নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের উপন্যাস-সাফওয়ান ও তার অলৌকিক মাছ

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪০


(উৎসর্গঃ আমার ছেলে সাফওয়ান যাকে স্পর্শ করলে কী যে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়! মনে প্রশ্ন জাগে, সকল বাবাদের কি এমন অনুভূতিই হয়?)
সাফওয়ানের অনেক দিনের ইচ্ছে নদীতে নৌকায় চড়ে মাছ ধরবে। সেই অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণে এগিয়ে আসলেন সাফওয়ানের জুমন মামা। তিনি সাফওয়ানকে নিয়ে গেলেন সুরমা নদীতে মাছ ধরতে। সিলেটের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। জুমন মামা একটি নৌকা ভাড়া করে সাফওয়ানকে নিয়ে নৌকায় উঠলেন। নৌকায় উঠেই মামার মাথায় হাত! আরে ভাগ্নে, বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছি। সাফওয়ান জিজ্ঞেস করল, কী ভুল মামা?
-আমরা মাছ ধরতে এসেছি, কিন্তু বড়শি আনতে ভুলে গেছি।
-তুমি যে কী কর না মামা! এতো বড় ভুল করলে কী করে করলে? তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল না।
সাফওয়ানের বড়দের মতো কথা বলার ঢং দেখে জুমন মামার মাথা আরো গরম হল।
-তুই ই বা কী? আমার হাতে বড়শি দেখেছিস তুই? তুই তো আমাকে মনে করিয়ে দিতে পারতি, পারতি না?
-হয়েছে, হয়েছে আর বাজে বকো না। যাও। বড়শি কিনে নিয়ে আসো। আমি অপেক্ষা করছি।
-ও.কে। তুই দাঁড়া আমি নিয়ে আসি। কাছেই বড়শি কিনতে পাওয়া যায়।
মামা নৌকা থেকে নেমে গেলেন।
সাফওয়ান একা একা নৌকায় বসতে বসতে নদীর পাড়ের চারপাশ দেখতে থাকল। বর্ষার সুরমা। চারিদিকে থই থই পানি। কয়েকদিন বৃষ্টি বাদলা নেই বলে নদীটি এখন শান্ত। ছোট ছোট ঢেউ সাফওয়ানের ঘাটে বাঁধা নৌকাটিকে দুলাচ্ছে। মাঝ নদী থেকে কোন এক মাঝির উদাস করা গানের সুর ভেসে আসছে। সাফওয়ানের বয়সের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকার পাশেই নদীতে গোসল করছে। পানিতে নেমে গোসল করার ফাঁকেও তারা খেলা করছে। একজন পানিতে ডুব মারতেই অন্যরা গিয়ে তাকে পানির নীচে ছুঁয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু যে ডুব দিয়েছে সে ইতোমধ্যেই জায়গা বদল করে অন্য জায়গায় গিয়ে ভেসে উঠেছে। শহরের ইট পাথরের ভেতর বাস করা সাফওয়ান এমন ডুব সাতার দেখে অবাক হয়ে যায়। এ যেন রীতিমতো ম্যাজিক। কি করে যে ছেলেটা এমন কাজটা করল! এক ডুবে অন্য জায়গায় চলে গেল! সাফওয়ান তাদের খেলা দেখতে থাকে আর আফসোস করতে থাকে। ইশ! যদি সে সাতার জানতো তবে আজ এখন এই ছেলেদের সাথে নদীতে নেমে খেলতে পারতো। সাফওয়ানকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটি ছেলে সাফওয়ানের দিকে সাতার কেটে এগোতে থাকল।
-তোমার নাম কিতা? (তোমার নাম কি?)
-আমি সাফওয়ান। সাফওয়ান সামী।
-সা-ফ্ফা-ন সামী? ইগু আবার কিজাত নামরে বাবা! (এটা আবার কেমন নামরে বাবা!)
-সাফফান না, সাফওয়ান। সা-ফ-ও-য়া-ন।
-সাফ্ফান। অইছে নি? (হয়েছে?)
ছেলেটিকে নামের উচ্চারণ শেখাতে পরছে না দেখে সাফওয়ানের মনটাই খারাপ হয়ে যায়। দাদু এতো কঠিন নাম যে কেন রেখেছিল! কোথাকার কোন সাফওয়ান চৌধুরী নাকি সিলেটের বিখ্যাত এক লোক ছিলেন। তার নামেই দাদু সাফওয়ানের নাম রেখেছিলেন। দাদু হয়তো ভেবেছিলেন তার নাতিও বড় হয়ে বিখ্রাত কেউ হবে। সাফওয়ান কি পারবে তেমন কেউ হতে? সাফওয়ান অবচেতন মনে তার মাথা নাড়তে থাকে। বিখ্যাত হওয়া ওতো সহজ না দাদু। তুমি যা পার নি, তা তোমার নাতি হয়ে আমি কী করে পারবো? সাফওয়ান আবার চোখের সামনে ছেলেটিকে দেখতে পায়।
-না। হয় নি। বাদ দাও। তোমার নাম কি?
-আমার নাম করিম। করিম মিয়া।
-ভেরি কমন নেইম।
-কিতা নেইম খইলায়? (কী নাম বললে?)
-না, কিচ্ছু বলি নি।
-তুমি ওখানো বই রইসো খেনে। আমরার লগে খেলতায় নি? (তুমি এখানে বসে আছ কেন? আমাদের সাথে খেলবে?)
-না। আমি সাতার পারি না।
-হাতার পারো না? হা হা হা। (সাতার পারো না? হাহাহা।)
-হাসবা না বলছি। আমি এবার গ্রান্ড সুলতান রিসোর্টের সুইমিং পুলে গিয়ে সাতার শিখবোই, শিখবো।
-কিতা ফুল? (কী ফুল?)
-ফুল না, পুল।
-তুমি কিতা যে মাতো কিচ্ছু বঝি না। (তুমি যে কী বল কিচ্ছু বুঝি না।)
-তোমার বুঝতে হবে না।
ছেলেটি বুঝতে পারল, সাফওয়ান কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়েছে। তাই সে কথার বিষয় পাল্টালো।
-তুমি খই যাইতায়? (তুমি কোথায় যাবে?)
-মাছ ধরতে।
-কিতা দিয়া ধরতায়। বড়শি খই? (কী দিয়ে ধরবে? বড়শি কোথায়?)
-মামা আনতে গেছে।
-আমি আনতাম নি? (আমি নিয়ে আসবো নাকি?)
-তুমি বড়শি নিয়ে আসবে? কোথা থেকে আনবে?
ছেলেটি নদীর পাশেই ছোট্ট একটা বাঁশের ঘরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, ঔ যে গর, ঔটা আমরার। আমার গরত বড়শি আসে। লইয়া আই? (ঐ যে ঘর, ওটা আমাদের। আমার ঘরে বড়শি আছে। নিয়ে আসি?)
-নিয়ে আসো।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে বড়শি নিয়ে এসে লাফ দিয়ে নৌকায় উঠে পাড়ে আটকানো দড়ি খোলা শুরু করল।
-করো কী? করো কী?
-বা রে! মাছ দরতায় নানি? (বা রে! মাছ ধরবে না?)
-মামা আসে নি তো।
-মামার কতা বাদ দেও। আমি নৌকা ছালাইতাম ফারি। (মামার কথা বাদ দাও। আমি নৌকা চালাতে পারি।)
ছেলেটি নৌকা ছেড়ে দিল। নৌকা সামনের দিকে এগুতে থাকল।
ছেলেটির হাতে বৈঠা আর সাফওয়ানের হাতে বড়শি। কিছু দূর এগুনোর পর পেছন থেকে ডাক শুনতে পেল তারা।
-এই সাফওয়ান, এই! কী করিস তুই?
সাফওয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে মামাকে দেখতে পেল। মামার হাতে বড়শি।
-আয়, ফিরে আয়। আমি বড়শি নিয়ে এসেছি।
-মামা তুমি অপেক্ষা কর। আমরা মাছ ধরে আসি। সাথে করিম আছে। তুমি ভেবো না।
সাফওয়ানরা এতো দূরে চলে গেছে যে শেষের কথাটা মামা আর শুনতে পেলেন না। কি আশ্চর্য ছেলেরে বাবা! ঋয়-ডর বলতে কিচ্ছু নেই। মামা ভাবতে ভাবতে মাটিতে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। সাফওয়ানের নৌকাকে এখন একটা বিন্দুর মতো লাগছে তার কাছে। (চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৮

আমি তুমি আমরা বলেছেন: সামী ভাই, ধারাবাহিক উপন্যাসের পর্বগুলোর মাঝের বিরতি কম হলে ভাল হয়। নতুবা পাঠক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

অঃ টঃ আছেন কেমন?

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৬

কয়েস সামী বলেছেন: গুড পরামর্শ। দেখি। নেক্সট এক সাথে শেষ করেই দিব তাহলে। অনেক ধন্যবাদ। আপনি কেমন আছেন?

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫২

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১৯

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.