নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

(টুটুন বালতি-একটি ভিন্ন রকমের মোরাল গল্প। আশাকরি, আপনাদের ভালো লাগবে।)

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

(টুটুন বালতি-একটি ভিন্ন রকমের মোরাল গল্প। আশাকরি, আপনাদের ভালো লাগবে।)

শেষ পর্যন্ত টুটুন বালতিটা বিক্রি হয়নি। বালতি নিজেও জানতো ও কোনোদিনও কারো কাছে বিক্রি হবেনা। ওকে কিনে নিবেই বা কে? ওর তলায় যে বেশ কয়েকটি ফুটো। তাইতো ও দোকানে অবহেলায় পড়েছিলো অনেকদিন।

আস্তে আস্তে একদিন মালিকের দোকান পাকা হলো।নতুন নতুন মাল ওঠলো। যে জিনিসগুলো একেবারেই কোনো কাজে লাগবেনা মালিক সেগুলো রাস্তার কিনারে ফেলে রাখলেন।

বালতি জানতো, এবার সে নিয়মিত পথচারীদের লাথি উষ্ঠা খাবে। টুং করে শরীর বেজে ওঠলেই ও লাত্থিটা খুব ভালো ভাবেই অনুভব করতে পারতো।

এভাবে কতজনের কত লাত্থি গায়ে লাগলো তার। তারপর, কারো একজনের অনুগ্রহ হয়ে -বালতিটা একদিন এক দরিদ্র গৃহে আশ্রয় পেলো।

বালতিটা নিয়ে মালিককে সেই দূরের একমাত্র জলকুয়োয় যেতে হয়। রুক্ষ মরু পথে অনেক দূর হাঁটতে হয়। এই এলাকায় জলমেঘ না থাকায় আশে পাশে কোথাও পানির সন্ধান নেই। প্রতিদিন বালতি ভর্তি করে পানি নিয়ে ঘরে ফিরতেই অর্ধেক খালি হয়ে যায়। অনেকবার চেষ্টা করেও ফুটোগুলো বন্ধ করা যায়নি। এদিক ওদিক দিয়ে পানি পড়বেই।

মালিক গজগজ করেন। মনে মনে বলেন- সেদিন বাজার করতে গিয়ে পকেটচুরি না হলে -এই কানা বালতি নিয়ে কেউ কি ঘরে ফিরে?

এভাবে দিনের পর দিন যায়। এরপর কতদিন গেলো। কতপথ একসাথে হাঁটা হলো তার। কত গাল মন্দ জুটলো তার জীবনে।

মরু এলাকা থেকে অনেক দূরে এক জমিদারবাড়ী। ওরা দেখেনি কখনো। শুধু গল্প শুনেছে সে বাড়ীর। যে বাড়ীর ভিতর এতো কাট খোট্টা না। এমন রুক্ষ প্রকৃতি না। গাছপালা আছে, ফুল আছে, লতাপাতা আছে। এক সুন্দর ছায়াঢাকা মায়াময় পরিবেশ আছে। শুনে আর ভাবে, মাটিতে এতো সুন্দর উদ্ভিদ জন্ম নেয় কেমন করে?

বালতি মাঝে মাঝে যখন মালিকের হাত ধরে ঘরে ফিরে, তখন দেখে এক ঝাঁক পাখি ডানা মেলে কী সু্ন্দর দূরের কোনো আকাশে ওড়ে যায়। তার গায়ে পড়ে তখন সে পাখীগুলোর ছায়া। না হয় সারাক্ষণই কটকটে রোদের ভিতর দিয়েই ওদের চলতে হয়। মাঝে মাঝে ওর গায়ে কদাচিৎ কোনো শস্যদানা অথবা অন্য কোনো কিছু যেন ওড়ে এসে পড়ে। পাখীর গা থেকে খসে যাওয়া এগুলো নিশ্চয় পালক নয়।


এভাবে আরো কতদিন যায়। আহা! বালতি যদি সেই উড়ে যাওয়া পাখী হতো। তাহলে-কি আর প্রতিদিন এভাবে মালিকের রুক্ষ কটকটে কথা শুণতে হয়। আর মালিকের কথা কর্কশ হবেই বা না কেন? এই এলাকার প্রকৃতিটাই যে এমন। ঘাস নেই, ফুল নেই, লতা নেই,সবুজের কোনো চিহ্ন নেই। মানুষের মন কোমল হবে কেমন করে?

তারপর একদিন। মালিক প্রতিদিনকার মতো পানি নিয়ে পাথুরে পথ ধরে বাড়ি ফিরছেন । হঠাৎ খেয়াল করেন- রাস্তার দুপাশে-ছোট ছোট কিছু চারা অঙ্কুরোদগম হয়েছে। শুধু তাই না-নাম না জানা কি একটা সবুজাভ গাছে যেন একটা ফুলের মতো কলিও এসেছে।

মালিক ভাবেন, আহা! এ হলো কেমন করে? মেঘ নেই,বৃষ্টি নেই, জল নেই,দানা নেই। এসব ছাড়া কি গাছ হয়, কি কোনো ফুল হয়?

বালতির ফুটো দিয়ে ঝড়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা পানি পেয়েই তবেই কি পাথুরে মাটি সতেজ হয়েছে আর পাখির ঠোঁট থেকে খসে পড়া দানা থেকেই কি তবে এই ছোট শিশু গাছের অঙ্কুরোদগম হয়েছে?

ঘরে পৌঁছালে গিন্নী বলেন- এই ফুটো বালতি দিয়ে এভাবে আর কতদিন চলবে? হয় নতুন আরেকটা কিনে নিয়ে এসো। অথবা ফুটোগুলো ভালোভাবেই বন্ধ করো। না হয়-ঐ ময়লার স্তুপে রেখে আসো।

মালিক বলেন-আহা! কোনো কিছুই করতে হবেনা।আর দরকারও নেই। সবেমাত্রতো সবুজ চারা দেখা দিয়েছে। আর কয়েকটা কলিও ফুটেছে।

গিন্নী, এ কথার কোনো আগা মাথাই বুঝেন না। টুটুন বালতিটা শুধু মিটিমিটি হাসে। আজ এতোদিন পর ওর মনেও যে সেই ভেজা মাটির মতো সজীবতার পরশ লেগেছে।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩২

আহমেদ জী এস বলেছেন: খেয়া ঘাট ,



সুন্দর লিখেছেন । তবে এ কাহিনীটি আগে অন্যভাবে পড়েছি । অনেক ছোট্ট গল্প ছিলো তা ।
আপনি ফুটো বালতির পানিতে মাটি ভিজিয়ে সজীবতার পরশ লাগিয়ে গেছেন।

শুভেচ্ছান্তে ।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩৪

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বালতি অবশেষে চারাগাছ এর স্পর্শ পেয়ে ভুলে গেছে সব অবসাদ । গল্পটি ভাল লাগল ।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৫

আরজু মুন জারিন বলেছেন: আহা!!! অসাধারণ অপূর্ব একটি গল্প পড়লাম। মন ভালো হয়ে গেল আমার। সবুজ চারামাটির স্পর্শ আমি ও পেলাম গল্পের মাধ্যমে।

গল্পের মরাল টি আমাকে ও স্পর্শ করে গেল। অনেক ধন্যবাদ ভাই চমৎকার গল্পটির জন্য। শুভেচ্ছা রইলো অনেক অনেক।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার গল্পে ভাল লাগা ...

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ২:০৪

আমি উম্মাদ বলেছেন: এককথায় অসাধারণ...

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৩০

খেয়া ঘাট বলেছেন: আমার বিনম্র ধন্যবাদ রইলো।

৭| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২৫

লাবিব ফয়সাল বলেছেন: অনেক ভালো হয়েছে , ,

৮| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমাদের দেশের রাজনীতিবীদরা ফুটো বালতির পানিতে নয় বরং তাদের হিংসা হানাহানীতে ঝড়ে পড়া অসহায় মানুষের রক্তে ভিজে সজীব হতো তা হলে হয়তো বন্ধ হতো সংঘাত।

৯| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লেগেছে।

১০| ৩০ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: শেষের দিকে এসে আরো ভালো লাগলো

১১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮

আমি ইহতিব বলেছেন: ভালো লাগলো। মেয়েকে শোনাবো এই গল্পটি।

১২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০২

আমি তুমি আমরা বলেছেন: চমৎকার গল্প। ভাল লেগেছে।

ফুটো বালতি নিয়ে এর আগে আরেকটা গল্প পড়েছিলাম। সময় সুযোগ পেলে কোনদিন সেটা অনুবাদ করব ইন শা আল্লাহ্‌ :)

১৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

সুমন কর বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম। কেমন আছেন?

ভালো লাগল।

১৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৪১

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সবাইকে।
এতো আমার দারুন সৌভাগ্য। আদরের সোনাপাখি আমার লিখা গল্প মায়ের কাছ থেকে শুনবে।
আপনার অুনবাদ পড়ার ইচ্ছে রইলো।
ভালো আছি ভাই। আগের মতো আসতে পারিনা বলে মন খারাপ হয়।

আবারো ধন্যবাদ সবাইকে যারা কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করেছেন।

১৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৫২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অতিব চমৎকার হয়েছে ভ্রাতা। অনেক অনেক দিন মনে গেঁথে থাকবে গল্পটি। ইশপের গল্প টাইপের...

ভালোলাগা সাথে একগুচ্ছ +++

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা নিরন্তর।

১৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৬:৩২

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা রইলো।

১৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২৩

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বাহ! সুন্দর গল্প । মনে কেমন সবুজের ছোঁয়া রেখে গেল শেষটা।

১৮| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৩১

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

১৯| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২৪

বটের ফল বলেছেন: একটু একটু যত্ন, আর মায়ার পরশে আস্তে আস্তে বদলে যাই , বদলে দেই নিজেকে, চারপাশকে। আসলে বেশি কিছু লাগেনা। ওই একটুখানিই যথেষ্ট।

ভালো থাকবেন অনেক বেশি।

২০| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:০৬

জাহাজী বলেছেন: প্রায় দু বছর পর আপনার এই লেখা খুজে বের করে আবারো পড়ে, আত্মা তৃপ্ত করলাম আর লাইক করে প্রিয়তে রাখলাম। সত্যিই অসাধারণ লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.