নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প: মোটু-পাতলুর সাথে সাফওয়ান!

২৫ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৪৪


টিভিতে মোটু-পাতলু কার্টুন দেখতে দেখতে হঠাৎ অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে গেল। মোটু আর পাতলু দুজন যেন সাফওয়ানের সাথে কথা বলে উঠল একসাথে:

“এই যে সাফওয়ান, আসবে?”

টিভির ভেতর থেকে কেউ কখনো এভাবে কথা বলে না, বলতে পারে না। সাফওয়ান কি তবে ভুল দেখছে? সে নিজের শরীরে সজোরে একটা চিমটি কেটে বুঝে নিল- না, এটা কোন কল্পনা না, সত্যি।

সে প্রশ্ন করল, “আমাকে বলছো?”
“ হ্যা তোমাকেই? চলো আমরা মাছ ধরতে নদীতে যাবো।”
“ কিন্তু তোমরা তো টিভির ভেতরে। আমি কী করে আসবো?”
মোটু হাসতে হাসতে বলল, “ও.. এটা ভাবছো? এই যে আমি হাত বাড়ালাম। আমার হাতটা ধরো।”

সাফওয়ান দেখতে পেল মোটুর হাতটা ঠিক ঠিক টিভি থেকে বাইরে চলে এসেছে! সেও সাহস করে মোটুর হাতটা ধরে ফেলল। তারপর সেকেন্ডের মধ্যে ঘটনাটা ঘটে গেল। কী জানি কী হল, সাফওয়ান নিজেকে আবিষ্কার করলো মোটু-পাতলুর ঠিক সামনে। ব্যাপারটা সাফওয়ানের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না, তাই সে এবার মোটু আর পাতলুকে চিমটি দিয়ে দেখে নিল যে তারা সত্যি সাত্যি তার সামনে আছে কি না।

চিমটি খেয়ে পাতলু কঁকিয়ে উঠে বলল, “করো কী, করো কী? এতো জোরে চিমটি দাও কেন?”
“না, দেখে নিলাম- সত্যি সত্যি তোমরা আমার সাথে কথা বলছো কি না।”
“ মোটু, তাকে একটা চপেটাঘাত দিয়ে বুঝিয়ে দাও তো আমাদের অস্তিত্ব।” পাতলু মোটুকে পরামর্শ দিল।
“না, না। আমার মনে আর কোন সন্দেহ নাই মোটু। চপেটাঘাত না কী আঘাত যেন বলল, ওটা লাগবে না।”
“তাহলে চলো। নদীতে মাছ ধরতে যাই।” মোটু পরামর্শ দিল।

তারা তিনজন তিনটা বড়শি নিয়ে চলল নদীর দিকে। নদীর পাশে এসে তিনজন বড়শি ফেলে মাছের অপেক্ষা করতে থাকল।
দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও যখন মাছ ধরল না। তখন হঠাৎ সাফওয়ান বলে উঠল, “আইডিয়া!”
“কী হে সাফওয়ান! তুমি যে আমার ডায়লগ শিখে ফেলেছো?”
“শিখবো না? প্রতিদিন কতো আগ্রহ নিয়ে তোমাদের কার্টুন দেখি। তোমরা দুজন হচ্ছো আমার দেখা সবচেয়ে সেরা কার্টুন।”
“হয়েছে হয়েছে, আর বাতাস দিতে হবে না। কী আইডিয়া মাথায় এসেছে, বল তাড়াতাড়ি।”
“আসলে আমরা টোপ হিসেবে যে চিংড়ি মাছ ব্যবহার করছি এটাতে হবে না। আমাদের দরকার হবে তীব্র গন্ধযুক্ত শুটকি মাছ। অনেক দূরে থাকলেও মাছ ঠিকই শুটকির গন্ধ পেয়ে যাবে, আর পাড়ে চলে আসবে। এখন বলো শুটকি মাছ কোথাও পাওয়া যাবে কি না?”
“যাবে না মানে? অবশ্যই যাবে। দাঁড়াও নিয়ে আসছি।”

শুটকি মাছ নিয়ে মোটু মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ফিরে আসলো।
তারও ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় সাফওয়ানের বড়শিতে খুব বড় একটা কিছু লাগল। মাছটির এত্তো শক্তি যে মোটু ও পাতলু দজনকেই হাত লাগাতে হলো মাছটি টেনে তুলতে।
কী অপূর্ব ,আর কী বিশাল সে মাছ। সাফওয়ান মাছটি বড়শি থেকে খুলতে যাবে, অমনি যেন মাছটি কথা বলে উঠল!

“সাফওয়ান, দোহাই তোমার! আমাকে ছেড়ে দাও। বাড়িতে আমার মা-বাবাকে রেখে এসেছি। তারা আমাকে ছাড়া বাঁচবে কি করে, বলো?”

মাছের কথায় সাফওয়ানের মনে পড়ে গেল সেও তো তার বাবা-মাকে ফেলে এসেছে বাসায়। সাফওয়ানের যদি কিছু হয় তবে তারাই বা কিভাবে বেঁচে থাকবেন। মাছটির জন্য খুব দুঃখ হল তার। সে মাছটিকে ছেড়ে দিতে রাজী হল।

কিন্তু বাঁধ সাধল মোটু। “হু! ছেড়ে দিব বললেই হল। কতো কষ্ট করে, কত সময় নষ্ট করে ধরতে পেরেছি তোমায়। আর তোমাকে ছেড়ে দিব? তোমাকে নিয়ে গিয়ে মুড়িঘন্ট করে খাব। আহ! মুড়িঘন্ট কতোদিন খাওয়া হয় না।”

সাফওয়ান কিন্তু মোটুর কথায় পাত্তা দিল না। সে হুট করেই মাছটা ছেড়ে দিল।

মোটু হায় হায় করে উঠল। আর সাফওয়ানকে কিক মারার জন্য তেলেবেগুণে ছুটে আসল।

কিন্তু আবারো আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটল। মাছটি পানির ছোঁয়া পেতেই অপরূপ এক মৎস্যকুমারীতে পরিণত হল। মোটু সহ সবাই যেন স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
মৎস্যকুমারী এবার কথা বলা শুরু করল:

“প্রিয় সাফওয়ান। আমি হচ্ছি এ নদীর মাছেদের রাণী। এ নদীর সমস্ত মাছেদের আমি নিয়ন্ত্রণ করি। তোমার ব্যবহারে আমি খুব খুশি হয়েছি। তুমি এই বয়সেই অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া শিখে নিয়েছো দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তোমাদের তিনজনকে আর মাছের চিন্তা করতে হবে না। এই দেখো! মাছ রাখার জন্য তোমরা যে বালতি নিয়ে এসেছো সেটা পূর্ণ করে দিলাম।”

আশ্চর্য ব্যাপার! তাদের এত্তো বড় বালতিটা সত্যি সত্যি বিভিন্ন রকম মাছে ভরে উঠেছে। আর মৎস্যকুমারীও অদৃশ্য হয়েছে।

মোটু আর পাতলু একসাথে এতো মাছ আগে কখনো দেখেনি। তারা তাই সাফওয়ানকে মাথায় নিয়ে নাচতে শুরু করলো। তাদের নাচ দেখে সিংহামও শুণ্যে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে আসল। মোটু, পাতলু আর সিংহাম- সবাই আনন্দে আত্মহারা যখন, তখন কিন্তু সাফওয়ানের খুব মন খারাপ। তার যে বাবা-মার কথা মনে পড়ে গেছে। সে মোটু-পাতলু কে বলল, ‍ তোমরা আনন্দ করো। আমি বরং যাই।

“যাবে, যাবে, অবশ্যই যাবে। সাফওয়ান অবশ্যই তার বাড়ি ফিরে যাবে” - তারা তিনজন চিৎকার করে বলে উঠল।

আর তখনি সাফওয়ান নিজেকে টিভি রুমে সোফায় বসা অবস্তায় আবিষ্কার করল। টিভির দিকে তাকিয়ে দেখল বালতি ভর্তি মাছ নিয়ে তখনো মোটু, পাতলু আর সিংহাম নাচানাচি করছে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.