নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাকে কেবলই পিছুটানে!!

কামরুন নাহার বীথি

আমি কিছুটা ভ্রমণবিলাসী আর ফুলের প্রতি আছে আমার আজন্ম ভালোবাসা

কামরুন নাহার বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস!

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪৯





আজ (১৭ই এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস। বাংলাদেশিদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি চিরস্মরনীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিব নগর থেকে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র জারি করা হয় এবং এর মাধ্যমে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। ২৬ শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া স্বাধীনতার ঘোষনাকে এর মাধ্যমে প্রতিপাদন করা হয়। বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। । বংগবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি থাকার কারনে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে এই যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।এই সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে



মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিনের মধ্যেই, ১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে (পরবর্তী নাম মুজিবনগর) স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহন করে। কয়েক প্লাটুন ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধা শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে গার্ড অব অনার প্রদান করে। শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১টায়। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা' গানটি পরিবেশন করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষনা করেন অতঃপর তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষনা করেন এবং পরিচয় করিয়ে দেন। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভাষণ দেন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।



মুজিবনগর সরকার:



রাষ্ট্রপতি: বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি)

উপরাষ্ট্রপতি: সৈয়দ নজরূল ইসলাম (রাষ্ট্রপতির অনুপুস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন)

প্রধানমন্ত্রী: তাজউদ্দিন আহমদ

আইন ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী: খোন্দকার মোশতাক আহমদ

অর্থমন্ত্রী: এম. মনসুর আলী

স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী: এ. এইচ. এম কামারুজ্জামান

সশস্ত্রবাহিনী প্রধান: জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী

চিফ অব স্টাফ: মেজর জেনারেল আবদুর রব







বাম দিক থেকে----

** সৈয়দ নজরুল ইসলাম

**তাজউদ্দিন আহম্মদ

** খোন্দকার মোস্তাক আহম্মদ

**এ এইচ এম কামরুজ্জামান

** ক্যাপ্টেন মনসুর আলী

** কর্ণেল এম, এ, জি ওসমানী









গার্ড অব অনার







বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ











পাক সেনাদের নির্যাতন চিত্র







পাক সেনাদের আত্মসমর্পন





মুজিবনগরে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। শত কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে নানা অবকাঠামো উন্নয়নসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতি মানচিত্র ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলাদেশের স্মৃতি মানচিত্র রয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে দেখানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেশের বেনাপোল, বনগাঁও, বিরল, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে শরণার্থী গমন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস, আসম আবদুর রবের পতাকা উত্তোলন, শাহজাহান সিরাজের ইশতেহার পাঠ, শালদাহ নদীতে পাক-বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ, কাদেরিয়া বাহিনীর জাহাজ দখল ও যুদ্ধ, পাক-বাহিনীর সাথে কামালপুর, কুষ্টিয়া ও মীরপুরের সম্মুখ যুদ্ধ, শুভপুর ব্রিজের দুপাড়ের মুখোমুখি যুদ্ধ, চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দর ধ্বংস, পাহাড়তলী ও রাজশাহীতে পাক-বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, জাতীয় শহীদ মিনার ধ্বংস, জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলা, সচিবালয়ে আক্রমণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও জগন্নাঞ হলের ধ্বংসযজ্ঞ, তৎকালীন ইপিআর পিলখানায় আক্রমণ, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, বুদ্ধিজীবি হত্যাসহ নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।



এছাড়া মানচিত্রের চতুর্দিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের সাহসী নেতৃত্ব এবং ভূমিকার ছবিসহ ৪০টি ভাস্কর্য শিল্পকর্ম নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মধ্যে তৎকালীন সেনাপ্রধান, উপ-প্রধান, বীর উত্তমদের, জাতীয় চার নেতার, তারামন বিবি, সেতারা বেগমের মূর্তমান ছবিসহ ব্রঞ্জের তৈরি ২৯টি অবক্ষ ভাস্কর, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ৩০ নেতার তৈলচিত্র রয়েছে।











মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলাদেশের স্মৃতি মানচিত্র । এতে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে দেখানো হয়েছে। ( সম্পূর্ণ মানচিত্র আমি একই ছবিতে আনতে পারি নাই)







বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে শরণার্থী গমন







হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস







ঢাকা আক্রমণ







জাতীয় শহীদ মিনার ধ্বংস





মুজিবনগর স্মৃতিসৌধঃ- ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্থ সিরামিকের ইট দিয়ে একটি আয়তকার লাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত।



স্মৃতিসৌধটি ২৩ টি ত্রিভূজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে গঠিত। যা বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ২৩ টি দেয়াল (আগষ্ট ১৯৪৭ থেকে র্মাচ ১৯৭১)- এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে।



স্মৃতিসৌধটির ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলিকে বোঝানো হয়েছে।



স্মৃতিসৌধের ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলো মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৯টি জেলাকে বুঝানো হয়েছে।

বেদীতে আরোহণের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে। যা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তা বুঝানো হয়েছে।



স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আম বাগান ঘেঁষা স্থানটিতে মোজাইক করা আছে তার দ্বারা বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগর যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণে, কিন্তু শপথ গ্রহণের মঞ্চটির সাথে স্মৃতিসৌধের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য এখানে এটিকে উত্তর দিকে স্থান দেয়া হয়েছে।



স্মৃতিসৌধের মূল ফটকের রাস্তাটি মূল স্মৃতিসৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে। এখানে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।পশ্চিম পাশে প্রথম দেয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে যাকে রক্তের সাগর বলা হয়।



লাল মঞ্চ থেকে যে ২৩টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুরি-পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে। যা দিয়ে ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতাকে প্রতীক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।









তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

*** ২০১৪ সালে আমি মুজিবনগর পরিদর্শন করেছিলাম। ছবিগুলো সে সময়ের তোলা। (স্মৃতি সৌধের ছবি গুগল থেকে নেয়া)।




************************************************

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০০

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++++

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: আন্তরিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!!!!

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৫৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ কামরুন্নাহার আপা। ইতিহাসের পাশাপাশি সুন্দর ছবি তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: ছবিগুলো প্রায় এক বছর আগে তোলা ছিল!। এক বছর পরে, ঠিক এই দিনে তা' পোষ্ট করলাম!
ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগছে!!
অনেক শুভেচ্ছা প্রামানিক ভাই!!

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৯

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: আমাদের মুজিবনগরকে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৬

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে!! মেহেরপুর -এর মানুষগুলোও খুব ভাল!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.