নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশায়

মোঃ আরিফিন ইসলাম।

আরিফিন ইসলাম

মোঃ আরিফিন ইসলাম একটি সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা করি। কর্মস্থলঃ thereport24.com (IT support)

আরিফিন ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

একাদশের ইতিহাসে ভুল : মুক্তিযুদ্ধ ‘১৩ দিনের যুদ্ধ’ !

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১২

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম পত্রের একটি বইয়ে বাংলাদেশের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকে মাত্র ১৩ দিনে ‘সংক্ষেপিত’ করা হয়েছে! বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্ধৃতি যেমন ভুলভাবে দেওয়া হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন স্থানে বিখ্যাতদের নামের বানান ভুল, সাল-তারিখের ভুল, একই বিষয় বিভিন্ন স্থানে হুবহু কপি করে তুলে দেওয়াসহ নানা অসঙ্গতি দেখা গেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হাসান বুক হাউসের ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস : ১৭৫৭-১৯৭১’ বইটির লেখক প্রফেসর জে. এম. বেলাল হোসেন সরকার। তিনি রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত হন। এর আগে বগুড়ার গাবতলী সরকারি কলেজ ও সরকারি আযিযুল হক কলেজেও তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন তিনি। বইটির প্রকাশক ড. ভক্তিময় সরকার।

২০১৫ সালের জুন মাসে বইটির তৃতীয় সংস্করণ বের হয়, যা বর্তমানে রাজধানীর বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় কলেজে পাঠ্য করা হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালের জুনে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে ২০১৪ সালের জুনে এর দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়।

বইটির ২২৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর গঠিত হয় দুই দেশের যৌথ কমান্ড। এরপর শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। আর ‘মাত্র ১৩ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনী ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আত্মরক্ষার পথ খুঁজতে থাকে।’

একই তথ্য ২২৯ পৃষ্ঠায়ও বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর। আর বইটিতে উদ্ধৃত করা যৌথ কমান্ডের হিসাব ৬ ডিসেম্বরের পরে হলেও যুদ্ধকে ১৩ দিন বর্ণনা করা ভুল। ভারতের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে বিষয়টির একটি যোগসূত্র হতে পারে, সেটি হচ্ছে ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল।

বইটির ২০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ লেখা হয়েছে এভাবে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।”

একই পৃষ্ঠার নীচে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।”

এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যেমন ভুল করে লেখা হয়েছে, তেমনি এর ধারাক্রমও ভুল করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, তবু এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ’ এ কথাটির পরে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। কিন্তু বইয়ে বলা হয়েছে উল্টো করে। এবং প্রথম প্যারায় ‘এ দেশের মানুষের’ পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘দেশকে’ মুক্ত করে ছাড়ব।

বইয়ের ২০৩ পৃষ্ঠায় প্রথম প্যারায় বলা হয়েছে, ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র’ আসাদুজ্জামান নিহত হন। আবার দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয় “শহীদ আসাদ সিটি ‘ল’ কলেজের ছাত্রাবস্থায় নিহত হন”। আবার তৃতীয় প্যারায় বলা হয় ‘২৫’ জানুয়ারি আমানউল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নিহত হন। ‘এরপর আন্দোলন জোরদার হলে মাত্র চার দিনেই আইয়ুব খানের পতন ঘটে।’ কিন্তু মূলত আইয়ুব খানের পতন ঘটে ২৫ মার্চ।

প্রকৃতপক্ষে ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান ২০ জানুয়ারি শহীদ হন, ২৫ জানুয়ারি নয়। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন না। অন্যদিকে বইটিতেও তার তথ্যগুলো যে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা স্পষ্ট।

বইয়ের ২২২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৭ এপ্রিল ৪টি সেক্টর ভাগ করা হয়, পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় ১১ এপ্রিল সেনাবাহিনীকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনার জন্য মূলত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশকে ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছিল, সেটি ১০ এপ্রিল নয়।

বইয়ে বলা হয়েছে, ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মূলত ঢাকসু কার্যালয়ে ৫ জানুয়ারি এ পরিষদ গঠিত হয়। এ ছাড়া বলা হয়েছে, ‘২০ মার্চ’ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান অপসারিত হন, কিন্তু এটি হবে মূলত ২২ মার্চ।

২০৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ১৯৭০-এর নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ ‘২৮৮টি আসন’ লাভ করে, সংরক্ষিত আসন বাদ দিয়ে হিসাব করলে সংখ্যাটি ঠিক আছে। কিন্তু একই বাক্যে কেন্দ্রীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফলাফল সংরক্ষিত আসনসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আর সংরক্ষিত আসনসহ প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ আসন পেয়েছে ২৯৮টি।

পরের পৃষ্ঠায় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রদত্ত ছকে বলা হয়েছে, পি. ডি. পি. ‘৭টি’ আসন পেয়েছে, কিন্তু দলটি আসন পেয়েছিল ১টি।

২০৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়, ১৯৭১ সালের ‘২০ মার্চ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়, পরের পৃষ্ঠায় বিষয়টি শুদ্ধভাবেই (২ মার্চ) তথ্যটি প্রদান করা হয়েছে।

এ পৃষ্ঠায়ই বলা হয়েছে, ‘১০ মার্চ’ ঢাকায় ইয়াহহিয়া খান ১২ জন নেতার সমন্বয়ে ঘরোয়া বৈঠক আহ্বান করে বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধু ৪টি শর্তারোপ করে বৈঠকের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। বইয়ে বর্ণিত ৪টি শর্ত ৭ই মার্চের ভাষণের, নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে ৭ই মার্চের আলোচনায় এ চারটি শর্তকে ভাষণের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকৃত ঘটনা হল ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ ইয়াহহিয়া ঢাকায় আসেন। এবং তার সাথে বঙ্গবন্ধু আলোচনায়ও বসেন।

২১৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘২৫ মার্চ রাতেই’ ইয়াহহিয়া ও ভুট্টো ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু একই প্যারায় আবার বলা হয়েছে, ভুট্টো ২৬ মার্চ সকালে সেনাবাহিনী পরিবেষ্টিত হয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন।

বইয়ে আগরতলা মামলার বর্ণনায় বলা হয়, ১৯৬৮ সালের ২১ এপ্রিল ‘এম এ রহমানের’ নেতৃত্বে এ মামলার বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়, কিন্তু ওই ব্যক্তির নাম এস এ রহমান।

এ ছাড়া ১৯৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ১৯৬৮ সালের ‘১০ জুন’ কুর্মিটোলা সেনানিবাসে মামলা শুরু হয়। কিন্তু মূলত তথ্য হবে ‘১৯ জুন কুর্মিটোলা সেনানিবাসে এ মামলার শুনানী শুরু হয়।’

যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে বইটিতে বলা হয়, ১৯৫৩ সালের ‘৪ ডিসেম্বর’ যুক্তফ্রন্ট গঠন হয়। বইটিতে খিলাফতে রব্বানি পার্টি যুক্তফ্রন্টে অংশ নেয় বলে বলা হয়েছে। কিন্তু মূলত ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর ময়মনসিংহে তৎকালীন আওয়ামী মুসলীম লীগের কাউন্সিলে যুক্তফ্রন্টে গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এর অন্য অংশীদার ছিল কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজাম-ই-ইসলাম পার্টি ও গণতন্ত্রী দল।

১৬২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে ৩০৯ আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ‘৩০০টি আসন’ পায় যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আসন পেয়েছিল ২২৩টি। এর বাইরে জাতীয় কংগ্রেস ২৪টি, তফসিলী ফেডারেশন ২৭টি, খেলাফতে রব্বানী ২টি, খ্রিষ্টান ১টি, বৌদ্ধ ১টি, কম্যুনিস্ট পার্টি ৪টি ও মুসলীম লীগ ৯টি আসন পেয়েছিল।

১৯৫ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় প্যারায় ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হয়। এ প্যারার শেষাংশের ৬ লাইন হুবহু তৃতীয় প্যারার তুলে দেওয়া হয়েছে।

বইটির ১৯ পাতায় বলা হয়, ১৭২৭ সালে মুর্শিদকুলী খানের মৃত্যুর পর সুজাউদ্দীন ক্ষমতা গ্রহণ করেন। কিন্তু একই পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ১৭২৬ সালে সুজাউদ্দীনের শাসনামলে আলীবর্দী খাঁ বিহারের নায়েব নাজিব নিযুক্ত হন।

বইটিতে বলা হয়েছে, ভাস্কো-দা-গামার নেতৃত্বে একটি অভিযাত্রিক দল ১৪৯৮ সালের ‘২০ মে’ ভারতের কালিকট বন্দরে এসে উপস্থিত হয়, কিন্তু মূলত দলটি এ বন্দরে পৌঁছায় ২৭ মে।

বইটিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামের বানানও ভুলভাবে উপস্থাপন করতে দেখা গেছে। যেমন ১৯ পাতায় কখনো আলীবর্দী খাঁ, কখনো ‘আলীবর্দী খান’, আবার সরফরাজ খাঁ ও ‘সরফরাজ খান’ লিখা হয়েছে।

এ ছাড়া ‘জওয়রলাল’ নেহেরু (পৃষ্ঠা-১৬২), মি. জিন্নাহ (পৃষ্ঠা-১৭৪), শেখ মুজিবুর ‘রহামন’ (পৃষ্ঠা-১৯৬), ‘আতাউল ওসমান গনি’ (পৃষ্ঠা-২৩১ ও পৃষ্ঠা-২৩৯), মেজর মীর ‘শওতকত’ আলী (পৃষ্ঠা-২২৩) লেখা হয়েছে। যেখানে নামের ভুল ও অতিবিশেষণ প্রয়োগ করা হয়েছে।

এ ছাড়া বইটিতে জেনারেল অরোরা পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু মূলত জেনারেল মানেকশ এ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বইয়ে প্রদত্ত হাসান বুক হাউসের অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন দেওয়া হলে কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে তৃতীয় সংস্করণেও বইটির এ ধরনের ভুল থাকার পরও কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েনি বিষয়টি।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আসলে অনুমোদন দেওয়া ছাড়া বইগুলোতে আমাদের আর অন্য কোনো কাজ থাকে না। বইটির অসঙ্গতিগুলো আমাদের প্রদান করলে আমরা বইটি বাতিল করে দিব।’

বইয়ের ক্ষেত্রে নজরদারী করা হয় না স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু একটি সম্মতি গ্রহণ করে বই অনুমোদন দেই, সেটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কিছু লেখা যাবে না।’

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবির সাথে কথা বলব। এবং কেন এ ধরনের ভুল হল তা ধরব।’
সংগ্রহঃ অনলাইন নিউজ সাইট - দ্য রিপোর্ট২৪ থেকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.