নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ তুচ্ছ একটি ঘটনা (২)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৫

বেশ আরামে আছি আমি। না খাওয়ার চিন্তা, না ঘুমানোর চিন্তা। যদিও অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাই না। কিন্তু তাতেও কোন সমস্যা হয় না। সারাক্ষন একটা উষ্ণ আবহাওয়া আমায় ঘিরে থাকে। একটাই শুধু চিন্তা ছিল যে কবে আলোর মুখ দেখব। অবশ্য সেই সময়টা আর বেশি দূরে নেই। আর বেশি কিছু চিন্তা করতে পারছি না। ঘুম ধরেছে, ভীষণ ঘুম!

কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। এখন কি সকাল, দূপুর, বিকেল নাকি রাত! কিছুই বুঝার উপায় নেই। রাতটাই খালি যা একটু অনুমান করা যায়। কারণ তখন কোন শব্দ পাইনা। সবাই ঘুমিয়ে থাকে। তখনই কেন জানি আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। একা একা চিন্তা করি। কত কিছু যে চিন্তা করি তা বলার নয়। মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। মার শরীরের ঘ্রাণ খুব সুন্দর। বুক ভরে ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে হয়। অপেক্ষার সময় তো আর শেষ হয়না। দিন দিন আমি ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছি। খুব খারাপ। আবারো ঘুম পাচ্ছে। খুবই ক্লান্ত লাগে।

আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়। নিজে নিজে এখান থেকে বের হতে পারি কিনা দেখব নাকি একবার। চেষ্টা করতে তো দোষ নেই। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি একটু নিজেকে অন্ধকারে প্রস্তুত করে নেই। তারপর সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করি এখান থেকে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু বের হতে পারিনা। কারণ অন্ধকারে কিছুই দেখা যায়না। বের হওয়ার রাস্তাটুকুও দেখা যায়না। তবে আমার এই চেষ্টায় একটা লাভ হয়েছে। ওপাশের মানুষগুলো ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে আমি বের হওয়ার চেষ্টা করছি। তাদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়ে গেল।

হঠ্যাৎ তীব্র ব্যাথায় আমি চোখে অন্ধকার দেখি। জীবনের প্রথম নিশ্বাস নিতে যে এত যন্ত্রণা তা জানা ছিল না। মনে হচ্ছে বুকে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি। তীব্র আলোয় আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। চোখেও যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। এই আলো আমি শয্য করতে পারছিনা। মনে হচ্ছে অন্ধকারই ভাল ছিল। প্রচন্ড শীত করছে। বুকে আগুন জ্বললেও আমার হাত পা এবং মাথায় শীত করছে। কেউ কি নেই আমাকে একটু উষ্ণতা দেবে?

একটু আগে মার মুখটা দেখতে পেরেছি। কি সুন্দর মায়া ভরা মুখ। আহা জীবনটাই সার্থক হয়ে গেল। কিন্তু মার মুখে এত অন্ধকার কেন? আমাকে পছন্দ হয়নি? আমি মেয়ে বলে নাকি আমি কালো বলে? কি ব্যাপার সবার মুখ এমন ভার কেন? সবার মধ্যে কেমন চোর চোর ভাব!

একটু আগে আমাকে আমার মামা এখানে নিয়ে এসেছে। আসার সময় মামা অন্য একজনের সাথে কথা বলছিল ফোনে। সেখান থেকেই আমি জানতে পারলাম আমার বাবা নেই। মানে আমার বাবার পরিচয় নেই। আমার মা কুমারী। আমার মামা ঢাকার বাইরে এই নির্জন আস্তাকুরে আমাকে নিয়ে এসেছে। ফোনে এই জায়গাটার কথাই কার কাছ থেকে যেন জেনে নিয়েছে। মামা আমার দিকে না তাকিয়ে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

আমার ভীষণ শীত করছে। তোমরা এমন করলে কেন। তোমাদের কি কোন দয়া মায়া নেই? আমার বাবার পরিচয় নেই, কিন্তু তাতে কি? আমি তো কঠিন সংগ্রামের ভিতর দিয়ে এই পৃথিবীরে এসেছি। প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়ে উঠেছি। তোমরা যেভাবে এসেছ আমিও তো ঠিক সেভাবেই এসেছি। আর কিছু চিন্তা করতে পারছিনা। শীতে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে। আমার মা আমাকে বুকের দুধ পর্যন্ত খাওয়ায়নি। ঘুমও পাচ্ছে। আমি জানি এবার আমি ঘুমিয়ে গেলে আর কোনদিন আমার ঘুম ভাংবেনা……

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: মৃত্যু যাতনা , মৃত্যু উপলব্ধি !!

ভালো লিখেছেন ।

শুভকামনা ভ্রাতা :)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৯

নিরব জ্ঞানী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

ভাল থাকবেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.