নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প: সাফওয়ানের স্প্যাশাল স্মার্ট-ফোন।

১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৪০


সাফওয়ান আর তার বন্ধু রিদওয়ান সন্ধ্যাবেলা খেলা শেষে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ হিসহিস শব্দে দুজনই সতর্ক হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দেখতে পেল দুই হাত পরিমাণ লম্বা একটা সাপ তাদের সামনে ফণা তুলে দাড়িয়ে। এটা দেখে ভয় পেয়ে রিদওয়ান উল্টো ঘুরে দিল এক দৌড়। সাফওয়ান কিন্তু ভয় পেল না। সাপটার ফণা তুলার ভঙ্গিটা তার কাছে মোটেও আক্রমণাত্মক বলে মনে হল না। সে ভাবল, সাপটা নিশ্চয়ই ক্ষুধার্ত। তাই সে দাদুর জন্য কেনা এনার্জি প্লাস বিস্কিটের প্যাকেটটা খুলে সাপটার সামনে রেখে দিল। সাপটা এগিয়ে গিয়ে বিস্কিটের ঘ্রাণ নিয়ে মুখে লাগাল। কিছুটা হয়তো খেল, হয়তো খেল না, সাফওয়ান ঠিক ঠিক বুঝতে পারল না। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সাপটা তার হিসহিস কণ্ঠে কথা বলে উঠল-
-বাহ! জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ইশ্বর। সৃষ্টিকর্তার ক্ষুদ্র এক জীবের প্রতি তোমার মমতা দেখে আমি মুগ্ধ। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, খোকা।
প্রথমে ভয় পেলেও সাফওয়ান শীঘ্রই নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল-
-তুমি বুঝি মানুষের মতো কথা বলতে পার?
-আমি হচ্ছি সাপেদের রাণী। তোমাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে দেবী মেনে আমার পূজা করে। তাই মানুষের সকল কথা বুঝা আমার কর্তব্য।
সাফওয়ান কিছু বুঝতে পারল, কিছু পারল না। তাই সে কিছু না বলেই চুপচাপ দাড়িয়ে থাকল। সাপটা আবার কথা বলে উঠল-
-তোমার উপর খুশি হয়ে আমি তোমাকে একটা বর দিতে চাই। কী চাও তুমি?
-বর মানে কী?
-বর মানে জানো না? তুমি কোন ক্লাসে পড়?
-আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তাই এখনো সকল বাংলা শব্দের অর্থ শিখতে পারি নি।
-ও আচ্ছা। আমি বলে দিচ্ছি তবে। বর শব্দের অর্থ হচ্ছে- বিবাহের পাত্র।
এটা শুনে সাফওয়ান মুচকি একটা হাসি দিলে সাপটি আবার কথা বলে উঠল।
-তবে এর আরেকটা অর্থ আছে। আর তা হল, দেবতা বা মহৎ কোন ব্যক্তির কাছে প্রার্থিত কোন বস্তু। আমি তোমাকে দ্বিতীয় অর্থটার কথা বলেছি। সোজা বাংলা বললে হয়, তুমি আমার কাছে কিছু একটা চাও, যা আমি তোমাকে উপহার দিতে চাই।
-যা চাইবো, তাই দিতে পারবে?
-অবশ্যই। তুমি চেয়েই দেখো।
সাফওয়ান এমন অদ্ভুত সমস্যায় আগে কখনো পড়ে নি। কেউ তাকে কখনো এভাবে যা খুশি তাই চাইতে বলে নি। তাই সে চিন্তায় পড়ে গেল। সাফওয়ান কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছে না দেখে সাপটি বলল,
-দাড়াও আমি তোমাকে সাহায্য করছি। তুমি কী করতে পছন্দ কর?
-খেলতে পছন্দ করি।
-কী খেলতে পছন্দ কর?
সাফওয়ান কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলল,
আমি তো অনেক ধরণের খেলাই পছন্দ করি, তবে সবচেয়ে পছন্দ করি আম্মুর মোবাইলে গেমস্ খেলতে।
-এই তো সমস্যার সমাধান আমরা পেয়ে যাচ্ছি তাহলে। তুমি বললে, তুমি তোমার আম্মুর মোবাইল দিয়ে গেমস খেল। আর কার কার মোবাইলে গেমস খেলার সুযোগ পাও?
-আমি আম্মুর মোবাইলটাই বেশির ভাগ সময় ব্যবহার করি। মাঝে মাঝে ফুপির মোবাইলটা লুকিয়ে নিয়ে এসে খেলি। আর আব্বু আর দাদুর মোবাইল তারা কখনো আমাকে ধরতে দেন না।
-তার মানে দাড়ালো তোমার নিজের কোন মোবাইল নাই?
-না, নাই।
-তাহলে একটা নতুন সুন্দর স্মার্ট ফোন যদি তোমাকে উপহার দেই, কেমন হয়?
সাফওয়ানের সারা শরীর শিরশির করে উঠল। একেবারে আস্ত একটা সত্যিকারের স্মার্ট ফোন তার নিজের হবে এমন কল্পনাও তো সে তার সারা জীবনে কখনো করেনি। তার চোখ মুখ দেখেই সাপটি বুঝে ফেলল, স্মার্ট ফোন দিলে সাফওয়ান অনেক খুশি হবে। তাই সে বলল,
-এবার একটু চোখ বুজোতো সাফওয়ান।
সাফওয়ান সত্যি সত্যি চোখ বুজল আর সাথে সাথে তার হাতের মুঠোয় কিছু একটার অস্তিত্ব টের পেল। সে জিনিসটাকে আরো শক্ত করে ধরল। সাপটি এবার সাফওয়ানকে চোখ খুলতে বলল।
চোখ খুলেই সাফওয়ান তো অবাক। তার হাতে সত্যি একটা স্মার্ট ফোন। কালো রঙের স্মার্ট ফোনটা ঠিক যেন আব্বুর ফোনটার মতোই।
সাপটি জিজ্ঞেস করল, তুমি খুশীতো সাফওয়ান?
সাফওয়ানের মুখে তখন কোন কথা নেই।
সাপটি আরো বলল, এ মোবাইল ফোনটা কিন্তু আর সব ফোনের মতো না।এটা একটা স্প্যাশাল স্মার্টেফোন। এর মধ্যে প্রচুর গেমস ইন্সটল করা আছে। আর প্রতিটা গেমসে আছে অন্যরকম একটা ব্যাপার।
-কী ব্যাপার?
-সেটা তুমি খেলা শুরু করলেই বুঝতে পারবে। যাও। এখন বাসায় গিয়ে পড়তে বসো। আর সবসময়ঢ মনে রাখবে, পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা। তুমি যদি পড়া শুনা বাদ দিয়ে খেলতে বসে যাও তবে কিন্তু এ মোবাইলটা আর কখনো কাজ করবে না। নষ্ট হয়ে যাবে সারা জীবনের জন্য।
-ঠিক আছে।

সাপটি চলে গেলে সাফওয়ানও তার বাড়ির পথ ধরল। আর তখনি রিদওয়ান পেছন থেকে দৌড়ে এল। সাফওয়ান তাকে পুরো ঘটনাটি বলল, আর মোবাইল ফোনটা দেখাল। মোবাইল দেখে রিদওয়ানের আফসোসের আর সীমা থাকল না। সে কেন যে তখন দৌড়ে চলে গিয়েছিল! নইলে তো সেও বর হিসেবে একটা মোবাইল ফোন পেত। সে মনে মনে ঠিক করল এরপর থেকে যে কোন প্রাণী দেখলে তাকে খাবার খেতে দিবে, আদর করবে। দৌড়ে পালাবে না অথবা প্রাণীটাকে মারতে যাবে না।


২.
সাফওয়ান বাড়ি ফিরে সবাইকে মোবাইল ফোনটি দেখাল আর সাপের গল্পটি বলল। বাসার কেউ কিন্তু সাফওয়ানের সেই উদ্ভট গল্পটি বিশ্বাস করল না। উল্টো সবাই ভাবল, সাফওয়ান নিশ্চয়ই কারো কাছ থেকে মোবাইলটি চুরি করে নিয়ে এসেছে। তাই সবাই তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। সেই সাথে সবার পক্ষ থেকে সাফওয়ানকে আল্টিমেটামও দেয়া হল, সত্যি কথা না বলা পর্যন্ত সাফওয়ানের সাথে কেউ কথা বলবে না। সবার আচরণে সাফওয়ানের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। পরদিন বিকেল বেলা মনটা কিছুটা ভাল হলে সাফওয়ান মোবাইলটা হতে নিয়ে স্যুইচ অন করল। ও মা! সাপের কথা তো একদম ঠিক। এত্তো এত্তো গেমস ইন্সটল করা আছে স্মার্ট ফোনটার ভেতর! সাফওয়ান সবচেয়ে পছন্দ করে রেসিং গেমগুলো। কোন কিছু না ভেবেই সাফওয়ান ইনস্টল করা কার রেসগুলোর মধ্যে ফরমুলা ওয়ানে ক্লিক করে খেলা শুরু করল। আর তখনি সাফওয়ানের কেমন কেমন লাগা শুরু হল। মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকল। তার মনে হল তার হাতে কোন মোবাইল ফোন নাই। তার মনে হল সে সত্যি সত্যি একটা কারের ভেতর। তার হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং। সে তবু ভয় পেল না। সে তার বাবাকে অনেক দিন গাড়ি চালাতে দেখেছে, দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করেছে। আর তাছাড়া গেইম খেলতে খেলতে কার রেসিংটা তার কাছে বেশ মামুলি একটা ব্যাপার বলেই মনে হয় এখন। সে মনে সাহস নিয়ে গাড়ি চালাতে থাকল। গাড়ি চালাতে এতো যে মজা লাগে এটা সে অনুভব করা শুরু করল।

৩.
সাফওয়ানের শিমুল খালা ইংল্যান্ডে থাকেন। শিমুল খালুর (খালুর নামটা সবসময় মনে রাখতে পাওে না বলে তাকে সে শিমুল খালু বলেই ডাকে) খুব প্রিয় একটা শখ হচ্ছে স্টার স্পোর্টসে ওয়ার্ল্ড কার রেসিং কন্টেস্টগুলো দেখা। তার প্রিয় রেসারের নাম হচ্ছে জার্মানীর মাইকেল শুমেখার। তিনি এখন রিটায়ার্ড হলেও সবার অনুরোধে আবার রেসিং ট্র্যাকে ফিরে এসেছেন শেষবারের মতো। ফর্মুলা ওয়ান- ২০১৭ সিজনে ফিরে এসেছেন তারে সেই চিিদিনের প্রিয় লাল রঙের ফেরারি গাড়ি নিয়ে। তাই খুব উত্তেজনা নিয়ে আজকের কন্টেস্টটা দেখতে বসেছেন খালু। খেলা দেখছেন আর মনে মনে প্রার্থণা করছেন শুমেখার যেন প্রথম হয়। আটাত্তর ল্যাপের সেই রেসের শেষ ল্যাপ এখন। এতোক্ষণ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। পুরান চাল ভাতে বাড়ে এটা আবারো যেন প্রমাণ করতে চলেছেন মাইকেল শুমেখার। ৭৭ টি ল্যাপের প্রতিটা ল্যাপেই তিনি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ ল্যাপে এসে কোথা থেকে জানি আরেকটা ফেরারি গাড়ি এগিয়ে গেল শুমেখারকে ছাড়িয়ে। কমেন্টেটর সহ সবাই অবাক হয়ে গেল এ ঘটনায়। তাদের সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে শুমেখার দ্বিতীয় স্থান নিয়ে রেস শেষ করলেন। শিমুল খালুর মনটা মহুর্তে খারাপ হয়ে গেল। তিনি টিভিটা বন্ধ করার জন্য রিমোট কন্ট্রোলটা হাতে নিলেন। আর তখনি তার হাত থেকে রিমোটটি পড়ে গেল।
তিনি চিৎকার করে তার মেয়েকে ডাকতে থাকলেন,
-ওয়ারিশা! ওয়ারিশা! দেখে যা! দেখে যা! সাফওয়ানকে দেখে যা! সাফওয়ান শুমেখারকে হারিয়ে দিয়েছে।

তিনি লাফাতে শুরু করলেন। ওয়ারিশা দৌড়ে এসে সাফওয়ানকে দেখে অবাক হয়ে গেল। সাফওয়ান কী করে গ্র্যান্ড প্রিক্সে যাবে? এটা তো অসম্ভব! টিভিতে তখন সাফওয়ানের হাতে প্রাইজ তুলে দেয়া হচ্ছে। শিমুল খালা তাড়াতাড়ি সাফওয়ানের আম্মুকে ইমোতে কল দিয়ে টিভি অন করতে বললেন। টিভিতে স্টার স্পোর্টস খুলে তিনিও অবাক। তাড়াতাড়ি সবাইকে ডেকে আনলেন। সবার মনে প্রশ্ন এই এক ঘন্টা আগেও তো সবাই সাফওয়ানকে তার রিডিং রুমের সোফায় মোবাইল হাতে নিয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছে। এটা তো অসম্ভব। সবাই শুনতে পেল টিভিতে নাম ঘোষণা করা হচ্ছে- সাফওয়ান ফ্রম বাংগাদেশ, দ্যা ল্যাটেস্ট গ্র্যান্ড প্রিক্স চ্যাম্পিয়ন!

সবার তখন মাথা খারাপ অবস্থা। সবাই তাই দৌড়ে তখন সাফওয়ানের পড়ার রুমে ছুটলেন। ওই তো সাফওয়ান সোফাতে শুয়ে আছে। হাতে ধরে আছে মোবাইল। কিন্তু কেমন যেন মূর্তির মতো স্থির হয়ে আছে সে। চোখের পলকটাও ফেলছে না যেন। সাফওয়ানকে ডাকা হল, কিন্তু কোন নড়াচড়া নেই তার। তাকে সবাই মিলে ঝাঁকুনি দেয়া শুরু করল। সাফওয়ানের আবার কী হয়ে গেল! কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করার পর সাফওয়ান নড়ে উঠল। জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে? সুহা ফুপি তখন বুদ্ধি করে আবার টিভি রুমে চলে গেলেন ব্যাপারটা বুঝার জন্য। কিন্তু নাহ! ততোক্ষণে স্টার স্পোর্টসে অন্য খেলা শুরু হয়ে গেছে!

যাই হোক অবশেষে সবাই সাফওয়ানের কথা বিশ্বাস করল। সবাই বুঝতে পারল মোবাইলটা আসলেই চুরি করে নিয়ে আসা না। এটা সাপের রাণীর দেয়া বিশেষ একটা উপহার!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.