নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশক-পাপড়ি প্রকাশ

এম.কামরুল আলম

লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেছি ১৯৯৭ সালে। লিখছি কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই। এ পর্যন্ত ছোটদের উপযোগী লেখাই বেশি লিখেছি। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬টি। জাতীয় দৈনিকগুলোর ছোটোদের পাতায় একসময় নিয়মিত লিখতাম। এখনও মাঝে মাঝে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করি। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সোনার সিলেট ডটকম’-এর সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। পাপড়ি প্রকাশ-এর স্বত্ত্বাধিকারী।

এম.কামরুল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সনের জন্ম বৃত্তান্ত

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৪

মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ফসল উৎপাদন ও খাজনা আদায় করা হত হিজরী সন অনুসারে। ফলে দিন তারিখ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতো। দেখা যেত ফসল পাকেনি, কিন্তু পঞ্জিকার হিসেবে ফসল কাটার সময় হয়ে গেছে। এই দিন তারিখের সমস্যা সমাধানের জন্য দরবারের পারস্য দেশীয় পন্ডিত আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে দায়িত্ব দেয়া হয় ফসলী সন বের করার জন্য। সিরাজী হিজরী সনকে রূপান্তরিত করে নতুন ফসলী সন উদ্ভাবন করেন। হিজরী সনকে রূপান্তরিত করে তিনি বেশ কয়েকটি ফসলী সন উদ্ভাবন করেছিলেন। তার এইসব ফসলী সনের বিবর্তিত একটি রূপই হচ্ছে আজকের বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ। অন্যান্য ফসলী সন বিবর্তিত হয়ে আমলী, বিলায়তী (উড়িষ্যা), সুরসান (মহারাষ্ট্র) প্রভৃতিতে কার্যকর হয়েছে।



আমাদের বর্তমান যে ১৪২১ বঙ্গাব্দ এসেছে তা কিন্তু আদৌ ১৪২১ বছর পার করে আসেনি! কী, ব্যাপারটা একটু গোলমেলে মনে হচ্ছে? তা হতেই পারে। শিশু যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন তার বয়স থাকে ০, কিন্তু আমাদের এই বঙ্গাব্দের জন্মের সময়ই তার বয়স ছিল ৯৬৩ বছর! বিষয়টা খুব মজার। সিরাজী সাহেব ৯৬৩ হিজরীকে (১৫৫৬ ঈসায়ী) রূপান্তরিত করে ফসলী সন উদ্ভাবন করেছিলেন। তিনি এই সন ‘শূন্য’ থেকে গণনা না করে তা শুরু করেছিলেন ওই ৯৬৩ থেকেই। এ বিশেষ সংখ্যাটি ধরার পেছনে অবশ্য আরেকটি কারণ ছিল। সেটা হলো পানি পথের দ্বিতীয় যুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনা। সে ঘটনায় বালক আকবর তাঁর মরহুম পিতা হুমায়ূনের বন্ধু বৈরাম খাঁর সহায়তায় পাঠান সেনাপতি হিমুর বাহিনীকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্যকে নিরাপদ করেন। তখন ছিল ৯৬৩ হিজরী মোতাবেক ১৫৫৬ ঈসায়ী। এ ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর পূর্ণবয়স্ক সম্রাট আকবর ফতেহ উল্লাহ সিরাজীকে নির্দেশ দেন ফসলী সন উদ্ভাবনের। লক্ষ্য করার বিষয় যে, ১৫৫৬ ঈসায়ী ও ৯৬৩ হিজরীর মধ্যে সময়ের পার্থক্য হচ্ছে ৫৯৩ বছর। আমরা যদি সংখ্যাটিকে ঈসায়ী বা খৃষ্টাব্দ থেকে বিয়োগ দিই (২০১৪-৫৯৩) তাহলে পাওয়া যায় বঙ্গাব্দ ১৪২১! বিষয়টি সত্যিই আজব, তবে গুজব নয় বটে। এভাবেই হিজরী সনের সঙ্গে বাংলা সনের অনিবার্য সম্পর্কের বাস্তব সম্পর্ক প্রমাণিত হয়।



বর্তমানে হিজরী ১৪৩৫ সন চলছে আর বঙ্গাব্দ চলছে ১৪২১। অর্থাৎ এ দুয়ের মধ্যে প্রায় ১৪ বছরের ব্যবধান ঘটেছে বঙ্গাব্দের জন্মের পর থেকে। এর মূল কারণটি হচ্ছে হিজরী চন্দ্র ভিত্তিক সন আর বাংলা সৌর ভিত্তিক সন। চাঁদের ৩৫৪/ ৩৫৫ দিনে পূর্ণ হয় হিজরী সনের এক একটি বছর। আর সূর্যের ৩৬৫ দিনে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের এক বছর পূর্ণ হয়। এতে করে প্রতি বছর হিজরী ও বাংলা সনের মধ্যে ১০/১১ দিনের তারতম্য ঘটে। তাই প্রতি ৩৩ চন্দ্র বছরে বঙ্গাব্দের সঙ্গে হিজরী সনের তারতম্য ঘটে ১ বছরের। মজার ব্যাপার হলো এ হিসাব অনুযায়ী আমাদের বয়সেও তারতম্য ঘটছে প্রতিনিয়ত! ধরা যাক ইংরেজি বা বাংলা সন অনুযায়ী আপনার বয়স ৩২ বছর। এ ক্ষেত্রে হিজরী সন অনুযায়ী আপনার বয়স হয়ে যাবে ৩৩ বছর!



হিজরী সন থেকে রূপান্তরিত হলেও প্রাচীন ভারতীয় শকাব্দের সঙ্গে বঙ্গাব্দের একটি সম্পর্ক রয়েছে সৌর হিসাব রক্ষণের জন্য। ৯৬৩ হিজরীতে ১৪৭৮ শকাব্দ চলছিল। তাই দেখা যাচ্ছে বঙ্গাব্দের সঙ্গে শকাব্দের পার্থক্য (১৪৭৮-৯৬৩)= ৫১৫ বছর। আর বঙ্গাব্দের এই সংখ্যাটি যোগ করলে (১৪২০+৫১৫)= বর্তমান ১৯৩৫ শকাব্দ পাওয়া যায়। আবার শকাব্দের চেয়ে ৭৮ বছরে বড় ঈসায়ী সন বা খৃষ্টাব্দ।



অবশ্য বাংলা সনের মাসগুলো শকাব্দ থেকেই নেওয়া। প্রাথমিক অবস্থায় মাসের নামগুলো ফার্সিতে রাখা হয়েছিল। যেমন – বৈশাখ= বাহমান, জ্যৈষ্ঠ= খুর্দদ ইত্যাদি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.