নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনে পড়ে………

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

সময়ানুবর্তীতা রচনাটা আমি কখনোই মুখস্ত করতে পারিনি। কিন্তু আমার ব্যবহারিক জীবনে আমি সবসময় এটা মেনে চলি। আমি যে খুব চেষ্টা করে মেনে চলি, তা না। কারো কারো ভিতর সময়ানুবর্তীতা জন্ম থেকেই কাজ করে। আমার ১২ঃ০০ টা মানে ১২ঃ০০ টাই। ১২ঃ১০ বা ১১ঃ৫০ না। যাই হোক-আমি যখন ঢাকায় চাকরীরত অবস্থায় কর্মস্থলে যেতাম ঠিক ৮ঃ৩০ মিনিটেই অফিসে পৌঁছাতাম। এর জন্য আমাকে ঠিক ৭ঃ৪০ মিনিটে বাসা থেকে রওনা হতে হত। বাসা থেকে ফার্মগেটে রিকশায় যেতাম, সেখান থেকে মহাখালি যেতাম বাসে।

রিকশায় যাতায়ত করাটা আমার কাছে সবসময় খুব সুখকর একটা ব্যাপার। কারন রকশায় যেতে আমি প্রতিদিন আশপাশের পরিবেশটা দেখতে দেখতে যেতাম। ঠিক দেখতে দেখতে বলাটা ভুল হবে, আসলে উপভোগ করতে করতে যেতাম। তো এর মাঝেই কিছু কিছু দৃশ্য আমি নিয়মিত দেখতাম। যেমন ঢাকা টাওয়ার পেরিয়ে গেলে গ্রীন রোডের সাথের একটা বাড়ির সামনে একটা মেয়ে স্কুলের গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকত। ক্লাস ৬-৭ এর হবে। কখনো কখনো দেখতাম সে দাঁড়িয়ে আছে তার স্কুলের গাড়িটির জন্য আবার কখনো দেখতাম তার স্কুলের গাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য।

মেয়েটিকে ছাড়িয়ে সামনে গেলে একটা মুদির দোকান পরতো। দোকানের মালিক একজন বৃদ্ধলোক। বৃদ্ধ হলেও তাঁর দেহ কিন্তু খুবই সুঠাম। প্রায় প্রতিদিনই দেখতাম তিনি দোকান খুলে তাঁর দোকানের সামনের ফুটপাথ পানি ছিটিয়ে ঝাড়ু দিচ্ছেন। বৃদ্ধ বয়সেও তাঁর দেহের সুঠাম কাঠামোর কারণ সম্ভবত তিনি এখনো সবকাজ নিজেই করেন।

আমি ৬ নাম্বার বাসের একরকম বাঁধা প্যসেঞ্জার। ৩ নাম্বার বাসেও মহাখালি যাওয়া যায় কিন্তু অনেক সময় এই বাস গুলো মহাখালি ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যায় বলে আমি সবসময় ৬ নাম্বার বাসে উঠতাম। কখনো কখনো ২-৩টা ৬ নাম্বার বাস লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। তা দেখেই আমি মনে মনে খুশি হতাম। কারন আমি তাহলে পরের বাসে ফাঁকা সিটে জানালার পাশে বসতে পারতাম। এর একটা কারন হল আমি বাসে বসেও বাইরের পরিবেশ উপভোগ করতে করতে যেতাম। এই ৬ নাম্বার বাসে যে শুধু আমিই বাঁধা প্যসেঞ্জার তা না। আরো অনেকেই এই বাসে উঠতেন অফিসে যাবেন বলে। এরকম একজন ছিলেন একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা। তাঁর চুল গুলো ছিল কাঁচা পাকা এবং তিনি সব সময় সালোয়ার কামিজ পড়তেন। প্রায়ই আমি এবং উনি একি বাসে উঠতাম। ৬ নাম্বার বাস যে সবসময় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো তা না। একটু দেড়িতে ফার্মগেট এ পৌঁছালে দেখা যেত কোন ৬ নাম্বার বাসই নেই। আর তখন প্রায় ১০০ জনের মত লোক এই বাসে্র জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো। একটা বাস এলেই হল। যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার মত সবাই তখন ৬ নাম্বারের দুই দরজায় ঝাপিয়ে পড়তো। আমি অবশ্য সব সময়ই যুদ্ধে জয়ী হতাম। কিন্তু কখনো কখনো বাসে উঠে দেখতাম বাইরে সেই মধ্যবয়স্ক মহিলাটা প্রাণপণে যুদ্ধ করেই চলেছেন এবং বেশির ভাগ সময়ই উনি হেরে যেতেন। এতে অবশ্য আমার মন খারাপ হত না কারণ আমি জানি এর পরেই ২টা ৬ নাম্বার বাস ঠেসাঠেসি করতে করতে ফার্মগেটে আসবে এবং সকল হেরে যাওয়া সৈনিকেরা ঐ বাস গুলোতে উঠে যার যার গন্তব্যে ঠিকই যাবেন।

এইরকম আরো কিছু কিছু দৃশ্য আমি প্রায় প্রতিদিনই দেখতাম। এদের কারোই আমি নাম জানিনা। আমি জানি এদের কাউকেই আমি এই জীবনে আর দেখবোনা। কিন্তু এরা কেন জানি আমার খুব আপন মনে হয়। আজকে আমি অন্য এক দেশে পড়ে আছি। এদের দেখতে হলে আমাকে আবার আগের সময়ে ফিরে যেতে হবে যা কখনোই সম্ভব না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.