নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রি টাইম পেলাম তাই একটা গল্প লেখা শুরু করলাম |-)

১৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮

শরীফ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বড় করে শ্বাস নিল। একটু সাহস বাড়ানোর চেষ্টা। সেই ভোরে রওনা দিয়ে এখন দূপুরে ঢাকায় পৌঁছাল শরীফ। হাতে ঘড়ি না থাকাতে জানেনা এখন কয়টা বাজে। কিন্তু কলিংবেলটা তাকে বাজাতেই হবে। দেড়ি করে কি লাভ? রহমান সাহেবের বাসা এটা। বিরাট ধনী লোক। শরীফের বাবার বন্ধু। গ্রামে একসাথে বড় হয়েছে। কিন্তু শরীফের বাবা পড়াশোনা বেশি না করাতে গ্রামেই থেকে গেছেন আর রহমান সাহেব এখন ঢাকা শহরে থাকেন। কিছুদিন আগে শরীফের বাবা মারা গেছেন। সবাই বলছে অকালেই নাকি মারা গেছেন। শরীফের বয়স এখন সতের বছর। তার আরও তিনটি ছোট ভাইবোন আছে। প্রথম প্রথম শরীফ খুব কেঁদেছিল তার বাবার জন্য যদিও বাবার সাথে তার সম্পর্ক আর দশটা গ্রাম্য বাবা-ছেলের সম্পর্কের মতই। শরীফের বাবা শরীফ বা তার ভাইবোনদের কোন খবরই রাখতেন না। শুধু দূপুরে খেতে বাসায় আসতেন। কিন্তু শরীফ তখন বাসায় থাকতনা। রানা আর সোহেলের সাথে মাছ ধরতে বা পাশের গ্রামের হাটে অথবা আম বা ডাব পাড়তে- কত কাজেই না ব্যস্ত থাকত শরীফ। আরও কি কি যেন ভাবছিল শরীফ তার আগেই দরজাটা খুলে গেল। কখন যে শরীফ কলিংবেলটা টিপেছিল তার নিজেরই খেয়াল নেই! কিন্তু এখন আফসোস হচ্ছে শরীফের। কলিংবেলটা আরো পরে টেপা উচিত ছিল তার। তাহলে নিজের বুকের ধুকপুকটা আরো একটু কমতো!

“কারে চান”

“আমি শরীফ। চাচার কাছে আইসি”

“চাচা বাড়িত নাই। পরে আহেন”।

শরীফ একটু চিন্তীত হয়ে পরে। ঠিক বাসায় এসেছে তো? চাচা না থাকলে কে তাকে টাকা দিবে? আম্মা বলেছিল যে রহমান চাচার কাছে গেলেই তিনি কিছু টাকা দিবেন শরীফকে। সেই টাকা নিয়ে শরীফকে আবার আজকের মধ্যেই গ্রামে ফিরে যেতে হবে। শরীফ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে শুনেছে রহমান সাহেবের একটি মেয়ে আছে। মেয়েটা নাকি খুবই সুন্দর। কিন্তু শরীফ এই মেয়েটিকে দেখে সৌন্দর্যের কিছুই পেলনা। আর দশটা মেয়ের মতই। শ্যামলা গায়ের রঙ। কথাও বলে গ্রামের মেয়েদের মত।

“এই বিলকিস! কে এসেছে রে!”

“কে যেন আইসে। কয় চাচারে চায়”।

“আব্বু বলেছে যে একটি ছেলে আসবে গ্রাম থেকে। মনে হয় ও এসেছে। জিজ্ঞেস কর তো ওর নাম কি শরীফ কিনা?” বলতে বলতে আরো একটি মেয়ে দরজায় এসে দাঁড়ায়। শরীফ এইবার নতুন মেয়েটার দিকে তাকায়। তার কাছে মনে হল একটি পুতুল হেঁটে এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে। না না পুতুল না, একটি পরী। না- তাও না। একটি ফুল। হ্যাঁ, শরীফের মনে হল একটি ফুল তার হাজারো পাঁপড়ির সৌন্দর্য নিয়ে এবং মন মাতানো সুগন্ধে শরীফের সামনের দরজাটা হঠাৎ রাঙ্গিয়ে তুলল।

শরীফ কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল “আমি শরীফ। আম্মায় আমারে পাডাইসে চাচার কাছে। চাচা বাড়িত নাই?”

“আব্বু তো এখন বাসায় নেই। কিন্তু আব্বু আমাকে বলেছেন যে তুমি আসবে। আসো ভিতরে আসো। আমি মৌটুসি। আর ও হচ্ছে আম্বিয়া”। আহা- কি সুন্দর ব্যবহার। ঠিক যেন সিনেমার নাইকাদের মত কথা বলে। কি মিষ্টি তার আওয়াজ। শরীফের হটাৎ মনে হল ওদের গ্রামে কোন সুন্দর মেয়েই নাই। সব কয়টা এই আম্বিয়ার মত। ওদের গ্রামে আসলে কোন ফুলই নাই। আম্মা ঠিকই বলেছিল যে রহমান চাচার মেয়েটা অনেক সুন্দর, একদম পুতুলের মত।

শরীফ ঘাড় ঘুরিয়ে বাসাটাকে দেখে। কি সুন্দর ফিটফাট বাসা। সব ঝকঝকে তকতকে। ওর মনে পড়ে রানা বা সোহেলের সাথে যখন সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যায় সেখানে নাইকার বাসা দেখতে অনেকটা এরকম সুন্দর আর গোছানো টাইপের হয়। সামনে বাগান আর গেটে দারোয়ান থাকে। কিন্তু এই বাসায় বাগান বা দারোয়ান নাই। খালি একটা গেইট আর গেইট দিয়ে ঢুকলেই বাড়ির দরজা। কিন্তু তারপরও শরীফের মনে হল সে যেন অনেক বড় একটা বাসায় এসেছে।

“চাচী বাড়িত নাই?”

“আম্মা? আমার তো মা নেই। আমি যখন অনেক ছোট তখন আমার মা মারা গেছেন”।

শরীফের কথাটা শুলে খুব দুঃখ হল। আহারে এমন সুন্দর মেয়েটার মা নাই। ওর হঠাৎ কান্না পেল। ওরও তো বাবা নেই। ওর দুঃখ অনেকটা এই মেয়েটার সাথে মিলে যায়।

“তুমি একটু বস। বাবা চলে আসবে। আজতো শুক্রবার। বাবা মসজিদে গেছেন নামাজ পড়তে”। শরীফের একটু লজ্জা লাগলো। সে তো নামাজই পড়েনা। তার খেয়াল হল, আগে জানলে আরো একটু দেড়িতে এই বাসায় আসতো। সে সোফাটার উপর বসে। আহা কি নরম সোফা। ঢাকা শহরে সবাই কি আরামে থাকে। সোফাটা যে আরামের, না জানি ওদের বিছানাটা কেমন হবে। ওদের বাসায় তো কোন সোফাই নাই। বিছানাও নাই, আছে চৌকি। মাটির মত শক্ত তোষকে তারা ঘুমায়। আরও কি কি যেন নানান কিছু ভাবতে ভাবতে শরীফ একটু চোখ বন্ধ করে।

“ও মৌটুসি আফা। পোলাডা তো ঘুমায়া পড়লো। কেমুন আজিব পোলা দেখসেন”। আম্বিয়া আর মৌটুসি খিলখিল করে হেসে উঠে শরীফকে ড্রয়িং রুমে রেখেই তাদের রুমে চলে যায়।

হঠাৎ প্রচন্ড শীতে শরীফ জেগে উঠে। তার শরীরে কাঁটা দেয়। এই জৈষ্ঠ্য মাসে তার এতো শীত করছে কেন শরীফ বুঝতে পারেনা। চারিদিকে কেমন আবছা অন্ধকার আর ঝাপসা দেখাচ্ছে। ওর মনে পরে ও রহমান চাচার বাসায় এসেছিল। চাচা বাসায় নাই। ও সোফায় বসে এবং ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু এখনো ও ড্রয়িং রুমে আছে। কিন্তু ওর শরীরটা এতো হাল্কা লাগছে যে ওর মনে হচ্ছে ও যেন বাতাসে ভাসছে। হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখে ও সেই সোফাটাতে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। এটা কি করে হয়? ও নিজেকে দেখতে পাচ্ছে!! কিন্তু কিভাবে? শরীফের নীচের দিকে নামতে চাইলো। কিন্তু ওর তো কোন হাত পা দেখতে পারছে না? ওর হাত গেলো কোথায়, পা-ই বা গেল কোথায়? শরীফ হঠাৎ আতংকিত বোধ করে। তাহলে কি এটা ওর আত্মা? ও কি মারা গেছে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.