নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের সাম্পান ওয়ালা- [email protected]

নিশাচড়

গ্রামের এক দুরন্ত ছেলে আমি। মেটো পথ দিগন্তহীন সবুজ মাঠ আর গাছে গাছে দাপিয়ে কাটিয়েছি কৈশোর। স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসি...স্বপ্ন দেখি সুুন্দর পৃথীবির ....ভালোবাসি দেশ মাটি ও মানুষদের। আমি স্বপ্ন দেখি.... আমি স্বপ্নের সাম্পানে ভর করে উরে বেড়াই সুন্দরের পথে।।

নিশাচড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কৈশোরের নদী

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৪

বেতাই নদী! আমার কৈশোরের নদী। যেটি নান্দাইলের নরসুন্দায় উৎপত্তি হয়ে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে গিয়ে নানু বাড়ির পিছন হয়ে তাড়াইলের নরসুন্দায় আবার মিলিত হয়েছে। গুগল উইকেপিডিয়ায় এর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু বেতাই নদী সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশের নদী কোষ নামে একটা বই কিনেছিলাম কিন্তু সেখানেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে এই নদীর তীরে বসে বেতের তৈজসপত্র বানাতো বলেই এ নদীর নাম বেতাই নদী। আবার মৃৎ শিল্পের বিশাল সমাহার ছিলো এই নদীর তীরকে ঘিরে। বাণ্যিজ্যিক ভাবেও এর কদর ছিলো অনেক।

এই নদীর পারেই আমার কৈশোর কেটেছে। নিজের বাড়িতেও এই নদী নানু বাড়িতেও এই নদী। এই নদীতেই দাপিয়ে বেরিয়েছি সারা বেলা। দুষ্টুমি আর দুরন্তপনার শেষ নেই এই নদীকে ঘিরে। এখন আমরাও বড়ো হয়ে গেছি নদীও বুড়ো হয়ে গেছে। নদীর আগের সেই স্রোত নেই, নদীর দুই ধারে সারি সারি মাছ ধরার জালও পাতা থাকে না, ঘন্টায় ঘন্টায় চলে না ট্রলারও। জেলেরা আর আসে না মাছ ধরার নৌকা নিয়ে। নদী তার যৌবন হাড়িয়ে বার্ধক্য পেরিয়ে মৃত প্রায়।

মনে পরে প্রায়ই নানুর চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে সাতরাতে চলে যেতাম সঙ্গি থাকতো নাঈম, আনসারুল্লাহ আর সানাউল্লাহ। এ বাড়ি ও বাড়ি সারা বাড়ি খুঁজে মেজো মামা ধরে আনতো নদী থেকে। মাঝে মাঝে ছোট মামার সাথেও যেতাম। নদীতে দাপিয়ে দাপিয়ে কাপড়-চোপড় ময়লা করে লুঙ্গিখান ছিড়ে নিয়ে আসতাম। এগুলি পরিস্কার করার ভারটা পরতো ছোট খালার উপর তাই ছোট খালা ভিষন খ্যাপতো আমার উপর। এখন অবশ্য তার নিজের ছেলেরাই আমার থেকে কয়েকগুণ বেশী দুষ্টিমি করে আর খালাকে অসম্ভব জ্বালাতন করে। খালাম্মা প্রায়ই আমার কথা মনে করে আর বলে উত্তরাধিকার সুত্রে এই দুষ্টিমি পেয়েছে।

নদীর উপারে একটা প্রাইমারি স্কুল আছে ওখানে প্রায়ই নদী সাতরে স্কুলের ভাঙ্গা পরিত্যক্ত বিল্ডিংএ যেতাম ভূত খুঁজতে। সবাই বলতো ঐ ভাঙ্গা বিল্ডিংএ নাকি ভূত থাকে। ভয়ে ভয়ে দুরু দুরু বুকে কত ভূত খুঁজতে গেছি কিন্তু কোনোদিন আর ভুত খুঁজে পাইনি।

নানার সাথে প্রায়ই মাছ ধরতে যেতাম বিশাল আয়োজন নিয়ে। এই দেখে নানু মজা করে বলতো আজকে নদীর সব মাছ আমার বাড়িতে চলে আসবে নানা নাতী ছুটছে। নানা নানুকে বলতো তুমি তরকারি কেটে রেডি করো মাছ নিয়ে আসতেছি। নানা নাতি সারা বেলা কাটিয়ে কাঁদায় সারা শরীর মাখিয়ে যখন পাত্রের তলায় অল্প কটা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরতাম তখন তখন নানু হাসতে হাসতে বলতো সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয় না।

নদীর ঘাটে হাঁড়ি পাতিল থালা বাটি পরিস্কার করতে আসতো হিন্দু বাড়ির এক মেয়ে। আমাদের থেকে বয়সে একটু বড়ো হবে, নামটা এখন আর মনে পড়ছে না। কালো ছিলো বলে ওরে পেত্নী বলে খ্যাপাতাম। ও থালা বাটি পরিস্কার করে রাখতো এক পাশে আমরা কাঁদা দিয়ে আবার নোংরা করে দিতাম। মাঝে মাঝে রাগে থালা বাটি ফেলে রেখে চলে যেতো, ওর মাকে ডেকে নিয়ে আসতো ততক্ষনে আমরা উধাও। একদিন ওর মা নাঈমের আম্মার কাছে বিচার দিলো এই দুষ্টিমির জন্য। নাঈম তো মহা ত্যাঁরা। রাগে ঐ মেয়ের মাথায় কাঁদা লেপ্টে দিছিলো, বিচার দিলি ক্যান এই বলে। প্রায়ই ওর বাবার সাথে নদীতে মাছ ধরতে আসতো। ও নৌকা চালাতো আর ওর বাবা জাল ফেলতো।
এতোদিনে তার বাবাও হয় তো বেঁচে নেই, সে কেমন আছে তার খবরও হয় তো নেই কারো কাছে।

মতি মামা একা একা রাত জেগে মাছ ধরতো নদীতে, রাত যখন নীরব হতো তখন পেত্নি নাকি মাছ খেতে আসতো মামার থেকে। প্রায়ই শেষ রাতে নাকি মতি মামার বন্ধুর বেশ ধরে ভূত নাকি মাছ ধরার কথা বলে ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যেতো। ভূত যতই মানুষের বেশ ধরুক তার পা নাকি উল্টো থাকবেই, মানে আঙ্গুল পেছনে গুরালি সামনে। মামা যাতে বুঝতে না পারে তাই ভূত একটু আগে আগে চলতো। যেতে যেতে ফজরের আজান হয়ে যেতো, ভূত বলতো আজ তুই বেঁচে গেলি নয়তো আজ তর ঘাড় মটকাতাম। মামা ভয় পেয়ে এক দৌড়ে বাড়ি এসে অজ্ঞান হয়ে দরজায় লুটিয়ে পড়তো। এই গল্প প্রায় শুনাতো আনছারুল্লাহ। এই গল্প কতটুকু সত্য সেটা আর কখনো যাচাই করা হতো না। এই পেত্নির ভয়ে দিন কয়েক আমরা নদীতে যেতাম না।

নদীর ধারে একটা তালগাছ ছিলো এটাতে বাবুই পাখি বাসা বাধতো। পাখির বাসা পাড়ার প্রতিযোগিতা চলতো আমাদের মধ্যে। প্রায়ই বিকেলে যেতাম পাখির বাসা পাড়তে। কোনো দিন অর্ধেক কোনোদিন আরেকটু উপরে উঠে ব্যার্থ হয়ে নেমে আসতাম। নেমে এসেই ক্ষান্ত হতাম না শুরু হতো নতুন কসরত, ডিল দিয়ে বাসা পাড়া। মাটির চাকা ইটের কোয়া গাছের ডাল কোনো কিছুই বাদ যেতো না। সারা বেলা যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরতাম ঠিকই, কিন্তু কেউই তালগাছ আর জয় করতে পারতো না।

আরো কতো শত গল্পে রাঙ্গিয়ে আছে আমাদের নানু বাড়ির কৈশোর, এখন তো এগুলি শুধুই স্মৃতি। আগের দিন, সময়, ভালো লাগা দুরন্তপনা সবই হারালো কালের গহ্বরে।

১৮/০৪/২০ইং।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো। আল্লাহ আমাদের সুস্থ রাখো।

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৭

নিশাচড় বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: ছবিটা কি বেতাই নদীর???

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৬

নিশাচড় বলেছেন: হ্যাঁ বেতাই নদীর ছবি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.