নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আকাশের গল্প

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪২

আকাশ আলতো করে চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশরা যে বাসায় ভাড়া থাকে তার সামনের রাস্তার উল্টো দিকে নিপাদের বাসা। নিপাদের নিজেদের বাসা। ওর বাবা ব্যবসায়ী এবং ধনী। ব্যবসার কাজে প্রায়ই দেশের বাইরে যান। এ থেকেই আকাশ বুঝে নেয় ওরা কতটা ধনী। কিন্তু নিপাকে দেখলে আকাশের চোখ যেন আর সরতে চায়না। একটি মেয়ে এতটা সুন্দর কিভাবে হয়। যেমন তার মায়া কাড়া চোখ তেমনি তার গায়ের রঙ। আকাশের ধারনা ছিল কেবল শ্যামলা বর্ণের মেয়েদের চেহারাই মিষ্টি হয়। কিন্তু দুধে আলতা বর্ণের মেয়েও যে এতটা মিষ্টি চেহারার হতে পারে নিপাকে না দেখলে আকাশের কখনো জানাই হত না। নিপা ঠিক এ সময়ে বাসা থেকে বের হয় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। বড়লোকের মেয়ে তাই গাড়িতে আসা যাওয়া করে। অবশ্য মাঝে মধ্যে গাড়িতে যায়না, রিকশাতেও যায়। আকাশ জানে নিপা যেদিন ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যায় তখন ও রিকশা নেয়। আকাশ নিপার সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানে। ওর কয়জন বন্ধু, কয়জন বান্ধবী, ওর পড়ার বিষয় কি ইত্যাদি। আকাশরা যেদিন এই ভাড়া বাসাতে উঠে সেদিনই আকাশ নিপাকে দেখে আর ওর প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু আকাশ জানে ওদের আর নিপাদের সামাজিক অবস্থা এক না। আকাশের বাবা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে ছোট পোষ্টে চাকরী করে। ওদেরকে নিম্ন মধ্যবিত্ত বলা যায়। আর তাই আকাশ শুধু নিপাকে দূর থেকে দেখেই যায়। আজকেও আকাশ নিপাকে দেখছিল। কিন্তু চোখাচোখি হতেই আকাশ আলতো করে চোখ নামিয়ে নেয়।

নিপার আজকেও দেড়ি হয়ে গেল। রিকশা পাওয়া যেন আজকাল ভাগ্যের ব্যাপার। যত ভাড়া চায় নিপা দিতে রাজি কিন্তু আজকাল রিকশাওয়ালা মামারা যেতেই চায়না। তাহলে ওরা কেন রিকশা নিয়ে বের হয় নিপা বুঝেনা। খালি রিকশা চালানোর জন্যে! অভি মনে হয় আজকেও রাগ করবে। ওর বাসা আর ভার্সিটির মাঝখানে অভিদের বাসা। তাই প্রায়ই নিপা রিকশাতে করে ভার্সিটি যায়। মাঝ রাস্তায় অভিকে তুলে নেয়। নিপা খেয়াল করে আজকেও উলটো দিকের বাসার ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিপা তাকাতেই চোখ সরিয়ে নেয়। এধরনের ছেলেদের নিপা দুচোখে দেখতে পারেনা। এরা খুবই ভিতু ধরনের হয়। অবশ্য নিপা বেশ বুঝতে পারে যে এই ছেলেটার তাকানোর মধ্যে নোংরা কোন ব্যাপার নেই। ছেলেটার দুইচোখে কেবলই মুগ্ধতা। সত্যি বলতে নিপা এধরনের তাকানি বেশ উপভোগই করে। “এই মামা যাবে”। একটা বুড়ো রিকশাওয়ালা নিপার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিপা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। কোন দরদাম না করেই নিপা উঠে পড়ে জায়গার নাম বলে। নিপা অভিকে ফোন দেওয়ার জন্যে মোবাইল বের করে। হঠ্যাৎ একটা মটরসাইকেল এসে নিপার রিকশার সামনে থামে। কেউ কিছু বুঝার আগেই পেছনের ছেলেটা নিপার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে। নিপার মিষ্টি চেহারাটা মুহূর্তেই তীব্র এসিডে বিকৃত হয়ে যায়।

৬ মাস পর

নিপা আজকাল একা একা থাকে। বাসা থেকেই বের হয়না। কারো সাথে দেখাও করেনা। নিজের চেহারা আয়নায় দেখে নিপারই বুক কেঁপে উঠে। মানুষের চেহারা এতটা কুৎসিত হয়! ওর বাবা চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি। কিন্তু ডাক্তার বলেছে যে প্লাষ্টিক সার্জারি করেও ওর চেহারা ঠিক করা সম্ভব না। হয়ত কিছুটা সুন্দর করা যাবে। তাও অনেক খরচের ব্যাপার। নিপার মা এসে মেয়েকে কিছুক্ষন দেখলেন। “আকাশ এসেছে”। নিপা মার দিকে না তাকিয়েই বলে “ ওকে বসতে বল। আসছি”। নিপার মা ঠিক টের পান নিপার কন্ঠের কাঁপুনি। আকাশ আসলেই মেয়েটি চঞ্চল হয়ে উঠে। মা একটা মুচকি হাসি হেসে চলে যান। এই একটা মানুষের সাথেই নিপা দেখা করে, কথা বলে। যেদিন ওর এই দূর্ঘটনাটা ঘটে সেদিন আকাশ না থাকলে নিপার যে কি হত নিপা তা ভাবতেও চায়না। ছেলেটা ওর জন্যে যা করেছে এই জীবনে তা শোধাবার নয়। হাসপাতালে নেওয়া থেকে শুরু করে যতদিন সে হাসপাতালে ছিল তত দিন আকাশ নিপার সাথে ছিল। কখনো রক্তের জন্য, কখনো টেস্টের জন্য সারাদিন দৌঁড়েছে।

“কেমন আছ নিপা?”

“এইত। আছি আর কি! আপনি কেমন আছেন?”

“চলছে। চল তোমাকে ঘুরায়ে নিয়ে আসি, যাবে? সিনেপ্লেক্সে একটা সুন্দর মুভি এসেছে। দেখবে?”

নিপা জানে আকাশ ওকে খুশি রাখার জন্য এমন করে। ওর সাথে এমন আচরন করে যেন নিপার চেহারা এসিডে নষ্ট হয়ে যাওয়া খুব একটা বড় ব্যাপার না। নিপা হঠ্যাৎ বলে-
“আপনি আমার জন্য কেন এত করেন?”

“তুমি কি বুঝনা কেন?”

“কিন্তু আমার চেহারা…”

“মানুষের চেহারা তো সব না। মানুষের মন বলেও তো কিছু আছে! আমি যে সেই কবে থেকে তোমাকে ভালবাসি”।

নিপার অভির কথা মনে পড়ে যায়। প্রথম দিকে অভিও অনেক করেছিল নিপার জন্য। কিন্তু যেদিন নিপার মুখের ব্যন্ডেজ খোলা হল অভির মুখ থেকে একটা আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে। এরপর অভি ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এখন তো আর যোগাযোগই নেই। নিপার ভয় হয় আকাশও একদিন না তাকে ছেড়ে চলে যায়।

“আমাকে বিয়ে করবেন?” নিপা আকাশের চোখে নিশ্চয়তা খুঁজে।
“আজকে বললে আজকেই। এখন বললে এখনই”।

উত্তর শুনে নিপা হেসে ফেলে। আকাশও মুচকী হাসে। কিন্তু তার এই হাসির কারণ সে ছাড়া আর মাত্র দুটি ছেলে জানে। সেই দুটি ছেলে……


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:০৮

জাফরুল মবীন বলেছেন: বেশ ভাল লাগল গল্পটা।পটভূমিটাও সুন্দর। :)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৬:৩৫

নিরব জ্ঞানী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২০

সুমন কর বলেছেন: সার্থক ছোট গল্প। গল্পের ম্যাসেজটা সুন্দর।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৬:৩৮

নিরব জ্ঞানী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

ম্যাসেজটা আসলে শেষের দুটি লাইন। :(

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: বাস্তবতা অনেক কঠিন । তবে এমনটাই যেন হয় , সেই কামনাই করি ।

ভালো থাকবেন ভ্রাতা :)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৬:৪১

নিরব জ্ঞানী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

আমি খুবই কম লিখি। কিন্তু আপনার মন্তব্য পাই। খুবই ভাল লাগে।

আপনিও ভাল থাকবেন।:)

ম্যাসেজটা আসলে শেষের দুটি লাইন। :(

৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: বুঝলাম না তার মানে আকাশই এই কামটা ঘটাইছে ?

গল্প ভাল লাগলো । :)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৭:২০

নিরব জ্ঞানী বলেছেন: যাক, ধরতে পারলেন।

ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.