নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোর ছ্যাঁচরার ভালোবাসা

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪

হালিমার জন্য বসে আছি অনেক্ষণ যাবৎ। বেকার বলে আমার সময়ের কোন দাম নেই, অভাবও নেই। সকালটা বস্তির মোড়ের চায়ের দোকানে কাটিয়ে দিয়েছি একটা বাংলা সিনেমা দেখে। হায়াত আলীর চায়ের দোকানে টিভি চলে সারাদিন। ব্যবসাটাও তার ভাল চলে এ কারণে। নায়িকা অপু বিশ্বাস আর নায়ক সাকিব খান, প্রেমের কাহিণী। আহা, কি প্রেম তাদের। অপুর বাবা মস্ত ধনী লোক, আর সাকিব খান হল সিএনজি ড্রাইভার। আমারো ইচ্ছে করে বড়লোক কোন মেয়ের সাথে প্রেম করার। সিনেমার মত যদি আমারও একটা বড়লোক ঘরের মেয়ের সাথে প্রেম থাকতো তাহলে কি ভালই না হত। কিন্তু দারিদ্য একটা অভিশাপ- একথা আমার থেকে ভাল খুব কম মানুষই জানে।
গরীব বলে যে প্রেম করি না তা নয়। হালিমার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক আট মাসের। এলাকার এক গার্মেন্টসে কাজ করে হালিমা। আমাদের বস্তিতেই থাকে। দেখতে শুনতে ভাল না হলেও আমাদের দুজনের মিলে ভাল। আমি যেমন বজ্জাতের হাড্ডী, সেও তেমন পাকা শয়তান। এর আগে কয়টা প্রেম করছে নিজেও গুনে শেষ করতে পারেনা! যাই হোক, অতীত মনে রেখে কি লাভ?
পকেটের অর্ধেক জ্বালানো সিগারেটটা ধরিয়ে অদূরে পার্কের ঝোপের পাশে বসে থাকা দুটি স্কুল বা কলেজপরুয়া ছাত্রছাত্রীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সময়টা উপভোগ করছিলাম এমন সময় হালিমা চলে এল।
‘কখন আইছো?’
‘আইছি তো হেই সক্কালে, তোর দেড়ী হইলো কেন?’
‘দেড়ী দেখলা কই? ছুডি তো হইল মাত্রই’
হালিমার কালো কপালে ঘাম। রোদে ঘামগুলো মুক্তোর মত চিক চিক করছে। দেখে আমার মনে হল যেন স্বর্ণের দোকানের কালো ভেলভেটের উপরে হীরার টুকরা।
‘আইজকা কিন্তুক বেশি দেড়ী করবার পারুম না। মায়ের শইলডা ভালা না’।
‘কেন, কি হইছে হের?’
‘দুইদিন থাইকা জ্বর, কামে যাইতে পারে না’।
‘তয় চল আইজকা বেশি দূরে যামুনা। এইখানেই কোন হোটেলে যাই’।
শুনে হালিমা একটু লজ্জা পেল। ওর চোখের কোণ একটু কেঁপে উঠল নাকি?
আমরা মাসে শুধু একটা দিনই হোটেলে যাই- দুই তিন ঘন্টার জন্য। সেই একদিন হল হালিমার বেতনের দিন। তখন আমাদের প্রেমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সময়। সেদিন আমাদের বিস্তর স্বাধীনতা। কারো কিছু বলার নেই। হোটেলের রুমটাই তখন আমাদের গোটা পৃথিবী। সব মিলিয়ে দুইশ টাকার ধাক্কা। কিন্তু মাসের মধ্যেখানে এসে আমার এ আবদারে সে একটু শংকিত।
‘আরে টাকার চিন্তা করিস না। আমি থাকতে তোর এত চিন্তা কিসের?’
‘তুমি টাকা পাইলা কই?’
‘পাইনাই, তয় পামু’ বলে আমি হালিমাকে বুঝিয়ে বললাম কি করতে হবে।

সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুইজন। উদ্দেশ্য যাত্রাবাড়ী মোড়। সেখানেই কোন হোটেলে যাব ঠিক করেছি। কিন্তু দুজনে একটু পৃথক দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছি। একটা খালি বাস আসা মাত্র হালিমা আগে উঠে গিয়ে একটা জালানার ধারে বসে পড়লো। খানিক পর আমিও উঠে এমন ভাবে তার পাশে বসলাম যেন অপরিচিত একটা মেয়ে মানুষের পাশে এসে বসেছি। তারপর অপরিচিত মানুষের মতই বসে থাকলাম। খানিক বাদে বাসের হেল্পার ভাড়া চাইতে এলে আমি বাসের ভাড়া চার টাকা দিয়ে দিলাম। এর পর হালিমার কাছে চাইলে সে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিয়ে দিল। ‘আপা একটু পরে টাকা ফেরৎ দিতাছি’। বাসে অনেক মানুষ আর যাত্রাবাড়ী যেতে বেশি সময় লাগবে না বলে সে তাড়াতাড়ি অন্য যাত্রীদের কাছে ভাড়া নিতে চলে গেল।
বাস যাত্রাবাড়ীর কাছাকাছি এলে হেল্পার হালিমার কাছে এসে টাকা ফেরৎ দিল।
‘ঐ মিয়া কয় টেকা ফেরৎ দিলা?’
‘কেন আপা ঠিকই তো আছে। ছিচল্লিশ টেকা’।
‘কি কন আপনি? আমি তো পাঁচশ টাকা দিছি’।
‘না আপা, পাঁচশ টাকা দিলে আমার মনে থাকত, আপনি পঞ্চাশ টেকা দিছেন’।
‘হায় হায়, কন কি? আমি পাঁচশ টাকা দিছি। আমার কাছে আর টাকা ছিল না, একটাই নোট ছিল, হেইডাই আপনেরে দিছি’।
এতক্ষণে বাসে বসে থাকা অন্যান্য যাত্রীরা সবাই এদিকে ঘুরে তাকাল। একজন বাইশ তেইশ বছরের ছাত্রমত ছেলে বলে উঠল ‘কি মামা! টাকা নেওয়ার সময় মনে রাখতে পারনা কয় টাকা নিছ। কেমন হেল্পার তুমি?’
‘মামা বিশ্বাস করেন হেয় আমারে পঞ্চাশ টেকা দিছে’।
একজন মুরুব্বী মত লোক তখন বলল ‘পাশের জনরে জিগাওনা তাইলেই তো হইল’
সবাই তখন আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি খুব সরল কিন্তু দৃঢ় ভাবে বললাম ‘এই আপায় পাঁচশ টেকা দিছিল, আমার স্পষ্ট মনে আছে’।


‘ঐ মামা, টাকা ঠিক মত ফেরত দাও’
‘ওই মিয়া তুমি কি নতুন নাকি!!
‘মাইয়া মানুষ দেইখা ধান্দা গিরি করো?’
দেখতে দেখতে যাত্রাবাড়ী চলে এল। আমি সাথে সাথে নেমে পড়লাম। জানি একটু পর হালিমাও নেমে আসবে আর সাথে থাকবে হেল্পারের ফেরৎ দেওয়া চারশ ছিচল্লিশ টাকা!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

মানুষ বলেছেন: গল্প পছন্দ হয়েছে। সামুর প্রেমের গল্প বলতে নায়ক নায়িকা শিক্ষিত মার্জিত উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর। তাদের পুতুপুতু দুঃখ বিলাস। সেই তুলনায় এইটা ব্যতিক্রমী।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২২

নিরব জ্ঞানী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মানুষ। শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.