নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিয়তি

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫

ঠিক ৮ঃ১৫ মিনিটে আকবর সাহেব বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন। তিনি নিয়মিত বাসা থেকে এই সময়েই বের হন যাতে ৯টার মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে পারেন। যদিও বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব খুব বেশি না, কিন্তু অফিস টাইমে রাস্তায় জ্যাম লেগেই থাকে। দীর্ঘদিনের চাকরীর সুবাদে তিনি তাই এই সময়টা এমন ভাবে ঠিক করে নিয়েছেন যাতে অফিসে আগে পৌঁছালেও যেন দেরিতে না পৌঁছান। ছোট পদের চাকরী করেন বলে তাকে ৯টার মধ্যে অবশ্যই অফিসে পৌঁছাতে হয়। ইদানিং অবশ্য তিনি ৯টার অনেক আগেই অফিসে পৌঁছে যান। কারণ টানা অবরোধ চলছে। কিন্তু তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যাসে আজও ৮ঃ১৫ মিনিটে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছেন।

এই অবরোধের মধ্যেও বাসটা মোটামুটি ভরা। তিনি পিছনের দিকে একটা খালি সিট পেয়েই বসে গেলেন। আকবর সাহেবের মনটা আজ বেশ ভাল। তার একমাত্র চিন্তা ছিল তার ছোট ছেলে- আলমকে নিয়ে। পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন বেকার হয়ে ছেলেটা এতদিন বাসায় বসে ছিল। চাকরী খুঁজে খুঁজে না পেয়ে আলমের মন সব সময় খারাপ থাকতো। বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরেই কাটাতো। কিন্তু আজকাল সে নাকি টুকটাক ব্যাবসা শুরু করেছে। কি ব্যাবসা জিজ্ঞেস করলে যদিও সে কিছু বলেনা, কিন্তু ছেলের কাছে তিনি বেশ কিছু টাকা দেখেছেন। নিজের খরচ তো চালাচ্ছেই, উপরন্তু সংসারের টুকটাক বাজার এখন কিনেও আনছে। যাক এতদিন পর তিনি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।


**
আলম সকালে ঘুম থেকে উঠেই অপেক্ষায় ছিল কখন আকবর সাহেব বাসা থেকে বেরিয়ে যাবেন। সে বাইরের জামা কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে বসে ছিল। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সে সোহেলকে ফোন দিল। “হ্যালো। আমি আসছি। আর দশ মিনিট”।

মোড়ে সোহেলকে দেখে সে ইশারা করে পাড়ার গ্যারেজের দিকে হাঁটা দিল। গ্যারেজে পৌঁছে কাল কাপড় সরিয়ে একটা পুরোন মটর সাইকেলট বের করল। সোহেল কাছে আসলে সে নীচু গলায় জিজ্ঞেস করল “সব ঠিক ঠাক এনেছিস?”। সোহেল বলল-“হ্যাঁ, তুই শুধু চোখ বন্ধ করে চালাবি, বাকিটা আমি দেখবো”।

এটা তাদের তৃতীয় মিশন। তারা যখন এধরনের কাজে বের হয় আলম মোটর সাইকেল চালায় আর সোহেল পেছনে বসে থাকে। এক একটা মিশন শেষ করে ওরা অনেক টাকা পায়। যে পরিমান টাকা পায় তাতে কিছুটা হলেও তাদের মনের জ্বালা মিটে। বেকার ছেলেদের কাছে দশটাকার মূল্যও অনেক। সকালের সময়টা আলমই বেছে নিয়েছে। এসময় একে তো অফিসের সময়, উপরন্তু রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতিও কম। তাই এসময় তাদের খুব সুবিধা হয়। কিক করে আলম মোটর সাইকেলটা স্টার্ট করে তেলের পরিমান দেখে নিল। সোহেল পেছনে বসায় সে গিয়ার ফেলে, ব্রেক ছেড়ে রওনা হয়ে গেল।


**
আকবর সাহেব তার ছেলের কথা চিন্তা করতে করতে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছিলেন। এই সকালে অবরোধেও মোটামুটি জ্যাম লেগে আছে। বড় একটা সিগন্যাল ছড়তেই বাসটা গতি বাড়িয়ে দিল। এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন একটা মটর সাইকেল তাদের পাশ কেটে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন তার ছোট ছেলে অত্যন্ত পাকা চালকের মত মোটর সাইকেলটাকে চালাচ্ছে। তিনি এতটাই অবাক হলেন যে পেছনে বসে থাকা সোহেলের ছুঁড়ে দেওয়া পেট্রল বোমাটা যে সরাসরি তার উপরে এসে ফেটেছে-এর প্রতিক্রিয়া দেখাতে তিনি ২-৩ সেকেন্ড দেরি করে ফেললেন। ফলে পুরো বাসের যাত্রীদের অনেকে আহত হলেও শুধুমাত্র একজনই নিহত হল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.