নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশায়

মোঃ আরিফিন ইসলাম।

আরিফিন ইসলাম

মোঃ আরিফিন ইসলাম একটি সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা করি। কর্মস্থলঃ thereport24.com (IT support)

আরিফিন ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ছাত্রদলের ঘুরে দাঁড়াতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না’

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১২

সানাউল হক নীরু। আশির দশকে ছাত্রদল তথা দেশের ছাত্র রাজনীতির অন্যতম এক তুখোড় নেতার নাম। দেশের ছাত্র রাজনীতির পীঠস্থান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতিতে যারা ইতিহাস গড়েছেন নীরু তাদেরই মধ্যে অন্যতম একজন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নামক বিশাল ছাত্রসংগঠন যাদের হাতে গড়া তারাই ভাল বলতে পারবেন নীরুর বীরত্বগাথার ইতিহাস। ১৯৮৯ সালের ডাকসুতে মনোনয়নবঞ্চিত হলেও ছাত্রদলের ডাকসু জয়ের নেপথ্য রূপকার মনে করা হয় নীরুকেই। শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসেবে নীরুর সংগ্রামী যাত্রা শুরু হয়েছিল ছাত্রদল দিয়ে। ছাত্রদলের প্রবল শক্তি আর বিশাল কর্মী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি বার বার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সানাউল হক নীরুরা অদৃশ্য কারণে পড়ে রয়েছেন আড়ালে। মূল্যায়ন হয়নি বিএনপিতে।

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা ও পর পর দু’বার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দলগতভাবে বার বার ক্ষমতায় যাওয়া দল বিএনপির এখন চলছে দুর্দশা, দুরবস্থা। এর মধ্যে দল ও দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দলটি। নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা দীর্ঘদিনের অভিমান ভুলে এক সময়ের তুখোড় ছাত্রদল নেতা নীরুকেও দলে ফিরিয়ে আনছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দিতে যাচ্ছেন দলের কোনো গুরুদায়িত্ব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে ছাত্রদলের সেই আপোসহীন ছাত্রনেতা নীরুর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপন। আলাপে নীরুও অকপটে বলেছেন দল থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকা নিয়ে নিজের কষ্ট, ছাত্রদলের দুরবস্থা, বিএনপির রাজনীতি ও সমকালীন রাজনীতির কথা।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের দলে মূল্যায়ন নেই : অতীতের স্মৃতিচারণ করে সানাউল হক নীরু বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন আমরাই সফল করেছি। এরশাদের শাসনামলের নয় বছরের চার বছরই ছিলাম কারাগারে আর বাকি পাঁচ বছরেও নির্যাতন-নিপীড়ন, হুলিয়া ও নানামুখী প্রতিকূলতায় আদর্শের সংগ্রাম করেছি। নিজের ভাইকে হারিয়েছি। হারিয়েছি অসংখ্য ছাত্রদল নেতাকর্মীদকে। যারা শহীদ জিয়ার আদর্শে নিজেদের জীবন সংগঠনের পেছনে রীতিমত উৎসর্গ করেছেন। অথচ আমরা কিছুই করতে পারিনি তাদের জন্য। এ আফসোস বয়ে বেড়াতে হয়।

তৎকালীন ছাত্ররাজনীতির, বিশেষ করে ছাত্রদলের রাজনীতি প্রসঙ্গে সানাউল হক নীরু বলেন, ‘২৪ বছরে আমি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। সেই বয়সে সারাদেশের নেতা। অথচ দুঃখের বিষয় আজকে ৪০ পেরিয়েও ছেলেরা ছাত্রদলের নেতা, সদস্য হতে পারে না। সকলে আমাকে বলত ছাত্রদলের মাস্টারমাইন্ড। কোথা থেকে টাকা আসবে, যত কিছু পলিটিক্যাল সব কিছু ফেস করেছি। দুদু ভাই, বাবলু ভাই পারেনি। আমি পেরেছি। সব কিছু দৃশ্যমান। বিপদে সবার আগে ফেস করছি। পরিবারের মতো হয়ে কাজ করেছি। দলে দলে জেলার নেতারা আসত, দেখা করেছি। পার্টি অফিসে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেঝেতে পেপার বিছিয়ে সবাই রাত কাটিয়েছি। এককাপ চা, একটি সিঙ্গাড়া ভাগ করে এক সঙ্গে খেয়েছি। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) কাছ থেকে কর্মসূচি নিয়েছি। মাঠের কর্মী ও কেন্দ্রের নেতারা একত্রে কাজ করছি। এতে জেলার নেতা খুশি হয়েছে। উজ্জীবিত হয়েছে। ছাত্রদলে আজ কোথায় সেই রাজনীতি? ছাত্রদলের নেতা হলে আজকে অনেকেই গাড়ির মালিক হয়। বিলাসী জীবনের অধিকারী হয়। আমাদের সময় এমনটা ছিল না। সবাই জিয়ার আদর্শের রাজনীতি নিয়েই বিভোর ছিলাম। আমাদের কারো মধ্যে টাকা কামানোর মানসিকতা ছিল না। এখন জেলার নেতারা এসে কেন্দ্রের নেতাদের দেখা পায় না। ঢাকায় এসে পড়ে বিপদে। থাকার জায়গা নেই, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। রাস্তায়ও তো তাদের ভয় আছে। বিপদ আছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাই সংগঠনের প্রাণ। অথচ আজ তাদের কোনো মূল্যায়ন নেই।’

নীরু আরও বলেন, ‘আজকে ছাত্রদের কাছে ছাত্রদলের নেতৃত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। নেতৃত্ব হতে হবে আদর্শের সৈনিক। সাংগঠনিক। ছাত্রদলকে ছাত্রদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার। নেতাদের হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী। সঠিক নেতৃত্ব পেলে ছাত্রদল আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। ছাত্রদলের ঘুরে দাঁড়াতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। শুধু উদ্যোগ ও সঠিক নেতৃত্ব প্রয়োজন।’

সানাউল হক নীরু বলেন, ‘আগে ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, কৃষক দল নিয়ে একটা কমপিটিশন আসত। নেতৃত্বের তীব্র প্রতিযোগিতা হতো। এমন অনেক ছাত্রদলের নেতা ছিলেন যারা কোনো পদ পাননি। কিন্তু তারা সংগঠন থেকে চলে যাননি। হাজার হাজার যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা ছিলেন, যারা সাংগঠনিক, যারা রাজনীতিটা ভাল বুঝতে পারেন এবং যোগ্য, আমরা তাদের পিক করতাম।’

নির্বাহী কমিটির কমপক্ষে অর্ধেক সদস্য জীবনে বিএনপি করেননি : বিএনপির বর্তমান দুরবস্থা সম্পর্কে নীরু বলেন, ‘আজকে নির্বাহী কমিটির কমপক্ষে অর্ধেক আছে যারা জীবনে বিএনপি করেনি। কোনোভাবে পয়সা দিয়ে কমিটিতে এসেছে। বলা ঠিক না, অমুক নেতার সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ৫ লাখ, ৩ লাখ, ২ লাখ দিয়ে কমিটিতে এসেছে। এ সব রাজনীতি হতে পারে না।’

নীরু আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীরা চায় তারা মিছিল করবে, স্লোগান করবে, চিকা মারবে। বিএনপিতে এখন এ সব কিছু নেই। রাজনীতির মাঠ লাগে না, কর্মী লাগে না। হঠাৎ করে শুনলাম কমিটি হয়েছে। বিএনপির কমিটিতে এমন লোক আছে যাদের অনেকে চেনে না। চেনেন না বিএনপি চেয়ারপারসনও। তাহলে রাজনীতির দরকার কী? চেনা পরিচয় লাগে না। একদিন নাকি গুলশান কার্যালয়ে শিমুল বিশ্বাস কয়েকজন নির্বাহী কমিটির সদস্য নিয়ে আসলেন ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য। ম্যাডাম বললেন, যাও যাও আমি এদেরকে চিনি না। ম্যাডাম তাদের ঢুকতেই দিলেন না। অনুমতি দিলেন না। তাড়িয়ে দিলেন। এই হচ্ছে বিএনপির অবস্থা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডামের উপদেষ্টা কারা তা দেখতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য কারা? যাদের ফিফটি পারসেন্ট জীবনে রাজনীতি করেননি। দলে অনেকে টাকা দিয়ে ঢুকছে। সব কিছু মিলিয়ে বিএনপিতে রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’

নীরু বলেন, ‘বিএনপিকে রাজনীতি করতে হবে। রাজনীতিতে কৌশলী হতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া প্রয়োজন, সেই সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়ে থাকে তিন মাস পর। এ থেকে দলকে বের হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রণব মুখার্জী কংগ্রেসের লোক হলেও রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সঙ্গে দেখা না করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি কংগ্রেসের লোক হলেও তিনি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। এ সৌজন্য প্রাপ্য ছিল। কিন্তু যারা পরামর্শ দিল দেখা করা যাবে না সেই দালালরা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। সবই ভুল সিদ্ধান্ত। এবার আন্দোলনে যাওয়াও ভুল ছিল। এটি ছিল সরকারের ফাঁদ। সরকার বোমা মেরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করল। তাতে কী লাভ হল? সরকারের কর্মসূচি আমরা কেন সফল করব? আমি বুঝলাম না। আমি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নাহ শাহ চাচাকে বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জের পর সরকার আর সভা করতে দেবে না। গাজীপুরের জনসভা তারা করতে দেবে না। তিনি হেসে বলেছিলেন, গাজীপুরে আমাদের মেয়র আছে না। আমি বলেছিলাম মেয়র আছে তো কী? ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। সরকার কিন্তু আর জনসভা করতে দেয়নি।’

সানাউল হক নীরু আরও বলেন, ‘ম্যাডাম কী করেন? ম্যাডামের পার্টি অফিসে বসা উচিত সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন। সপ্তাহে এক দিন (শুক্রবার) বিশ্রাম নিয়ে ২ দিন গুলশান অফিসে কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বাকি ৪ দিন পার্টি অফিসে বসা উচিত। বিরোধী দলের নেতা থাকাকালীন তাকে একদিনের জন্য মিন্টো রোডের বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ে বসতে দেওয়া হয়নি নিরাপত্তার অজুহাতে। এ থেকে তাকে বের হতে হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর সম্পর্কে নীরু বলেন, ‘ম্যাডামের লন্ডনে চিকিৎসা ও দলের ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরে। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দলের বিষয়ে তিনি নানা সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা দরকারও ছিল। এটা ছাড়া উপায় নেই। দলকে ও রাজনীতিকে তো বাঁচাতে হবে। তিনি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলসহ অন্যান্য দলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এলে দলে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। তাতে সারা দেশেও একটা পরিবর্তন আসবে। তবে তাঁর (খালেদা জিয়া) আসতে মনে হয় একটু বিলম্ব হবে।’

বিএনপিতে ফেরা ও অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়ে নীরু বলেন, ‘আমি এখনো কিছু জানি না। সব জানেন ম্যাডাম ও তারেক রহমান। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তারেক রহমান আমার বিষয়ে ইতিবাচক। রাজনীতি তো স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ করেন না। তারা নীতি নির্ধারক। রাজনীতি করেন মাঠের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল এ সব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আর যুবদল হচ্ছে বিএনপির মূল রাজনীতির জায়গা। আজকে যারা যুবদলের রাজনীতি করবে, কালকে তারাই মূল দল বিএনপির জন্য যোগ্য হিসেবে তৈরি হবে। যুবদলের মাধ্যমে সারাদেশে তিন শ’ আসনে যোগ্য তিন শ’ বিকল্প প্রার্থী তৈরি করা যায়। যারা দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। দায়িত্ব পেলে শুধু রাজনীতির মাধ্যমেই সংগঠনকে সংগঠিত করার চেষ্টা থাকবে।’

নীরু বলেন, ‘দেশের অবস্থা সংকটাপন্ন। দেশ রাজনীতিহীন অবস্থায় চলছে। এ থেকে বের হতে না পারলে সামনে কঠিন সময় আসবে। ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। তবে পরিবর্তন হবে। হতেই হবে। এভাবে চলতে পারে না। ভবিষ্যতে বিএনপি আওয়ামী লীগ হবে। আর আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ হবে।’

অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে সানাউল হক নীরু বলেন, ‘শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসেবে ছাত্রসমাজে নীরু-বাবলুর জন্ম। জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বিচারপতি সাত্তারকে যারা বিএনপির চেয়ারম্যান বানাতে নেপথ্যে কাজ করেছেন সে সব দালালের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্‌দীন হলের ক্যাফেটেরিয়ায় রাতে ছাত্রদলের গোপন বৈঠক করেছি। রীতিমতো বিদ্রোহ। আমাদের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে জালাল আহমেদ, আবুল কাশেম চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু, ফকির আবুল কালাম আজাদ, তরুণ নেতাদের মধ্যে এফএইচ হলের সভাপতি টিপু, কবি জসীমউদ্‌দীন হলের এজিএস ভুলু প্রমুখ ছিলেন। আমরা ঐক্যর প্রতীক হিসেবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব চূড়ান্ত করলাম। অবশেষে আমাদেরই জয় হল। বিএনপির নেতৃত্বের হাল ধরলেন বেগম খালেদা জিয়া। সুবিধাবাদী বিএনপির বিশাল একটি অংশ বড় পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই থাকলেন না। বিএনপি অফিসে তখন বাতি জ্বালানোরও লোক ছিল না। বিএনপির ২০ জন লোকও খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরা ক্যাম্পাস থেকে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে হুলিয়া মাথায় নিয়ে তারুণ্যের মিছিলকে কাছে টেনেছি। নতুন উন্মাদনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণতন্ত্রের মহিমায় আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার শক্তির উৎস ছাত্রদল জেগে উঠল। সেই ছাত্রদলের কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর রোডের কার্যালয়ে সন্ধ্যায় গেলে গোটা ধানমণ্ডিতে খবর হয়ে যেত, বেগম খালেদা জিয়া এসেছেন। আমাদের জীবনের বড় সুখ, আমরা শহীদ জিয়ার রাজনীতিকে পুনর্জীবন দিয়েছি বেগম খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে।’

মাহবুবুল হক বাবলুকে হত্যা করা হয় : মাহবুবুল হক বাবলুর মৃত্যু সম্পর্কে সানাউল হক নীরু বলেন, ‘বাবলু ভাই বোমায় মারা যাননি। বাবলু ভাই হলে তার রুমের বারান্দায় দাঁড়ানো ছিলেন। তার শরীরে বোমার আঘাত লাগেনি। মাত্র একটি গুলিতে, এক গুলিতে বাবলু ভাই মারা যান। কানের পাশে ঠেকিয়ে তাকে গুলি করা হয়। গুলি মাথার পেছনের দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। বোমায় মারা গেছে নূর হোসেন ও বাদল। অন্য একজন আহত হয়। তাদের চেহারা চেনা যায় না, এমন ঝলসানো ছিল।’

তিনি আর বলেন, ‘বাবলু ভাই থাকতেন মহসিন হলের ৪৫৮ নম্বর কক্ষে। গোসল করছিল। তাকে সেখান ডেকে নেওয়া হল ৪২৭ নম্বর কক্ষের সামনে। তার কোমরে ছিল গামছা বাঁধা, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। হাতে ছিল সিগারেট। দাঁড়ানো অবস্থায় তাকে গুলি করা হয়। মাত্র একটা গুলি। তার গায়ের রং ছিল গোলাপী। সেখানে বোমার কোনো স্পট নেই। শুধু গুলির চিহ্নই ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের ভেতর থেকেই বাবলুকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে নিজেদের সংগঠনে, পরিবারে হত্যার সংস্কৃতি চালু হয়। এর ধারাবাহিকতায় আমরা আরও অনেক ভাইকে হারিয়েছি।’

নীরু আরও বলেন, ‘সব কিছু হয়েছে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। জালালকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে বাবলুকে হত্যা করা হয়। আমাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। তিন বছরেরও বেশি সময় আমাকে জেলে রাখা হয়। আমি গ্রেফতার হয়ে জেলে গেলে প্রশাসনের লোকজন বলে নীরু ভাই আপনি গ্রেফতার হলেন, আমরা বাঁচলাম। এখন আর কেউ আপনাকে মেরে ফেলতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দু’ভাইয়ের সঙ্গে ম্যাডামের ভাল সর্ম্পক ছিল। বিশেষ করে বাবলু ভাইকে ম্যাডাম অত্যন্ত আদর করতেন। স্নেহ করতেন। আমাদের সম্পর্ক মা-ছেলের মতো। হয়ত কোনো চক্রান্তের ফসল হিসেবে ম্যাডামকে কেউ আমাদের সম্পর্কে ভুল বোঝাতে পারে। আমরা জানি না। কোনোদিন বুঝতে পারিনি।’

ডাকসু প্রসঙ্গ, খালেদা জিয়া গাড়িতে করে বাসায় নিলেন : ডাকসু নির্বাচনের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে নীরু বলেন, ‘ডাকসুতে প্রার্থী নির্বাচনের প্যানেল করা হয়। দুদু-রিপন-হিরু ও আমান-খোকন-আলম। বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ অন্য নেতারা ছিলেন সেই নির্বাচনে। নির্বাচনে দুদু-রিপন পরিষদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। আমান-খোকন পরিষদ নামমাত্র ভোট পায়। এজিএস প্রার্থী পায় শুধু নিজের ভোট। অথচ বিজয়ী দুদু-রিপন পরিষদকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয় পরাজিত প্রার্থীদের। আমাদের জানানো হয় ওটাই নাকি ম্যাডামের পছন্দ।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারের নয় বছরে যারা একটি মামলারও শিকার হননি, একটিবারের জন্যও গ্রেফতার হননি, এমনকি ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মন জয় করতে পারেননি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দীর্ঘ মিছিলে অংশ নেওয়া স্বতঃস্ফূর্ত নেতাকর্মীর অন্তরকে কাঁদিয়ে তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয় ডাকসুতে।’

নীরু বলেন, ‘বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা আব্দুর রহমান বিশ্বাস, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জরিপ চালিয়ে যখন দেখেন নীরু ছাড়া ডাকসুতে ছাত্রদলের পরাজয় নিশ্চিত। তারা রিপোর্ট করলেন খালেদা জিয়াকে। ম্যাডাম মির্জা আব্বাস ও জাহানারা বেগমকে দিয়ে আমাকে ডাকলেন। সেখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন বাসায়। সেখানে সেদিন খালেদা জিয়ার মা, ভাইও ছিলেন। তখন খালেদা জিয়াই আমাদের আশ্রয়, আমাদের ভালবাসা।’

নীরু বলেন, “গভীর স্নেহে ম্যাডাম যখন বললেন, ‘আমি আমার বাবলুকে হারিয়েছি আর তুমি হারিয়েছ তোমার ভাই। দলের জন্য তুমি জেল খেটেছ, হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরছ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়েছ। আজ তুমি পাশে না দাঁড়ালে আমান-খোকনের জেতার কোনো সুযোগ নেই। তুমি আমাকে ডাকসু দাও। আমি সারাজীবন মনে রাখব।’ ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ১২টা। মায়ের মতো খালেদা জিয়ার অনুরোধ উপেক্ষা করার মতো মনের শক্তি কিংবা ঔদ্ধত্য আমার ছিল না। আমি সম্মতি দিতেই তিনি জানতে চাইলেন ক্যাম্পাসে দলের কোনো নেতাকে নিলে ভাল হবে? বললাম অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বি. চৌধুরীকে জানালেন কাল ক্যাম্পাসে ডাকসুর প্যানেল পরিচিতি সভা। নীরুর সঙ্গে আপনি যাবেন। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বললেন, ১০/১৫ ইকবাল রোডের বাসায় সকাল পৌনে ৯টায় জিপ নিয়ে যাবেন। সেদিন মধ্যরাতের পরই ক্যাম্পাসে খবর চলে যায় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নায়ক নীরু আসবে। সকাল ৯টার দিকে যখন চারুকলার সামনে পৌঁছলাম, গাড়ি থেমে গেল। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে গেলেন কলাভবনের সামনের মঞ্চে। পরদিন মিডিয়ার শিরোনাম ছিল ‘নীরু এলেন কাঁধে চড়ে’। আমি যখন মঞ্চে উঠলাম তখন ডাকসু ভিপি প্রার্থী আমানের নাম শোনা যায় না। চারদিকে শুধু স্লোগান নীরু, নীরু। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয়নি। নীরুকে একনজর দেখার জন্য সবাই ছুটে গেছেন প্যানেল পরিচিতি সভায়। অসহায়, নিষ্প্রভ আমানকে পাশে রেখে ক্যাম্পাস জয় করা সানাউল হক নীরু সজল নয়নে, আবেগাপ্লুত কণ্ঠে মাত্র দু’-চারটি কথা বললেন। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর সমাবেশে নীরবতা নামিয়ে এই প্যানেল শহীদ বাবলুর প্যানেল, এই প্যানেল আন্দোলনের প্যানেল, এই প্যানেল খালেদা জিয়ার প্যানেল। তারপর তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পরই ছাত্রসমাজের রায় চলে গেল আমান-খোকনের পক্ষে। তারপর আর তাদের ফিরে তাকাতে হয়নি। তারও আগে ১৯৮৭ সালে সারাদেশের ছাত্রদলকর্মীদের সরাসরি ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি হলেন জালাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল হক নীরু। ছাত্রদল ও বিএনপির ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম নির্বাচন। এরপর আরেকবার রিজভী আহমেদ-ইলিয়াস আলী কমিটি শেষ উদাহরণ।’

নষ্ট সন্তানরা হয়ে গেল খালেদা জিয়ার সৈনিক : নীরু বলেন, ‘আমরা আমাদের আবেগ, বিশ্বাস আর সাহসে শুধু ম্যাডামের চারদিকে মানববর্মই (ঢাল) গড়ে তুলিনি সেনাশাসনের পতনের জন্য কাঁপিয়েছি রাজপথ। সেদিন কত বড় নেতা দেখেছি। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিকল্প ছিলেন খালেদা জিয়াই। একদিন যে খালেদা জিয়ার রাজনীতির জন্য অকুতোভয় সহোদর মাহবুবুল হক বাবলুকে জীবন উৎসর্গ হতে দেখেছি, নিজের জীবন বিপন্ন করে লড়েছি, মনে হয়েছিল রাজপথে গণতন্ত্রের সংগ্রামে নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মুক্তি পাক। উপরে আল্লাহ আর নিচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী ছাত্র মিছিলের মুখ সাক্ষী রেখে বলতে পারি নিয়তির পরিহাস এতটাই নির্মম যে এরশাদের চার বছর জেলে আর পাঁচ বছর হুলিয়া মাথায় নিয়ে আমি এক রাতের মধ্যে হয়ে গেলাম স্বৈরাচারের দোসর, যে ডা. মিলনকে কোনোদিন দেখিনি, তার খুনের আসামি হয়ে গেলাম। আমাদের স্বপ্নের বিএনপির শাসনামলে আল্লাহর অশেষ রহমতে সত্যের জয় হয়েছিল।

বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ব্যথিত চিত্তে দেখল এরশাদের টাকা খাওয়া কাজী জাফর ও কর্নেল জাফর ইমামের সঙ্গে রাতের আঁধারে বিশ্বাসঘাতকতার কাবিননামায় সই করা ছাত্ররাজনীতির নষ্ট সন্তানরা হয়ে গেল খালেদা জিয়ার সৈনিক।’

নীরু বলেন, ‘খালেদা জিয়া জানেন না সেই সময়ে তার শাসনামলে তারই স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা নীরুকে ৩০ বার জেলবদল করতে হয়েছে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে। ভাই হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে নিজের যৌবন-জীবন আর প্রথম তারুণ্যের সোনালী দিন যে দলের জন্য উৎসর্গ করেছিলাম, সেই দলের কাছ থেকে যে নির্দয় দহন আর যন্ত্রণা পেয়েছি আমার বিশ্বাস তা খালেদা জিয়া জানতেন না।’
সংগ্রহ- তারেক সালমান দ্য রিপোর্ট২৪ থেকে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭

মানবী বলেছেন: যেটুকু জানি নব্বইয়ের গণ আন্দোলনে নীরু আর অভি ছিলো স্বৈরাচারী সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় ও ত্রাসের নাম। একসময়ের তুখোড় ছাত্র সামান্য কয়টি পয়সার জন্য এরশাদের কাছে বিক্রী হয়ে গিয়েছিলো।

নীরুর মতো বিশ্বস্ত দলীয় ব্যক্তিদের খালেদা জিয়া মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে বলেই হয়তো আজ বি এনপির এই দূরাবস্থা। শুধু নীরু নয়, ডঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো বিজ্ঞজন, জিয়াউর রহমানের পরেই বিএনপি'র সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, তাঁকে অ্পমান করে দল থেকে বিদায় করা হয়। বি এন পির মতো একটি বিপুল জনপ্রিয় দল আজ অস্তিত্ব সংকটে এমনি নয়।

অনেক বছর আগে বাবার এক বন্ধু(আওয়ামিলীগের নেতৃস্থানীয়) বলেছিলেন, "আওয়ামিলীগে কোন এডমিন্সট্রেটর নেই, সব পলিটিশিয়ান আর বিএনপি তে কোন পলিটিশিয়ান নেই সব এডমিনিস্ট্রেটর"। কথাটি যে কতো বড় সত্য সময়ের সাথে সাথে জেনেছি।

এখন দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামিলীগ, বিএনপি আর জামাতের হাত থেকে মুক্তি চায়।
সেই সুদিন কখনও আসবে কিনা জানা নেই।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

রাফা বলেছেন: হাসি আসতেছে প্রতিবেদনটি পড়ার পর।ক্ষমতার মসনদে বসে ক্ষমতা লিপ্সু এক জেনারেলের সরকারি তহবিলের টাকায় প্রমোদ ভ্রমনে পাঠিয়ে।আধুনিক অস্র হাতে তুলে দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিলো যে সংগঠনটি সেটাই হোচ্ছে বিএনপি নামক দলের লাঠিয়াল বাহিনি ছাত্রদল।সেই দলেরও নাকি আবার রয়েছে গৌরব-উজ্জল ইতিহাস।৯০-এর আন্দোলন নাকি তারাই সফল করেছিলো!

যতদিন পর্যন্ত আওয়ামি লীগ ও ছাত্রলীগ আন্দোলনে যুক্ত হয় নাই ।১টা চুলও ছিড়তে পারে নাই এরশাদের।তাইতো গো.আজমের ছেলে বলে বিএনপি জামাতের সাহায্য ব্যাতিত ১বারও ক্ষমতায় যেতে পারে নাই ভবিষ্যতেও পারবেনা।প্রকাশ্যে এত বড় কথা বলার পরও একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে দেখিনি মূল দল বা লাঠিয়াল বাহিনি থেকে।

প্রমোদ ভ্রমণে পাঠানোর দিন শেষ ।অন্তিম যাত্রার জন্য প্রস্তুতি চলছে ।
লন্ডন থেকে পরিচালিত দল আর পাকিস্তান থেকে পরিচালিত দলের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য দেখিনা আজকাল।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮

মোগল সম্রাট বলেছেন: ছাত্রদলের ঘুরে দাঁড়াতে ২৪ বছরেরও বেশি সময় লাগবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.