নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১।
বাবুল এইবার পিএসসি পরীক্ষা দিবে। কিন্তু তাকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই। পরীক্ষা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথাও নেই। সারাদিন বস্তির অন্যান্য ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করেই তার সময় কাটে। মাগরিবের আজান হলে বস্তির তিন নাম্বার গলির মাঝামাঝি তাদের যে ঘরটা আছে তাতে ফিরে আসে। বাবুলের মা তখন মাত্র ভাত বসায়। ভাত, আলু ভর্তা আর ডাল। এখন শীতকাল বলে রান্না শেষ করতে করতে এশার আজান পরে যায়। এই সময়টাই বাবুল একটু বই নিয়ে বসে। বাবুলের বাবা আক্কাস আলী রিক্সা চালায়। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে বাসায় এসে পেট ভরে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিরাতেই ঘুমানোর আগে ছেলের পড়াশোনার খোঁজ নেয়। কারণ সে জানে পড়াশনা না করলে তার ছেলের ভবিষ্যত অন্ধকার। তাই যত কষ্টই হোক ছেলেকে সে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। বস্তির অন্যান্য ছেলেদের মত রোজগারে নামিয়ে দেয়নি। বাবুল শুধুমাত্র বাবাকেই ভয় পায়। মাকে সে গোনায় ধরেনা। বাবুলের মাও পড়াশোনার ব্যাপারে একদম উদাসীন। তাই সারাদিন সে পড়াশোনার ধারে কাছে না গেলেও বাবুলের বাবা ঘরে ফিরার আগে আগে বাবুল পড়তে বসে। প্রথমদিকে বাবুলের একটুও পড়ায় মন বসতোনা। পড়তে বসলেই সে ঘুমিয়ে যেত। কিন্তু আক্কাস আলী ঘরে ফিরে ছেলেকে ঘুমাতে দেখলেই বেদম মার শুরু করে দিত। মার খেতে খেতে এখন আর বাবুল ঘুমিয়ে পড়েনা। বরং স্কুলের বাড়ির কাজ শেষ করেও সে আরো কিছুক্ষণ বইপত্র ঘাটে। নিজে থেকেই পড়ার চেষ্টা করে। বিশেষ করে অঙ্কের অনুশীলন গুলো নিজে নিজেই সমাধান করে। বাবুলের খুব খুশি লাগে যখন দেখে স্কুলে পরেরদিন বা আরো পরে যখন অংকের স্যার সেই অনুশীলনীর অংক গুলো করেন তখন বেশিরভাগ সময় তার উত্তরগুলো মিলে যায়। ধীরে ধীরে তার ফলাফলও ভাল হতে থাকে। এখন বেশিরভাগ স্যার ম্যাডামরা তাকে চিনে ফেলেছেন। তাঁরাও তার পড়ালেখার খোঁজ খবর করেন।
২।
নাহিদের বাসার স্যার মাত্র গেল। প্রায় দশটা বাজে। নাহিদের খুব ঘুম পেয়েছে। এতক্ষন কি পড়াশোনা করা যায়! সেই সকালে উঠেই স্কুল। স্কুল শেষে বাসায় ফিরে মা একটু সময় দেন নাহিদকে বিশ্রাম নেওয়ার। তারপরই গোসল করে খেয়েদেয়ে কোচিং এ যেতে হয়। কোচিং এ যাওয়ার সময় সে প্রায়ই গাড়ির ভিতর দিয়ে তাকিয়ে দেখে তাদের এলাকার পাশের বস্তির ছেলেগুলো খেলা করছে। তারও ভীষণ খেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মা বলেন যে এই ছেলেগুলো খারাপ, এরা পড়াশোনা করেনা। বড় হয়ে সন্ত্রাসী হয়, চাঁদাবাজ হয়। কোচিং থেকে বাসায় এসে সন্ধ্যার নাস্তা খেতে খেতে বাসার স্যার চলে আসে। তাঁর কাছে পড়তে পড়তে রাত হয়ে যায়। তারপর খেয়ে দেয়ে ঘুম। এত এত পড়াশোনা তার ভাল লাগেনা। প্রতিদিন এত এত সাবজেক্ট পড়তে হয় যে তার কোন সাবজেক্টই ভাল লাগেনা। কিন্তু মা প্রতিদিনই তার পড়া ধরে। তাই সে সব মুখস্ত করে নেয়। মা পড়া ধরলেই সব গড় গড় করে বলে দেয়। তাহলেই তার ছুটি। কিন্তু কিছুদিন পরই সে আগের পড়া ভুলে যায়। যতই সে নতুন পড়া পড়তে থাকে ততই আগের গুলো ভুলতে থাকে। এ নিয়ে তার মায়েরও খুব দুশ্চিন্তা। এই বছর সে পিএসসি পরীক্ষা দিবে। আল্লাহই জানে রেজাল্ট কি হয়। এ+ না পেলে তো মা তাকে মেরেই ফেলবে।
৩।
নাহিদের মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কালকে রাতে মা কোথা থেকে যেন পরীক্ষার প্রশ্ন জোগার করেছে। সবগুলো অংকই পরীক্ষায় এসেছে। কিন্তু সে কিছুই লিখতে পারছেনা। মুখস্ত করা অংকগুলো সব ভুলে গিয়েছে। সে কোন রকমে ৫৫ মার্কের উত্তর লিখতে পেরেছে। তার ভিষণ কান্না পাচ্ছে।
৪।
আক্কাস আলীর আজকে মন খুব ভাল। যে যা ভাড়া দিচ্ছে তাই নিচ্ছে। আজকে তার ছেলের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। সে পাশ করেছে। এই খুশিতে আক্কাস আলী ঠিক করেছে আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে। ছেলে নাকি এ পেয়েছে। আবার অংকে এ+ পেয়েছে। আক্কাস আলী এ, এ+ এসবের মানে জানে না। শুধু বুঝতে পেরেছে যে তার ছেলে পরীক্ষায় ভাল করেছে। স্কুলের অংকের মাস্টার বলেছেন যে এইবার অংক প্রশ্ন খুব কঠিন হয়েছিল।
তার ছেলের জন্য আজকে সে এক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে নিয়ে যাবে। কতদিন তার ছেলে ভাল কিছু খায়না!
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১০
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: লিখার চেষ্টা করি।
ধন্যবাদ।
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১২
আরফহোস বলেছেন: যাক বোঝা গেল, যতই ফঁাস হোক, এই শ্রেনীর ২/১ টা ছেলে/মেয়ে অন্তত কিছু শিখতে পারছে, দোয়া করি এদের ঘরে যেন ইন্টারনেট না যায়।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১৪
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: খুব খারাপ লাগে তাই লিখেই মনের জ্বালা মিটাই।
আশায় আছি একদিন অবশ্যই বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ- 'মানুষ' হবে।
৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন +
নভেম্বর সংকলনে গল্প ও ছবি ব্লগ ক্যাটাগরিতে আপনার দুইটা পোস্ট আছে সম্ভবত । আশাকরি এ মাসেও সুন্দর সুন্দর পোস্ট দিবেন ।
অনেক শুভকামনা ।।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১৮
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: বরাবরের মতই ধন্যবাদ ভ্রাতা মন্তব্যের জন্য।
খুবই খুশি হয়েছি যে নভেম্বর সংকলনে দুই দুইটা পোস্ট আছে আমার।
লিখার জন্য যতটুকু সময় লাগে তা পাওয়াই মুশকিল!! তাই অন্যদের লিখাই পড়ে যাই।
৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১
কলমের কালি শেষ বলেছেন: বেশ লাগলো ।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১৮
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৬
নীল আতঙ্ক বলেছেন: দারুণ লাগলো ভাইয়া
++++++++
৬| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৯
মোঃ নুরুজ্জামান (জামান) বলেছেন: বাবুল শুধুমাত্র বাবাকেই ভয় পায়। মাকে সে গোনায় ধরেনা।
মাগরিবের আজান হলে বস্তির তিন নাম্বার গলির মাঝামাঝি তাদের যে ঘরটা আছে তাতে ফিরে আসে।
এক্কেবারে মিলে গেছে।
০২ রা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: কার সাথে ভাইয়া!!!
৭| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৩২
মোঃ নুরুজ্জামান (জামান) বলেছেন: নিজের সাথে। দা্ও ফিরিয়ে শৈশব লও এ বুড়াকাল।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৮
নিলু বলেছেন: লিখে যান