নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন তারাবতীর পৃথিবী

তানিয়া হাসান খান

আমি কোথাও নেই

তানিয়া হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হৃদয়ের অবগাহন ..(২য়পর্ব এর শেষাংশ).. written by Tania Hasan Khan

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৩

এখানে পাবেন ১ম পর্বের প্রথমাংশ

এখানে পাবেন ১ম পর্বের শেষাংশ

এখানে পাবেন ২য়পর্ব এর প্রথমাংশ



দুপুর গড়িয়ে এখন বিকালের আগমনী আয়োজন। কিষাণ দুপুরের খাবার খেয়েই গ্রামের সব মুরুব্বিদের সাথে দেখা করে বাড়ি ফিরে এসেছে। মিতু অনেক্ষণ ধরেই ভাইকে খুঁজছে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই বুঝতে পারছে ভাই বাইরে থেকে ফিরেছে। দরজা খুলে দিল মিতু।

মিতু: ভাইয়া!তুমি কই গেছিলা। আমি কতখন ধইরা খুজতেছি।

কিষাণ: একটু বাইরে গিয়েছিলাম। খুজেছিস কেন?

মিতু: ভাইয়া! পাশের গ্রামের বিলের ধারে যাত্রা হইব আইজ। তুমি বাড়িত না থাকলে তো আমগো যাইতে দেয় না। অহন তুমি আছ। আমগো নিয়া গেলে কেউ বকব না। নিয়া যাইবা? যদি নিয়া যাও তয় চৈতালী বু রে কইয়া আসি তৈয়ার হওনের লাইগা।

কিষাণ: আচ্ছা ঠিক আছে। আমিও অনেক দিন যাত্রা দেখিনি। তবে একটা শর্ত আছে।

মিতু: কি শর্ত কও তাড়াতাড়ি।

কিষাণ: আমি যখন আসতে চাইব। দুইজনই আমার সাথে বিনা তর্কে বাড়ি চলে আসবি।

মিতুর হাসি ছড়িয়ে গেল তার পুরো মুখে।

মিতু: আইচ্ছা ভাইয়া… তাই করুম।

কিষাণ: মনে থাকলেই ভাল। চৈতালীকে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বল। বেলা থাকতেই যেতে পারলে ভাল হত।

মিতু: আইচ্ছা ভাইয়া। তুমি আব্বা আর মা রে কইও। আমি গেলাম বু রে খবরডা দিতে।

……………..

পাশের গ্রামে যেতে হলে অনেক বড় একট বিল পার হতে হয়। বিলে পানি তেমন নাই কিন্ত নৌকা ছাড়া্ও যাওয়া যায়না। ওরা তিনজন অপেক্ষা করছে একটা নৌকার জন্য। মাঝি ঐ পারে গিয়েছে যাত্রী নামাতে। মিতু আর চৈতালী আজকে খুব আনন্দে আছে। কতদিনের প্রচেষ্টা আজ কিষাণের জন্য সফল হতে যাচ্ছে। চৈতালী অতটা প্রকাশ করছে না। মিতু হাত নেড়ে নেড়ে গল্প করেই যাচ্ছে। কথার খই ফুটেছে মুখে। আজ চৈতালী কিষাণের দেয়া চুরি আর নূপুর পরেছে। চোখে সুন্দর করে কাজল দিয়েছে। দুইটা বেণী করে বেঁধেছে। এতেই তাকে পরীর মত সুন্দর লাগছে। কিষাণ চোখ ফিরিয়ে নিল। চৈতালী আজ কিষাণের পছন্দ মত সেজেছে সেতো কিষাণের জন্যই। এটা সে ভাল করেই জানে। এখনও চৈতালী স্কুল পার করেনি। সামনের বছর এস.এস সি পরীক্ষা দিবে। কত ছোট সে। আর কিষাণেরও পড়া লেখার শেষ করার আরও তিন বছর বাকি। পড়া লেখার মাঝে চৈতালীকে ওর বিয়ে করা তো আর সম্ভব হবে না। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে না হয় মায়ের কাছে পারবে কথাটা। ততদিন চৈতালীও আরও বড় হবে। আবেগ থেকে বেড়িয়ে হয়ত সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারবে। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মাঝি এসে পাড়ে ভিড়েছে। লক্ষ করেনি কিষাণ।

মিতু: ও ভাইয়া। কই হারাইলা? তাড়াতাড়ি নায়ে উঠ!

কিষাণ: ‍হ্যা, উঠছি! উঠছি!

কিষাণের হাতটি ধরে চৈতালী আর মিতুও উঠে পরে নৌকায়। মাঝিও নৌকা ছাড়ে। চাড়িদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয় কিষাণ। পাড় থেকে এত সুন্দর লাগে নি তো! একদিন সকাল সকাল আসতে হবে। ছবি আঁকবে সে এই জায়গার। কি সুন্দর বিল! বিলের পানিতে ফুটে আছে লাল লাল শাপলা ফুল। মাছ ধরার ফাঁদ পেতেছে জেলে। মাছ রাঙা আর বকের আনাগোনা। কিচির মিচির পাখির শব্দ মিলে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন প্রকৃতি। চৈতালী নৌকা থেকে হাত দিয়ে বিলের পানি ছুয়ে কি ভাবছে আনমনে। মিতু একাই রব তুলেছে। মাঝে মাঝে শাপলা তুলছে। কিষাণ একটু পর পর দেখছে চৈতালীকে। কি মিষ্টি একটা মুখ। প্রকৃতির সাথে এই মেয়ে এত বেশি মিলেছে যে কিষাণ চাইলেও আর কোথাও চোখ বেশিক্ষণ সরিয়ে রাখতে পারছেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিষাণ লক্ষ করল নৌকা পাড়ে ভিড়াচ্ছে মাঝি। কিষাণ ভাড়া দিল মাঝিকে । নেমে পরল ওরা। একটু দূরেই দেখা যাচ্ছে লোকজনের ভীর। টিকিট কাটার জন্য কাউন্টার আছে একপাশে। কিষাণ এগিয়ে গেল টিকিটের জন্য।

কিষাণ: ভাই আমাকে তিনটা টিকিট দেন।

কাউন্টার: এই নেন টিকিট। যান ঐহানে বট গাছের নীচে যাইয়া বহেন।

কিষাণ: আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ।

ওরা বট গাছের নীচে পাটিতে গিয়ে বসল। যাত্রা মনে হয় এখনই শুরু হবে। বিউগলের মত সূর বাজানো আরম্ভ হল। মঞ্চে রাজ দরবার তৈরি হয়েছে। দাসেরা সিংহাসনের পিছনে পাখা দিয়ে বাতাস করছে। মন্ত্রী- উজির- নাজির হাজির। রাজাধৃপতির আগমনের অপেক্ষায় আছে। কে যেন ঘোষণা দিল প্রবাল দ্বীপের মহামান্য রাজা আসছেন……হুশিয়ার! সবাই জোরে সম্ভাষন জানাল মহামান্য রাজা জিন্দাবাদ। আর বেজে চলেছে বউগলের আর নানান বাদ্যযন্ত্রের তুমুল সূর। কিষাণের একটু বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু যাত্রার আয়োজেন তার বিরক্তটুকু প্রকাশের সুযোগ দিলনা। সে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল। রাজদরবারের রাজকর্ম চলছে মঞ্চে। দরবার ভাঙ্গার পরে এল রাণীর ভূমিকা। রাজার অপেক্ষায় সে সেজে বসে আছে অনেকটাই পরীর মত করে। রাজা এল রাণীর কছে তার বিশ্রাম কক্ষে। রানীর সাথে প্রেমালাপে ব্যস্ত হয়ে গেল। শুরু হল একটা ভালবাসার গান। গানের শেষে রাজা রাণীকে হাতে চুরি আর পায়ে নূপুর পরিয়ে দিল। তাই দেখে চৈতালীর মনটা কেমন কেঁপে উঠল। কেঁপে উঠল কিষাণও। দুজনেরই মনটা যেন ছুয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে শুরু হল বিরহ পর্ব। রাজা রাণীকে অবিশ্বাস করে বনবাসে দিয়ে দিল। রানীর সে কি কাণ্না। রাণী সাথে করে নিয়ে গেল শুধু সেই নূপুর আর চুরি।বিরহের এক করুণ সূর বেজে উঠল। চৈতালী আর মিতুও কান্না শুরু করল। একটাই বাস্তবভাবে কাহিনীটা সাজানো যে ওদের কাছে বাস্তবই মনে হচ্ছিল। চৈতালী কিষাণের হাতটা ধরে বসল। কিষাণ সেটা খেয়াল করলনা। কাহিনীর একটা পর্যায়ে রাজা তার ভুল বুঝতে পারল আর রাণীকে কেঁদে কেঁদে খুঁজতে লাগল। জীর্ণ শীর্ণ রাণী একটা ছোট কুটিরে কোন রকম দিন কাটাচ্ছিল। রাজা তার ঘরে গিয়ে পানি চাইল। কিন্তু রাণীকে চিনতে পারল না। রানী তাকে চিনল কিন্তু পরিচয় না দিয়ে মুখ ঢেকে রইল। রাজা রানীর হাতের চুরি দেখে তাকে শেষে চিনেই ফেলল এবং ক্ষমা চাইল। রাজপ্রাসাদে ফিরিয়ে নিল। মিলনের এক মধুর সংগীতে মুখরিত হল যাত্রা। শেষ হল যাত্রার মঞ্চ । কিন্তু চৈতালী আর মিতুর চোখে কান্নার ঢল নেমেছে যেন। কিষাণ তখনই লক্ষ করল চৈতালী তার হাতটি আঁকরে ধরে আছে। পরিস্থিতি হালকা করতে সে জোরে হেসে উঠল।

কিষাণ: কি রে? তোরা দেখি পদ্মা যমুনা বানায় ফেললি। আরে দূর! এই গুলি কি সত্যি নাকি? বানানো কাহিনী দেখে কেউ এমন হাপুস নয়নে কাঁদে? বোকার দল। এই শখের কান্না কাটি করার জন্য আমাকে নিয়ে এত দূর আসছিস! হা হা হা হা। ও রে চৈতালী চোখের কাজল লেপ্টে দেখি তোকে পেত্নির মত লাগছে। এই রাত বিরাতে বাড়ি যা্ওয়ার সময় আজকে আর ভয় লাগবেনা। কারণ পেত্নি সয়ং আজকে তোরে দেখে পালাবে। হা হা হা।

এইবার মিতুও হেসে ফেলল। চৈতালী একটু গাল ফুলিয়ে নিয়ে শেষ মেস হেসেই ফেলল। হাসি মুখেই সব বাড়ির পথ ধরল।

কিষাণ: যাক বাবা অবশেষে তোদের হাসি মুখতো দেখা হল! নইলে মা তো আমারে আর আস্ত রাখত না। ভাবত আমি মনে হয় তোদের মাঝ পথে মাইর দিয়েছি । হা হা হা

মিতু: তুমি যা মুনে চায় কও ভাইয়া। কাহিনীডা অনেকই দুইখ্খের আছিল। হুম।

চৈতালী: কিষাণ ভাই তুমার খারাপ লাগে নাই? সত্য কও তো!

কিষাণ: আমারও একটু কষ্ট কষ্ট লাগছিল। কিন্তু আমি তোদের কান্না দেখে আর বেশি কষ্ট পাই নাই। ভাবলাম তোরই তো ষোল কলা পূর্ণ করেছিস। আমি আর কি করব রে। হা হা হা । যাই হোক আজকের দিনটা অনেক মজাই হইল ।কি বলিস?

মিতু: হুম। সত্যই।

চৈতালী: কিষাণ ভাই। তোমারে অনেক ধন্যবাদ। তুমি না আনলে আমরা এত মজা করতে পারতাম না। ঐ যে মাঝি পড়েই আছে। চল যাই।

আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে। বিলের পানি চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে। আর মাঝি বৈঠা পানিতে তুলেছে সূর। মাঝি নিজের অজান্তেই গান ধরল। আর চৈতালী তাকিয়ে আছে কিষাণের দিকে এক পলকে। এই ভরা জোৎস্নায় ওর অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিষাণকে। পারবে কি আদৌ বলতে কখনও? তবুও ওর আজ বড় ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথমবার ও কিষাণের হাত ধরেছে। ওর মনে হয়েছে সব থেকে আপন মানুষটির হাতই ধরেছে। আর কোনদিন হাতটি ছাড়বেনা সে। মিতু খুব মনযোগ দিয়ে মাঝির গান শুনছে। কিষাণ আর একটা বৈঠা হাতে নৌকা বাইছে আর গান শুনছে। ওদের সবার আনন্দ মাঝির এই সহজ সরল গান আরও ‍দ্বিগুন করে দিল………. ও ও ও ভাঙ্গা ডিঙ্গি নাও/ তুমি কোন মোহনায় যা…ও./ আমি যামু তুমারে লই ঐ দোরিয়ায়/ আমায় লইয়া যা..ও রে…….. ও ও ও ভাঙ্গা ডিঙ্গি নাও / তুমি কই .বাইয়া যাও……..



date: 3.2.13

time: 7:00 pm



(চলবে)...........

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
ভাল্লাগতেসে সিরিজটা পড়ে :) :)
বিরহের এক করুণ সূর বেজে উঠল। চৈতালী আর মিতুও কান্না শুরু করল। এদের ন্যাকামোর জ্বালায় আর পারা গেলোনা /:) :P ||

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাতিজা। :) :)
হা হা হা হা আমিও আর না হেসে পারলাম না রে....... :পি

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৩

ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন:
সিরিজের এই পর্বটাও বাদ দিলাম না ।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :) :)

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৪

একজন আরমান বলেছেন:
চালিয়ে যাও আপু।
+++

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :) :)

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৪

জাকারিয়া মুবিন বলেছেন: ভালই লাগলো, দেখি সামনের পর্বগুলো পড়তে হবে। +++

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :) :)

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: 5th +++

৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৪

যাযাবর৮১ বলেছেন:






গণদাবি একটাই

আবার জেগেছে তারুণ্যের প্রজন্ম
দ্বিধা ভেদ ভুলে জাগরণের জন্ম,
কবে কে দেখেছে এই বাংলার বাঘ
শাবাশ জনতা ঐ জেগেছে শাহবাগ।

আলোকিত প্রাণ প্রজন্ম চত্বরে
বিকশিত গান খুঁজছে সত্তারে,
আর নয় ভুল, মুক্তির স্লোগান
ধূম্র ধূসরে ফাগুনের জয়গান।

ঘৃণায় আক্রোশে জানায় যে ধিক্কারে
গণদাবি আজ প্রদৃপ্ত হুঙ্কারে,
জেগেছে জনতা, বিচার এবার চাই
ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি, গণদাবি একটাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.