নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: গোলাপের চাষ

০১ লা জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৩৮


“কী হবে রে তারেক তোর ঐ পাগলা চাচ্চুটা যদি তোদের বাগানে গিয়ে ডেড বডিটা খুঁজে পেয়ে যায়! আমাদের আসলেই লাশটা ওখানে পুঁতে রাখা ঠিক হয় নি।”

গল্পটা তখনকার- যখন মোবাইল ফোনের যুগ শুরু হয় নি, যখন টিএন্ডটি ফোন রাজার হালে দেশে রাজত্ব করছিল, আর যখন ভুতূড়ে বিলের আতঙ্কে এ দেশের জনগণ কালাতিপাত করতো। তখন একই বাসায় একটি মাত্র লাইন থাকলেও টেলিফোন সেট থাকতো বেশ কয়েকটি। আমাদের বাসাতেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বাবার রুমে একটি, বড় চাচার রুমে একটি আর একটি ছিল কর্ডলেস যেটা আমরা চাচাতো ভাই-বোনরা মানে ছোটরা ব্যবহার করতাম। এভাবে একটা লাইন সবাই মিলে ব্যবহার করলেও কারো কোনো অসুবিধা হতো না যদি না বড় চাচা তার স্বভাবটা পাল্টাতে পারতো। অন্যের কথা আড়ি পেতে শৃুনতে যে তিনি কী মজা পেতেন তার ব্যাখ্যা বোধ করি স্বয়ং বড় চাচাও দিতে পারতেন না।
বন্ধু মিঠুকে আমার বড় চাচার এই আঁড়ি পেতে কথা শোনার ব্যাপারটা জানিয়ে সতর্ক করে দিতে ফিসফিস করে বললাম,

“চুপ চুপ! তুই তো জানিস না, বড় চাচা হয়তোবা টেলিফোনে আঁড়ি পেতে আছে, শুনতে পাবে!”

মিঠু তবুও বেপরোয়া।
“আরে, এতো ভোরে তোর বড় চাচা নিশ্চয়ই নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে।”
“তা হবে হয়তোবা, তবু আমাদের সাবধান থাকতে হবে মিঠু। এমন কাজ করেছি, ধরা পড়লে ফাঁসি না হোক জাবজ্জীবন তো হবেই।”
“কী করবো বল, মোস্তফা যে দুই লাথিতেই পটল তুলবে তা কি আমরা ভেবেছিলাম?”
“আরে, পটল তুলবে না? লাথিটা কোথায় লেগেছে সেটা দেখতে হবে তো? নাকের উপরের ঐ জায়গাটা খুব সেনসিটিভ! তুই কেন যে ওভাবে মারতে গেলি!”
“ধ্যাৎ, আমার হুশ ছিল নাকি তখন! কতো কষ্ট করে লাবণীকে পটালাম, সে কী করে বাহ্বা নেয়ার জন্য লাবণীকে সব কিছু বলে দিতে পারল, বল!”
“মিঠুরে আর বলার দরকার নেই। আমার না খুব ভয় করছে। আমার বড় চাচা আবার ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রেম জিনিষটা একেবারে পছন্দ করেন না। এ ঘটনার কোন ক্লু পেলে আমাদের কাউকেই ছাড়বে না। চাচা হয়েছে তো কী হয়েছে. একেবারে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে। এর মধ্যে মোস্তফার বাবা আবার তার ছেলেকে খুঁজে দিতে পারলে পত্রিকায় ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। মৃতদেহ খুঁজে দিলেও নাকি দুই লক্ষ টাকা দিবেন! ”

কথাগুলো বলার সময় টের পেলাম আমার গলা কাঁপছে!

“আচ্ছা! আর এ বিষয় নিয়ে কথা বলার দরকার নাই। শোন, শুধু বাগানটার দিকে একটু খেয়াল রাখিস। কোন কুকুর-টুকুর যেন মাটি খুঁড়ে ডেড বডিটা বের করে না ফেলে আবার!”

“ঠিক আছে মিঠু। এখন রাখি। বিকেলে রেবতী টি স্টলে আসলে কথা হবে।”

কথা বলা শেষে ফোনটা আমরা দুজনেই রেখে দিয়েছিলাম।

তার আধা ঘন্টা পর বাসার সবাই মিলে ছাদে উঠে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, বড় চাচা ততোক্ষণে বাগানের অনেকখানি জায়গা কুপিয়ে গর্ত করে ফেলেছে। আরো গর্ত করছে। কোঁদালের কোপ খুব দ্রুত লয়ে মাটিতে পড়ছে। সত্যিই তাকে এতো পরিশ্রম করতে এর আগে আমরা কেউ দেখি নি।

তাই আমার ছোট ভাই তপু জোরে জোরে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“চাচ্চু, কী করছো তুমি? গোলাপের চাষ করবে না কি?”
হঠাৎ শব্দে বড় চাচা হকচকিয়ে গেলেন। তারপর বললেন,
“হ্যারে তপু, বাগানটা কেমন খালি খালি লাগছে, তাই ঠিক করলাম আরো বেশি করে গোলাপের চারা এনে লাগাতে হবে।”

বড় চাচাকে এমন উচিত শিক্ষা দিতে পেরে আমরা সবাই মুখ টিপে হাসতে থাকলাম।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:০৭

সুমন কর বলেছেন: শেষটা ভালো হয়েছে।

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:০৪

কয়েস সামী বলেছেন: অনকে ধন্যবাদ।

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: "ত্যাদর" চাচার শিক্ষা!!

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:০৫

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়ছি। গল্পের মাজেজাটা আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে :)

শুভেচ্ছা রইল।

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:০৬

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক দিন পর অাপনাকে পেয়ে ভাল লাগছে। তবে মাজেজাটা তো অাপনার মাথার উপর দিয়ে যাবার কথা না। আবার পড়েন।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৫

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ফিনিশিংটা সেরা ছিল

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৬

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ফিনিশিংটা সেরা ছিল

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:০৬

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.