নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাস চিরবিস্ময়

কারুিণক

সাহিত্য আমার সাধনা

কারুিণক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

মা

কিশোর কারুণিক



বাংলা বর্ণমালায় শব্দমালায় যত বর্ণ ও শব্দ আছে তার ভেতর থেকে মা শব্দটা আমার কাছে অতি পবিত্র, অতি মধুর অতি মায়াময় মনে হয় । আমার গর্ভধারিণী মা আমার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ এর প্রেরণাদায়িনী । কোন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বাড়ি থেকে রাগ করে ঢাকায় চলে আসি । উঠি পরিচিত আত্মীয়ের ফ্রাটে । মোবাইল ফোনের সিম চেঞ্জ করি । বাড়ির মানুষদের সাথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ । কিন্তু মা’র জন্য কেমন কেমন করছে মনের ভেতর । বাড়ি থেকে চলে আসবার সময় মা কান্নাকাটি করছিল, “বাবা তুই কোথাও যাছ নে, তোকে না দেখতে পেলে মরেই যাব ।”

বুকের ভেতর কী যেন বিদ্ধ হলো । তবু চলে আসি । ভাইয়ের সাথে রাগারাগি হয়েছিল । কারোর কথা মনে পড়ে না, শুথু মা’র জন্য মায়া হচ্ছে । ঐ দিন মা’র কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি । স্বপ্নে মাকে দেখি, মা হাত দুটো বাড়িয়ে কাদঁছে, আর বির বির করে বলছে, “বাবা ফিরে আয়, আমার খোকন সোনা ফিরে আয় ।” হঠাৎ মা মাথা ঘুরে পড়ে গেল ।

আমার ঘুম ভাঙলো । মাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হলো মনটা । মা’র কিছু হলো না তো ! আমি এখনি বাড়ি যাব । বিছানা থেকে নেমে প্যান্ট জামা পরলাম । পাশের রূমে অ্যান্টিকে দরজার কড়া নেড়ে ডাকলাম । অ্যান্টি দরজা খুলে, “এতো রাতে কোথায় যাচ্ছ?”

আমি দেয়াল ঘড়ির পানে তাকালাম, রাত ২টা ৩৫মিনিট । মধ্যরাতে বাইরে বের হওয়া বেশ বিপদ ।

অ্যান্টি বলল, “তুমি কাদঁছো কেন? শরীর খারাপ ?”

অ্যান্টিকে কিছু বলতে পারলাম না । ঘরে চলে এলাম । মোবাইল ফোন অন করে বাড়িতে ফোন দিলাম । ফোন রিসিভ করছে না । আমি অস্থির হয়ে পড়লাম । নিশ্চয় মা’র কিছু হয়েছে ! কান্না চাপলো, অঝরে কাঁদলাম । ঘড়ির পানে তাকালাম, ঘড়ির ঘন্টা কাটা যেন নড়ছেই না । বাড়ির পাশে পরিচিত ২/১ জনের ফোন নম্বরে রিং দিলাম, তারাও কেউ রিসিভ করছে না । আমি এখন কী করি, মা’র যদি কিছু হয়ে যায় ! তাহলে আমি মা কোথায় পাব ? পরিবারের সবায় আমাকে দোষারোপ করবে ।

মা ই শুধু একজন যিনি আমার দোষ আমার অন্যায় নীরবে মেনে নেয় । মা’র কাছে এখনো আমি অবুঝ, তার ছোট খোকা সোনা । “মাগো আমি আর এমন কোন দিন করব না, তুমি কষ্ট নিও না, আমি সকাল হলেই বাড়ি ফিরে আসছি ।”

“না !” কখন সকাল হবে ? ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, ঘুম আসছে না । বাড়িতে ফোন দিলাম । রিং বাজছে কিন্তু রিসিভ করছে না । মা’র ফোন বন্ধ । নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে, নিজের জেদের জন্য আজ এমন দুঃসময় আমার । সংসারে যাই হোক যাই ঘটুক এভাবে বাড়ি থেকে চলে আসা ঠিক না । এখন বুঝতে পারছি, কিন্তু কখন সকাল হবে ? ঘুমেতে চোখ বুঝে আসছে । কখন ঘুমিয়ে পড়ি টের পাইনি । দরজার কড়া নাড়া শব্দে ঘুম ভাঙে, প্যান্ট জামা পরে অ্যান্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পানে রওনা দিই । বড় ভাইকে ফোন দিলাম রিং হচ্ছে ফোন রিসিভ করলো ।

“হ্যালো !”

ভাই বলল, “তোর জন্য মা’র এমন অবস্থা, বাড়ি আয় ..!” ফোন বন্ধ হয়ে গেল । ফোনে চার্জ শেষ । মনটা আরো অস্থির হলো, নিশ্চয় মা’র কিছু হয়েছে ! নিদ্দিষ্ট সময় পর ট্রেন স্টেশনে থামলো । চট জলদি নেমে রিক্সা খুজলাম, বৃষ্টি হচ্ছে । কোন রিক্সা চোখে পড়লো না,্ বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌওড়ানো শুরু করলাম । রিক্সায় ১৫ মিনিট সময় লাগে । পা পিচঁলে পড়ে গেলাম । আবার উঠলাম, উঠে দৌড় ্ অনেকে আমার পানে তাকাচ্ছে, এখন মধ্য দুপুর, নিশ্চয় এখন ব্যায়াম করা সময় নয় । যার যার মতো কিছু ভাবছে । ওরা ভাবুক । বাড়ির সামনে আবার পড়ে গেলাম । উঠে বাড়িতে ঢুকে মা’র ঘরের পানে যেতেই বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা আমাকে দেখে গরম চোখে তাকাল । মা’র ঘরে ঢুকে দেখি ডাক্তার মা’র প্রেসার মাপছে । আমি মা’র কাছে যেতেই মা জড়িয়ে ধরলো । আমার চোখে অশ্র“, মা কাদু স্বরে বলল, “বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে তো । জামা প্যান্ট চেঞ্জ কর ।”

আমার প্রতি মা’র কোন অভিযোগ নেই । গামছা দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিলো । মা আবার বলল, “মুখটা শুকিয়ে গেছে ছেলেটার !”

পরিবারের অনেকে বকা দিতে লাগলো । কিন্তু আমার মা ব্যাথিক্রম । আমার মা আমার কাছে পৃথিবীর সেরা একজন মানুষ । মা’র সাথে কোন কিছু কোন মানুষের তুলনা চলে না । মা, আমার প্রিয় মমতাময়ি মা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.