নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাস চিরবিস্ময়

কারুিণক

সাহিত্য আমার সাধনা

কারুিণক › বিস্তারিত পোস্টঃ

টাকা

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

টাকা

কিশোর কারুণিক

টাকা দরকার । অনেক টাকা । সমাজে প্রভাব বিস্থার করতে হলে টাকার কোন বিকল্প নেই । জন্ম থেকে মৃত্যুর শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত টাকার প্রয়োজন । এই তো সেই দিনের কথা । তাসেরের বাজারে ছোট একটা চায়ের দোকান ছিল, দোকানে কেনা বেচাঁ মোটা মুটি হতো । বর্তমান তাসেরের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল । স্বপনের আর্থিক অবস্থা পরির্বতন হচ্ছে না । কোনো রকমে চলে সংসারটা । ওরা দুই ভাই বোন । ওর অনেক আশা অনেক স্বপ্ন । সুন্দর করে বাড়ি বানাবে । তারপর সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করবে । ওর সমবয়সি অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে ।

কোন নতুন দম্পতিকে দেখলেই ওর ভেতরটা খাঁ খাঁ করে উঠে । মা বাবা যেন কেমন ! তাদের ছেলের বিয়ের ব্যাপারে



তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই । মুুদিখানা দোকানে ব্যবসাটা তেমন ভাল চলছে না । কিছু টাকা পয়সা পেলে ব্যবসাটায় জোড় দেওয়া যেত । স্বপনের সমবয়সিরা বিয়েতে যৌতুক হিসাবে টাকা গহনা ভালই পেয়েছে । স্বপনের ধারণা ওর নিজের বিয়েতে যৌতুক ভালোই পাবে । ছেলে হিসাবে খারাপ কিসের? মদিখানা ব্যবসা করি, ভাগ্য যদি প্রসন্য হয়, এই ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকার মালিক হবো । তখন অনেকে আমাকে সমুহ করবে । স্বপন দোকানে বসে মনে মনে এতসব ভাবছে । বাবুল স্বপনের বন্ধু । বাবুল স্বপনের দোকানে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে গল্প



গুজব করে । স্বপন বাবুলকে সুখ দুঃখের সব কথায় বলে । গল্পের প্রসঙ্গে বাবুল স্বপনকে বলে উঠে, “স্বপন ভাল একটা মেয়ের খোজ পাওয়া গেছে, বিয়ে করবি?”

স্বপন বাবুলের কথাটা তেমন গূরত্ব দিলো না, চুপ করে থেকে আকাশের পানে তাকাল । বাবুল বললো, “ কিওে কথা বলছিস না ।”

স্বপন বাবুলের পানে তাকাল , বাবুল হাসলো । স্বপন বললো, বাবুল সব সময় ফাজলামি করবি না, ভাললাগে না ।”

বাবুল একটু উচ্চস্বওে বলে, সত্যি কথা, মেয়ের বাড়ি ঝিনেদায়, দেখতে সুন্দরী । আমাদের দূর সম্পর্কেও আত্মীয় হয়, চল একদিন দেখে আসি ।”

স্বপন মনে মনে ভাবলো কথাটা মন্দ না ।



বাবুলের কথা মতো স্বপন আর বাবুল মেয়ে দেখতে গেল । মেয়ের বাড়িতে এক ঘওে দুজনে বসে, স্বপন চুপ চাপ , বাবুল মাঝে মধ্যেই ঘরের বাইের যাচ্ছে আবার ফিওে আসছে । স্বপন কৌত’হলী স্বরে বাবুলকে জিজ্ঞেস করলো , মেয়েটি সম্পর্কে তোর কী হয় ?”

বাবুল বলে, “আমার বিয়ান । একদম খাসা জিনিস ।”

বাবুলের কথাগুলো ভাললাগলো, এমন মেয়েই তো বিয়ে করতে হবে । স্বপন কেমন এক প্রকার তৃপ্তি পেল ।

স্বপন বললো. “তোর বিয়ানকে নিয়ে আয় দেখি কেমন ।”

বাবুল ঘর থেকে বের হয়ে মেয়েটিকে সঙ্গে কওে ঘওে ঢুকলো । স্বপনের প্রথম দর্শনেই মেয়েটিকে ভাললেগে গেল । বাবুল বললো, “ লজ্জার কোন কারণ নেই, স্বপন আমার বন্ধু ।”

মেয়েটি এক চেয়াওে বসে স্বপনের পানে তাকাল , কিছু মূহুর্ত তাকিয়ে মৃদু হাসলো । মরুভূমি মনটা যেন একরাশি জল পেল । অভিভূত হলো । স্বপন ধীর স্বওে বললো, আপনার মানে তোমার নাম কী?”

মেয়েটি বাবুলের পানে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে স্বপনের পানে তাকিয়ে, “হীরা ।”

স্বপন নিজের অজান্তেই যেন বলে উঠলো, “বা!”

মেয়েটি গর্ববোধ করলো, কপালের পানে চোখ টেনে গম্ভীর স্বে জিজ্ঞেস করলো, “ আমাকে পছন্দ হয়েছে?”



স্বপন আতঁকে উঠলো । এমন প্রশ্নের সম্মখিন হতে হবে ভাবতে



পারিনি । তবু বললো, “হ্যাঁ। আমাকে পছন্দ হয়?”

মেয়েটি কিছু বললো না । ট্রেতে খাবার নিয়ে একজন ঘরে ঢুকলো । স্বপন মেয়েটির মুখে মিষ্টি তুলে দিলো । মেয়ে পছন্দ হয়েছে, অভিভাবকদের জানাল । ওরা বাড়ি ফিরে এলো ।

স্বপনের হৃদয়পটে শুধু ভাসছে হীরার হাসি মাখা মুখ খানি । কত চেনা, কত আপন যেন মেয়েটি । হীরার সাথে স্বপনের যেন জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক । স্বপনের জন্যেই যেন হীরা এই পৃথিব তে এসেছে ।

একদিন পর

বাবুল স্বপনকে বললো , “দোস্ত রাতে ঘুম ঠিক মতো হচ্ছে তো ?”

স্বপন হাসলো, না বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো, “তোর এমন একটা বিয়ান আছে আগে বলিস নি তো? এই ঠিক ঠাক আছে তো ?”

“ধোর শালা, ঠিক ঠাক মানে । আমি তোর মতো খোঁজ নিয়ে বেড়ায় শালা?”

“না মানে হীরা তো , হীরা মূল্যবান ধাতু ,হীরা স্পর্শ করতে পারলে সে নিজেকে ধন্য মনে করবে । এই বাবুল হীরার বয়ফ্রেন্ড নেই তো, তোর যে চরিত্র আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ।”

“ছোট মন নিয়ে হীরার মতো



মেয়েকে তুই বিয়ে করতে পারবি না । দশ বারটা ছেলের লাইন পড়েছে । তুই যেমন আদেক্লের মতো তাকাচ্ছিলি, অনেকেই তাকিয়ে মনের খায়েস মিঠায় ।”

“কী, তোকে পছন্দ করে না ? তুই তাকিয়ে দেখিস না বুঝি?”

বাবুল চুপ করে থাকলো । স্বপন বললো, “ টাকা পয়সা কেমন দেবে?”

“কোন দেনা পাওনা দেবে না । এক ছেলে পক্ষ বিয়ে খরচ বাবদ এক লক্ষ টাকা দিয়ে বিয়ে করতে চায় । তাই দিচ্ছে না ।”

স্বপনের প্রতি একটু অবহেলা দৃষ্টিতে তাকাল বাবুল । কথাগুলো স্বপনের মনে প্রচন্ড বৃদ্ধ করলো । হীরা হাতছারা হবার সম্ভাবনা আছে । বাবুল নিজের কী একটা কাজে চলে গেল । স্বপনের ভাবনাতে এখন শুধু হীরা নামে এক মেয়ে । যে ভাবেই হোক হীরাকে বিয়ে করতেই হবে । যখন হীরা কে সঙ্গে নিয়ে ঘুওে বেড়াব । অনেকে তাকিয়ে থাকবে স্বপনের মা বাবার কানে মেয়েটির সম্মন্ধে খারাপ সংবাদ এসেছে । সংবাদটা স্বপনও শুনেছে । কিন্তু স্বপন ভাবলো বিয়েটা ভেঙে দেবার জন্য এমন রটনা করেছে কেউ । স্বপন দেনা পাওনা বাদেই বিয়ে করবে হীরাকে ।

স্বপনের মা বাবা অমত এই বিয়েতে । বাড়িতে স্বপনের সাথে মা বাবার সাথে কথা কাটা কাটি হলো তবুও স্বপন হীরাকে বিয়ে করবেই ।





হীরার অভিভাবকরা রাজি স্বপনের সাথে বিয়ে দিতে । মেয়ে বাড়ি রাজি করানোর দায়িত্ব প্লন করছে বাবুল ।

বিয়ে ঠিক ঠাক হয়ে গেল । স্বপন তার জমানো টাকা থেকে বিয়ের বাজার করা শুরু কওে দিলো । মেয়ের যাবতীয় জিনিস পত্র দামীটা কিনলো । বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে , ততই কেমন এক প্রকার রোমাঞ্চ অসওভব করছে স্বপন । এই বিষয়টা কাউকে কিছু বলছে না মনে মনে ভাবছে আর নিজের অজান্তেই হেসে ফেলছে । মেয়ের জন্য সোনার হার দুল, হাতের চুড়ি আর রুপার পায়ের নুপুর । সব তৈরী করতে দিয়েছে ।জমানো টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে , সময় সময় বুকের ভেতর কেমন যেন কওে উঠছে । তবুও শান্তনা বউ ভাল হচ্ছে । বিয়ের নিমন্ত্রণ কাড ছাপিয়ে আত্মীয় পরিচিতদেও হাতে হাতে পৌঁছিয়ে দিতে লাগলো । হবু বউয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ও । পরিচিতরা বলা বলী শুরু করলো স্বপনের ভাগ্যে ভাল । অনেকে ওকে নিয়ে কথা বলাবলি করলো । কিছু কিছু কথা স্বপনের কানে এলো । মনে মনে সংকল্প করলো বিয়েটা হয়ে যাক তারপর তাদেও উচিত জবাব দেবে । মা বাবা এখনো মুখ ভাড় কওে আছে । স্বপন তা গুরুত্ব দিচ্ছে না । এখানে যাওয়া ওখানে যাওয়া একটা বিয়ে বলে কথা কম ঝামেলা ! তবু নিজের প্রতি একটু যতœবান হয়েছে ও । শেভ কওে এস আয়নার সামনে দাড়িঁয়ে দেখে কেমন লাগে । বিয়ের সমস্ত কিছু সম্পন্ন । এখন ভাল



ভালোই বিয়েটা হয়ে গেলেই ভাল । মেয়ের জন্য যা কেনা হয়েছিল তা মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো । আর দুইদিন পর বিয়ে । মেয়ের একটা ছবি স্বপন নিজের ম্যানিব্যাগে রেখে দিয়েছে । ছবিটা বাবুলের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে । দিনের ভেতর বেশ কয়েকবার ছবিটা দেখে । ঘুমানোর সময় ছবিটা বুকের উপর রাখে । সকালে যখন ঘুম ভাঙে ছবিটা বুকের উপর না পেয়ে একটু হতবিহ্বল হয়ে পড়ে । সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন । আগামী কাল বিয়ে । বাড়িতে আত্মীয় স্বজনে ভর্র্তি । এমনি মুর্হুতে বাবুল একটু ব্যতি ব্যাস্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকে স্বপনের কাছে গিয়ে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো । চোখে মুখে বিপদেও চিহ্ন ফুটে উঠেছে । স্বপন বললো, “কী রে বাবুল কী হয়েছে ?”

বাবুল কথা বলতে পারছে না । বাড়ির অনেকে জিজ্ঞেস করলো, “কী ব্যাপার,কী হয়েছে?”

বাবলি সবার পানে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বললো, “একটা দূর্ঘটনা !”

একে অপরের পানে সবায় তাকাল ।

“কী হয়েছে বলবি তো ।” ব’লে স্বপন দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।

“হীরা একছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে ।”

কথাটা স্বপন শুনামাত্র রেগে উঠল বললো, ,তোর সব সময় ইয়ারকি !”

“না, সত্যি । এখান থেকে যা পাঠান হয়েছিল তা নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে পাশের বাড়ির সুমনের সাথে ।”



স্বপনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো । সব স্বপ্ন আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল । স্বপন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল । বাড়ির অনেকে স্বপনের জন্য একটু হা হতাশা করতে লাগলো । কেউ কেউ আড়ালে মুচকি হাসছে ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.