নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস-ওগো বিদেশিনী (পর্ব- ১)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫০



মেয়েটিকে দেখে শাওনের শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম ঝরে পড়া শুরু হল। দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে যাবে অবস্থা হল। মেয়েটি যে এভাবে চলে আসবে এটা শাওন ঘুণাক্ষরেও ভাবে নি। না হলে সে চরম আবেগে কখনোই বলে বসতো না, তুমি চলে আসো। আমরা দুজন এখানে সুখের সংসার পাতবো। অতি চালাকের গলায় দড়ি, আর অতি আবেগীর মাথায় বাড়ি।
বিদেশীনি আইসে গো..., বিদেশিনী আইসে!
কাজের বুয়া জরিনার কণ্ঠে এমন চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে বের হয়ে এসে দেখল আসলেই এক বিদেশীনি তাদের দরজায় দাঁড়িয়ে। চিকচিকে কালো রং, মাথায় দড়ির মতো করে বেণি বাঁধা চুল। জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট। এমনিতেই লম্বায় ৬ ফিট হবে বোধ হয়, হাই হিল পরায় আরো লম্বা লাগছে। গায়ের রং চিকচিকে কালো হলেও মেয়েটির মধ্যে কেমন জানি মায়া মায়া একটা ভাব আছে।
শাওনের বাবা গভীর উৎসাহে পেছন থেকে ঠেলে-ঠুলে সবার সামনে এগিয়ে গেলেন। তার ধারণা, তিনি আগের আমলের ম্যাট্রিক পাশ। তাই তার ইংরেজী জ্ঞান তার ছেলে-মেয়ে সকলের চেয়ে ভাল।
-হোম ডু ইউ ওয়ান্ট, লেডি?
-শরীফ আছে?
কালো নিগ্রো মেয়েটির কণ্ঠে স্পষ্ট বাংলা শুনতে পেয়ে সবাই অবাক হলেও শাওন যেন কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাক বাবা! মেয়েটিকে নিজের নাম না বলে সে বুদ্ধি করে তার মেজো ভাই শরীফের নাম বলেছিল। এমন বুদ্ধি শাওন প্রায়ই করে থাকে। শরীফ যখন ভাবীকে নিয়ে পালাল,শাওন নিজেও তাদের সাথে ছিল তখন। এভাবে পালিয়ে বিয়েতে শাওনের মতামত ছিল না। তবু সে সাথে ছিল এটা ভেবেই যে, মেজো ভাইকে যদি খুশি রাখা যায় তবে তার নিজের বিয়েতেও মেজো ভাইয়ের সমর্থন পাওয়া যাবে। কিন্তু এ কথা সে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে কাজী অফিস বিয়েতে তাকেই সাক্ষী রাখতে চাইবে। কাজী যখন খাতা নিয়ে আসলেন তার স্বাক্ষর নেয়ার জন্য, তখন কলম হাতে নিয়ে শাওনের হাত কাঁপতে থাকল। যদ্দুর জানা গেছে ভাবীর বয়েস তখনও আঠারো হয় নি। এ বাল্যবিবাহে যদি শাওন স্বাক্ষর দেয় তাহলে তো সে যে এ বিয়েতে সাহায্যকারী ছিল এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে। কনে পক্ষ যদি কেস করে দেয় তখন শরীফের সাথে তো শাওনকেও জেলে যেতে হবে। শাওন জেল আর কুকুর এ দুইকে খুব ভয় পায়। তাই সে বুদ্ধি করে সেদিন সফিক নাম দিয়ে দস্তখত দিয়েছিল। কাজী শাওনকে শরীফের ভাই জানলেও তার নাম যে শাওন এটা তো আর জানতেন না। তাই কেউ কিছু বুঝতে পারে নি। শাওন নিজেকে দিব্যি সফিক বলে চালিয়ে দিয়েছিল। কেনিয়ার মেয়ে ডরিস কুন্ডার সাথে দীর্ঘ দুই বছর ধরে ফেসবুকে প্রেম চালিয়ে এসেছে কিন্তু কখনো নিজেকে ভুলেও শাওন বলে পরিচয় দেয় নি। নিজেকে শরীফ বলে পরিচয় দিয়েছে। মেয়েটিকে দেখার পর, মুহুর্তের জন্য হলেও ব্যাপারটার কথা ভুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু ডরিস শরীফকে খুঁজছে দেখে সে হাঁফ ছেড়ে একটু স্বাভাবিক হল। শরীফ তখন বাসায় ছিল না। তাই বাবা বললেন,
-নো। শরীফ ইজ নট এট হোম। বাইরে গেছে। বাইরে গেছে।
বাবা কিছুটা ঘাবড়ে গেলে এক কথা দুইবার বলা শুরু করেন।
-ঠিক আছে, ও আসুক। আমি অপেক্ষা করব।
ডরিস গটগট করে হাতের লাগেজ টানতে টানতে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। মনে হচ্ছে যেন এ ঘর তার অনেক দিনের চেনা। বিদেশী একটা মেয়ে ঘরের ভেতর অবলীলায় ঢুকে যাচ্ছে দেখে বাড়ির সবাই হতবাক হয়ে বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটি সোফায় বসতে বসতে সবাইকে ডাকল।
-কি হল? সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।
মেয়েটির তীক্ষ স্বরের ডাকে সবাই একে একে ভেতরে ঢুকল।
-হাই! আমি ডরিস। ডরিস কুন্ডা। আপনি নিশ্চয়ই মা?
মার দিকে তাকিয়ে ডরিস তার হাত বাড়িয়ে মাকে পায়ে ধরে সালাম করল। মা ভয়ে অথবা লজ্জায় দু পা পেছনে সরে গেলেন।
-আর, আপনি নিশ্চয়ই বাবা?
বাবাকেও সালাম করল মেয়েটি। শাওন খুব অবাক হয়ে দেখল, সে যা যা শিখিয়েছিল তা ডরিস কী নিখুঁত ভাবেই না শিখে নিয়েছে এবং মনেও রেখেছে। কী সুন্দর করে বাংলা বলছে ডরিস! শাওন যে ভুল মানুষকে পছন্দ করে নি তা সে এবার হাতে নাতে প্রমাণ পেল। কিন্তু প্রমাণ পেয়েও তো কোন লাভ নেই। শাওনের তো এখানে নিজের পরিচয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ দেশের মানুষ যতোই অতিথি পরায়ণ হোক, বিদেশীদের রাস্তায় দেখলে আগ্রহে ফেটে পড়ুক, এদেশের কারো সাথে বিদেশি মেয়ের সংসার এতো সহজে কেউ মেনে নিবে না। শরীফের মা বাবাও কী ব্যাপারটা মানতে পারবেন? নিশ্চয়ই না। এ ভেবেই শরীফ নিজিকে আড়ালে রাখার সিদ্ধান্ত নিল। (চলবে...)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

ঈশান আহম্মেদ বলেছেন: ভালই লাগছে। চলুক...

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩২

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: “কয়েস সামী বলেছেন: ছোটগল্প সংকলন বেরুলে আমারে রাইখেন।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৬ ০
লেখক বলেছেন: সাথে থাকবেন। আশা করি, যথা সময়ে আপডেট চলে আসবে। ধন্যবাদ।”

তুমি এই মেলে ই-মেল কর [email protected]

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৭

কয়েস সামী বলেছেন: ই মেলে কি গল্প পাঠাবো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.