নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষু ডাক্তার

খোমেনী

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ......।

খোমেনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে ইহুদি সম্প্রদায়

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:০৩


শিরোনাম দেখে ভ্রূ কুঁচকে ওঠার কথা। কেননা ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। দেশে ইহুদিদের কোনো সিনাগগ বা ধর্মমন্দিরও নেই। তবে আজকের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভিন্ন ছিল— অল্প সংখ্যক ইহুদি সম্প্রদায়ের নাগরিক বসবাস করতেন এখানে।

ইস্ট বেঙ্গল জিউশ কমিউনিটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শালম কোহেন। শালম কোহেনের জন্ম ১৭৬২ সালে, মৃত্যু ১৮৩৬-এ। শালম ১৭৯৮ সালে সুরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন। সেখানে ক্যালকাটা জিউশ কমিউনিটি স্থাপন করেন। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন কাপড়, সিল্ক, মসলিনের বাণিজ্যের পাশাপাশি ইহুদিদের ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অভিপ্রায়ে। ১৮১৭ সালে মোসেস ডুয়েক নামের এক ব্যবসায়ী কোহেনের বড় মেয়ে লুনাহকে বিয়ে করে কলকাতা থেকে পাঁচ বছরের জন্য ঢাকায় চলে আসেন। তিনি এখানে এক প্রার্থনাসভা প্রতিষ্ঠা করেন।

উনিশ শতক থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বাগদাদি ইহুদিরা ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনা করেন। তবে তারা কলকাতায় বসে দেখভাল করতেন। উপমহাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলায়ও টেক্সটাইল, মুক্তা ও আফিমের ব্যবসা করে ধনী হয়েছিলেন ইহুদিরা।

দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে চার হাজার ইহুদি ছিলেন। এর মধ্যে ১৩৫ জন থাকতেন পূর্ব বাঙলায়। সাতচল্লিশের পর পূর্ব বাঙলা পাকিস্তানের অংশ হয়ে ইস্ট পাকিস্তান নাম ধারণ করে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে। এর প্রধান স্থপতি ছিলেন মার্কিন নাগরিক লুই আই কান। ফিলাডেলফিয়ায় জন্মগ্রহণকারী লুই কান ছিলেন একজন ইহুদি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন এক ইহুদি নাগরিক— লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। তিনি জেনারেল জ্যাকব নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কলকাতার এক বাগদাদি জিউশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

জ্যাকবজ্যাকব

পাঠক আগেই জেনেছেন, বাংলাদেশে কোনো সিনাগগ নেই। তবে ধারণা করা হয়, কিছু সংখ্যক ইহুদি জিউশ নববর্ষ বরণ এবং ডে অব অ্যাটোনমেন্ট বা ইয়ুম কিপুর উপলক্ষে একত্র হতেন। ইহুদিদের পুণ্য দিবস ইয়ুম কিপুর। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে কোনো সিনাগগ আছে কিনা, জানতে চেয়ে এক পর্যটক ট্রিপ অ্যাডভাইজারে পোস্টিং দিয়েছিলেন। জিউশ অব বাংলাদেশ নামের এক ব্লগ সাইটে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসরত এক ব্লগার লিখেছিলেন, তার বাবা ইয়েমিনিত জিউশ বা ইয়েমেনি জিউশ, মা বাংলাদেশী। ব্লগার পরে অর্থোডক্স খ্রিস্টান বনে যান। সেই একই ব্লগে কয়েকজন ইহুদি দাবি করেন, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, আসা-যাওয়া করছেন।

কানাডার অন্টারিও নিবাসী ইহুদি জোসেফ এডওয়ার্ডের জন্ম চট্টগ্রামে। তিনি ১৯৮৬ সালে কানাডা চলে যান। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, চট্টগ্রামের কনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি বা চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রিতে ইংল্যান্ডের এক আরএএফ সার্জেন্টের কবরের ওপর স্টার অব ডেভিড খোদাই করা আছে। ইসরায়েলের জাতীয় পতাকার মধ্যে রয়েছে দ্য স্টার অব ডেভিড (ছয় কোণের নীল রঙের তারকা)। জোসেফ এডওয়ার্ডের বাবা রাহামিম ডেভিড বারুক ও তার বড় ভাই এজরা বারুকের জন্ম কলকাতায়। তারা পরে ইস্ট পাকিস্তানে চলে আসেন। জোসেফের বাবা চট্টগ্রামের জাহাজ শিল্পে জড়িত ছিলেন। তিনি পর্তুগিজভাষী এক ক্যাথলিক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। জোসেফের চাচা পার্বত্য চট্টগ্রামের এক চাকমা রাজকন্যাকে বিয়ে করে চন্দ্রঘোনায় থিতু হন। সন্তান জন্মদানের সময় মারা যায় তার স্ত্রী। সদ্যোজাত সন্তানকে এক মুসলিম পরিবারে লালন-পালনের ভার দেন। জোসেফের পরদাদা ব্যবসার প্রয়োজনে কলকাতায় আসেন। জোসেফের অনেক আত্মীয় এখন ইসরায়েলের আরাদ ও বীরসেবায় বাস করছেন। কেউ আছেন টরন্টো, ইংল্যান্ড ও সিডনিতে।

বাংলাদেশের সব ইহুদি বাগদাদি ছিলেন না। বেনে ইসরায়েল সম্প্রদায়ের ইহুদিরা ষাটের দশকে মুম্বাই থেকে বাংলায় এসেছিলেন। এ সম্প্রদায়ের জর্জ রুবেন পাকিস্তান অক্সিজেন লিমিটেডের বিক্রয় ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা ইসরায়েল চলে যান।

অন্য আরেক পরিবারের কথা জানা যায়। তারা কোহেন ব্রাদার্স নামে পরিচিত ছিলেন। তাদের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন ইরান ও ইরাক থেকে। মোর্দি কোহেন রাজশাহীর স্কুলে পড়াশোনা করতেন। তার বাবার মদের ব্যবসা ছিল। তিনি রাজশাহী রেডিওর ঘোষক ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক অন্যতম উদ্যোক্তাও ছিলেন মোর্দি কোহেন। পাকিস্তান টেলিভিশন নামে ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিকালে ডিআইটি ভবনের বাইরে এ টেলিভিশনের উদ্বোধন করেন তত্কালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন মোর্দি কোহেন। তার উপস্থাপনায় স্টুডিও থেকে প্রচার হয় একটি গানের অনুষ্ঠান। পত্রপত্রিকায় তাকে ফিরিঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়। কোথাও কোথাও তাকে ফিল্ম সম্পাদক হিসেবে বলা হয়েছে। তিনি বিটিভির ইংরেজি সংবাদ পাঠকও ছিলেন। মজার বিষয়, প্রথম দিনের মতো আজো বিটিভি অনুষ্ঠান ঘোষণা করে চলেছে। খান আতাউর রহমানের নবাব সিরাজউদ্দৌলাসহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন মোর্দি। ১৯৬৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তাকে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানকার কয়েকটি সিনেমায়ও অভিনয় করেন। কলকাতায় একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। বিটিভির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অতিথি হয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সস্ত্রীক ঢাকা ঘুরে যান মোর্দি। মোর্দির এক ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করেছেন। তিনি পরে ইসরায়েলের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গাড়তে পারলেও, পূর্ববঙ্গে কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যই করে গেছেন ইহুদিরা। তাদের সংখ্যাও ছিল নগণ্য।

উইকিপিডিয়া, এশিয়ান জিউশ লাইফ ও দ্য জিউশ ক্রোনিকল অনলাইন অবলম্বনে আমির ওয়ারেছ।

(সূত্র: অনলাইন)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৯

সজীব মোহন্ত বলেছেন: এখন ইহুদীরা বাংলাদেশে থাকলে তাদের যে কি অবস্থা হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.