নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন তারাবতীর পৃথিবী

তানিয়া হাসান খান

আমি কোথাও নেই

তানিয়া হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৫ মার্চ ও তারাবতীর দুঃসহ স্মৃতির অবগাহন/

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৫

২৫মার্চ, ১৯৭১সাল।

তারাবতী ও্র তার দুই সন্তান একছেলে ও একমেয়েকে নিয়ে স্বামীর সাথে ঢাকায় এসেছে তার স্বামীকে চিকিৎসা করানোর জন্য। তার স্বামীর এক অজানা রোগ হয়েছে। তারাবতী নিজস্ব গ্রাম লক্ষীকুল-এর এমন কোন ডাক্তার অবশিষ্ট নেই তার স্বামীকে সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়নি। কিন্তু সবাই তাকে ঢাকার বড় ডাক্তা্র দেখাতে পরামর্শ দিয়েছে। আজ কিছু টাকা সংগ্রহ করে অনেক বড় আশা করে তারাবতী তার স্বামীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছে। অচেনা অজানা শহর। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তার এক দূর সম্পর্কের দেবর চাকরী করে, তার ঠিকানা সাথে করে নিয়ে এসেছে। সেই কোন সকালে রওয়ানা করেছে তারাবতী ঢাকার পথে। দু’টি সন্তান সাথে করে এত দূরের পথ পাড়ি দিয়েছে। ঢাকায় পৌছে একটি ছোট হোটেলে রাতের খাবার খেয়েছে। এখন রাত পনে দশটা। বাচ্চাগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে।ওদেরকে সাথে না এনে গ্রামে রেখে আসলে তারাবতীর সব কাজ একটু সহজ হতো। এমন কাউকে আজ তারাবতী খুঁজে পেলনা বাচ্চাদের যার দায়িত্বে রেখে আসবে। তারাবতী ও্র তার স্বামী এখন রওয়ানা করেছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দিকে। হঠাৎ করেই চারিদিকে গুলির শব্দ। চমকে উঠে তারাবতী। বাচ্চারা ঘুম ভেঙ্গে কাঁদতে থাকে।রিকশাওয়ালা থামিয়ে দিল তার রিকশা। রিকশা রেখে সে জীবন বাঁচাতে কোন আড়াল খুঁজতে একদিকে দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেল। চারিদিকে আতংকিত মানুষের ছুটোছুটি। গুলির শব্দ একাধারে শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ একটি বুলেট তারাবতীর স্বামীর বুকের ডান পাশে বিদ্ধ করল।এক পাশে কাত হয়ে গেল সে। হাত থেকে ছিটকে গেল তার ৫ বছরের মেয়েটি পীচ ঢালা রাস্তায়। একটি ভারী ট্যাংকের চাকায় পিষ্ঠ হলো রাস্তায় পরে থাকা নিষ্পাপ মেয়েটি। মা বলে শুধু একবার চিৎকার করে নিথর হয়ে গেল তার শরীর। সব কিছু এত দ্রুত হয়ে গেল তারাবতী হতবিহ্বল হয়ে গেল।কোলের এক বছরের ছেলেটিকে কোন রকম বুকে আগলে নিয়ে থেতলে যাওয়া মেয়েটির কাছে ছুটে গেল তারাবতী। তার মেয়ে বেঁচে নেই। এইতো কিছুক্ষণ আগে সে নিজ হাতে মেয়েকে রাতের খাবার খাইয়েছে। চিৎকার করে ডুকরে উঠে তারাবতী। সে ছেুটে গেল তার স্বামীর কাছে। সারা শরীর নিথর হয়ে পরে আছে ওর প্রিয়তম স্বামীর প্রাণ হীন দেহ। এক মুহূর্তে কি ঘটে গেল ওদের জীবনে। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলে সে লুটিয়ে রাজপথে।



২৫মার্চ, ২০১৪সাল।

চোখ খোলে তারাবতী। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে। বয়সের ভারে নুয়ে পরেছে সে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পরেও প্রতি ২৫মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনের এই রাস্তায় সে তার হারনো ছেলেকে খোঁজে। সারা রাত রাস্তার ধারে বসে আল্লাহর কাছে তার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মিনতি করে। আর তার স্বামী আর মেয়ের আত্মার জন্য দো’য়া করে। আহ! তার মেয়ে! কতটুকুন নিঃষ্পাপ মুখ। কি অপরাধ ছিল তার? কি অপরাধ ছিল তার প্রিয়তম স্বামীর? কি অপরাধে তারাবতীর সোহাগ কেড়ে নিল হায়েনার দল! একটু পরপর কেঁপে উঠে তারাবতীর। আজও সে ধারন করে জীবন্ত অঙ্গার বুকের মাঝে। হৃদয় নিঙরে উথলে উঠে অভিশাপ।



সে রাতে তারাবতীকে অজ্ঞান অবস্থায় তুলে নিয়েছিল একজন সাংবাদিক। নানা পত্রিকায় তারাবতীর হারানো ছেলের নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করেন তিনি। কিন্তু কোন লাভ হয়না। পরবর্তীতে তারাবতী সেই সাংবাদিককে পিতার মর্যাদা দেয় এবং তার বাড়িতেই এখনও সে পরিবারের একজন সদস্য হয়েই রয়ে গেছে। তিনি গত বছর বার্ধক্য জনিত কারনে এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান। তবে তিনি পাকিস্তানী হইকমিশনের কাছে ১৯৭১সালের ২৫মার্চ রাতে একটি নিখোঁজ ছেলে শিশুকে ফিরে পাওয়ার জন্য তারাবতীর হয়ে আবেদন করেছিলেন।



আপনার নাম কি তারাবতী? ১৯৭১ সালের ২৫মার্চ রাতে কি আপনি আপনার ১বছরের শিশুকে হারিয়েছেন এবং পাকিস্তানী হাইকমিশনে তার জন্য কোন আবেদন করেছিলেন? – বলে উঠে অচেনা এক যুবক।

তারাবতীর বুকের রক্ত ছলকে উঠে।নিঃশ্বাস দ্রুত হয়। তারাবতী মাথা উঁচু করে তাকায়-

- হ্যা বাবা! আমি তারাবতী। তুমি কিভাবে জানলে এতসব? তুমি কি আমার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছো ?

- জ্বী। একজন পাকিস্তানী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের বাংলাদেশের হাইকমিশনে জানিয়েছে যে, সে ১৯৭১ সালে ২৫মার্চ রাতে একটি একবছরের ছেলে শিশুকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে থেকে কুড়িয়ে পেয়ে তার নিঃসন্তান স্ত্রীকে লালন-পালন করতে দেয়। সে ছেলে আজ বড় মানুষ হয়েছে এবং জানতে পেরেছে যে, তারা তার বাবা-মা নন। সে তার নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসার তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করছে।একথার প্রেক্ষিতে সেই কর্মকর্তা পাকিস্তানী হাইকমিশনে খোঁজ নেয় যে এই স্থানে এই এই রাতে হারানো কোন শিশুর কোন পিতা-মাতা খোঁজ করে কিনা। তখন তারা আপনার এই আবেদন পত্রটি খুঁজে পায় এবং আপনার ছেলেকে আপনার ঠিকানা জানায়।

- কি বলছ! তুমি বাবা! আমি ৪৩ বছর ধরে আমার হারানো মানিককে খুঁজে বেড়াচ্ছি। কোথায় সে বল?

- মা! একটু অপেক্ষা করুন। সে আমার সাথেই আছে।

মিঃ আরিল্ড! বেড়িয়ে আসুন। আপনার মা আপনাকে ডাকছেন।



একটি বটগাছের আড়াল থেকে ধীর পায়ে বেড়িয়ে আসে অত্যন্ত সুদর্শন একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ।দু’টো চোখ দিয়ে অঝোড়ে ঝড়ছে ৪৩ বছরের কান্না। তারাবতী জাপটে ধরে ছেলেকে। যেন একটু আলগা হলেই আবারও হারিয়ে যাবে। চুমুতে চুমুতে মুখরিত তারাবতী কোন কথা বলতে পারেনা।



অস্ফুটে আরিল্ডের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়- মা! আমি আসছি মা!



তানিয়া হাসান খান

তারিখ: ২২মার্চ, ২০১৪ইং।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪৫

সায়েদা সোহেলী বলেছেন: তানিয়া লেখা পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে !

তারাবতী নাম দেখে ভেবেছিলাম তোমার অভিজ্ঞতা সৃতির অংশবিশেষ কিছু হবে

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫৯

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: কেমন আছো ?
এটা একটা ছোট গল্প।

তারাবতী দিয়ে লিখেছি কারন। লেখার সময় নিজের জীবন নিয়ে লিখছি না ভাবলে লেখাটা কেমন অসম্পূর্ণ লাগে

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪০

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
এত্ত তারাবতী তারাবতী পড়তে ভাল্লাগেনা সবসময় !

৩| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সামহোয়্যারইন ব্লগের কবিব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা নিয়ে একটা পোস্ট তৈরি করছি। আপনার অংশগ্রহণ এ পোস্টকে মূল্যবান করবে। ফেইসবুকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে।

ফেইসবুকে আমরা মনে হয় কানেকটেড না। সম্ভব হলে আমাকে প্লিজ এ্যাড করুন।

শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.