নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প: সাফওয়ানের ম্যাজিক চকলেট।

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১০


(আমার ছেলে সাফওয়ানকে প্রায়ই গল্প বলে শুনাতে হয়। চেনা জানা গল্পগুলো বলা শেষ হলে তখন নিজে থেকে যা খুশি মাথায় আসে বলতে থাকি। সেও ঐসব আজগুবি গল্প খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকে। ঐ গল্পগুলির মধ্যে প্রধাণ চরিত্র যে সে নিজেই থাকে- এ কারণেই বোধ করি সে এতো আগ্রহ বোধ করে। তো. হঠাৎ আমার মনে হল, গল্পগুলি যদি লিখে রাখা যায় তবে হয়তো এ দেশের সকল শিশুদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া হবে। তাছাড়া আজ থেকে অনেক বছর পর সাফওয়ান বড় হয়ে যখন নিজে নিজে পড়তে শিখবে তখন হয়তো অনেক আনন্দ পাবে। সেজন্যই এ গল্পটি লেখা। সবাই ভাল থাকুন। গল্পটি আপনার সন্তানকে পড়তে দিন।)

সাফওয়ানের বাবা সেবার যখন আমেরিকা গিয়েছিলেন তখন বিখ্যাত জাদুকর ডেভিড জ্যাকসনের জাদু দেখা ও তার সাথে পরিচয় দুটোই হয়েছিল। জাদুর মঞ্চে ডেভিডের জাদুর কৌশলটি তিনি বুঝে ফেলেও সবার সামনে তা ফাঁস করে দেন নি, তাই ডেভিড খুশি হয়ে এক বক্স চকলেট উপহার দিয়ে বলেছিলেন, সারাজীবন তো সবাইকে মিথ্যে জাদু দেখালাম। তোমার ছেলের জন্য সত্যিকারের কিছু ম্যাজিক চকলেট উপহার নিয়ে যাও।
ম্যাজিক চকলেট কী কাজ করে, এটা জিজ্ঞেস করলে ডেভিড হেয়ালি করে বলেছিলেন, আগে তো নিয়ে যাও। সাফওয়ান নিজেই ম্যাজিকটা খুঁজে বের করুক।
সাফওয়ানের বাব কয়েস সাহেব চকলেট বক্সটি হাতে নিলেন। স্বচ্ছ চৌকুনো একটা বাক্সে মাত্র ১২ টি লাল প্লাস্টিক কাগজে মোড়ানো চকলেট। বাইরে থেকে দেখে এগুলোর মধ্যে কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে বলে কয়েস বুঝতে পারলেন না। তবু তিনি চকলেট বক্সটি নিয়ে রওনা দিলেন বাংলাদেশের পথে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সে চড়ে। বাম দিকে তার পাশের সিটে বসে আছেন শাড়ি পড়া এক ভদ্রমাহিলা যার কোলে চার বছরের একটা ছেলে। অ্যারোপ্লেনের আকাশে ওড়ার মতো করে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল তখন যখন ছেলেটির চোখ পড়ল কয়েস সাহেবের হাতের মুঠোতে ধরে রাখা ছোট্ট সেই ম্যাজিক চকলেটের দিকে। কয়েস সাহেব প্লেন থেকে নেমেই সাফওয়ানকে কোলে নিতে নিতে বক্সটা দেবেন ভেবে সেটা হাতেই রেখেছিলেন। বক্সটি দেখা মাত্রই ছেলেটি তার মায়ের কাছে বায়না ধরল- সে চকলেট খাবে। এমন অবস্থায় কী করে ছেলেটিকে চকলেট খেতে না দিয়ে পারা যায় তা কয়েস সাহেবের জানা ছিল না। তাই তিনি বক্সটি খুলে একটা চকলেট ছেলেটিকে দিয়ে বললেন, নাও। চকলেট খাও।

ছেলেটি চকলেট খেয়ে আবার হাত পেতে বসল। তার মা তাকে ধমক দিতেই সে কান্না জুড়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল, তকলেট খাব। কয়েস সাহেব কিছুক্ষণ নির্বিকার থাকার ভাব করলেন। কিন্তু ছেলেটির কান্না চিৎকারে রূপ নিচ্ছে দেখে অগত্যা বক্স থেকে আরেকটি চকলেট বের করে দিতে চাইলেন। তখনই পাজি ছেলেটি ঘটনাটি ঘটিয়ে বসল। ঘটনাটার জন্য কয়েস সাহেব মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। ছেলেটি দুই হাত দিয়ে ছোঁ মেরে পুরো বক্সটি কব্জা করে নিয়ে তার ভেতর হাত ঢুকাল।
-ছি বাবু! পারে না।
-আম্মু! মদা! মদা! তুমিও খাও!
ওমা! কয়েস সাহেব অবাক হয়ে লক্ষ করলেন, মা তার মুখ বাড়িয়ে ছেলের হাত থেকে চকলেটটি মুখে নিচ্ছেন।
৩। ১২-৩=৯
কয়েস সাহেব ততোক্ষণে অংক করা শুরু করে দিয়েছেন। বারো থেকে তিন গেলে নয়। নয়টি চকলেটও যদি সাফওয়ানের হাতে নিয়ে দেয়া যায় তবুও হবে। কয়েস সাহেব নির্লজ্জের মতো হাত বাড়িয়ে চকলেট বক্সটি নিতে চাইলেন।
-বাহ! চকলেটটাতো দারুণ খেতে!
বলতে বলতে ছেলেটির মা আরো একটা চকলেট মুখে পুরলেন।
কী আশ্চর্য! কী আশ্চর্য!
বয়স্ক একটা মহিলা কী করে এমন কাজ করল এটা কয়েস সাহেবের কিছুতেই বোধগম্য হল না।
তিনি গুনলেন,
১২-৪=৮।

মহিলাটি এবার পেছনে বসা ছেলেটাকে ডেকে বললেন,
-এই বাবুল, চকলেট খাবি? চকলেট? এতো মজার চকলেট জীবনেও খাই নি।
কোলের ছেলেটি ততোক্ষণে আরো দুইটি চকলেট মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে!
১২-৬=৬।
পেছনে বসা বাবুলও হাত বাড়িয়ে মহিলাটির এগিয়ে দেয়া চকলেটটি নিয়ে মুখে ঢুকাল।
ঢুকিয়েই,
-মা, চকলেটটি তো দারুণ। দাও তো আরেকটা। বাবাকে দেই।
কয়েস সাহেবের তো আক্কেল গুড়ুম। ১২-৮=৬।

এর মধ্যে মহিলাটি তার কোলের ছেলে আরো দুটি সাবাড় করে দিয়েছে। ১২- ১০= ২।

আর না। ভদ্রতা অনেক হয়েছে। এবার কয়েস সাহেব বলে উঠলেন:
-বক্সটা দেন। পুরোটাই তো খেয়ে ফেলেছেন!
-আরে ভাই এতো মজার চকলেটতো কখনো খাই নি। তাই খেয়ে ফেলেছি। আমরা দুঃখিত। কিছু মনে করবেন না।
বলতে বলতে মা, পেছনে বসা বাবুল আর কোলে বসা ছেলে তিনজনই একসাথে আরো তিনটি চকলেট খেয়ে ফেলল।

হায় হায়! সবকটা চকলেট তো শেষ করেই ফেলল। কয়েস সাহেব মাথায় হাত দিয়ে অংক শুরু করলেন: ১২-১৩= -১।

না না, এটা তো হতে পারে না! কয়েস সাহেব এতোক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে কয়টা চকলেট খাওয়া হচ্ছে তা গুণছিলেন। তার কোন ভুল হবার কথা না। বক্সের ভেতর ঠিক বারোটি চকলেট ছিল। মা আর দুই ছেলে মিলে তেরোটি চকলেট কী করে খেয়ে ফেলল! তিনি মহিলার হাত থেকে চকলেট বক্সটি রীতিমতো ছিনিয়ে আনলেন। দেখলেন, বাক্সটির ভেতর তখনো বারোটি চকলেটই অবশিষ্ট আছে!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

সুমন কর বলেছেন: সাফওয়ান-এর গল্প ভালো লাগল। +।

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.