোকাল। তারপর বলল, এক গ্লাস জল দেন আগে।
পাশে রাখা জার থেকে জল ঢেলে গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম।
এক ঢোক জল নিয়ে সে বলল, এ সার্টিফিকেটটা সুমন্তকে পাঠাব। বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে আরেক জনের সাথে। কিন্তু সুমন্ত হঠাৎ করে খবর পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে।
-সুমন্ত কে? আমি প্রশ্ন করলাম।
-আমরা এক সাথে পড়তাম। সে আমাকে ভালবাসতো।
-আপনি বাসতেন না?
-আমিও বাসতাম। কিন্তু কী একটা কারণে জানি ও রাগ করে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। মাঝখানে এক বছর আমার সাথে কোন যোগাযোগ করল না। তারপর আমার বিয়ে ঠিক হল। আর সুমন্ত কি না তখনই ফিরে এল।
-আপনার যে বিয়ে ঠিক সেটা বললেই হয়।
-বলেছি। কিন্তু সে কিছুতেই মানতে পারছে না ব্যাপারটা। মেয়েদের মতো কান্নাকাটি শুরু করেছে। আমি কিছুতেই তাকে বুঝাতে পারছি না।
-তার সাথে যোগাযোগ না করলেই তো হয়।
-তা তো করতেই পারি। কিন্তু আমিও যে ওকে বড্ড ভালবাসি। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আসলেই সে খুব কষ্ট পাবে।
-তাহলে বিয়েটা ভেঙে দিন। কাজ সহজ।
-না। সেটাও পারছি না। বাবা-মার বয়স হয়ে গেছে। এখন এ পর্যায়ে বিয়ে ভাঙার বিষয়টা কিছুতেই তারা মানতে পারবেন না। বাবার একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আবার যদি কিছু হয়ে যায়।
-এ তো দেখি খুব জটিল অবস্থা।
-হ্যা বড্ড্ জটিল। তাই এ কাজ করছি। মোবাইল বন্ধ করে আমার বান্ধবীকে দিয়ে আমার মারা যাবার ব্যাপরটি জানাবো আর সাথে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে এই সার্টিফিকেটটি পাঠিয়ে দিব। আমার মৃত্যু সংবাদ শুনলে আর সেই সাথে প্রমাণ পেলে সে নিশ্চয়ই আর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। ধীরে ধীরে আমার কথা ভুলে যাবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে।
কথা শেষ করেই মেয়েটি যেমন আচমকা এসেছিল তেমন করে বিদায় না নিয়েই চলে গেল।

আমি ভাবতে বসলাম। কী বিচিত্র এই পৃথিবী, কী বিচিত্র মানুষের চিন্তাধারা। যাই হোক, যে যেমনই হোক আমি নিজে ঠিক থাকলেই হল। যদিও জানি আজ খুব গুরুতর একটা অন্যায় করা হল। তবু স্বান্ত¦না এই যে, আমি এই অনৈতিক কাজটা ইচ্ছে করে করি নি। করতে বাধ্য হয়েছি কেবল।
আমার ঠিক উপরে ঝুলিয়ে রাখা সিসি ক্যামেরটার দিকে চোখ গেল। বিপদে এই সিসি ক্যামেরাটা আমাকে রক্ষা করতে পারবে ভেবে নিশ্চিন্ত হলাম।
মেয়েটির বিস্তারিত খোঁজ খবর নিতে হবে, এটা মাথায় নিয়ে সে রাতের মতো চ্যাম্বার লাগিয়ে বাসায় ফিরলাম।

পরে অবশ্য আর ভাবনামতো মেয়েটির খবর নিতে পারলাম না। কারণ ট্রান্সফার জনিত কারণে এর পরের সপ্তাহেই আমাকে খুলনা চলে যেতে হয়েছিল।

খুলনা পৌছার কয়েক দিন পরেই আমাকে আরেকটা ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে হয়েছিল। সেটা অবশ্য মিথ্যে ছিল না। ছেলের বাবা যথাযথ কাগজপত্র নিয়েই এসেছিলেন সার্টিফিকেটটি লিখে নিতে। তার ছেলের নামে নাকি কোন একটা ব্যাংকে ডিপিএস ছিল। ওটার টাকা তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল সার্টিফিকেটের। ছেলেটা আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছিল আর তার নাম ছিল সুমন্ত দেব। সুমন্ত নামটা আমার খুব পরিচিত পরিচিত লেগেছিল। তাই বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার ছেলে কেন আত্মহত্যা করল।
ছেলেটির বাবা চোখের জল ফেলতে ফেলতে উত্তর দিয়েছিলেন, তার সুইসাইড নোট দেখে জানতে পারি, সূচনা নামের কোন একটা মেয়েকে সুমন্ত খুব ভালবাসতো। মেয়েটা মারা যাওয়ায় নাকি এ জীবন যাপন করার কোন উদ্দেশ্য সে খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই আমাদের সবাইকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে সুমন্ত চলে গেল।
আমি হতবিহবল হয়ে ফ্যালফ্যাল করে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তাকে এটা জানাবার সাহস হল না যে, সূচনাকে আমি চিনি। সূচনার মিথ্যে সার্টিফিকেটটা আমার হাতেই লেখা।
ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে বাবা চলে গেলেন। আরো অনেক ঘটনার ভিড়ে আমিও সুমন্তের ট্রাজিক সেই ঘটনা ভুলে গেলাম।

নাহ! পুরোপুরি ভুলতে পেরেছিলাম কি? ভুললে তো আর ট্রেনে আমার ঠিক সামনে বসা সূচনাকে চিনতে পারতাম না। সূচনাও আামাকে চিনতে ভুল করল না। পাশে বসা ওর হাসব্যান্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। উনি পেশায় আমার মতো ডাক্তার। উনার কোলে তাদের একমাত্র মেয়ে নীড় যেন একেবারে মায়ের চেহারা পেয়েছে। গল্প করতে করতে আমরা এগুতে থাকলাম। খুব ইচ্ছে করছিল সুমন্তের প্রসঙ্গ টানি। কিন্তু পাশে ওর হাসব্যান্ড থাকায় ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখছিলাম।

কোন একটা স্টেশনে ট্রেন থামলে যখন সূচনার হাসব্যান্ড নীড়কে নিয়ে ট্রেন থেকে নামলেন, তখন সূচনা নিজেই সুমন্তের প্রসঙ্গ তুলল। প্রায় ফিসফিস করে সে বলল, ডাক্তার সাহেব, আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দিব তা বুঝতে পারছি না। সেই সার্টিফিকেটটা টনিকের মতো কাজ করেছিল। এরপর সুমন্ত আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার কোন চেষ্টা করে নি। আপনার কাছে আমি চির কুতজ্ঞ।

সূচনার হাসিখুশি সংসার দেখে আগে থেকেই বুকের ভেতর কষ্ট দানা বাঁধছিল। সূচনার এসব কথা শুনে চোখের কোনায় জল জমে উঠল। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে অন্যমনষ্ক হবার ভান করে সূচনার থেকে চোখের জল আড়াল করতে সচেষ্ট হলাম।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

জিসান অাহমেদ বলেছেন: স্যার, এটা কি ফিকশনাল নাকি নন-ফিকশনাল ?

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৩

কয়েস সামী বলেছেন: এটা একটা ফিকশনাল স্টোরি, স্যার। কেমন হয়েছে জানালে কৃতার্থ হবো।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:০৮

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: এক কথায় অসাধারন।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৪

কয়েস সামী বলেছেন: অনেত অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:৫৮

ইমরান নিলয় বলেছেন: সুন্দর হইসে। আমি আপনার প্রথম লাইন ধার নিতে পারি।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৪

কয়েস সামী বলেছেন: অবশ্যই নিতে পারেন। ধার না। একেবারে স্বত্ব ত্যাগ করে দিয়ে দিলাম!

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৩

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল লেগেছে। আপনার পাঠক বাড়লো একজন B-)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৮

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ। বইমেলায় অনিন্দ্য প্রকাশের স্টলে থাকবো। আইসেন।

৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৯

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: আগামী কাল যাওয়া হবে কিংবা আগামী বুধবার।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৯

কয়েস সামী বলেছেন: পারলে একটা বই কিনবেন। দাম বেশি না। ১০০ টাকা হতে পারে। আমি আগামী শুক্রবার আসবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.