নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প: সাফওয়ান যখন ভূত।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:১৭


স্কুলে যেতে সাফওয়ানের একদম ভাল্লাগে না। তাই সে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসে গেল। আম্মু উঠে পড়তে দেখলে সাফওয়ানকে স্কুলে যেতে আর বেশি পিড়াপিড়ি করবেন না। বেশ কয়েকদিনের গবেষণায় স্কৃলে না যাওয়ার বেশ ভাল একটা পদ্ধতি বের করেছে সাফওয়ান। তাই যেদিন স্কুলে যাবার ইচ্ছে করে না সেদিন সাতসকালে সবার আগে ঘুম থেকে জেগে হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসে যায় সে।

আজও একই কারণে, মানে স্কুল ফাঁকি দেবার উদ্দেশ্যে সাফওয়ান যখন পড়তে বসেছে তখন হঠাৎ শুনতে পেল,
‍“এই ছেলে ভূত হবে?”
এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে সাফওয়ান অবাক হয়ে চারদিকে তাকিয়ে যখন কাউকে দেখতে পেল না, তখন প্রশ্ন শোনার ঘটনাকে মনের ভুল ভেবে আবার পড়া শুরু করল।
“এই যে সাফওয়ান! তোমার কি ভুত হবার ইচ্ছে আছে? থাকলে বলে ফেল।”
এবার সাফওয়ান শিওর হল, সে আসলেই কথাগুলা শুনতে পেয়েছে। কিন্তু এবারও কাউকে আশেপাশে দেখা গেল না। আর দেখা যাবেই বা কী করে? সব দরজা জানালা তো বন্ধ! বাইরে থেকে কেউ ভেতরে ঢুকার কোন সুযোগ নাই।
“যদি ইচ্ছে থাকে, বলে ফেল। একদিনের জন্য ভূত হবার এমন সুযোগ আর পাবে না। ”
এবার সাফওয়ান কথা বলে উঠল,
“তুমি কে?”
“আমি ভূত।”
সাফওয়ান প্রচুর ভূতের গল্প পড়ে। তাই ভূতের ভয় তার তেমন একটা নেই। সে কথা চালিয়ে যেতে পারল বেশ সাবলীলভাবেই।
“তুমি আমাকে ভূত হবার সুযোগ দেবে?”
“হ্যা। আমি তোমাদের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকি। ভূতের গল্পের প্রতি তোমার এতো আগ্রহ দেখে আমি তোমাকে একদিনের জন্য ভূত হবার সুযোগ দিতে চাই।”
“সত্যি তুমি আমাকে ভূত হবার সুযোগ দেবে?”
“হ্যা, সত্যি। তবে মাত্র ৫ ঘন্টার জন্য। আমি তুমি হয়ে এখানে বসে বসে পড়বো যাতে তোমার বাবা-মা বুঝতে না পারেন, আর তুমি ভূত হয়ে যেখানে সেখানে ভূতেদের মতো ঘুরে বেড়াবে। তবে শর্ত একটাই। এখন থেকে ঠিক পাঁচ ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবে। ফিরে না আসতে পারলে সারা জীবন ভূত হয়েই কাটাতে হবে তোমাকে। রাজী কি না বল।”
ভূত হবার এমন সুবর্ণ সুযোগ সাফওয়ান হাতছাড়া করতে চাইল না। সে ঝটপট রাজী হয়ে গেল। আর তখনই সে দেখতে পেল, তার দুটি হাত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, তারপর তার পা দুটি অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর তার পেট-বুক সব অদৃশ্য হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে সে আয়নার সামনে গিয়ে দেখতে পেল সেখানে কারো প্রতিবিম্ব পড়ছে না। সাফওয়ান ইয়াহু বলে চিৎকার করে উঠল। যে ভূতের গল্প সে এতোদিন ঠাকুরমার ঝুলিতে বা অন্যান্য গল্পের বইয়ে পড়েছে আজ সে নিজেই সেই ভূত হয়ে গেছে- এর চেয়ে আনন্দের আর কি ই বা হতে পারে? সে মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিল প্রথমেই তার স্কুলে গিয়ে সবাইকে উপযুক্ত শিক্ষা দিবে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সে দরজার ছিদ্র দিয়ে বাতাসের সাথে বের হয়ে বাতাসের গতিতেই স্কুলে পৌছে গেল মুহুর্তে। তার পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাসে গিয়ে দেখল গণিত স্যার অংক করাচ্ছেন। এইসব বিদঘূটে কঠিন অংক যিনি করান তিনি নিজেও গণিতের মতোই বিদঘূটে প্রকৃতির। সারাক্ষণ ছাত্রছাত্রীদের গাধার দলেরা বলে গালিগালাজ করেন। আজ তবে শিক্ষা দেয়ার উপযুক্ত সময়। সে ঝটপট স্যারের পিছনে চলে গেল। পিছনে গিয়ে স্যারের পিঠে চিমটি কাটা শুরু করল। স্যার আহ্ উহ্ বলে আওয়াজ শুরু করলেন। ছাত্ররা হাসতে লাগল। স্যার ধমক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে তার পিঠটা একটু দেখে দিতে বললেন। কোন পোকা- টোকা বসেছে কি না। সবার আগে ক্লাসের সবচেয়ে পাজি ছেলে হাবলু স্যারের পিছনে গিয়ে বলল, কিছু দেখা যায় না স্যার। শার্টটা না খুললে কী করে বুঝবো? স্যার অগত্যা অনন্যোপায় হয়ে শার্ট খোলা শুরু করলেন। ঠিক তখনি সাফওয়ান দৌড়ে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ঢুকে স্যারের হাত থেকে তার সিগারেটটা টেনে নিয়ে অংক ক্লাসের দিকে ছুটে চললো আর প্রিন্সিপাল স্যার দৌড়ে সিগারেটটার পিছু নিলেন। সেই ক্লাসের সামনে এসে অংক স্যারকে খালি গায় দেখে তিনি সিগারেটের কথা ভুলে গিয়ে অংক স্যারের দিকে গটমট চোখ করে তাকালেন। অংক স্যার কাচুমাচু হয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তার শার্ট পড়া শুরু করলেন। প্রিন্সিপাল স্যার তড়িঘড়ি সকল শিক্ষককে নিয়ে মিটিং ডাকলেন। বিষয়, ক্লাসরুমে অংক স্যারের খালি গায়ে হওয়া। ক্লাস ফেলে রেখে সকল টিচার এক সাথে হয়েছেন বিষয়টা নিষ্পত্তি করার জন্য। মিটিং শুরু হল। তখন সাফওয়ান ও ভেসে ভেসে মিটিং শুনছিল। প্রিন্সিপাল স্যার বিশাল টেনশনে। স্যারদের যদি এমন মতিভ্রম হয় তাহলে তারা ছাত্রদের পড়াবে কী করে? টেনশনে তিনি সিগারেট ধরালেন। তখন সাফওয়ান আবারো তার সিগারেট টেনে নিল। আস্ত একটা জ্বলন্ত সিগারেটকে ভেসে থাকতে দেখে সকল টিচাররা চিৎকার শুরু করে দিলেন। সিগারেট ভেসে ভেসে গিয়ে টিচারদের গায়ে লাগার চেষ্টা করতে থাকল। একবার ভুগোল স্যারের শার্টে লেগে শার্ট পুুড়িয়ে ফেলল, তো বাংলা ম্যাডামের শাড়িতে লেগে শাড়ি ঝলসে ফেলল। ভয় পেয়ে টিচাররা যখন রুম থেকে বেরুতে গেলেন তখন সাফওয়ান বুদ্ধি করে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিল। সবাই ভয়ে আরো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন। তখন সাফওয়ান সকল ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে পুরো ঘটনাটা বলে তার উদ্দেশ্য বলল। সাফওয়ানের অভিনব উদ্দেশ্য শুনে সবাই সেই মিটিং রুমকে ঘিরে দাড়ালো। টিচাররা চিৎকার করে দরজা খুলে দিতে বললেন। কিন্তু সকল ছাত্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে দেখতে থাকল।

তখন গম গম শব্দে সাফওয়ান কথা বলে উঠল।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা,
আমরা আপনাদের যথেষ্ট সম্মান করি। কিন্তু আপনারা কি আমাদের কথা কখনো ভাবেন?

টিচাররা সবাই একে অন্যের দিকে তাকাতে থাকলেন।

আপনারা আমাদের কথা মোটেও ভাবেন না। আপনারা পড়াশুনা করার জন্য এতো চাপ দেন সারাক্ষণ যে আমরা একটুখানি সময় খেলা করার সুযোগটাও পাই না। সারাক্ষণ কেবল পড়া আর পড়া। শুধু স্কুলে পড়লেও হবে না । আপনাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়তে হবে। অন্য স্কুলের অন্য টিচারের কাছেও পড়লে হবে না। আপনাদের কাছে গিয়েই পড়তে হবে। নয়তো আপনারা পরীক্ষার খাতায় মার্কস দিবেন না। অথবা প্রশ্নটা এমন করে তৈরী করে করবেন যেন যারা আপানদের কাছে পড়ে তারাই পাশ করতে পারে। আপনারা কি আপনাদের স্বার্থপর এই দিকটা কখনো ভেবে দেখেছেন? আপনারা তো শিক্ষক সমাজ। আপনারাই নিজেরাই তো বলেন একটা সমাজকে গড়ে তুলবে তার শিক্ষকেরা।নিজেদের এই হীনমন্য স্বভাব নিয়ে কী করে একটা সমাজ বা জাতিকে উচ্চে তুলে নেবেন?

টিচাররা সবাই চুপ। মাটির দিকে চেয়ে আছেন।

গমগম শব্দ আরো বলে চললো:
তারপর এই যে আমাদের জন্য এতো এতো পড়ার বই রেখেছেন। কী লাভ এতোকিছু পড়িয়ে। আপনারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না? দেখেন না, উন্নত বিশ্বে কী করে আনন্দের সাথে পড়ানো হয়? আপনারা কেউ কখনো বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছেন কোথাও? মিটিং সভা সমিতি করেছেন? আমদের ব্যাগের ওজন কমানোর চেষ্টা করেছেন কেউ? আপনাদের নিরানন্দ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আমাদের অধিকাংশরা এখন আর পড়াশোনায় মনোযোগী না। আপনারা কি আমাদের জন্য কিছু করছেন?

শিক্ষকরা সবাই এবার মাথা নেড়ে তাদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করলেন। তারপর সবাই একযোগে বললেন, তাদের ছেড়ে দিতে। বাসায় যেতে দিতে।

ভূতটা আবার বলল,
না, আগে আপানারা কথা দেন। আপনারা আমাদের পড়া নিয়ে কোনরকমের ব্যবসা করার চিন্তা করবেন না। আাপনার এখন থেকে আমাদের সকলের ভাল নিয়ে ভাববেন, কাজ করবেন।

বাইরে থেকে সকল ছাত্ররা একযোগে চিৎকার করে উঠল,
কথা দেন। কথা দেন। দিতে হবে। দিতে হবে।

এবার সকল শিক্ষক ভয় পেয়ে গেলেন আরো। অগত্যা কথা দিলেন আজ থেকে তারা ছাত্রদের কল্যাণের জন্য ভাববেন। ছাত্রদেও আনন্দময় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলবেন। শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার কথা ভাববেন না আর।

শিক্ষকদের প্রতিজ্ঞা শুনে ছাত্ররা খুশিতে চিৎকার কর উঠল। দরজাটিও খুলে গেল আচমকা।

আর ৫ ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে দেখে সাফওয়ানও তাড়াতাড়ি নিজের পড়ার টেবিলে ফিরে এল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: "মানুষ গড়ার কারিগর"রাই, আজ মানুষ না।।
আজ থেকে তারা ছাত্রদের কল্যাণের জন্য ভাববেন। ছাত্রদেও আনন্দময় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলবেন। শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার কথা ভাববেন না আর। আহা!! সত্যিই যদি এমন হতো!!

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৪৭

বাকোশপোলের কালাম বলেছেন: ভাই আপনার অনেক আগে যে গল্পগুলো লিখতেন সেগুলো দিয়ে যদি একটা পিডিএফ বানিয়ে আরো অনেক মানুষকে আপনার অসাধারন লেখা গুলো পড়ার সুযোগ করে দেই (বিনামূল্যে অবশ্যই) তাহলে কি আপনি অনুমতি দিবেন?

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:০৩

কয়েস সামী বলেছেন: shobgulo golpo porchen bole apnake onek dhonnobad.

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:০৪

কয়েস সামী বলেছেন: hu. oboshoi. pdf korle to valoi hoy.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.