নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামহয়্যারইনব্লগ এর আর তেমন কোন জনপ্রিয়তা নেই..আর তেমন কেউ পড়েও না... তাই এই ব্লগেই আমার লেখাগুলো প্রকাশ করা সবচেয়ে বেশী নিরাপদ মনে করছি...

মোঃ কামরুজ্জামান কনক

জ্ঞান অর্জন করতে হলে লেখার কোন বিকল্প নেই। একটি লেখা পড়ে যতোটা না জ্ঞান অর্জন হয়, একটি লেখা লিখতে তার থেকেও হাজারগুন বেশী জ্ঞানের দরকার হয়।

মোঃ কামরুজ্জামান কনক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জি.পি.এ-৫ এর সাত কথন

০৫ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০১


একটা সময় ছিলো, যখন কোন স্টুডেন্ট জিপিএ-৫ পেলে তাকে ভিন গ্রহের কোন প্রাণী মনে করা হতো। তাকে নিয়ে গবেষণা করা হতো। সে কিভাবে এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছে সে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতো। আর সেই সময়টি আমাদের ফেলে আসা খুব বেশী দিন হয়নি। এই তো সেদিনের কথা, ২০০৯ সালে আমি যে বার SSC পরীক্ষার্থী ছিলাম সেটাই ছিল এই রকম যুগের শেষ বছর। কারণ তার ঠিক পরের বছর থেকে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শুরু হলো নাম তার সৃজনশীল পদ্ধতি। যেখানে আমাদের সময় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন ছাত্র-ছাত্রীও জিপিএ ৫ পায়নি সেখানে সেই সৃজনশীলতার ছোঁয়াতে ঠিক তার পরের বছরে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৪ জন (বা এর আশেপাশে-সঠিক সংখ্যাটা এখন মনে নেই)। এবং তার পরের বছরে আর্থাৎ ২০১১ সালে জিপিএ ৫ এর সংখ্যাটা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় দিগুন হয়ে গেল। জিপিএ ৫ এর প্রোডাকশন সেই যে শুরু হলো, এর ধারা এখনও সমান ভাবে অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতি বছর জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মান আর অবস্থা কেমন সেটা নিয়ে কথা বলে শুধু শুধু সময় অপচয় করার কোন মানে হয়না। কারণ বর্তমানের জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা বাদে বাকী সবাই সেটা জানে। আমরা সবাই তো গিনিপিগ চিনি তাই না? ওই যে খরগশের মতো ছোট ছোট প্রাণী যেগুলোকে একটি বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীরা যখনই নতুন কোন ঔষধ বা ড্রাগস আবিষ্কার করে যেটা পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়, তখন সেটা একটা গিনিপিগ এর উপরে প্রয়োগ করে। তার পরে সেটা কিভাবে কাজ করে সেটা লক্ষ করে। এখন যদি ঔষধটিতে কোন ভুল থাকে বা কোন সাইড-ইফেক্ট কাজ করে তখন সেই গিনিপিগটা মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারে যে এই ঔষধটি মানুষের ব্যবহার যোগ্য না। তারা আবার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে তারপরে আবার আরেকটা গিনিপিগ এর উপরে প্রয়োগ করে। এভাবে চলতে থাকে যতক্ষণ সঠিক মেডিসিনটি আবিষ্কার না হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সরকার, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের কাছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা হচ্ছে এক একটা গিনিপিগ, এছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর গবেষণার শিকার হচ্ছে বর্তমানের এক একটা শিক্ষার্থী নামের গিনিপিগেরা। প্রতি বছর নতুন নতুন প্রবিধান, শিক্ষাপদ্ধতি আর নিয়ম কানুন জোর করে শিক্ষার্থীদের উপরে চাপিয়ে দিয়ে দেখা হচ্ছে যে সেটা কিভাবে কাজ করে। আর এর পিছনে শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের একটাই উদ্দেশ্যঃ দেশের শিক্ষার হার বাড়ানো। তাই এই শিক্ষা নামের মেডিসিনটার সাইড-ইফেক্ট এর কারণে শিক্ষার্থী নামের গিনিপিগ গুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে একটি রোগ যার নাম জিপিএ-৫…

শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের এই যাবৎ কালের সব চেয়ে হাস্যকর আর মজার পদক্ষেপ,যেটা গতো কয়েক বছর থেকে চলে আসছে তার নামঃ প্রশ্নফাঁস। আজব দেশের আজব সব কার্যক্রম যেটা হয়তো বাহিরের কান্ট্রির কোন মানুষ বিশ্বাসও করবে না যে এরকম টা হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে বসে থেকে এর চেয়েও ভয়ংকর অনেক কিছু দেখা যায়। একটি শিক্ষার্থীর জীবনে SSC ও HSC পরীক্ষা হচ্ছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। শিক্ষার হার বাড়ানোর চক্করে শিক্ষা মন্ত্রানালয় এসব শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়েও ছাড় দেয়নি। শিখিয়েছে কিভাবে পরীক্ষার আগের দিন ফেসবুক থেকে প্রশ্ন ম্যানেজ করে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে শিক্ষার হার হয়তো কিছুটা বাড়বে, কিন্তু এই সব শিক্ষার্থীরা যে ভবিষ্যতে দেশের কতবড় ক্ষতি সাধন করবে সেটা কল্পনারও বাইরে। কিন্তু আফসোস সেই দিন গুলো দেখার জন্য এখনকার শিক্ষা মন্ত্রানালয় এর ক্রিয়েটিভ মানুষেরা অতোদিন বেঁচে থাকবে না। আর বেঁচে থাকলেও হয়তো বোধ-বুদ্ধি থাকবে না। কারণ এই সময়টাতেই যখন নেই, বৃদ্ধ কালে কিভাবে থাকবে বলুন? আর বাংলাদেশের শিক্ষার এই খারাপ অবস্থা করার জন্য আমি শিক্ষা মন্ত্রানালয় এর এই সব মানুষদেরই দায়ী করবো।এই সব মানুষদের জন্যই অদূরভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫ পেলে অপমানে আর লজ্জাতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবে।আসলেই সেই দিন আর বেশী দূরে নেই।

এই বছরে তোমরা যারা জিপিএ ৫ পাওনি তাদের আমি জানায় অভিনন্দন। তোমরাই এই দেশের সম্পদ, দেশের অহংকার। কারণ তোমরা জিপিএ ৫ না পেয়ে দেখিয়ে দিয়েছো যে তোমরা পারো। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাতে জিপিএ ৫ পাওয়ার থেকে বড় দূর্ভাগ্য আর অন্য কিছু হতে পারে না। সেটা হয়তো এখন বুঝতে না পারলেও ভবিষ্যতে ঠিকই বুঝতে পারবে। তোমার যে সব বন্ধুরা জিপিএ ৫ পেয়েছে তাদের জন্য জানাচ্ছি সমবেদনা। আজ সত্যিই আমি গর্বের সাথে বলতে পারি… আমি কোন জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্র নই আর কোন দিন ছিলামও না। আর এটাই আমার অহংকার।

© কনক ২০১৭

ফেসবুকে আমি -- Káñàk The-Bøss



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১

সালমান মাহফুজ বলেছেন: জিপিএ ফাইভ যারা পায় তারা যে সবাই উপরিওয়ালাদের দানে পায় কিংবা যারা পায় না তারা যে আসল জিনিয়াস- এটা কোনো যুক্তিযুক্ত কথা না । আবার জিপিএ ফাইভ পাইয়া যারা নিজেদের হেডম ভাবতে শুরু করে তারা যে আসল বলদ এটা নিয়ে দ্বিমত নাই । শিক্ষা-ব্যবস্থায় গলদ যেমন আছে তেমনি আমাদের অভিভাবকবৃন্দও কম না । জিপিএ ৫ না পাইলে আজকাল তো মিষ্টিও মুখে পড়ে না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.