নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প: অ্যা জার্নি বাই ক্লাউড

২৭ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৫০


সাফওয়ান থাকে বাংলাদেশে। আর তার কাজিন, মানে, ফুপুতো ভাই আদিবান থাকে অস্ট্রেলিয়া। বয়সের ব্যবধান ২ হলেও খুব সখ্যতা একে অন্যের সাথে। ল্যাপটপের সামনে বসে দিনে অন্ততঃ একবার স্কাইপেতে ভিডিও কনফারেন্স না হলে চলেই না তাদের। ভিডিও কনফারেন্স কি আর বেশিদিন ভাল লাগে? ওভাবে তো শুধু কথা বলা যায়। দুজন মিলে তো খেলা যায় না। সেবার আদিবান যখন বাংলাদেশে এসেছিল, কী মজাটাই না করেছিল দুজন । সাফওয়ান তাই অাকুল হয়ে প্রতীক্ষা করে কবে আবার দুজন একসাথে হওয়া যাবে।

হঠাৎ এক বৃষ্টির দিন দুপুর বেলা বাবা-মা দুজনই সাফওয়ানকে বাসায় রেখে যখন বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তখন ঘরের বাইরে জানালার কাছে দুম করে একটা শব্দ হল। সাফওয়ানরা একটা ৮ তলা ভবনের ৬ তলায় থাকে। সে দৌড়ে জানালাটার কাছে গিয়ে কাঁচের জানালার এক পাশের পাল্লাটা খুলে দিয়ে দেখতে পেল জানালার ঠিক নীচে এক খন্ড সাদা মেঘের মতো কী জানি ভেসে আছে। সে অবাক হয়ে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকল, এটা আবার কী?
সঙ্গে সঙ্গে গম গম করে আওয়াজ কানে আসলো, তুমি ঠিকই ভেবেছো। আমি আকাশের মেঘ।
মেঘের কথা শুনে সাফওয়ান বেশ অবাক হল।
জিজ্ঞেস করল, আকাশের মেঘ নীচে কেন?
মেঘ জবাব দিল, তুমি তো আদিবানের কাছে যেতে চাও, তাই না?
-হ্যা চাই।
-আমি তোমাকে আদিবানের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।
-তুমি নিয়ে যাবে? কিন্তু কিভাবে?
-তুমি শুধু আমার উপর উঠে বসো। বাকি কাজ আমার।

সাফওয়ান কোথায় জানি পড়েছিল, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তাই কোন কিছু না ভেবেই সে ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে উঠে লাফ দিয়ে পড়ল মেঘের উপর। না, সে কিন্তু মেঘ গলিয়ে নীচে পড়ে গেল না! মেঘের মধ্যেই বিছানামতো কী জানি আছে, যার উপর সে বসে থাকতে পারলো। আর মেঘও সাথে সাথে চলা শুরু করল। সাফওয়ান অবাক চোখে চারপাশ দেখতে থাকল। চারদিকে মেঘেরা ভেসে বেড়াচ্ছে। কতো রঙের যে মেঘ আছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। নীচে মাটি থেকে বোধ করি মেঘেদের রঙ এতো স্পষ্ট হয় না। লাল, নীল, বেগুণী, সাদা। হলুদ রঙের মেঘও আছে! মাঝে মাঝে কিছু কিছু পাখিও উড়তে উড়তে মেঘেদের কাছাকাছি চলে আসছে। তারপর সাফওয়ানকে বসে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে আবার নীচে নেমে যাচ্ছে। তবে একটা ব্যাপার সে বুঝতে পারল না। পড়াশোনা থেকে জেনেছে,এতো উঁচুতে উঠলে মানুষের অনেক রকম সমস্যা হয়। তার তেমন কোন সমস্যাই হচ্ছে না। মেঘকে জিজ্ঞেস করতেই মেঘ বলল, আমার উপরের অংশটা তোমার জন্য বিশেষভাবে তৈরী করেছি। যাতে তোমার কোন সমস্যা না হয়। বাহ! সাফওয়ানতো ভীষণ খুশি। মেঘকে বলল, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মেঘ। মেঘ বলল, আমাকে কিন্তু একটা কথা দিতে হবে। তুমি যে মেঘের সাহায্যে অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছ এ বিষয়টা গোপন রাখবে। আদিবানকেও বলবে না। সাফওয়ান মেঘকে কথা দিল, কাউকে সে এ কথা বলবে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সাফওয়ান পৌছে গেল আদিবানের বাড়ির পেছনের অংশে। এ জায়গাটা সে ভিডিওর মধ্যে অনেকবার দেখেছে। মেঘ বলল, নেমে যাও। মাত্র এক ঘন্টা সময় পাবে। এর মধ্যে ফিরে না এলে আমাকে আর এখানে পাবে না।

মেঘখন্ডটা মাটি থেকে এক হাত উঁচুতে দাড়িয়েছিল। সাফওয়ান লাফ দিয়ে মাটিতে নেমেই দৌড়ে আদিবানদের বাড়ির সদর দরজায় গিয়ে কলিংবেল টিপল। দরজা খুলে আদিবানের চোখ তো ছানাবড়া। সাফওয়ান ভাইয়া কী করে একা একা চলে এল! খুশীতে সাফওয়ানকে জড়িয়ে ধরল সে। তারপর ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল। ভাগ্য ভাল, তখন ফুপু বা ফুপা কেউই বাসায় ছিলেন না। থাকলে নিশ্চয়ই সাফওয়ান কী করে এল এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন করতেন। সাফওয়ান ভাইয়াকে আদিবান তার সব সুন্দর সুন্দর খেলনাগুলো একে একে দেখাতে থাকল। এসব খেলনা আগে সাফওয়ান ভিডিওতে দেখেছে। মেঘের কারণে আজ নিজ হাতে নিয়ে খেলনাগুলো দেখার সৌভাগ্য হল। খেলনাগুলোর মধ্যে একটা খেলনা সাফওয়ানের খুব পছন্দ হল। ছোট্ট একটা স্পাইডার ম্যান। এতো ছোট যে হাতের মুঠোয় নেয়া যায়। ছোট হলেও এটার আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য হল, এর হাতের তালুতে একটা স্যুইচ আছে। তাতে টিপ দিলেই হাতের ভেতর থেকে মাকড়সার জাল সদৃশ কিছু একটা বের হয়। এটা সাফওয়ান আগে ভিডিওতে দেখেনি। খেলনাটি সাফওয়ানের খুব পছন্দ হয়েছে দেখে আদিবান বলল, ভাইয়া এটা তুমি নিয়ে যাও। আমি আরেকটা কিনে নিবো। সাফওয়ান আদিবানকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দিল। আর তখুনি কলিং বেলের শব্দ! নিশ্চয়ই ফুপু আর ফুপা চলে এসেছেন। এখন উপায়? তারা দেখলে তো নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন। মনি ফুপুকে সাফওয়ান খুব পছন্দ করে, আবার ভয়ও পায়। তার কাছ থেকে তিনি ঠিকই উদ্ধার করে নেবেন সব তথ্য। তাই সে আদিবানকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। কিন্তু বুদ্ধিতে কাজ হল না। ফুপু-ফুপা ভেতরে এসে ওয়াশরুম সংলগ্ন রুমে বসেই গল্প শুরু করে দিলেন। এটা কী হল? এদিকে এক ঘন্টা তো হয়ে যাচ্ছে প্রায়! আদিবানকে সে বলে দিয়েছিল, ফুপু-ফুপা যখন বেড রুমে ঢুকবেন তখন যেন সে ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেয়। কিন্তু এখন! এখন কী হবে? এক ঘন্টা পার হয়ে আরো দশ মিনিট পর আদিবান সাফওয়ানকে বের করে দেয়ার সুযোগ পেল। কিন্তু বাড়ির পেছনে গিয়ে সাফওয়ান সেই মেঘখন্ডটাকে কোথাও দেখতে পেল না। ভয়ে সাফওয়ান ঘামতে থাকল। ঘামতে ঘামতে টায়ার্ড হয়ে কখন যে সাফওয়ান ঘুমিয়ে পড়ল টের পেল না।

ঘুম যখন ভাঙল তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করল, সে তো তার নিজের বিছানাতেই আছে! বাংলাদেশেই আছে! স্বপ্ন দেখেছে বুঝতে পেরে সাফওয়ান মুচকি হেসে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর আবার সে স্বপ্ন দেখা শুরু করল। মেঘটি যেন তাকে ডেকে বলছে, তুমি তোমার দেয়া কথা রাখতে পেরেছো বলেই পরে আমি তোমাকে ঘুমের মধ্যেই ফিরিয়ে এনেছি। এটাকে তুমি কথা দিয়ে কথা রাখার পুরষ্কার হিসেবে ভেবে নিতে পার। অন্য যে কেউ হলে ভয়ে সবাইকে সব বলে দিত। তুমি ভয় পেয়েও কথার বরখেলাপ করো নি বলেই তোমাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সাফওয়ানের ঘুম ভাঙলে স্বপ্নের কথা মনে পড়ায় খুব হাসি পেল তার। বেশ চমৎকার একটা স্বপ্ন দেখা গেছে। কিন্তু তখনই সে তার শার্টের বুক পকেটের ভেতর কিছু একটার অস্তিত্ব টের পেল। পকেটের জিনিসটাকে হাতে নিয়ে দেখতে পেল ওটা আদিবানের উপহার দেয়া সেই ছোট্ট স্পাইডারম্যান!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২৯

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গল্পের মাঝে কিছু বলতে চেয়েছেন বোধহয়।।
ভাল লাগা বেড়েই চলেছে।।

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২০

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমার আজকের গল্পটিও পড়ে ফেলুন না!

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

দূরন্ত দীপ্ত বলেছেন: ভাল লাগলো।

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২৪

কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমার আজকের গল্পটিও পড়ে ফেলুন না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.