নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরব জ্ঞানী

হুমমম......

নিরব জ্ঞানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অনুভূতি

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩



ঘুম থেকে উঠে খেয়াল হল আজকে ছুটি। অফিসের তাড়া নেই, ভাবতেই চোখে আবারো ঘুম নেমে আসে। কিছুটা অলসতা নিয়েই জোড় করে বিছানা ছাড়ি। একা মানুষ, তাই নাস্তার ঝামেলা নাই। কিছু একটা খেয়ে নিলেই হল, না খেলেও ক্ষতি নেই। গতকালের ফুটানো ভাত রয়ে গেছে। একটা ডিম ভেজে নিলেই হবে। সকালের প্রাতঃকর্ম শেষ করে তাই ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে ফ্যাটতে শুরু করলাম। মনে মনে ঠিক করছি সারাদিনের কাজের প্ল্যান। অনেক হাবিজাবি কাজ পড়ে আছে, শেষ করতে হবে। হঠ্যাৎ কেন জানি মনে হল কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে রুমটা একবার দেখে নিলাম, নাহ কেউ নেই। মনে মনে হাসলাম। একা মানুষ, আমার ঘরে কে থাকবে? কোন কাজের লোকও রাখিনা। একেতো কাজে ফাঁকি, তার উপর চুরির সম্ভাবনা। তাই ঘরের কাজ নিজেই করি। কড়াইতে তেল গরম হয়ে গেছে। ডিমটা ছাড়লেই এখন টগবগ করে ফুটবে। দেখতে বেশ ভাল লাগে। তরল ডিমটা চোখের সামনে ডিম ভাজিতে পালটে যায়। ডিমটা উল্টাবো, আবারো সেই অনুভূতি। মনে হল কেউ আমাকে দেখছে। খুব কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি ঘাড়ে গরম নিশ্বাস পড়ারও অনুভূতি হল। ঝট করে ঘুরে দাঁড়ালাম। নাহ, কেউ নেই। চোর ঢুকলো নাকি? রান্না ঘর থেকে বেডরুমে চলে এলাম। কোনা কাঞ্চি ভাল করে দেখে নিলাম। এমনকি বাথরুমের উঁকি দিলাম। একদম খালি বাসা।

ছুটির দিনে বাজারে সব সময়ই ভীড় থাকে। আজকেও এর ব্যতীক্রম হয়নি। সবজীর বাজার শেষ করে মাছের বাজারে ঢুকলাম। পরিচিত মাছওয়ালা আমাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল- “ভাইজান, আইজকা ভালা ইশিস আছে। লইয়া যান”। ডাক শুনে এগিয়ে গেলাম। ইলিশের সাইজ খুব একটা খারাপ না। মাঝারি সাইজ, দামে সস্তা। অবশ্য ক্রেতাও অনেক। একজন দামদর করছিল তাই মনযোগ দিয়ে দেখছিলাম। এমন সময় আবারো মনে হল কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণত কেউ তাকিয়ে থাকলে বেশ বোঝা যায় কে বা কোন দিক থেকে আমাকে দেখছে। কিন্তু আমি ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। তাই আশে পাশে তাকিয়ে আমি খুঁজতে লাগলাম। তেমন কাউকে পেলাম না।
দামে বনিবনা হয়নি। ক্রেতা চলে যাওয়ার পর আমি এগিয়ে গেলাম। মাছগুলোর দিকে ভাল করে তাকাতেই দেখলাম একটি মাছ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ, তাইতো। একদম আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। পাতাহীন নিষ্পলক চাহনী। মুখটা কি একটু নড়ল নাকি। মনে হল অক্সিজেন নেওয়ার জন্য মুখ হাঁ করছে। আগে আমি কখনোই জীবিত ইলিশ দেখিনি। “ বাহ, একদম টাটকা ইলিশ দেখছি, এখনো জ্যাতা”।
“কি কন ভাই?” মাছ ওয়ালা আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। তার সাথে মস্করা করছি কিনা তাই যাচাই করে দেখছে। আমিও আমার ভুল বুঝতে পারলাম। ইলিশ মাছ জীবিত হয় কিভাবে? শুনেছি জালে আটকে পরার কিছুক্ষণ পরই নাকি ইলিশ মাছ মারা যায়। আমিও এমন ভাব করলাম যে মজা করছি। দরদাম করে সেই ইলিশ মাছটাই কিনে নিলাম। মাছওয়ালাকে দিয়েই কাটিয়ে নিলাম। মাছওয়ালা যখন ইলিশের মাথাটা কেটে ব্যাগে ভরছে তখনো দেখলাম, মাছটি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

মানুষ হিসেবে আমি সাহসীদের দলে। সহজে ভয় পাইনা। কিন্তু আজকে খুব ভয় করছে। আমার কি শরীর খারাপ করলো নাকি? পাগল হয়ে যাচ্ছি না তো! আজকের ঘটনাগুলোর কোন ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছিনা। বিকেলের দিকে অনেকটা বাধ্য হয়েই বাসা থেকে বের হলাম। খালি বাসায় কেমন যেন ভয় করছিল। বাসার সামনের পার্কটিতে চলে এলাম। খুঁজে পেতে একটা নির্জন জায়গায় বসে বসে বাদাম খাচ্ছি। পার্কটি তেমন বড় না কিন্তু বিকেলের দিকে বেশ ভীড় হয়। হঠাৎ আমি ভয় পেয়ে যাই। সেই একি অনুভূতি। কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আমি আল্লাহর নাম নিলাম। একটু খুঁজতেই দেখতে পেলাম একটা অন্ধ ভিক্ষুক আমার ঠিক উলটো পাশে বসে আছে। ভিক্ষুকটির দুইচোখ নাই, সেখানে দুটি বিশ্রী গর্ত। কিন্তু সে কেমন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে সাহস নিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম। সাবধানে নিঃশব্দে ভীক্ষকটির ডান দিক থেকে বাম দিকে গেলাম। সেও আমাকে অনুসরণ করে মাথা তার ডান দিক থেকে বাম দিকে ঘুরিয়ে নিল। যেন আমাকেই দৃষ্টি দিয়ে অনুসরণ করছে। ভীষণ ভয়ে আমি সেখান থেকে দৌড়ে বাসার দিকে এগিয়ে গেলাম। পিছনে ফিরে দেখলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। রাস্তা পার হওয়ার সময় প্রাইভেট কারটি যে আমার সামনে চলে এল তা বুঝতে আমার দেরি হয়ে গেল।

***

“এখন কেমন আছেন আপনি?”
“জ্বী, ভাল”
“আমি ভীষণ দুঃখিত, আসলে তখন আপনি এমন ভাবে আমার গাড়ির সামনে চলে এলেন যে আমি গাড়িটি থামাতে পারিনি”
“না না দোষ আমারই। আমিই না দেখে রাস্তা পার হতে গিয়েছিলাম”
“আপনার চোখের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত”
“না, ঠিক আছে। আমি আসলে ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। অন্ধ হয়ে গেলেও তো মানুষ বাঁচে তাইনা”।
“আচ্ছা, আপনার বাসায় আর কেউ থাকে?”
“কেন বলুন তো?”
“মনে হল কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে”

আমি মুচকি একটা হাসি দিলাম। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমার সেই অনুভূতি আর কখনোই হয়নি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.