নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প: গল্প যখন সত্যি

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫১


সাফওয়ানের আম্মুর আংটি হারিয়ে গেছে। তাই বাসার সবার মন খারাপ। বাইরে থেকে বাসায় ফিরে আংটিটি আঙুল থেকে খুলে ওয়ার্ডরোবটার উপরই রেখেছিলেন। কিন্তু পরদিন সকাল থেকে আংটিটা আর নেই। নেই মানে কোথাও নেই। ওয়ার্ডরোবের উপরে নেই, ভেতরে নেই, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে নেই, মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায়ও নেই। এতো শখ করে কেনা একটা আংটি হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে সবার মন খারাপ হবেই। মন খারাপ নেই কেবল একজনের। তার নাম সাফওয়ান। সাড়ে চার বছরের সাফওয়ানের কাছে আংটির চাইতে খেলনার গুরুত্ব অনেক বেশি থাকবে- সেটাই স্বাভাবিক। তাই সে দিব্যি খেলনা নিয়ে ব্যস্ত। আংটি না হারিয়ে যদি কোন খেলনা হারিয়ে যেতো তবে হয়তো সে তার আম্মুকে কিছুটা হলেও স্বান্ত্বনা দেয়ার বা তার কাছ থেকে স্বান্ত্বনা নেয়ার চেষ্টা করত। তাই রাতে শুবার সময় যখন আমি তার আম্মুকে বলছি, একটা আংটি হারিয়ে গেছে তাতে কী, আসছে ঈদে আরো দুইটা আংটি কিনে নিও, তখন সাফওয়ান আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আংটির গল্প না বাবা, অন্য কোন একটা গল্প বল। আমি ঘুমাবো।
সাফওয়ানকে গল্প বলার আবদার আমি সবসময় রাখি। তাই আজো রাখলাম। তাকে বরাবরের মতো বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা শুরু করলাম। এবারের গল্পটা বললাম সমসাময়িক ঘটনাটা নিয়ে, মানে সাফওয়ানের আম্মুর আংটি হারিয়ে যাওয়া নিয়ে। আপনারা সবাই জানেন, গল্প বলা বা লেখার সময় আমার মনে যা আসে তাই বলি বা লিখি। এবারের গল্পটা ছিল এরকম:
‍"এক দেশে একটা ছেলে বাস করতো। তার নাম ছিল সাফওয়ান। কোন এক রাতে বাবার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে শুনতে একসময় তার ঘুম লেগে গেল। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখল, সে আকাশে সাতার কেটে উড়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে উড়তে উড়তে অনেক উঁচুতে উঠে হঠাৎ সে দেখতে পেল তার পেছন পেছন উড়ে এসেছে তার খেলনা রোবটটা, তার স্কুলের খাতাটা, তার লেখার পেন্সিলটা, তার খেলনা স্পাইডার ম্যানটা আর সাথে সেই পাজী বিড়ালটাও যেটা প্রতিদিন বাসায় ঢুকে চুরি করে একটা কিছু না কিছু খেয়ে যাবেই যাবে। কিছু না ভেবেই সে বিড়ালটার পিছু নেয়া শুরু করল। বিড়ালটা উপরের দিকে কিছুদূর উঠেই নীচে নামতে থাকল। সাফওয়ানও বিড়ালটার পিছু পিছু নিচের দিকে নামতে থাকল। এভাবে অনেকক্ষণ নীচের দিকে নামার পর সাফওয়ান খেয়াল করল বিড়ালটা সাফওয়ানদের রান্নাঘরের পেছনের বারান্দায় নেমে যাচ্ছে খুব সাবধানে। সাফওয়ান কয়েক ফিট উপরে স্থির হয়ে থেকে দেখতে থাকল বিড়ালটার কর্মকান্ড। বিড়ালটা ময়লা রাখার পাত্র এক ধাক্কায় নীচে ফেলে সামনের ডান পা দিয়ে ময়লাগুলো নেড়ে নেড়ে খাওয়ার উপযোগী কিছু আছে কি না খুঁজতে থাকল। কিছুক্ষণ পর সাফওয়ান যে দৃশ্য দেখতে পেল তার জন্য সে মোটেও তৈরী ছিল না। সে দেখতে পেল ময়লার পাত্রটাতে আম্মুর সেই আংটিটা। তারপর সে দেখতে পেল সেই আংটিটা বিড়ালটার পায়ের আঙুলে আটকে গেছে আর বিড়ালটাও আংটি পায়ে নিয়ে দৌড় দেয়া শুরু করেছে। সাফওয়ান এবার বিড়ালটাকে ধরার জন্য সেটার পিছু নিল। কিন্তু বিড়ালটা সাফওয়ানকে দেখে ফেলায় আরো জোরে ছুটতে থাকল। সাফওয়ান দৌড়ে দৌড়ে ছুটতে থাকল বিড়ালের পিছু পিছু। অনেকেই দেখল দৃশ্যটা। যারা যারা সাফওয়ানের পরিচিত, তারাও তার কাছ থেকে কারণ জানতে পেরে বিড়ালের পিছু নিল। সবাই মিলে অনেকক্ষণ দৌড়াদৌড়ির পর একসময় বিড়ালটিকে ধরে আংটি উদ্ধার করতে পারল। সাফওয়ানের আম্মুও আংটি ফিরে পেয়ে অনেক খুশি হলেন।"
গল্পটা শেষ করে সাফওয়ানকে ঘুমিয়ে পড়তে বলে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। যদিও জানি সাফওয়ানের আম্মু আংটি হারাবার কষ্টে তখনও ঘুমাতে পারেন নি। সারাদিন অফিস করার পর ক্লান্ত আমার আসলেই কিছু করার ছিল না তখন।
সকালে উঠার পর কাজের বুয়া আসতেই সাফওয়ানের আম্মু তাকে আংটি বিষয়ক প্রশ্ন করা শুরু করলে আমি আমার পড়াশুনায় মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পর সাফওয়ান ঘুম থেকে জেগে আমার রিডিংরুমে এসে কী জানি খোঁজা শুরু করল। বলা বাহুল্য, আমার জন্য যেটা রিডিং রুম সেটা সাফওয়ানের জন্য প্লেয়িং ফিল্ড। তার সকল খেলনা আমার পড়ার ঘরে ঠেসে রাখা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি খুঁজছো। সে বলল, বিড়াল। রাতে বলা গল্পের কথা আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। মনে পড়ায় বললাম, বাবা বিড়ালটাকে ধরতে হলে তো রান্নাঘরের পেছনের বারান্দায় যেতে হবে। ওখানটাতেই তো এ পাড়ার সকল বিড়ালের আড্ডাস্থল। সে তবু তার খেলনার মধ্যেই বিড়াল খুঁজতে থাকল। থাকুক, আমার তো কোন সমস্যা হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর সাফওয়ান মিটি মিটি হেসে আমার সামনে এসে দাড়ালো। হাত দুটো তার পেছনে। বললাম, হাতে কী? সে হাতদুটো সামনে নিয়ে এল। দেখি, হাতে তার অতি প্রিয় খেলনা টকিং টম। আমি বললাম, এটা তো টম। এটা আবার দেখানোর কী হল? সে টমটির উল্টো পিঠ সামনে এনে ধরল। দেখলাম, পেছনে ব্যাটারি রাখার ঢাকনাটা নাই। ওটা বোধহয় অনেক আগেই কোথাও হারিয়ে গেছে। আর সেই ব্যাাটারি আটকে রাখার জায়গাটায় আটকে আছে একটা আংটি। সাফওয়ানের আম্মুর সেই হারিয়ে যাওয়া আংটি! আমি হাসতে হাসতে সাফওয়ানের আম্মুকে ডাকলাম। ডাকতে ডাকেতই খেয়াল হলো টমটাও তো একটা বিড়াল!
এভাবে বানিয়ে বলা গল্প সত্যি হয়ে গেলে কার না মজা লাগে বলেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:২৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গল্পটা অন্য গল্পের মত কিন্তু লাগলো না (আমার কাছে)।।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

কয়েস সামী বলেছেন: গল্পটাতো সত্যি। হয়তোবা তাই্। পড়ছেন বলে অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এভাবে বানিয়ে বলা গল্প সত্যি হয়ে গেলে কার না মজা লাগে বলেন?

মজা লাগুক না লাগুক আংটিতো পাোয়া গেল ;) হা হা হা

++++

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৫

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.