নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের সাম্পান ওয়ালা- [email protected]

নিশাচড়

গ্রামের এক দুরন্ত ছেলে আমি। মেটো পথ দিগন্তহীন সবুজ মাঠ আর গাছে গাছে দাপিয়ে কাটিয়েছি কৈশোর। স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসি...স্বপ্ন দেখি সুুন্দর পৃথীবির ....ভালোবাসি দেশ মাটি ও মানুষদের। আমি স্বপ্ন দেখি.... আমি স্বপ্নের সাম্পানে ভর করে উরে বেড়াই সুন্দরের পথে।।

নিশাচড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা

২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:০৮

বইঃ ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা
লেখকঃ হুমায়ুন আজাদ
ধরনঃ কিশোরসাহিত্য
প্রচ্ছদঃ সমর মজুমদার
প্রকাশকঃ ওসমান গনি
আগামী প্রকাশনী ৩৬ বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০
প্রথম প্রকাশ কার্তিক ১৩৯২ নভেম্বর ১৯৮৫
দ্বিতীয় সংস্করণ ষষ্ঠ মুদ্রণ জৈষ্ঠ ১৪১৯ মে ২০১২
মূল্যঃ ১৫০

বাধাইঃ
৫৬ পৃষ্টার বইটি ৭.৩"/৯.৫" সাইজে বোর্ড বাধাই করা, হোয়াইট প্রিন্ট কাগজে আকর্ষনীয় ছাপা।
বইটি প্রকাশেরর ক্ষেত্রে প্রকাশকের যত্নের কমতি ছিলনা বইটটি দেখলেই এর প্রমাণ স্পষ্ট।লেখার চার পাশে যতেষ্ট মার্জিন ও মুদ্রণ স্পটতায় বইটিকে আরো আকর্ষনীয় করেছে।

ছাপার অক্ষরের আকৃতিঃ
বইটি কিশোর সাহিত্যের ছোট গল্প।অক্ষর সাইজ ১৬ কিশোরদের পাঠের জন্য আনন্দ দায়ক এমনকি বড়দের জন্যও যথার্থই।

প্রচ্ছদঃ
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার। বইয়ের গল্পের সাথে প্রচ্ছদের একটা সেতু থাকে এটা পাঠক মাত্রই জানেন। এই কাজটি সুন্দর করেই ফুঠিয়ে তুলেছেন। প্রচ্ছদে তাকালেই অন্যরকম মুগ্ধতা কাজ করে।

ছবিঃ রফিকুন নবী
প্রত্যেকটা গল্পের জন্য আলাদা ছবি একেছেন তিনি। ছবিতে তিনি যে যাদু দেখিয়েছেন; পাঠক! আপনি না দেখলে সেটা বুঝবে না। একটু বর্ণনা দেই ধরেন আপনি গল্পটা পড়ছেন ছবিটা না দেখেই গল্প পড়ার সাথে সাথে আপনার মনে অবশ্যই একটা দৃশ্য কল্পিত হবে গল্প শেষ করে আকা ছবিটা মিলাবেন দেখবেন আপনার কল্পনা আর ছবি দুটাই যেনো কেমন একাকার হয়ে যাচ্ছে। তদ্রুপ এক ধ্যানে ছবিটা দেখলে আপনার মনে যে গল্পটা কল্পিত হবে সেই কল্পিত গল্প আর ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা বইয়ের গল্পের সাথে আপনার গল্পের মিল পাবেন। এখানেই লেখেক আর চিত্র শীল্পি যাদু দেখিয়েছেন।

বইয়ের আকারঃ
মোট ১৭ টি শিরোণামের কোলে লুকিয়ে থাকা ১৭ টি অংশে বিভক্ত এ বইটিতে হুমায়ুন আজাদ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহীভাবে তুলে ধরেছেন মন আকুল করা গাঁয়ের ডাক, ফুলের গন্ধের নমুনা, পুকুর জলে প্রদীপ জ্বলার কথা, খেজুর ডালে প্রিয় নীল বেলুন ফুঁটো হওয়ার কথা, টিনের চালে বৃষ্টি শব্দ খেজুর ডালের ঘোড়া, বিলের ধারে প্যারিস শহর, সুখ আর শোকের কবিতা, গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবনের কথা.....

উৎসর্গ
মৌলিমণি
আমি তোমাকে ভালোবাসি, আব্বু।

হুমায়ুন আজাদের লেখা ‍"ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা” শুধুমাত্র একটি বই নয় একটি অসম্ভব ধরনের সুন্দর ও আকর্ষনীয় কিশোর সাহিত্য যার প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে লেখকের ফেলে আসা শৈশব জীবনের চারপাশের মানুষের হাসি, আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, ভালোবাসা, কিয়ৎ ঘৃণা, অপরুপ নয়ন জুড়ানো রাড়িখাল গ্রামের বর্ণনা, সর্বোপরি বইটি যেন শৈশববেলার ধারাবিবরনীর এক টুকরো খণ্ডচিত্র

গল্প আলোচনাঃ

ফুলের গন্ধঃ
মৌলি, তোমাকে বলি, তোমার মতোই আমি এক সময় ছিলাম-ছোট। ছিলাম গ্রামে,গাঁয়ে, যেখানে মেঘ নামে সবুজ হয়ে নীল হয়ে লম্বা হয়ে বাঁকা হয়ে। শাপলা ফোটে; আর রাতে চাঁদ ওঠে শাদা বেলুনের মতো। ওড়ে খেজুর গাছের ডালের অনেক ওপরে। যেখানে এপাশে পুকুর ওপাশে ঘরবাড়ি। একটু দূরে মাঠে ধান সবুজ ঘাস কুমড়োর হলদে ফুল। একটা খাল পুকুর থেকে বের হয়ে পুঁটিমাছের লাফ আর খলশের ঝাঁক নিয়ে চলে গেছে বিলের দিকে। তার উপর একটি কাঠের সাঁকো-নড়োবড়ো। নিচে সাঁকোর টলোমলো ছায়া। তার নাম গ্রাম”

বড় মেয়ে মৌলিকে বলার ঢঙ্গেই শুরু করেছেন ফুলের গন্ধ অধ্যায়টি, এঁকেছেন গাঁয়ের ছবি। ছবিখানা এখনকার কোন ছবি নয় আজ থেকে পাক্কা বছর পঞ্চাশেক পূর্বের ধ্রুবতারার মতোন মনের আবেশে ভর করা আশ্বিনের সাদা মাখন জোৎস্না আর হিম মাঘের কোঁয়াশা-মাখা বাতাসে ভরপুর কোন গাঁয়ের ছবি। সরপুঁটির মন উজাড় করা অপূর্ব লম্ফ-ঝম্ফ।
পুকুরে জ্বলা শতোশতো প্রদীপ-ঝাড়বাতি, ঢল ঢল কাঁচা লাউ ডগার অনেক দূরে যাবার স্বপ্ন, ছিল শেকড় ছাড়িয়ে ভিটে পেরিয়ে দিগন্তের দিকে ছুটে চলা এক দীর্ঘ সবুজ চঞ্চল সুদূরপিয়াসী স্বপ্ন। দারুনভাবে বর্ণিত হয়েছে পৌষের কুয়াশার চুলোর পাড়ের ওম, খেজুর রস জ্বাল দেয়ার মধুময় সন্ধেটার অপূর্ব হাতছানির দুলুনি, সঙ্গে পিঠে শিল্পী মা, পানু আপা আর নুরু আপাদের দুর্দান্ত কারুকাজ।

খেজুর ডালে শাদা বেলুনঃ
“পৌষের কুয়াশায় চুলার পাড়ে কি যে সুখ! আমার চোখ পড়ে চুলার ভেতরের দৃশ্যের ওপর। চারপাশ তখন স্বাদে ভরা-রসের ঘ্রাণ, নারকোলের সুগন্ধ,ঘন দুধের গাঢ় ঘ্রাণ। আর ঐ চুলার ভেতরে জ্বলছে সৌন্দর্য। চুলার ভেতরে কি ফুটেছে একলক্ষ গোলাপ? লাল হয়ে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার বাগান? না, চুলার ভেতরে দাউদাউ জ্বলছে সুগন্ধি আমকাঠের চলা; আর তার টুকরোগুলো বিশাল দামি হীরকখণ্ডের মতো দগদগ করছে”।

যে-দিন পুকুরে মানুষ নামেঃ
যে-দিন পুকুরে মানুষ নামে শিরোনামের কোলজুড়ে এসেছে চৈত্র মাসের কোন একদিন হৈ-হুল্লোড় করে পুবপুকুরে আশপোশের গ্রাম থেকে আসা মানুষদের পল দিয়ে একসঙ্গে মাছ ধরার বর্ণনা। লেখক আশ্চর্য দক্ষতায় এঁকেছেন মাছ মেরে চলে যাওয়ার পর ভীষণ বিষন্ন দেখানো পুবপুকুরের অদ্ভুত হয়ে থাকা ঘোলা জলের দৃশ্য। এ অধ্যায়টি ভীষনভাবে মন খারাপ করে দেয় যেখানে কবি ছিঁড়েফাড়া কচুরিপানাগুলোকে তুলনা করেছেন সাতাশে মার্চ, ১৯৭১ এ নিরুদ্দেশ পথে যাত্রা শুরু করা ভীত, ছন্নছাড়া মানুষদের দলের সঙ্গে। যারা ছুটে চলেছে দিক সীমানা বিহীন।

পদ্মার রুপোলি শস্যঃ
ইলিশের সাথে বাজি ধরেছিলো হরিণ। যদি ইলিশ তাকে হারাতে পারে তবে সে ইলিশকে কেটে দেবে নিজের মাংস।না পারলে ইলিশ নিজের মাংস কেটে দেবে হরিণকে।
বইটিতে লেখক তুলে ধরেছেন গ্রাম আর শহরের মধ্যবর্তী বিস্তর ফারাক, শৈশবের নিষ্পাপ চোখে দেখেছেন ক্ষুধায় কাতর জোলাবাড়িসহ তার আশপাশ। গ্রাম কবিকে ডেকেছে, সেই সঙ্গে আমাদেরও। ভরা বর্ষার মুগ্ধতার পাশাপাশি বর্ণনা করেছেন তার নানা বাড়ি কামারগাঁয়ের কথা, কীর্তিনাশা পদ্মার বুকে ইলশা মাছের নাওয়ের ভীষণ কাটালের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার কথা, ফাগুন-চৈত্র-বৈশাখে ধূসর ও হাহাকার ভরা সময়ে জলধিকুটিরে সময় ক্ষেপন করার কথা। পড়তে পড়তে শুধুমাত্র মনে হয় এটা শুধু সাবলীল বর্ণনাই নয় আরো বেশী কিছু হয়তোবা কিছু ছাপছিত্রের অপূর্ব সমন্বয়।

গ্রামের মৃত্যুঃ
“গ্রাম মরে যাচ্ছে। গ্রামেরা মরে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে রাড়িখাল। ছিলো একটি মিষ্টি মেয়ের মতো-খুব রূপসী-চাঁদের মতো। কোন মড়কে ধরলো তাকে! তার চোখ বসে যাচ্ছে, কালচে দাগ চোখের চারপাশে। সে গোলগাল মুখটি নেই, কেমন শুকনো। এখনি ঢলে পড়ে যাবে যেনো। গ্রাম মরে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে রাড়িখাল। তার বুকের ভেতর কোন অসুখ বাঁধলো বাসা? খুঁটেখুঁটে কুরেকুরে খাচ্ছে তাকে কোন অসুখ? সে কি একেবারে মরে যাবে? ঢুকবে কবরে? তাকে ঘিরে রাতভর চিৎকার করবে কয়েকটা লালচে শেয়াল?”

আমাদেরকে গ্রামের অপূর্ব মাদকতাময় কিছু হাতছানির বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি শেষদিকে লেখক বইটিতে কিছু ঘৃণার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন শকুন আর শেয়ালের প্রতি, কষ্টের প্রকাশ ঘটিয়েছেন প্রিয় বাবার প্রতি। কষ্টের আখ্যান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো বইটি জুড়ে, ঝরেছে দীর্ঘশ্বাস। অসাধারন বইটিতে রাড়িখাল শুধু প্রিয় হুমায়ূন আজাদের গ্রাম এ পরিচয়ে আর আবদ্ধ থাকে না, অসাধারন বর্ণনার মাধ্যমে হয়ে ওঠে সর্বজনীন, হয়ে ওঠে সকল পাঠকের গ্রাম। আর প্রিয় হুমায়ুন আজাদের অনন্ত ইচ্ছার সঙ্গে তাই সুর মিলিয়ে বলে উঠি:

“আমি কত ডাক পারি। তুমি হুমইর দ্যাওনা ক্যান? তোমারে ভুলুম ক্যামনে? তুমি ভুইলা যাইতে পার, আর আমিতা পারুমনা কোনো কাল। আমি আছিলাম পোনর বচ্ছর ছয় মাস তোমার ভিৎরে। থাকুম পোনর শ বচ্ছর....রাড়িখাল। রাড়িখাল। তুমি ক্যান হুমইর দ্যাওনা ”

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:১১

বৃষ্টি বিন্দু বলেছেন:
একজন গভীর সাহিত্যিক।

বিনম্র শ্রদ্ধা তার প্রতি; যদিও কিছুটা কারচুপি আছে।

২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:২৮

নিশাচড় বলেছেন: কেমন কারচুপি?

২| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:১৪

অনুতপ্ত হৃদয় বলেছেন: সুন্দর রিভিউ

৩| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:১৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: চমৎকার।
আপনার প্রকাশভঙ্গিতে বইটির প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে অনেক বেশি যেমন আমিও আকৃষ্ট হলাম।
শুভেচ্ছা নিন।

২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:১৯

নিশাচড় বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:২১

কাইকর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটা পোস্ট করার জন্য।পোস্ট দেখে বইটি পড়ার প্রতি আগ্রহ জমলো

২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:২৯

নিশাচড় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।।

৫| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: বইটি আমি পড়েছি। আর এই লেখকের গ্রামের বাড়ি আর আমার গ্রামের বাড়ি - পাশাপাশি গ্রামে।

৬| ২৪ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৩

নিশাচড় বলেছেন: তাই! তাইলে তো আপনি আরো ভালো অনুধাবন করতে পারবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.