নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোলাহল ত্যাগী

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের জন্য সালাম

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৭


মা । হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে উচ্চারণ করেও যেন তৃপ্তি পাইনা ।
আমার জিবন গড়ায় মায়ের অবদান নিয়ে কথা বলে তার মহত্বকে খাটো
করার মতো দুঃসাহস আমার নেই । মায়ের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে গিয়ে
যাই বলবো তার সবই অপর্যাপ্ত আর সামান্য বলেই মনে হবে ।
শুধু কৈশরের একটু স্মৃতিচারণ করছি । ছোটবেলা থেকেই আমি প্রচন্ড অলস
আর ঢিলে প্রকৃতির । আমার বছর ১৮ মাসে যেত নাকি ৩৬ মাসে তা আমি
নিজেও টের পেতাম না । মা আমাকে ঠেলাগাড়ির মতো ঠেলে -
ধাক্কিয়ে চালাতেন । কি যে ভারী সেই গাড়ি তা মা ছাড়া কারো বোঝার কথা নয় ।
সকাল থেকে শুরু ঠেলাগড়ির পেছনে ধাক্কানো । ফযরের নামাজ আর মক্তবে
যাওয়ার জন্যে । মায়ের ডাকাডাকি বকাবকিতে আব্বার ঘুম ভেঙ্গ যেতো ।
আব্বা উল্টো মাকে বকা দিতেন । আমি মনে মনে মহা খুশি ।
মা বাবার ঝগড়াঝটির ফাকে আমি আরেকটু ঘুমিয়ে নিই ।
কিন্তু মা ছাড় দিতে নারাজ, টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতেন । আর যাই কোথায় ?
মক্তব থেকে এসে এবার ইসকুলে যাওয়ার পালা ।
শুরু হতে যাচ্ছে আরেক যুদ্ধ । যানতাম এই যুদ্ধে মায়েরই বিজয় হবে ।
তবু প্রতিদিনই চলতো আমার ইসকুল ফাকি দেয়ার ব্যর্থ প্রয়াস ।
ইসকুলের সময় হলেই শুরু হতো বাহানা, মাথাব্যথা, পেটব্যথা ইত্যাদী ইত্যাদী ।
মা সব রকম অযুহাত আর বাহানা কঠোর হস্তে দমন করতেন ।
এমন অনেক সময় গেছে যখন মা নিজে গিয়ে ইসকুলে এগিয়ে দিয়ে
আসতেন । ইসকুল থেকে এসে বইগুলো কোনরকমে খাটের উপড়
ছুড়ে ফেলে দে ছুট । এবার আমায় পায় কে ? নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সারাদিন
তাকধিনাধিনধিন,টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়ানো আর খেলাধুলা
ছাড়া আমার হাতে অন্য কোনকাজ নেই ।আমি মহাব্যস্ত ।
ওদিকে মা খুজে অস্থির সারা গ্রাম ।মা খুজে বেড়াতেন
আর একা একাই বিড়বিড় করতেন ।
এমন ছেলেও থাকে নাকি কারো ঘরে । আসুক আজকে বাড়ি ,
আজ ওর একদিন কি আমার একদিন । একসময় ক্লান্ত হয়ে মা ঘরে
ফিরে যেতেন ।দিনের আলো নিভে আসতে আমার ভয়ও বাড়তে থাকে ।
দিনের আলোতে আমার নিরঙ্কুশ স্বাধিনতা থাকলেও ।
রাতের গভীরতার সাথে সাথে আমার ক্ষমতাও কমতে থাকে ।
ভয়ে ভয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াতাম,আল্লাহ জানে কপালে কি আছে ।
মা সহজে রাগতেন না তবে রেগে গেলে ভয়ানক রূপ ধারণ করতেন ।
যাই হোক পরের ঘটনা আমার জন্য খুব কম দিনই ভালো হয়েছিলো ।
তবে বকা অথবা মার , শাস্তি যাই হোকনা কেন আমার অপরাধের
তুলনায় তা মোটেই বেশি ছিলো না ।
যেদিন মার খেতাম সেদিন আমার একটা লাভ হতো আর তা হলো
পড়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি, কান্নার ভান করে সময় পার ।
মার না দিলে মায়ের লাভ, অপরাধ ঢাকা আর ভালো সাজার জন্য
বেশি করে পড়তাম ।যে কারণে মাকে বেশি স্মরণ করি তা হলো
মায়ের শিক্ষা । মা সব সময় আমার চরিত্র, আচার-আচরণ,
নীতি-নৈতিকতার ব্যপারে সজাগ সতর্ক থাকতেন ।
তার এই শিক্ষা কেবল মৌখিক ছিলনা , বাস্তব প্রয়োগ ছিল ।
একদিনের ঘটনা । আমি তখন ছোট । থ্রি বা ফোরে পড়ি হয়তো ।
পাড়ার ছেলেরা আমরা একসাথে ইসকুলে যেতাম । পথের একটা
বিরাট অংশ যেতে হতো বিস্তৃর্ণ ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে ।
শীত মওসুমে দুইপাশে টমেটো, কাঁচামরিচ, ফুলকপি সহ বিভিন্ন
রকম ফসল ফলতো । আমার বন্ধুরা সেখান থেকে পাকা টসটসে
টমেটোআর কাঁচামরিচ ছিঁড়ে নিতো আর টিফিন শেষে সাথে নিয়ে
আসা টিফিন বাটিতে ভর্তা বানিয়ে মজা করে খেতো ।
একদিন মরিচ ছিঁড়তে গিয়ে তাদের একজন একটা আস্ত গাছ তুলে
ফেলে । তাদের প্রয়োজনীয় মরিচ নেয়া হয়ে গেছে তাই তারা
গাছটিকে ওখানেই ফেলে রাখে । আমি কি ভেবে মরিচগুলো ছিঁড়ে
নেই । ইসকুল শেষে বাড়ি এসে খুশি হবেন ভেবে মরিচগুলো
মাকে দেখাই । মা উল্টো রাগ করলেন কিন্তু শান্ত কন্ঠে বললেন,
মরিচগুলো যেখান থেকে নিয়ে আসছো ঠিক সেখানে রেখে আসো ।
আমি মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বললেন, তুমি যার কাছে অপরাধ
করেছো তার কাছে ক্ষমা চাও । ক্ষেতের মালিক আর আল্লাহ ।
আমার মুখ থেকে কোনদিন অভদ্রচিত কথা বের হলে মা সেটা
সংশোধন করে দিতেন । পশুপাখি এমনকি জড়বস্তুকেও গালি
দিতে নিষেধ করতেন । বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করতে
বলতেন । কোন মানুষ বা পশুপাখিকে কষ্ট দিতে বারণ করতেন ।
একদিন এক কুকুরের বাচ্চাকে বিলের পানিতে ফেলে দেয়ায় সেদিন
আর বাড়ির চৌহদ্দি মাড়াতে পারিনি । মায়ের সেই শিক্ষাই আমার
পাথেয় হয়েছে । এমন মা খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে ।
আজ আমি মায়ের থেকে অনেক দূরে । কাজ নিয়ে ব্যস্ত ।
ঠিকমতো মায়ের খোঁজ খবর নেয়ার সময় সুযোগ হয় না ।
কিন্তু মা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত । আমি খবর না রাখলেও মা
আমার খবর ঠিকই রাখেন । ঠিকমতো ঘুম, খাওয়া, গোছল
করছি কিনা খোঁজ নেন । অসুখ হলে ভেঙ্গে পড়েন, উদ্বেগ - উৎকন্ঠায়
দিন রাত কাটান, ঔষধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন ।
কিন্তু আমি স্বার্থপর মায়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি ।
পড়ে আছি দূরে । ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে ।
মায়ের জন্য আমি কিছুই রেখে আসতে পারিনি । কিন্তু আমার
সাথে আছে মায়ের শিক্ষা । মায়ের উপদেশ । মাকে আমি আর
কিইবা দিতে পারি । দূর থেকে শুধু মাকে জানাই সালাম ।
সালাম তোমায় মা । আস্ সালাম আলাইকি ইয়া উম্মি ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩২

জাহিদ বেস্ট বলেছেন: ধন্যবাদ মা কে নিয়ে এত সুন্দর লিখার জন্য। আমার মা অসুস্থ্য। আমি হাড়ে হাড়ে মায়ের মমতা টের পাচ্ছি। ভালো থাকবেন।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম ,



মা'য়েরা এরকমই হয় ।
আর আমরা আমাদের মতো । কাছে থেকে মা'য়ের বছরগুলোকে ১৮ বা ৩৬ মাসে নিয়ে ঠেকাই । আর দূরে গেলেই সেই মা'কে বুকে আগলে রাখতে ইচ্ছে করে ।
কি অদ্ভুত বৈপরীত্য !!!
তবুও মা আমাদের প্রথম অস্ফুট স্বর , আমাদের ছায়া, আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস । ।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১২

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম বলেছেন: জাহিদ বেস্ট ঃ আপনার মায়ের জন্য আন্তরিক দোয়া রইলো।

আহমেদ জি এস ঃ ঠিকই বলছেন ভাই । কোন জবাব দেবার ভাষা নেই এই মুহুর্তে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.