নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশায়

মোঃ আরিফিন ইসলাম।

আরিফিন ইসলাম

মোঃ আরিফিন ইসলাম একটি সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা করি। কর্মস্থলঃ thereport24.com (IT support)

আরিফিন ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব-১ : সবুজেঘেরা গ্রামের রহস্যময় সেই ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ (ভিডিওসহ) (বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের পেছনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

আঁধার ঘনিয়ে এলে ইস্পাতের এই দরজাটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বন্ধ করা হতো।

বারো একরের এই স্থাপনার চারদিকে কাটা হয়েছিল সরু খাল। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দীন উপজেলার শান্ত নিরিবিলি রামকেশব গ্রামের হৃদপিণ্ডেই যেন এক চিলতে বিচ্ছিন্ন ছেঁড়া দ্বীপ। দিনের বেলায় মাদ্রাসায় লেখাপড়া। রাত গভীর হলেই শুরু হতো ‘জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ’। ২০০৯ সালের ২৪ মার্চ। হঠাৎ সেই মাদ্রাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্র আর গ্রেনেড তৈরীর উপাদান। অভিযানে চারজনকে আটক করা হয়। এদের একজন শিক্ষক ও তিনজন কেয়ারটেকার।

সেই সময় র‍্যাবের লে. কর্নেল মুনির হক সেই মাদ্রাসা থেকে ৯-১০টি ক্ষুদ্র অস্ত্র, ক্ষুদ্র অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম, ৩০০০ রাউন্ড গুলি, দু’টি ওয়াকিটকি, দু’টি রিমোট কন্ট্রোল এবং আর্মির ছয় সেট পোশাক উদ্ধার করার কথা গণমাধ্যমকে জানান।

গণমাধ্যমের কাছে সেই সময় তিনি দাবি করেন, ‘আমরা প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করেছি এবং শত শত গ্রেনেড তৈরীর সরঞ্জামও উদ্ধার করেছি। আমরা সাধারণ ইসলামিক বইয়ের পাশাপাশি বিন লাদেন সংক্রান্তও চরমপন্থী বই উদ্ধার করেছি।’

সেই অভিযানে মাদ্রাসা থেকে সাত থেকে আট বছরের ১১ জন শিশুকেও পাওয়া যায়, যারা সবাই ছিল সেখানকার ছাত্র।

অভিযানে অংশ নেওয়া র‍্যাবের আরেক কর্মকর্তা কে এম মামুনুর রশীদ তখন ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা বড় মাদ্রাসা এবং এটা জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো।’

ছিমছাম গ্রামের ভেতর এমন এমন ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ দেখে চমকে উঠে মানুষ। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমেও ঠাঁই পায় এমন সংবাদ। পরে বেশ ক’দিন গণমাধ্যমে উঠে আসতে থাকে সেই মাদ্রাসা নিয়ে নানা খবর। রিমোট দিয়ে দরজা খোলা, গভীর রাতে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের নানা বর্ণনা উঠে আসে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকার পাতায়।

গ্রিন ক্রিসেন্ট মাদ্রাসায় অভিযানের পরদিন (২৫ মার্চ ২০০৯) ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলার ভোগরা এলাকা থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ড. মোস্তফা ফয়সাল ও সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা বাদলকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

তারপর হঠাৎ সব ‘রহস্যজনকভাবে’ হয়ে যায় চুপচাপ। জামিনে ছাড়া পান এর সব আসামীই। অত্যন্ত গোপনে ফয়সালকে বিশেষ ফ্লাইটে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিটেনে। ফয়সালের এমন রহস্যময় প্রস্থান জন্ম দেয় আরও প্রশ্নের।

আসলেই কী হতো সেখানে? ফয়সালের আসল পরিচয় কী? আসলেই কি সেটা জঙ্গি ঘাঁটি ছিল? নাকি এর পেছনের রয়েছে আরও বড় কোনো রহস্য? এক সময় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যায়। আর তাতেই দেখা দেয় অনেক রহস্য।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নেপথ্যের অজানা অনেক তথ্য। ঘটনার পরপরই র‌্যাব বাদেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ফয়সালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্সেও নেওয়া হয় তাকে। সেখানেই ফয়সাল প্রকাশ করেন তার আসল পরিচয়। সে-সময় জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ ও এমআই-৫ এর এজেন্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া ও বাংলাদেশে তার পরিকল্পনা অকপটে স্বীকার করেন। বাংলাদেশে তার ‘মিশন’ও ঢাকাই গোয়েন্দাদের কাছে অকপটে প্রকাশ করেন তিনি।

এতদিন যাকে মনে করা হচ্ছিল একজন জঙ্গি নেতা তার আসলে পরিচয় চমকে উঠার মতো। সেবা সংস্থার আড়ালে তিনি বাংলাদেশের ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর বড় নেতাদের সঙ্গে রাখতেন যোগাযোগ। তাদের তিনি দিতেন অর্থ সহায়তা ও পরামর্শ। আর এ-সব ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর নানা তথ্য পৌঁছে দিতেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এর কাছে। কারণ তিনি নিজেও ছিলেন এমআই-৬ এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্ট।

যুক্তরাজ্যের সিক্রেট ইনটেলিজেন্স সার্ভিস এমআই-৬। বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত গোপনে কাজ করে সংস্থাটি। গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে বিশ্বব্যাপী সংস্থাটির রয়েছে অগণিত এজেন্ট।

ফয়সালের সেই সময়ের জবানবন্দীতে দেখা যায়, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ দলগুলোর অবস্থা জানা আর অন্যসব তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল তার প্রধান মিশন।

সেবা সংস্থার কাজের আড়ালে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ইসলামপন্থী হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) ও জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নেতাদের খবরাখবর নিতেন তিনি। খবর নিতে তিনি চষে বেড়িয়েছেন হবিগঞ্জ ও কক্সবাজারে। রোহিঙ্গাদের সেবাকাজে নিয়োজিত ডাক্তার মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সে লেখাপড়া করা ফয়সাল জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য থেকে জানা যায়, বিস্ফোরক বানানোর উপাদান প্রপেন আর সেলুলোস নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করতে আসেন জেএমবির এক নেতা।

প্রপেন হল— দাহ্যজাতীয় হাইড্রোকার্বন গ্যাস। এটি একটি তিন কার্বন বিশিষ্ট এ্যালকেন। ফয়সাল সেই জেএমবি নেতার সঙ্গে সেলুলোস নিয়ে কথা বলেন। সেলুলোসের সামান্য পরিবর্তিত রূপের রয়েছে অনেকগুলো নাম। বিপজ্জনক উপাদানটির নাম ‘গান-কটন’। ফিলামেন্ট টাইপের হলদেটে সাদা দেখতে। তবে এটিকে যখন নাইট্রোগ্লিসারিনে পরিণত করা হয়, তখন এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। একেবারে মিলিটারি গ্রেডের এক্সপ্লোসিভ। ডিনামাইটের উপাদান। আরও বহুল ব্যবহৃত সব বিস্ফোরক, সেখানে নাইট্রোগ্লিসারিন থাকবেই। এটির উন্নত সংস্করণ হল ট্রাই নাইট্রো টলুইন (টিএনটি)।

ফয়সালের জিজ্ঞাসাবাদের সেই ভিডিওতে দেখা যায় তিনি জেএমবির তখনকার প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও এর সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানীর সাথেও বৈঠক করার কথা জানাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে একসাথে খেয়েছেন রাতের খাবারও। নিষিদ্ধ এই সংগঠনকে ‘মস্তিষ্কশূন্য’ হিসেবেও মন্তব্য করেন ফয়সাল। তবে নিষিদ্ধ আরেক দল হুজি-বি সম্পর্কে তিনি প্রকাশ করেছেন ভিন্ন মত।

গোয়েন্দাদের ফয়সাল জানান, হরকাতুল জিহাদের নিজস্ব কাঠামো আছে। লাইন-অফ-কমান্ড আছে। সুসংগঠিত। তারা অন্য ধরনের। এ জন্য তারা মার্কিন ও পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ নজরদারীতে আছে।

দ্বিতীয় পর্বে থাকছে : জঙ্গি নয়, ঘাঁটিটি চালাতেন ব্রিটিশ এমআই-৬ এজেন্ট
সংগ্রহ: thereport24 এর বিশেষ সংবাদ পেজ থেকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.