নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোলাহল ত্যাগী

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সালাম তোমায় মা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২২

মা । হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে উচ্চারণ করেও যেন তৃপ্তি পাইনা । আমার জিবন গড়ায় মায়ের অবদান নিয়ে কথা বলে তার মহত্বকে খাটো করার মতো দুঃসাহস আমার নেই । মায়ের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে গিয়ে যাই বলবো তার সবই অপর্যাপ্ত আর সামান্য বলেই মনে হবে । শুধু কৈশরের একটু স্মৃতিচারণ করছি । ছোটবেলা থেকেই আমি প্রচন্ড অলস আর ঢিলে প্রকৃতির । আমার বছর ১৮ মাসে যেত নাকি ৩৬ মাসে তা আমি নিজেও টের পেতাম না । মা আমাকে ঠেলাগাড়ির মতো ঠেলে ধাক্কিয়ে চালাতেন । কি যে ভারী সেই গাড়ি তা মা ছাড়া কারো বোঝার কথা নয় । সকাল থেকে শুরু ঠেলাগড়ির পেছনে ধাক্কানো । ফযরের নামাজ আর মক্তবে যাওয়ার জন্যে । মায়ের ডাকাডাকি বকাবকিতে আব্বার ঘুম ভেঙ্গ যেতো । আব্বা উল্টো মাকে বকা দিতেন । আমি মনে মনে মহা খুশি । মা বাবার ঝগড়াঝটির ফাকে আমি আরেকটু ঘুমিয়ে নিই । কিন্তু মা ছাড় দিতে নারাজ, টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতেন । আর যাই কোথায় । মক্তব থেকে এসে এবার ইসকুলে যাওয়ার পালা । শুরু হতে যাচ্ছে আরেক যুদ্ধ । যানতাম এই যুদ্ধে মায়েরই বিজয় হবে । তবু প্রতিদিনই চলতো আমার ইসকুল ফাকি দেয়ার ব্যর্থ প্রয়াস । ইসকুলের সময় হলেই শুরু হতো বাহানা, মাথাব্যথা, পেটব্যথা ইত্যাদী ইত্যাদী । মা সব রকম অযুহাত আর বাহানা কঠোর হস্তে দমন করতেন । এমন অনেক সময় গেছে যখন মা নিজে গিয়ে ইসকুলে এগিয়ে দিয়ে আসতেন । ইসকুল থেকে এসে বইগুলো কোনরকমে খাটের উপড় ছুড়ে ফেলে দে ছুট । এবার আমায় পায় কে ? নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সারাদিন তাকধিনাধিনধিন, টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়ানো আর খেলাধুলা ছাড়া আমার হাতে অন্যকোন কাজ নেই । আমি মহাব্যস্ত । ওদিকে মা খুজে অস্থির সারা গ্রাম । মা খুজে বেড়াতেন আর একা একাই বিড়বিড় করতেন । এমন ছেলেও থাকে নাকি কারো ঘরে । আসুক আজকে বাড়ি , আজ ওর একদিন কি আমার একদিন । একসময় ক্লান্ত হয়ে মা ঘরে ফিরে যেতেন । দিনের আলো নিভে আসতে আমার ভয়ও বাড়তে থাকে । দিনের আলোতে আমার নিরঙ্কুশ স্বাধিনতা থাকলেও । রাতের গভীরতার সাথে সাথে আমার ক্ষমতাও কমতে থাকে । ভয়ে ভয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াতাম, আল্লাহ জানে কপালে কি আছে । মা সহজে রাগতেন না তবে রেগে গেলে ভয়ানক রূপ ধারণ করতেন । যাই হোক পরের ঘটনা আমার জন্য খুব কম দিনই ভালো হয়েছিলো । তবে বকা অথবা মার , শাস্তি যাই হোকনা কেন আমার অপরাধের তুলনায় তা মোটেই বেশি ছিলো না । যেদিন মার খেতাম সেদিন আমার একটা লাভ হতো আর তা হলো পড়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি, কান্নার ভান করে সময় পার । মার না দিলে মায়ের লাভ, অপরাধ ঢাকা আর ভালো সাজার জন্য বেশি করে পড়তাম । যে কারণে মাকে বেশি স্মরণ করি তা হলো মায়ের শিক্ষা । মা সব সময় আমার চরিত্র, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতার ব্যপারে সজাগ সতর্ক থাকতেন । তার এই শিক্ষা কেবল মৌখিক ছিলনা , বাস্তব প্রয়োগ ছিল । একদিনের ঘটনা । আমি তখন ছোট । থ্রি বা ফোরে পড়ি হয়তো । পাড়ার ছেলেরা আমরা একসাথে ইসকুলে যেতাম । পথের একটা বিরাট অংশ যেতে হতো বিস্তৃর্ণ ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে । শীত মওসুমে দুইপাশে টমেটো, কাঁচামরিচ, ফুলকপি সহ বিভিন্ন রকম ফসল ফলতো । আমার বন্ধুরা সেখান থেকে পাকা টসটসে টমেটো আর কাঁচামরিচ ছিঁড়ে নিতো আর টিফিন শেষে সাথে নিয়ে আসা টিফিন বক্সে ভর্তা বানিয়ে মজা করে খেতো । একদিন মরিচ ছিঁড়তে গিয়ে তাদের একজন একটা আস্ত গাছ তুলে ফেলে । তাদের প্রয়োজনীয় মরিচ নেয়া হয়ে গেছে তাই তারা গাছটিকে ওখানেই ফেলে রাখে । আমি কি ভেবে মরিচগুলো ছিঁড়ে নেই । ইসকুল শেষে বাড়ি এসে খুশি হবেন ভেবে মরিচগুলো মাকে দেখাই । মা উল্টো রাগ করলেন কিন্তু শান্ত কন্ঠে বললেন, মরিচগুলো যেখান থেকে নিয়ে আসছো ঠিক সেখানে রেখে আসো । আমি মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বললেন, তুমি যার কাছে অপরাধ করেছো তার কাছে ক্ষমা চাও । ক্ষেতের মালিক আর আল্লাহ । আমার মুখ থেকে কোনদিন অভদ্রচিত কথা বের হলে মা সেটা সংশোধন করে দিতেন । পশুপাখি এমনকি জড়বস্তুকেও গালি দিতে নিষেধ করতেন । বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করতে বলতেন । কোন মানুষ বা পশুপাখিকে কষ্ট দিতে বারণ করতেন । একদিন এক কুকুরের বাচ্চাকে বিলের পানিতে ফেলে দেয়ায় সেদিন আর বাড়ির চৌহদ্দি মাড়াতে পারিনি । মায়ের সেই শিক্ষাই আমার পাথেয় হয়েছে । এমন মা খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে । আজ আমি মায়ের থেকে অনেক দূরে । কাজ নিয়ে ব্যস্ত । ঠিকমতো মায়ের খোঁজ খবর নেয়ার সময় সুযোগ হয় না । কিন্তু মা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত । আমি খবর না রাখলেও মা আমার খবর ঠিকই রাখেন । ঠিকমতো ঘুম, খাওয়া, গোছল করছি কিনা খোঁজ নেন । অসুখ হলে ভেঙ্গে পড়েন, উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন রাত কাটান, ঔষধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন । কিন্তু আমি স্বার্থপর মায়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি । পড়ে আছি দূরে । ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে । মায়ের জন্য আমি কিছুই রেখে আসতে পারিনি । কিন্তু আমার সাথে আছে মায়ের শিক্ষা । মায়ের উপদেশ । মাকে আমি আর কিইবা দিতে পারি । দূর থেকে শুধু মাকে জানাই সালাম । সালাম তোমায় মা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.