নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন তারাবতীর পৃথিবী

তানিয়া হাসান খান

আমি কোথাও নেই

তানিয়া হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভূতুরে বিভাবরী ও কয়েকটি কালো বিড়াল/

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৪৮

১২এপ্রিল’২০১৩সন।সারা রাত ট্রেণে ভ্রমণ করে খুব ভোরে চৈতালী ওর বর কিষানকে নিয়ে অচেনা এক শহরে এসে পৌছেছে। কোন এক বিচিত্র কারণে চৈতালী চারপাশের কিছুই চিনতে পারছেনা। তবুও সে এই অচেনা ষ্টেশনে নেমেছে। কিষানও কিছু বলছেনা। চৈতালী দেখতে পেল ছোট একটা চায়ের দোকান। সেখানে কিছু কলা ও পাউরুটি ঝুলানো আছে। এটা দেখে চৈতালী অুনভব করল যে তার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। ওদের কিছু খেয়ে নেওয়া প্রয়োজন এখন।



-কিষান! ক্ষুধা লেগেছে।

- ঠিক আছে, চলো সামনের দোকান থেকে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। পরে কোন হোটেল পেলে সকালের নাস্তা সেরে নেব।

-তোমাকে এত গম্ভীর দেখাচ্ছে কেন?

-জানিনা, চৈতালী , কেন জানি গা ছম ছম করছে। মনে হচ্ছে কোন বিপদ আসছে।

-আমরা মনে হয় হারিয়ে গেছি।আল্লাহ ভরসা কিষান, চিন্তা করোনা।



চা আর হালকা নাস্তা সেরে ওরা শহরের দিকে এগিয়ে গেল। চৈতালী একজন মেয়েকে দেখে চমকে উঠলো, আরে চৈতালীর বান্ধবী মেহেরুন। সে মেয়েটিও চৈতালীকে দেখতে পেয়েছে। কিন্তু না থেমে দ্রুত হন হন করে হাটছে মেয়েটি। চৈতালীও কিষানের হাতটি টেনে নিয়ে মেয়েটির পিছু নিল।



-কি হলো চৈতালী! এমন করে টানছো কেন?

-কিষান! অদ্ভুত ব্যপার! আমার ছেলে বেলার বান্ধবী আমাকে দেখে না দেখার ভান করে পালাচ্ছে।

-আরে কি যে বল, তোমার মনে হয় মাথা ঠিক নাই। অবশ্যই সে তোমাকে দেখে নাই। আচ্ছা চল ওর পিছু। তবুও তো একজন পরিচিত মানুষ পেতে যাচ্ছি এই মৃত্য পূরীতে!

- মৃত্যুপুরী! হ্যা..কেমন জানি গা ছমছম করে। তাইনা ?



কিছু ক্ষন যেতেই চৈতালী আর খুঁজে পেলনা , কোন দিকে গেল বান্ধবী। খুঁজতে খূঁজতে একটি বিশাল নদীর ধারে চলে আসছে ওরা। নদীর তীরে বসে এক ধরনের সুগন্ধী চাল নিয়ে বসছে ধবধবে সাদা শাড়ি আর সাদা চুলের এক বুড়ি। তবে সে বসে জিকির করছে আল্লাহর নাম। আর চৈতালীকে ভাল মত দেখছে। মনে হলো যেন খুব রহস্য করে হাসছে বুড়ি। অজানা কিছু জানতে পেরেছে সে। চৈতালী বলল এটা কিষাণকে। কিষাণ হেসে উরিয়ে দিল। চৈতালী ফিরতি পথে ঘুরতেই সে বান্ধবী ওর সামনে এসে দাঁড়াল।



-চৈতালী? কেমন আছিস। কোথা থেকে আসলি। সঙ্গে কে? বর নাকি?

চৈতালী আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। সে ঠিকেই চিনেছিল তখন ছেলেবেলার বান্ধবীকে।

-হ্যা মেহেরুন, আমার বর, কিষান। আমরা দু’জন তোকেই খুঁজছিলাম।

-হ্যালো, কিষান ভাই। চলেন আমি আপনাকে এগিয়ে নিতে এসেছি। আজকে আপনি আর চৈতালী আমার মেহমান।



কিষান সহজ সরল হাসি হাসল।

-হুম.. চলেন তবে।



ওদের সামনে বিশাল এক প্যালেস। এত বড় প্রবেশ গেট চৈতালী আগে কোন দিন দেখে নাই। ঢুকতেই ওর মূখ হা হয়ে গলে। এত বড় বাড়ি! এতগুলি গাড়ি নিচে গ্যারেজে সারি করে সাজানো। রাস্তার দু’ধারে ক্যকটাসের বাগান। হাজারো প্রজাতির ক্যকটাস সেখানে। তবে বাড়িটাতে আলো কম। সোডিয়াম লাইট জ্বলছে সবখানে।





-দিনের বেলায় বাতি লাগে তোদের? বলে উঠে চৈতালী।

-নাহ! সব সময় লাগেনা। আজকে বাইরে একটু মেঘলা তো তাই। আর তাছাড়া বাড়িটি উচু প্রচীরে ঘেরা বলে আলো কম আসে। চল ভেতরে চল হাত মুখ ধুয়ে নে। নাস্তা তো মনে হয় করিস নি। আমাকে সাহায্য করার লোক সব কয়টা এক সাথে ছুটিতে গেছে। বাধ্য হয়ে দিতে হয় ছুটি মাঝে মাঝেই। লোক তো এখন পাওয়াই যায়না।



কিষান আর চেতালীাকে মেহেরুনেএকটি সুন্দর ঘরে থাকার ব্যবস্থা করল। কিষান বাথরুমে ঢুকে পরল। মেহেরুন চৈতালী কাছে এসে কানে কানে কথা বলল চাপা স্বরে।

-চৈতালী! তোরা আসছিস খুব আনন্দ হচ্ছে। আজকে তোদের এক ভিন্ন সুগন্ধি চালের ভাত খাওয়াব। তবে কাজ করার লোক সব তো ছুটিতে। কিষাণ বিশ্রাম করতে করতে যদি ঘুমিয়ে পরে তবে তুই একটু কষ্ট করে আমার বাড়ি থেকে একটু দূরেই এক বুড়িে এই চাল নিয়ে বসে আছে বিক্রির জন্য তার কাছ থেকে ৫ কেজি চাল নিয়ে আয়। যা টাকা লাগে আমি দিচ্ছি তোকে।

-মেহেরুন! তুই ও যাবি আমার সাথে। দুই সই গল্প করতে করতে নিয়ে আসব।

-না চৈতালী! ঐ বুড়ি আমাকে দেখতে পারেনা। মাথার খারাপ মহিলা । তোকে পছন্দ করতে পারে। তোর কাছে বিক্রি করবে। আমাকে দেখলে আর করবেনা। হয়ত অনেক বাজে কথা বলবে পাত্তা দিবিনা।

-ঠিক আছে সখি। তুই নাস্তা রেডি কর। পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।

-জো হুকুম মহারাণী।



এত দ্রুত মেহেরুন এত খাবার এর আয়োজন কি করে করল কিষাণ আর চৈতালী তো অবাক। এত মজার মজার আর বিচিত্র সুন্দর করে সাজানো নাস্তার টেবিল যেন ওরা আগে দেখেনি। মেহেরুন মনে হয় ওদের মনের কথা পড়তে পারল।



-আরে কি কান্ড? তোমরা খাচ্ছ না কেন। সারা বছর আমার মেহমান আসতেই থাকে। তাই সব নাস্তার উপকরণ আমি রেডি করেই রাখি ফ্রিজে। এখন যেমন কাজে লেগে গেল।চৈতালী আর কিষান বিশ্ময় কাটিয়ে উঠে নাস্তা করে নিল। চা খেয়ে কিষাণ হাই তুলতে লাগল। চৈতালীর মায়া লাগল। আহারে ওকে নিয়ে শখের বেড়াতে বের হয়ে ঠিক মত ঘুমাতে পারছেনা।

-কিষা্ণ। চলো রুমে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেয়া্ যাক।

-ঠিক আছে চৈতালী। মনের কথাটি বুঝতে পারার জন্য আমি আনন্দিত।



মেহেরুণ চৈতালীকে চোখ ইশারা করে কিষাণকে নিয়ে রুমে যেতে বলল। চৈতালী বুঝে নিল মেহেরুন কি বলছে। রুমে যেতে যেতে চৈতালী লক্ষ্য করল বারান্দার রেলিং এর উপর হাটছে সম বয়সী কয়েকটি কালো বিড়াল। চৈতালী মনে মনে ভাবছে বড় লোকের সাথে বিয়ে হয়েছে তো কত রকম শখ এখন মেহেরুনের! হয়ত লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে বিড়ালগুলো।



কিষান বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। চৈতালী বিছানা ছেড়ে উঠে পরল । মেহেরুন তাকে চাল আনতে বাইরে পাঠাবে বলছিল। বারান্দা ধরে সে ড্রইং রুমের দিকে এগুলো। হঠাৎ চৈতালীর মনে হলো এ বাড়িতে মেহেরুন একা নয় আরো এক বা একাধিক মানুষ আছে । চৈতালী ড্রইং রুমে এর খুব কাছ থেকে চাপা কিছু কথোপকথন শুনতে পেল। কিন্তু রুমে ঢুকে দেখল মেহেরুন একা এবং অত্যন্ত ব্যস্ততার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। চৈতালী মনের গহীনের কৌতুহলকে খুব কষ্ট করে চেঁপে গেল। চৈতালীকে দেখে মেহেরুন একটা মিষ্টি হাসি হাসল।



-কিষান ভাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে, চৈতালী ?

- হ্যা, ঘুমিয়েছে মনে হয় কুম্ভকর্ণের ঘুম। আহা! দেখে মায়া লাগে।

-তুই কি যাবি নাকি চাল আনতে ? রান্নার প্রস্তুতি নিতে হবে বলে তাড়া দিচ্ছি তোকে।(খানিকটা কৈফিয়তের সূরে বলল মেহেরুন।)

-হু.. যাব বলেই তো না ঘুমিয়ে চলে আসলাম তোকে বলে যেতে। আচ্ছা বুড়ি কি এখনও আছে নদীর পাড়ে ?

-হ্যা, আছে তো বটেই। সারাদিনই থাকে। সবার কাছে চাল বিক্রি করেনা। মুখ দেখে যাকে ভাল লাগে তার কাছে বিক্রি করে। এ চালকে আমাদের এই এলাকায় পবিত্রতার মর্যাদা দেওয়া হয়। সব ধর্মীয় উৎসবে এ চাল এ রান্না করে এই এলাকার অধিবাসীরা।

- হু.. বুঝলাম মহারানী। থাকেন একা একা রান্না ঘরে। আমি যাই চাল আনতে যাই টুনাটুনি পাখির গল্পের মতন। চৈতালী কথাটি শেষ হতেই খিলখিল করে হেসে ওঠে দু’বান্ধবী।



চৈতালী পা বাড়ায় নদীর পাড়ের বুড়ির উদ্দেশ্যে। মেহেরুণের বাড়ির প্রধান গেটটি খোলা। এবং চৈতালী অবাক হয়ে দেখল একজন কালো পোশাক পড়া গেটম্যান। প্রথমবার বাড়িতে ঢোকার সময় লোকটি ছিলনা এখানে। আচ্ছা থাকনা! ছিল হয়ত কোন কাজে অন্য কোথাও ব্যস্ত ছিল। চৈতালীর সব কিছুতে এত সন্দেহ লাগছে..কেন .. নাকি মনের কল্পিত এক কু ডাক এটা। চৈতালী আনমনে এগিয়ে চলে নদীর তীর ধরে। ঐ তো বুড়ি। এখনও অর্ধেক চালও বিক্রি হয়নি। বুড়ির বিষয়ে এত কথা জেনে গেছে সে কথা বলতেই তো ভয় ভয় লাগছে।



- ও বুড়ি মা! চাল কি বিক্রি করবা নাকি?

-না বিক্রি করবনা। তুই কি চাস ?

-তোমার চালের থেকে ৫ কেজি চাল দাও।

- তোকে কে পাঠিয়েছে? মেহেরুন?

-আমি কিনব। হ্যা ওর বাড়িতে আমি বেড়াতে এসেছি। ওর কাছে এই চালের গল্প শুনে কিনতে এলাম।

- তুই যাহ! তোর কাছে তো আমি বিক্রি করব না। করতাম যদি তুই মেহেরুনের লোক না হইতি।



চৈতালীকে তো মেহেরুন বলেছেই যে বুড়ি আজে বাজে অনেক কথা বলবে। ওতে কান না দিতে।তবুও কেন জানি মেহেরুন সম্পর্কে বুড়ির কি অভিযোগ সেটা শুনতে ভিতর থেকে সে আগ্রহ পাচ্ছে।



-ওহ, বুড়ি মা.. এর সাথে মেহেরুনের সম্পর্ক নাই তো। এই চাল আমি নিয়ে যাব নিজ বাড়িতে। আর কিছু মনে করোনা বুড়ি মা! মেহেরুন তো একটা ভাল মেয়ে। ওর কাছে বিক্রি করতে তোমার আপত্তি কেন?

-হা হা হা.. (অট্টো হাসিতে ফেটে পরে বুড়ি).. তুই মেহেরুনের বান্ধবী? ওর সম্পর্কে তো তুই কিছুই জানিস না দেখি। ও ভাল ছিল হয়ত কোনকালে। এখন আর নাই। এখন সে একটা ডাইনী। প্রেত উপাসনা করে। হা হা হা.. বলে কি? মেহেরুন ভাল মেয়ে।তুই যাহ তো দেখি। সময় নষ্ট করিস না। আমি এই চাল বেঁচব না। তোর মেহেরুনকে বলিস, এবারও সে এই চাল কে অপবিত্র করে শয়তান কে নামাতে পারবেনা।



চৈতালীর গায়ের লোমকূপ গুলোতে কাটা দিল। কি বলে বুড়ি? মাথা ঠিকে আছে তো? নাকি চৈতালীর কোথাও ভুল হচ্ছে।



-আচ্ছা বুড়ি মা! তুমি চাল না বিক্রি করলে। একটা কথা জানতে চাই বলবে?

- বল কি কথা। তোকে দেখে তো মনে হয় না তুই মেহেরুনের মত। তুই এখানে আসছিস কেন? চাল কেনা লাগবে না। তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস মেহেরুনের বাড়ি থেকে চলে যা। সব থেকে ভাল হয় এখনই ষ্টেশনে চলে যা, টিকিট করে বাড়ি ফিরে যা।

-তোমার কথা শুনে আমার ভয় লাগছে বুড়ি মা। তুমি চলে যেতে বলছ আমাকে। ঔ বাড়ির মধ্যে আমার স্বামী এখন ঘুমাচ্ছে। তাকে রেখে তো আর আমি কোথাও যেতে পারব না। যেতে হয় বাড়িতে গিয়ে তাকে ঘুম থেকে তুলে তবেই যেতে হবে। এখন বল তুমি কেন আমাকে চলে যেতে বলছ? আর আমি ইচ্ছে করে আসিনি ওর বাড়িতে বেড়াতে। আমরা বেড়াতে বের হয়ে একটা দূর্ঘটনায় পরেছিলাম। ট্রেনটা নষ্ট হয়ে গেল। আমরা অনেক দূর হেটে অন্য একটা ষ্টেশন থেকে অন্য এক গাড়িতে উঠি। কিন্তু না চিনতে পারলাম ষ্টেশন, না চিনতে পারলাম যেপথে এসেছি তার নাম। এ জায়গাটা আমাদের দুজনের কাছেই একেবারেই অচেনা।এখানে এসে ঘুরছিলাম। মেহেরুনের সাথে দেখা হলো। বাড়িতে সে নিমন্ত্রণ জানালো। অচেনা জায়গায় ছেলেবেলার বান্ধবীকে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি হলাম। তার নিমন্ত্রণ পেয়ে তো আমি ভীষন আনন্দিত হলাম। এখন বুড়ি মা তুমি কি বলছো তার কিছুই আমার মাথায় আসছেনা।



- আমি চলে যেতে বলছি। কারণ আসছে আজ ১৩ এপ্রিলের রাত। অশুভ আত্মাদেরকে ডাকা হয় প্রতি মাসের ১৩ তারিখে। রাত ১২:১৩মি. থেকে শুরু হয়ে ভোর অবধি। তোর বান্ধবী ও তার সাথে থাকা আরো ১২জন পূজারী নানা রকম পবিত্র উপকরণকে অপবিত্র করে, একজন পবিত্র মানুষকে বলি দিয়ে তার রক্তকে অপবিত্র করে শয়তানকে ভেট দেয়। আমার কাছ থেকে প্রতি মাসেই চাল কিনতে কোন না কোন লোক পাঠায় ওরা। আমি সব সময় আল্লাহর উপাসনায় রত থাকি । আল্লাহর রহমতে আমি তাদেরকে চিনতে পারি। আর এই পবিত্র চাল শুধু আমার কাছেই পাওয়া যায়। তাই প্রতিবার সব কিছুই করতে পারে শুধু বড় শয়তানকে নামাতে পারেনা। এবার মনে হয় আটঘাট বেঁধে নেমেছে। তোদেরকে দূর থেকে সম্মোহন করে এনেছে।তোরা কিছুই বুঝতে পারিসনি। উপরন্তু তাই করছিস যা ওদের এখন করার প্রয়োজন হচ্ছে। তোর স্বামী ঘুমিয়েছে বলছিলি। সে কি আগে থেকেই তন্দ্রালু ছিল? নাকি ঐ বাড়িতে এসে তন্দ্রালু হয়েছে ?



- ঐ বাড়িতে এসে। মনে হয় কিষানের খাবারে কিছু মিশানো ছিল। তাইনা বুড়িমা? (চৈতালী কাঁদো কাঁদো আর ভীত স্বরে বলল।)

-হ্যা, মাথা মোটা কেথাকার এখন বুঝছো সেটা। এই যদি অবস্থা হয়ে থাকে তবে আজ রাতে তোর কিষানকে বলি দেবে ওরা।



চৈতালীর বুক ধরফর করছে। সে খুব ভাল বুঝতে পারছে কিষান আর সে এখন ফাঁদে আটকে পরেছে। এত ভাল করে আঁটকেছে আর মুক্তির পথ নেই।





বুড়ি বুঝতে পারছে যে চৈতালী নিছকই একটি ভাল মেয়ে। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ভয়ঙ্কর এ বিপদে পরে গেছে।বুড়ি চৈতালীর দিকে তাকিয়ে অভয় আর সাহসী হাসি হাসল। ভয় পাচ্ছিস মেয়ে? আমি আছিনা দুনিয়াতে? উপরে আল্লাহ আছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোকে শুধু সাহস হারালে চলবেনা। কেননা তোর স্বামীকে বাঁচাতে হবে।



হ্যা, তাইতো। হ্ঠাৎ চৈতালী দুঃশ্চিন্তা আর ভয়কে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করল।

: বুড়ি মা.. আমাকে সাহায্য কর। বল আমি এখন কি করব?

: আমি কে রে সাহায্য করার? আল্লাহকে ডাক। আমি তো উছিলা মাত্র। কখনও সর্বপরি মানুষের সাহায্য নয় আল্লাহর সাহায্য কামনা করবি মনে প্রাণে। তুই তোর বান্ধবীর মত ভুল করবিনা।

: অবশ্যই আল্লাহর কাছেই একমাত্র সাহায্য চাই। মানুষ তো এই সাহায্য করার বাহক মাত্র। বান্ধবীর বিষয়ে একথা বলছ কেন বুড়িমা?



: শোন তবে। তোর বান্ধবী আমাদের এলাকার বউ । গত ৫ বছর হল সে বউ হয়ে এসেছে। তার স্বামী থাকত বিদেশে। বিয়ের এক বছর পরে সে দেশে ফিরে আসে স্থায়ীভাবে। তোর বান্ধবী আর ওর বরের মাঝে খুব মিল ছিল।মেহেরুন ওর স্বামীকে ভীষন ভালবাসত। কিন্তু ওর বর দেশে ফিরে এক অদ্ভূত আচরণ করতে শুরু করে প্রতি বছরের ১৩ এপ্রিল রাতে। শয়তানের উপাসনা করত। পূজো করত ভোর পর্যন্ত। তোর বান্ধবী কিছু দিনের মধ্যে টের পেয়ে যায়। টের পেলেও এমনই নিবির ভালবাসত বরকে সে ছেড়ে যেতে পারলনা বরং মেহেরুনও ওর বরের মত হয়ে গেল। কোন এক ১৩ এপ্রিল রাতে মেহেরুণের বর তাকে বলল সে বলি দিবে মেহেরুনকে। শয়তানের নাকি এমনই ইচ্ছা তবেই সে ভর করবে ওর শরীরের উপর।ওর বর ওকে বোঝায় যে, বলি দিলেও শয়তান ওর মাঝে ভর করলে সে আবার মেহেরুনকে ফিরিয়ে আনবে মৃত্যুর ওপার থেকে। মেহেরুন রাজি হয়ে যায়। নির্ধারিত দিনে মেহেরুনকে বলি দিতে গিয়ে ওর বর শয়তানের সামনে ব্যর্থ হয়ে যায় এবং সাথে সাথেই শাস্তি স্বরূপ তার মুখ দিয়ে রক্তপাত হয়ে সে মারা যায়। মেহেরুন বাকরুদ্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। পরে ওর এক আজব খেয়াল আসে মনে, সে তার স্বামীকে ফিরিয়ে আনবে। সে আবার শুরু করে উপাসনা। এখন পর্যন্ত কত লোককে বলি দিয়েছে কে জানে।একটাও শয়তানকে সন্তুষ্ট করতে সফল হয়নি। এর পেছনে আমার কিছুটা ভূমিকা আছে মানুষ বলি দিলেও শয়তানের আসার পথকে সুগম করতে আমার পবিত্র চালের যে অপব্যবহার ওরা করতে চায় তা আর করতে পারেনি। আশা করি পারবেও না।



: বুড়ি মা! তুমি না হয় চাল দিলেনা। ওদের প্রার্থনা না হয় সফল হল না। কিন্তু কিষানকে যে বলি দেবে বলছ। আমি আমার স্বামীকে বাঁচাব কি করে?



: কে বলল চাল দিবনা? তোকে চাল দিব। তুই চাল নিয়ে যাবি। সব কাজে মেহেরুনকে সমর্থন করে যাবি।তোকেও হয়ত পুজারী করে নিবে। কারণ ঐ বাড়িতে আরও ১১ জন আছে যাদের স্বামী অথবা স্ত্রীকে মেহেরুন বলি দিয়েছে। আর ওদেরকে অদ্ভূত এক ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করিয়েছে ওদের এখন আর ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা নেই। মেহেরুন যা বলে তাই করে। বের হওয়ার সময় দারোয়ানকে দেখিস নাই? ওই তো ওর মত আরো ১০ টা আছে। তোকে দিয়ে ১২ জন আর মেহেরুন ১জন এবার ১৩জন উপাসনা করবে।



:আমি? আমি করব? কি বলছ বুড়ি মা? মরে গেলেও না। তুমি কিষানকে বাঁচানোর বুদ্ধি দাও তো।



: হা হা। তুইও উপাসনা করবি। তবে ভান করবি। আমি তোকে দো’য়া পড়া পানি খাওয়াব এখন। আর কিষানের জন্যও নিয়ে যাবি। ওর কিছুই হবেনা। ইনশাল্লাহ। ওকেও বলি দান নাটকের আগ পর্যন্ত অভিনয় করতে হবে। তোদের দুই জনের সাহায্যে ওদের সব পরিকল্পনা আর শয়তানের উপাসনা এবার সমূলে উৎখাত করব। কি ভয় লাগছে নাকি? ভয় পেলে পারবিনা। সাহাস রাখলে পারবি। আর আমি সব বলে দেব।



: ভয় তো লাগছেই কি দিয়ে কি হয়ে যায় আবার! তবে কিষানকে বাঁচাতে আমি সব করতে পরব বুড়িমা। তুমি শুধু বলে দাও যে আমাকে কি করতে হবে।



: এখন তোর খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া দরকার। চাল নিয়ে তুই এখন ফিরে যাবি। মেহেরুন খুব খুশি হবে। দুপুরে খাওয়ার পরে তোকেও মেহেরুন অদ্ভূত সেই ধোয়া নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করাবে শরীরে। তবে তোর কিছু হবেনা। কারণ আমি আল্লাহর কালাম পড়া পানি খাওয়াব তোকে এখন। তবে তোর শরীরে যে কোন পরিবর্তন আসে নাই মেহেরুন যেন বুঝতে না পারে। তোকে আর কিষানকে নিখুত অভিয়ন করতে হবে তবেই বাঁচতে পারবি মনে রাখিস। আর ঝটপট এই পানি টুকু তিনবার নিঃশ্বাস ফেলে ফেলে খেয়ে নে। বাকীটা কিষানকে খাওয়াবি।আয়াতুল কুরছি পরে কিছু চাল তোকে আলাদা করে দিচ্ছি এগুলো তুই শয়তান আসার সময় হলেই ছিটিয়ে দিবি। আর আয়তুল কুরছি একটা ছোট ফ্রেমে লিখে দিসি এটা কিষানের বুকে লাগায় দিবি কাপরের নীচে। খুব সাবধান।



: হুম.. দো’য়া কর বুড়ি মা। তবে আমি সফল হলে কি হবে?



: সর্ব প্রথমে শয়তান ধ্বংশ হবে। দো’য়া পড়া চাল ছিটালেই শয়তান এর ধ্বংশ অনিবার্য। কিষান বেঁচে যাবে। আয়াতুল কুরসি বুকে থাকার কারনে ওকে উপসাকেরা মারতে পারবেনা।ওদের মন্ত্র নিষ্ক্রয় হয়ে পরবে। আর সব কাজ ঝট পট সারা হলে ঐ বাড়ি থেকে নিরাপদ দুরত্বে চলে আসবি সবাইকে নিয়ে। বাড়িতে কিছু একটা পরিবর্তন ঘটবে যা সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। কি সেটা এখনই বলতে পারছিনা। যে পড়া পানির দিচ্ছি সেটা বাড়ি থেকে বের হবার সময় ছিটিয়ে আসিস। নাইলে হয়ত আর কোন দিন বাড়ি ফেরা হবেনা।



: ঠিক আছে বুড়ি মা। তোমাদের এখানে কোন পুলিশ আছে কিনা। তাদেরকে একটু জানিয়ে রাখলে ভাল হতোনা?



: আছে তো পুলিশ। কত্তবার গেছে ঐ বাড়িতে তুই কি আর কাউকে দেখছিস মেহেরুন আর দাড়োয়ান ছাড়া? তারাও পায়নি আজ পর্যন্ত কোন অস্বাভাবিক কিছু। মেহেরুন অনেক সাবধানী আর চালাক মেয়ে। সে পুলিশকে অনেক টাকা পয়সাও দিয়ে হাতে রেখেছে।



: আর একটা প্রশ্ন ছিল তোমার কাছে, কালো বিড়াল গুলো কেন মেহেরুনের বাড়িতে? আর তুমি বা কে এত কিছু জানো কিভাবে?



: কালো বিড়ালগুলি মেহেরুনের বর বিদেশ থেকে এনেছিল। এই বিড়ালের অনেক বয়স এরাও শয়তানের উপাসক। শয়তান আসার সময় এরা তাকে বেষ্টন করে পাক খেতে থাকে। যদি শয়তান মারা যায় তবে এরা কিছুক্ষণ বিলাপ করে কেঁদে স্বরূপে আকার নিবে এবং এটা খু্বই ভয়ঙ্কর হবে। তাই পড়া পানি ছিটিয়ে বের হবি যেন ওরা আক্রমন করতে না পারে। আর কি বললি? আমি কে? হা হা... আমি মেহেরুনের শাশুড়ি। ও আমাকে খাবারে বিষ খাওয়ায় মারতে চেয়েছিল। আমাকে মরা মানুষ মনে করে ফেলে দিয়েছিল নদীতে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি কিছুটা ছদ্দবেশ ধারণ করে রোজ ঐ বাড়ির দিকে নজর রাখি। মেহেরুন আসলে এত দুর্ব্যবহার করি সে মনে করে আমি তাকে দেখতে পারিনা। আমি মূলত: তাকে আমার থেকে সরিয়ে রাখি।কেননা সে আমাকে চিনে ফেললে আমি আমার বাড়ি থেকে শয়তানের আছর মুক্ত করতে পারবনা। আমি রোজ আল্লাহর কাছে দো’য়া করি। আজ মনে হয় দো’য়া কবুল হতে যাচ্ছে। তোকে পারতেই হবে মা। যা এখন ফি আমানিল্লাহ!



: ফি আমানিল্লাহ! বুড়ি মা। আল্লাহই ভরসা। তুমি অনেক বেশি দো’য়া কর আমাদের জন্য।



চালগুলি নিয়ে চৈতালী অত্যন্ত ব্যস্তভাবে মেহেরুনের বাসায় প্রবেশ করল। গেটম্যান তাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করলনা। চৈতালী সরাসরি রান্নাঘরে চলে গেল। মেহেরুনের মুখে প্রসারিত হাসি দেখে চৈতালী মনে মনে কেঁপে উঠল।



: আমি জানতাম চৈতালী, দেরী হলেও তুই এই কাজটি করতে পারবি। তুই যে মিশুক একটি মেয়ে সবাই তাই তো তোকে পছন্দ করে। যাক বাবব্বাহ! অনেক দিন পরে এই চালের ভাত আজ রান্না করতে পারব। তুই ফ্রেস হয়ে নে চৈতালী।



:চৈতালী অনেক কষ্টে একটু হেসে বলল। বুড়ি আসলেই অনেক জটিল। এত প্যাচাল পারে আর বলার না। তুই কি চিন্তা করছিলি নাকি সই?



: নাহ! চৈতালী আমি চিন্তা করিনি কারন, বুড়ি এমনিতে কারো ক্ষতি করেনা। আর একটু সময় লাগলেও তুই যদি চাল আনতে পারিস, সেও কম কি!



: ঠিক আছে তবে, যাই দেখি কিষানের ঘুম কেমন হলো। আর নিজেও একটু বিশ্রাম করি।



: বিশ্রাম করা হলে আমাকে হল রুমে আসলে পাবি।আর একটা কাজ আছে। এখন তবে কিষানের কাছে যা।



: ঠিক আছে আসছি পরে। (চৈতালী প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল এর পরে আসলে ওকে ধোঁয়া থেরাপি দেওয়া হবে। ভিতরে ভিতরে চৈতালী ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। তারপরও স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করতে হচ্ছে। আর নাইলে তো কিষানকে সে বাঁচাতে পারবেনা। খুব দ্রত চৈতালী তার রুমের দিকে এগুলো। পাগলের মত কিষানকে ডাকতে লাগল। কিষানের কপালে, গালে, হাতে ভালবাসার স্পর্শ দিল যা কিষান খুব পছন্দ করে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙ্গার কোন লক্ষণই নেই। কাঁদতে শুরু করল চৈতালী।)



:কিষান! কিষান! তাড়াতাড়ি ওঠো। আমাদের খুব বিপদ।



কিষান নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। চৈতালীর মনে হলো কিষান কি বেঁচে আছে?

চৈতালী হাউ মাউ করে কাঁদছে। কি করবে এখন চৈতালী! হঠাৎ সেই পড়া পানির কথা মনে হলো। সে কিছুটা পানি কিষানের মুখে দিয়ে দিল। কিষান একটু নড়ে চড়ে উঠল। এরপরে ছোট আয়াতুল কুরছি লেখা ফ্রেমটি কিষানের বুকে খুব ভাল করে এঁটে দিল। সারা মুখে পড়া পনি ছিটিয়ে দিতেই কিষান পিটপিট করে চোখ খুলল। চৈতালী আতংক ও কষ্টের মধ্যে আনন্দে হাসল।



: কিষান! ওঠো! আমাদের খুব বিপদ।

(ডুকরে কেঁদে ফেলল চৈতালী। কিষান চট করে উঠে বসে বিছানায়।)

: কি হয়েছে চৈতালী? কাঁদছ কেন? আমার কি হয়েছিল?

: তুমি ঘুমিয়ে ছিলে কিষান। তবে ইচ্ছে করে না, অন্যের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে।

: আমাকে কি একটু পরিষ্কার করে বলবে চৈতালী কি হয়েছে?

: তবে শোন...(চৈতালী সব ঘটনা খুলে বলল কিষানকে।) আসো কি করতে হবে পরিকল্পনা করি দু’জনে এখন যেন বেঁচে থাকতে পারি।

সব শুনে কিষান তো বিষ্ফোরিত চোখে চৈতালীকে দেখছে। বলছে কি এই মেয়ে?

: সত্যি সত্যি এমন ঘটবে আজকে চৈতালী? তবে তো আমার ঘুমিয়ে থাকারই অভিনয় করতে হবে যতটা নিঁখুত করে পারা যায় ,তুমি কি বল? তুমি কি করবে ঠিক করেছো?

: হ্যা..বুড়িমা আমাকে সব কিছু খুব স্বচ্ছ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের কিছু হবেনা। তবে অভিনয় করতে হবে খুব নিঁখুত করে। তোমার বুকে আয়াতুল কুরছি এঁটে দিয়েছি। এর জন্য ওরা তোমাকে বলি দিতে পারবেনা। আর আমিও্ পবিত্র চাল ছিটিয়ে দেব। শয়তান এলে সরাসরি ওর গায়ে ছুড়বো বুড়ির পবিত্র সে চাল। তখন সে মারা যাবে। তবে কি কিষান! খুব সাবধানে করতে হবে সব কিছু। এমন কি সব কাজ হলে পরে খুব তাড়াতাড়ি সরে পরতে হবে এই প্যালেস থেকে। কালো বিড়ালগুলি দেখছো না.. ঐগুলি নাকি ভ্যাম্পেয়ার। তখন ক্ষেপে যাবে। আর আক্রমন করবে। এক সাথে এত কথা তখন তোমার মনে থাকবেতো কিষান?

: তাতো অবশ্যই মনে থাকবে চৈতালী। আমার তো তোমাকে নিয়ে ভয় করছে। তুমি এখন তো আবার মেহেরুনের কাছে যাবে। খুব সাবধান সোনা।

কিষান চৈতালীকে খুব শক্ত করে ধরে রাখল। কি হবে একটা অনিশ্চিত অনাগত সময় আসছে ওদের জীবনে। জানেনা আজই ওদের জীবনের অন্তিম দিন কিনা।



: কিষান এখন নামাজ পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই আসো। তারপরে তো মেহেরুনের কাছে যাব।

: হুম.. চৈতালী ঠিক বলেছো। নামাযেই এখন সাহায্য চাইতে হবে। এরপরে তুমি মেহেরুনের কাছে যাও। আমি ঘুমের ভান করে পড়ে থাকি। তবে কি জানো? পড়া পানি আর আয়াতুল কুরছি সাথে আছে জেনে মনটা অতটা ভয় পাচ্ছেনা আমার।

: আল্লাহ ভরসা কিষান!



ওরা নামাযে বসল। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইল। অকালে মৃত্যু ঘটে একজন আরেকজনকে ছেড়ে যেতে যেন না হয় তার জন্য দো’য়া করল। যেন সব বিপদ কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে সেই প্রার্থনা করল। কান্নায় ভেঙ্গে পরল এই সুখী ও প্রেমী দম্পতি।



চৈতালী বসে আছে মেহেরুনের সামনে। মেহেরুন তাকে তাদের এলাকার একটি ধুপের গল্প করছে। যা কিনা মানুষের মঙ্গল ডেকে আনে।

: চৈতালী তোকে এখন এক রকম ধুপের ধোঁয়া তৈরি করে দেখাচ্ছি। এটা বলতে পারিস আমাদের এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটা শুভ একটা জিনিস।

: কি সেটা? কি হয় সে ধোঁয়াতে?

:একটু দাঁড়া। আমি তোকে দেখানোর জন্য সাজিয়ে রেখেছি। আগুন জ্বালাই দেখ।

সাজানো ধুপে মেহেরুন আগুণ জ্বালালো। একটি ধোয়ার কুন্ডলী তৈরি হলো। মেহেরুন চৈতালীর মুখের কাছে ধরতেই চৈতালীর গলা শুকিয়ে গেল। মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। সে জ্ঞান হারানোর ভান করল। মেহেরুনের হাসি আরো প্রসারিত হলো মুখে।

: হা হা হা... (অট্টোহাসিতে ফেটে পরল মেহেরুন)। এত তাড়াতাড়ি জ্ঞান হারালি রে হতভাগী।

চৈতালী চোখ বন্ধ করেই মনে মনে ভয়ে কুঁকড়ে গেল। কি ভয়ংকর। বুড়ি যখন বলছিল সে কতটুকুই আর বুঝেছিল আর চিনেছিল মেহেরুনকে তার গল্প শুনে। এখন সে নিজেই দেখতে পাচ্ছে। বুড়িকে মনে পড়ে গেল চৈতালীর। আল্লাহ বুড়ির মঙ্গল করুন।

মেহেরুন চিৎকার করে অনুগত লোক ডাকছে।



: কে আছিস! আমার সইকে খেয়াল রাখিস। তাকে এখন আমি যা বলব, সে তাই করবে। আর চিন্তা নেই। ওর বরকে সময় মত ঘুম থেকে তুললেই হবে। আগে না উঠে পরলে আর কোন ঝামেলা হবেনা। আরো কত কাজ আছে আজকে আমার । এখন অন্য সব কাজ গোছাতে যাই।

-------

কয়েক ঘন্টা পরে---

: মেহেরুন!... কিষানকে কি ঘুম থেকে তুলব ? সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায়। কত প্রস্তুতি এখনও বাকি।



(কালো পোশাক পরিহিত একজন সহ-উপাসকের কথাটি কানে যেতেই মেহেরুন তার দিকে ঘুড়ে দাঁড়ালো।)



: হ্যা.. তবে কিষানকে জাগাতে হবে চৈতালীকে দিয়ে। চৈতালীর কি অবস্থা দেখে আসো। না জেগে থাকলে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দাও। তারপর ওকে বললেই ও কিষানকে ডেকে তৈরি করবে অনুষ্ঠানের জন্য। তুমি শুধু পাশে থেকে নির্দেশনা দিবে। যাও দেরী করোনা। সব কাজ শেষে ছাঁদে অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে আসো।

: ঠিক আছে, যেমন তোমার ইচ্ছা, তাই হবে।



ছাদে সব একসাথে জড়ো হয়েছে উপাসকেরা। মেহেরুনকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। কালো বিড়ালগুলো গোল হয়ে বসে আছে। চৈতালী ধীর ধীরে এগুচ্ছে কিষানকে নিয়ে একজন প্রেত উপাসক আসছে ওদের পিছনে। ওরা বুঝতে পারছে যে, বিড়াল বেষ্টিত এই জায়গাটিই শয়তানের আবির্ভাবের জন্য নির্দিষ্ট স্থান। চৈতালী মোটামুাটি তৈরি, কিষানকেও তৈরি করেছে বুড়ির কথা মতই। চাল গুলোকে নানা ভাগে ভাগ করেছে। এরমধ্যে বুড়ির পবিত্র এবং সাধারণ কতগুলো চাল সব রকমই আছে। কিষান এর বুকে বাঁধা আছে আয়তুল কুরসি। দু’জনই বুড়ির পড়া পানি পান করেছে। এখন ভালোয় ভালোয় কিষানের বলি অনুষ্ঠান বাতিল এবং শয়তানের ধ্বংশকে নিশ্চিত করতে পারলেই হয়। বিশাল এক বলির কাষ্ঠ দেখা যাচ্ছে। পাশেই মস্ত বড় এক শান দেয়া তরবারী। অন্ধকারেও তার ধার চিক চিক করে জানান দিচ্ছে। চৈতালীর বুকের মাঝে মোচর দিয়ে উঠলো। নীচের সেই গেট ম্যানকে দেখে বুঝতে পারল চৈতালী এই লোকই বলি দানের কাজটি করে থাকে। খুবই আগ্রহী এবং অভিজ্ঞ ভঙ্গিমায় অপেক্ষা করছে। নজরে পরতেই এগিয়ে নিতে এলো কিষানকে। চৈতালীর মুখ অন্ধকোর হয়ে এলো, দু’চোখে পানিতে ভরে যাচ্ছে। লুকিয়ে ফেলল সে নিজেকে। ধীর পায়ে বেষ্টিত বৃত্তের মাঝে সুন্দর করে ছড়িয়ে দিল বুড়ির সেই পবিত্র চাল থেকে রূপান্তরিত অপবিত্র চাল। ছাদের রেলিং থেকে সে নীচে উঁকি দিয়ে দেখল মেহেরুন ক্যাকটাসের কাঁটা তুলছে। মেহেরুন এর মাথায় এক বিচিত্র মুকুটের মত। আজ সে ডাইনীদের গাউন পরেছে।

চৈতালী সিড়ি বেয়ে মেহেরুনের কাছে চলে এলো। খুবই শান্ত আর বাধ্যগত গলায় বলল-



:মেহেরুন! আমি কি কোন সাহায্য করতে পারি?

:মেহেরুন প্রসারিত হাসি মুখে বলল, ক্যাকটাস ছাড়া তো শয়তানের উপাসনা হয়না। তাই তুললাম একঝুড়ি। হয়ে গেছে মনে হয় আর লাগবেনা আর। এখন ক’টা বাজে?

: পনে বারটা বাজে।

: ঠিক বারটা তের মিনিটে আমরা শয়তানকে ডাকব। কিষানের পবিত্র রক্ত এবার ঠিকই শয়তানকে আনতে সাহায্য করবে। তুমি পবিত্র চাল সাজিয়েছো ঐ বৃত্তের চারপাশে?

: হ্যা, এই মাত্র সাজিয়ে আসলাম। (ঘৃণায় কুঁকড়ে গেল চৈতালীর মন।)

: চলো তবে ছাদে যাই, তুমি আর ক’টা কাঁটা তুলে আনো। আমি যাচ্ছি। জলদি জলদি চলে এসো।

: যেমন তোমার ইচ্ছা।



মেহেরুন চলে গেল, চৈতালী ঝপ পট কিছু কাঁটা তুলে নিল। ক্যাকটাস গুলোকে কেমন জীবন্ত মনে হলো। হয়ত শয়তান চক্র ধ্বংশ হলে এরাও ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে উঠবে। চৈতালী পবিত্র পানি ছিটাতে লাগলো বাড়ির চারিদিকে এমনকি গেটেও। কেউ যদি ওকে লক্ষ্য করেও থাকে সে ভাববে ক্যাকটাসের কাঁটা তুলছে সে। পবিত্র পানি ছিটিয়ে দিল,ওরা যখন সবশেষে এ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে এই বেষ্টনী পার হতে পারবেনা কোন অশুভ শক্তি।



কাজ শেষ করে ছাদে সব উপাসকের সাথে এক কাতারে দাঁড়ালো চৈতালী। বিড়ালগুলো একটু একটু করে গোলাকারে ঘুরছে। মেহেরুন বিরবির করে মন্ত্র পড়ছে। মুঠো মুঠো ধুপ বৃত্তের মাঝে ঐ অপবিত্র চালে ছিটাচ্ছে মেহেরুন । চালগুলো কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। এভাবে এই বৃত্তের মাঝে শয়তান একসময় আবির্ভূত হবে। মেহেরুণ কিছুক্ষণ পরপর দু’হাত তুলে আকাশের দিকে প্রা্র্থনা করছে। সেই সাথে বাকি ১২জন উপাসকও হাত তুলছে। চৈতালী সবার সাথে তাল দিতে দিতেই আড়চোখে কিষানকে দেখছে। কিষানের চোখ এবং দু’হাত কালো কাপরে বাঁধা। চৈতালীর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। কেমন লাগছে এখন কিষানের? নাজানি কিষান কত ভয় পাচ্ছে!চৈতালী দো’য়া করতে লাগলো মনে মনে, “হে আল্লাহ! পরম দয়ালু! তুমি আমাদেরকে জালিমের হাত থেকে রক্ষা কর। রক্ষা কর প্রভূ।”



আজ অমাবস্যার রাত। হঠাতই গোল বৃত্তে দেখা দিচ্ছে বিশাল আকৃতির ছায়া। শয়তান সন্তুষ্ট এবং সে এসেছে। শো শো করে বাতাস বইছে। মেহেরুন এবং বাকি প্রেত উপাসকদের উপাসনা আরো তীব্র হচ্ছে। সবাই অপবিত্র চালকে মন্ত্র পড়ে ছিটাতে লাগলো। চৈতালী ছিটালো স্বযত্নে লুকিয়ে রাখা কিছু সাধারন চাল। ক্যাকটাসের কাঁটাগুলো গলে পরছে। বিড়ালগুলো খুব দ্রুত ছুটছে শয়তান এর আগমনের আনন্দ প্রকাশে। ধীরে ধীরে বিশাল আকৃতি একটা দানবে রূপ নিয়েছে। শয়তান কথা বলে উঠলো-



:মেহেরুন! মেহেরুন! আমাকে এত ভালবেসে ডাকছিস বলে, আমি আসতে বাধ্য হলাম। বল, কি চাস তুই?

: প্রভূ! আমি আপনার কাছে আমার স্বামীকে ফিরে চাই। গত চারবছর হলো সে মারা গেছে, আপনারই উপাসনা করতে গিয়ে। আপনি তাকে বলেছিলেন মৃত মানুষ আপনি ফিরিয়ে আনতে পারেন। আমি আপনাকে ঠিক নিয়ম মত যা আপনার পছন্দ সেভাবেই পুঁজো দিয়েছি। আমি আপনাকে সন্তুষ্ট করেছি। আপনি আমার আবদার রাখুন।

: আমি মৃত মানুষ ফিরিয়ে আনতে পারি? হা হা হা হা। আমি জীবিত মানুষকে শয়তান বানাই। মৃত মানুষের সাথে কোন বোঝাপরা নাই। তবে তোর উপসনায় আমি সন্তুষ্ট তাই তোকে কিছু একটা করে দিতে চাই। আমার একজন অনুসারীকে আমি তোর স্বামীর আকৃতি দিতে চাই। তুই তো জানিস শয়তান যা ইচ্ছা তা রূপ ধারন করতে পারে। তুই তার জন্য কি ভেট দিতে পারিস আমাকে?

: একজন পবিত্র মানুষের রক্ত ও প্রান। তৈরি রেখেছি আপনি হুকুম দিলেই দিব।

: ঠিক আছে। আমি তাকে ডাকছি। হে আমার অনুসারী পুরুষ সামনে এসো! তোমাকে আমি মেহেরুনের স্বামীর আকার নিতে বলছি। আজ থেকে তোমরা দু’জন এই শহরে আমার অনুসারী বাড়িয়ে তুলবে। আজ থেকে তোমরা এক অপেরর সঙ্গী হলে। হা হা হা ।



সাথে সাথে একজন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটলো। সে মেহেরুনের স্বামীর মত দেখতে অবিকল। মেহেরুনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।



: হে প্রভূ! সেতো আমার স্বামীর মত দেখতে.. আমার স্বামী নয়। তার সাথে আমার বিবাহ হয় নি।

: হা হা হা। শয়তানের উপাসক এর কোন বিয়ে বা ধর্ম নাই। আজ থেকে তোমরা দু’জন শুধু দু’জনের জন্য। আমি বলেছি এটাই নিয়ম। আর কোন নিয়ম প্রয়োজন নাই। এই পৃথিবী থেকে শুভ নিয়ম তাড়াবে তোমরা। নিয়ম আবার কি? ধর্ম আবার কি? জানোয়ারের কোন বিয়ে হয়?.,.. মানুষেরও কোন বিয়ে প্রয়োজন নেই। আর এটাই তোমাদের মানুষকে জানাতে হবে। আর এটা এতো লোভণীয় প্রস্তাব, মানুষ তোমাদের অনুসারী হবেই।

: জ্বী বুঝতে পেরেছি, প্রভু! আপনার জন্য যে উপহার দিতে আমি অপেক্ষায় আছি তাকি এখন দেব?

: হ্যা... বাস্তবায়ন কর। আমি তার রক্ত পান করে আজ তোমাদের সাথে আনন্দ করব। হা হা হা (বিভৎস হাসি হাসে শয়তান।)



মেহেরুন চোখ ইশারা করল গেট ম্যানের দিকে। গেটম্যান কিষানকে বলির কাষ্ঠে দাঁড় করালো। কিষান আয়তুল কুরসি পড়তে শুরু করলো। অপবিত্র তরবারী কিষানের গর্দানের দিকে তাক করতেই গেট ম্যানের হাত থেকে তরবারী পরে গেল। চৈতালী চিৎকার দিল “কিষান!” কিষানের হাতের গিট ঢিল ছিল। কিষান তরবারী তুলে গেটম্যানের গলায় চেঁপে ধরল। মেহেরুন হতবম্ভ হয়ে গেল। শয়তান ভীষন রেগে গেল। চৈতালী শয়তানের ঠিক সমনে গিয়ে শয়তানের গায়ে পবিত্র চাল ছিটিয়ে দিল। শয়তান চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো। বিড়ালগুলো চালের স্পর্শে এদিক ওদিক ছুটতে লাগলো। চৈাতালী মেহেরুনসহ সব উপাসকের গায়ে পবিত্র চাল ছিটিয়ে দিল। সবার গায়ে জ্বালা ধরে গলে। এরপর চৈতালী শয়তানের গায়ে দিল বুড়ি দেয়া পড়া পানি ঢেলে। শয়তান এক বিকট ‍চিৎকার করে উঠলো। চৈতালী কিষানকে ডাকলো খুব জোড়ে। পড়া পানি ছিটাতে ছিটাতে ওরা সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো। গেটের দিকে ছুটে বের হতে হতে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে লাগলো কালো ভ্যাম্পেয়ার বিড়াল গুলো। প্রায় ‍কিষানকে ধরেই ফেলেছিল একটি বিড়াল, আয়তুল কুরসি সাথে থাকার কারনে খুব একটা কাছে আসতে পারলনা। চৈতালী দেখলো রাস্তার পাশের ক্যাকটাসগুলো ফুঁসে উঠছে। পড়া পানির জোরে কোন ক্ষতি করতে পারছেনা, কিন্তু চেষ্টা করছে। হঠাৎ বুড়িমা এগিয়ে এলো গেটে। ওদের উদ্দেশ্যে বলল-



: তোমরা তারাতারি বের হও। আমি সারাবাড়িতে কেরসিন ঢেলে দিসি। এখন তোমারা ‍বের হলে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে দেব। তোমরা সোজা রেল স্টেশনে চলে যাও।

: আপনি এখানে দাঁড়ান বুড়িমা। আমি দিয়াশলাই জালিয়ে আগুন এর ব্যবস্থা করে আসছি।

‍বুড়িকে এই কথা বলে কিষান আবারও বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরে। বাড়ির ভিতরে শুধু আর্ত চিৎকার আসছে। কিষান পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে আগুন জ্বালালো বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় শুকনো পাতা বা কাগজের স্তুপে স্তুপে (বুড়ি যা আগেই তৈরি করেছে সহজে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য)। আগেই ওরা সিড়ির ঘরের দরজা বাইরে থেকে আঁকটে এসেছে তাই, ছাদ থেকে লাফ না দিলে আর বের হওয়ার উপায় নাই। হঠাৎ কোথা থেকে কালো বিড়াল ধাওয়া করে এলো কিষানের পিছু। কিন্তু ওর গায়ে লাফিয়ে পরতে চেয়েও পারছেনা। কিষান আঁতকে উঠছে এই ভয়ঙ্কর ভ্যাম্পোয়ারের বিভৎস চেহারা দেখে। এক ছুটে কিষান বের হয়ে এলো। এত বড় প্রাচীর যে আগুন লেগেছে তা বাইরে থেকে বোঝাই জাচ্ছেনা। জানোয়ারের চিৎকার আসছে শুধু।

: ঠিক আছে এখন। বুড়িমা বলেন তো, আমাদের বের হওয়ার আগে আপনি প্যালেসে ঢুকলেন কি করে? (জানতে চায় কিষান)

: আমি অপেক্ষায় ছিলাম। গেট সাধারনত উপাসনার সময় হলে বা তার অনেক আগে থেকেই বন্ধ করা থাকে। আজ পর্যন্ত কেউ এই সময়ে ভিতরে যেতে পারেনি। তবে এবার ব্যতিক্রম হবে আমি জানতাম, চৈতালী তো গেটে পড়া পানি ছিটিয়ে গিয়েছিল উপাসনা শুরু হওয়ার আগেই। একারনে ঢুকতে পেরেছিলাম। তোমাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমরা না হলে আজ এই শয়তানদের হাত থেকে এই শহর মুক্ত করা যেতনা। আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুন। তোমরা এখনই চলে যাও। কেননা মানুষ আজ না হলেও বা পরে হলেও এই ঘটনা জানবে। তোমরা সম্পৃক্ত আছো জানলে ঝামেলায় জড়িয়ে পরতে পার। আর তাছাড়া যে ধকল গেছে এখনই স্টেশনে গিয়ে বাড়ির ট্রেন ধরে চলে যাও।



: জ্বী আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনি ভাল থাকবেন। সাবধানে থাকবেন। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। আমাদের জন্য দো’য়া করবেন। আমার আজকে থেকে আপনার সন্তান। আবার আসব আপনাকে দেখতে। আপনি এই শয়তানের পাল্লায় সব হারিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ আমারদেরকে আপনার জন্য পাঠিয়েছেন। আপনি তাই কিছুই হারাননি বুড়ি মা।



মেহেরুনের প্যালেসের দিকে তাকালো ওরা সবাই। একটা জলন্ত হাত দিয়ে রেলিং বেয়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। সবাই থমকে দাঁড়ালো। আর কেউ না, জীবন্ত অঙ্গারে পুড়ছে মেহেরুন। অবাক আর বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে তিনজনকে। বাঁচার আকুতির পরিবর্তে ওর মুখে ফুটে উঠেছে চরম বিস্ময়। এই দৃশ্য দেখে কেঁপে উঠলো তিনজন মানুষের ভেতরটা নিঃশব্দে।



স্টেশনে পৌছে গেছে কিষান আর চৈতালী। আজ ওরা স্টেশন চিনতে পারছে চারপাশ। কোন সমস্যা ছাড়াই ওদের নিয়ে অনন্তপুরের গাড়ি যাত্রা করল। চৈতালীর মনে হলো সে হাজার বছর পরে কিষানের কাছাকছি বসেছে। দু’জনই এত ক্লান্ত যে, ঘুমিয়ে পড়ল। ট্রেন ছুটে চলল বিউগল বাজিয়ে.... অনন্তপুরের পথে।



তানিয়া হাসান খান

সময়: ৬:০৫মি.

তারিখ: ২৩/০৫/২০১৪ইং

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

মুদ্‌দাকির বলেছেন: অনেক দিন পরে আপনাকে ব্লগে দেখে ভালো লাগল :) :) :)

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩১

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: আমারও শত ব্যস্ততার মাঝে ব্লগে এসে খুব ভাল লাগছে :)

ধন্যবাদ :)

২| ২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: পড়ে কমেন্ট করবো। সুযোগের অপেক্ষায় থাকলাম ।

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া :)

৩| ২৪ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

অপ্রকাশিত কাব্য বলেছেন: পূর্ন একটি গল্প,, খুব ভালো হয়েছে

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৮

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া :)

৪| ২৪ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১

অপ্রকাশিত কাব্য বলেছেন: আপু নিচের আইডি থেকে রিকু দিয়েছি
Click This Link

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৯

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: জ্বী ভাইয়া. আমি এ্যাড হয়েছি. ফেবুতে :)

৫| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৩৯

সুমন কর বলেছেন: এতো বড়, পরে সময় করে পড়তে হবে।

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪০

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: সময় করে পড়বেন জেনে ভাল লাগল :)

ধন্যবাদ :)

৬| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:১০

তাসমিয়া আফরোজ তৃষা বলেছেন: পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গেলাম!তবে খুব ভাল হয়েছে।

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪২

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: আহালে.. শেষ কেন.. :)

ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য এবং খুব ভাল হয়েছে বলার জন্য ধন্যবাদ আপুনিটাকে :)

৭| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:১৩

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
ফেবু থেকে লিঙ্ক দেখে আসলাম।


রাত গভীর হক, তখন পড়ব।

জমবে ভালো ;)

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: জানিও কেমন লাগলো।
ভয় পেলে আমাকে খুঁজোনা। আমি নিজেই এই গল্প লিখতে গিয়ে ভয়ে অস্থির। মনে হচ্ছিল শয়তান আমার ১২ টা বাজাতে খুঁজেতেছে। :(

ধন্যবাদ ভাইয়া :)

৮| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৬

অপ্রকাশিত কাব্য বলেছেন: রিকু একসেপ্ট করার জন্য ধন্যবাদ আপু

১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৬

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: তোমাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.