নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশায়

মোঃ আরিফিন ইসলাম।

আরিফিন ইসলাম

মোঃ আরিফিন ইসলাম একটি সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা করি। কর্মস্থলঃ thereport24.com (IT support)

আরিফিন ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত ব্যক্তির জন্য করনীয় , পবিত্র কোরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীহ হাদীস কি বলে! আর আমরা কি করি।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩৬

কোন মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করে, তখন তার আপনজনেরা স্বজন হারানোর ব্যথায় থাকে চরমভাবে ব্যথিত। ভাবতে থাকে যে, আপনজন চিরদিনের জন্য চলে গেলেন ; তার উপকার হয়—এমন কিছু করা যায় কি-না। এ ব্যাপারে আন্তরিকতার কোন অভাব থাকে না। সন্ধান করতে থাকে কী করা যায় তার জন্য। কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানের সাথে ভাল সম্পর্ক না থাকার কারণে অনেকেই এক্ষেত্রে সঠিক দিক-নির্দেশনা পায় না, তাই হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত। ফলে, সে কল্যাণকর মনে করে এমন কিছু করে, যা মৃত ব্যক্তির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। এমন কাজ করে, যা কুরআন বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং, তার কাজগুলো বিদআত ও সুন্নাহ পরিপন্থী হওয়ার কারণে গুনাহ হয়। ভাবতে গিয়ে অবাক না হয়ে পারা যায় না যখন দেখা যায় যে, হাদীসে রাসূলের এ সম্পর্কে স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা আছে তা পাশ কাটিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার তথা বিদআতের আশ্রয় নেয়া হয়। তাই দেখা যাক এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে কী নির্দেশনা রয়েছে।





এক. মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা :

আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে—

‘যারা তাঁদের পরে এসেছে তারা বলে ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের যে সকল ভাই পূর্বে ঈমান গ্রহণ করেছে তাদের ক্ষমা কর।’[সূরা হাশর : ১০]



এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সকল মুসলিম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তাদের মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। তাই বুঝে আসে মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাগফিরাতের দুআ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। যদি এটা তাঁদের জন্য কল্যাণকর না হত, তবে আল্লাহ তা করতে আমাদের উৎসাহিত করতেন না। এমনিভাবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ-প্রার্থনা করার কথা কুরআনের একাধিক আয়াতে উল্লেখ করেছেন।



হাদীসে এসেছে—



সাহাবী আবু উসাইদ আস-সায়েদী রা. কর্তৃক বর্ণিত যে, বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর এমন কোন কল্যাণমূলক কাজ আছে যা করলে পিতা-মাতার উপকার হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন : হ্যাঁ, আছে। তাহল, তাদের উভয়ের জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা। উভয়ের মাগফিরাতের জন্য দুআ করা। তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা ও তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা।[আবু দাউদ ও ইবনে মাজা]



হাদীসে এসেছে—



আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে—

১. সদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)

২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা)

৩. সৎ সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে।[মুসলিম ও নাসায়ী]

এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে যে : সন্তান যদি সৎ হয় ও পিতা-মাতার জন্য দুআ করে তবে তার ফল মৃত পিতা-মাতা পেয়ে থাকেন।



দুই. মৃত ব্যক্তির জন্য দান-সদকাহ করা ও জনকল্যাণ মূলক কাজ করা :

হাদীসে এসেছে—



আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল যে, আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছেন, কোন কিছু দান করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় যদি তিনি কথা বলতে পারতেন তবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিতেন। আমি যদি তার পক্ষে সদকা করি তাহলে তিনি কি তা দিয়ে উপকৃত হবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হ্যাঁ।[বুখারী : ১৬৩১ ও মুসলিম ৩৫৯১]



হাদীসে এসেছে—



সাহাবী সা’দ বিন উবাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। কী ধরনের দান-সদকা তার জন্য বেশি উপকারী হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘পানির ব্যবস্থা কর’। অত:পর তিনি (সা’দ) একটা পানির কূপ খনন করে তার মায়ের নামে (জন সাধারণের জন্য) উৎসর্গ করলেন।[নাসায়ী ও মুসনাদ আহমদ]



হাদীসে আরো এসেছে-



ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যু বরণ করেছে। যদি আমি তার পক্ষে ছদকাহ (দান) করি তাহলে এতে তার কোন উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি আমার একটি ফসলের ক্ষেত তার পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিলাম।[নাসায়ী, ৩৫৯৫]



তিন. কুরবানী করা :



যেমন হাদীসে এসেছে—



আয়েশা রা. ও আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কুরবানী দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিং ওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটা তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানী করলেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়েছে ও তার রাসূলের রিসালাত পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কুরবানী করেছেন।[ইবনে মাজা]



চার. মৃতদের পক্ষ থেকে তাদের অনাদায়ি হজ উমরা, রোযা আদায় করা :



বহু সংখ্যক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তির অনাদায়ি হজ, উমরা, রোযা—ইত্যাদি আদায় করা হলে তা মৃতের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। যেমন তাদের পক্ষ থেকে তাদের পাওনা আদায় করলে তা আদায় হয়ে যায়।[মুসলিম, ১৯৩৫]



পাঁচ:



আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘মুমিনের ইন্তেকালের পর তার যে সকল সৎকর্ম তার কাছে পৌঁছে তা হল, সে জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে যাওয়া যার প্রচার অব্যাহত থাকে, সৎ সন্তান রেখে যাওয়া, কুরআন শরীফ দান করে যাওয়া, মসজিদ নির্মান করে যাওয়া, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা নির্মান করে যাওয়া, কোন খাল খনন করে প্রবাহমান করে দেওয়া অথবা এমন কোন দান করে যাওয়া যা দ্বারা মানুষেরা তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর উপকার পেতে থাকে।’[ইবনে মাজা, হাদীসটি সহীহ]



শেষ কথা



আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর অনেক প্রিয়জন, আপনজন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্তেকাল করেছেন প্রিয়তমা সহধর্মিণী খাদিজা রা., মেয়ে রুকাইয়া রা., ছেলে কাসেম, তাইয়েব, ইবরাহীম। প্রিয়তম চাচা হামযা রা. তাঁর প্রিয় আরো বহু সহচর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকাল হল। তাঁর সাহাবায়ে কেরাম শোকে দিশেহারা হলেন। ব্যথিত ও মর্মাহত হলেন। কিন্তু তারা কি কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইছালে ছাওয়াবের জন্য কোন অনুষ্ঠান করেছেন? সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর যুগে খলীফাতুল মুসলিমীন আবু বকর রা. ইন্তেকাল করলেন। উমর রা. উসমান রা. আলী রা. শহীদ হলেন। তারা কি তাদের জন্য কোন অনুষ্ঠান করেছেন? করেননি কখনো। তাই কোন রকম দ্বিধা ছাড়া বলা যায় যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবায়ে কেরাম, তাদের পরবর্তীকালের তাবেইন ও ইমামগণ কেউই কারো জন্যে কুলখানী, ফাতেহা পাঠ, চেহলাম, মাটিয়ালভোজ, মীলাদ, খতমে তাহলীল, কুরআন খতম, কাঙ্গালী ভোজ, ওরস, ইছালে ছাওয়াব মাহফিল, উরসে কুল, কবরের কাছে কুরআন পাঠ, মৃত্যু-দিবস পালন, কবরে ও কফিনে ফুল দেয়া, এক মিনিট নীরবতা পালন, জানাযার নামাজের পর মুনাজাত—কোনটিই করেননি।



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

অর্থ : যে আমাদের এ ধর্মে এমন কিছুর প্রচলন করবে যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।



অতএব মৃত ব্যক্তির জন্য এমন কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না যা হাদীসে রাসূল(সাঃ) দ্বারা প্রমাণিত নয়। এগুলো সবই বেদআতের মধ্যে গণ্য হবে।



যে সকল নেক আমল মৃত ব্যক্তির জন্য নিবেদন করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুমতি ও অনুমোদন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, শুধু সে সকল আমলই মৃত ব্যক্তির ইছালে ছাওয়াবের জন্য করা যাবে। এ ছাড়া অন্য কোন নেক আমল ইবাদত-বন্দেগী মৃত ব্যক্তির ছাওয়াবের জন্য প্রেরণ করা যাবে না। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. সহ বহু আলেম ও ধর্মবেত্তাগণ এ মত পোষণ করেন।[মজমু আল-ফাতাওয়া : ইবনে তাইমিয়া রহ.]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩১

জাফরুল মবীন বলেছেন: খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।

আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.