নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাস চিরবিস্ময়

কারুিণক

সাহিত্য আমার সাধনা

কারুিণক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরতাল

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৪

গল্প

হরতাল

কিশোর কারুণিক

পাখিদের কণ্ঠস্বরে ঘুম ভেঙে গেল । কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারলো না, বুকের ভেতর কেমন আতংক । ছেলেটা এখন কোথায় আছে ? কেমন আছে? বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করে উঠলো । চোখ বেয়ে অশ্র“ গড়িয়ে পড়লো । আমার ছেলেটা বেঁচে আছে তো? শুধু অমঙ্গল ভাবনা, বিপদের সময় বেশির ভাগ খারাপ চিন্তায় সমস্ত শরীরে ভর করে । গেল রাত্রীতে সব জায়গায় খোঁজ করেছে । কিন্তু কেউ কোন সন্ধ্যান দিতে পারিনি । কেউ কেউ বলছে প্রতিপক্ষরা হয়তো কিডন্যাপ করতে পারে , কেউ বলছে বিল্লা যাদের সাথে মিশতো তাদের মধ্যে কী যেন নিয়ে বাকবিতন্ডা হওয়ার কারণ হতে পারে । আমার ছেলেটা, আমার মানিক তুই ফিরে আয় বাবা, তুই ফিরে আয় , কত বলেছি ঐ সব রাজনীতি গরীবদের মানায় না । ও সব বড়লোকদের ব্যাপার স্যাপার আমার কথা শুনলি না । এই অভাগা মায়ের দুঃখের কথা বুঝলি না । তোর যদি কিছু হয়ে যায় আমি কী নিয়ে বাচঁব? হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো মা, সমস্ত মন জুড়ে কেমন অজানা আতংক । রাতে খাওয়া হয়নি, কান্না কাটি করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে যায় । মায়ের মন জুড়ে অজানা ভয় আর ছেলেকে নিয়ে মধুময় স্মৃতি । বিল্লা বাড়িতে মা’র জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসতো । তখন মায়ের মনটা খুশিতে ভরে যেত । এই তো বেশ কিছুদিন হলো বিল্লা বিয়ে করবে বলে মাকে জানায় । ছেলে সংসারি হবে এই কথা ভেবে মায়ের মনটা কেমন যেন চমকে উঠে । এত সুখ আমার কপালে সইবে ? বিল্লার বাবা ঢাকা শহরে রিক্সা চালাত,একদিন এক হরতালে হরতাল কারীরা বিল্লার বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে । হরতালের আগের দিন ২/১ টি বাসে অগ্নিসংযোগ বা মানুষ হত্যা করতে পারলে পরের দিন হরতাল ভাল হয় । হরতালকারী রাজনৈতিক নেতারা মিডিয়ার সামনে বলবে জনগণ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে ,দেখুন কেউ কোন কিছু খুলিনি, যানবাহন চলাচল করিনি । আমাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানায় । বিরোধী পক্ষ বলবে, হরতাল হয়নি, অবৈধ্য হরতাল আমরা মানি না । সাধারণ জনগণের যা ক্ষতি সাধন হওয়ার তা আর থেমে থাকে না । যারা জনগণ ও দেশের ক্ষতি করে তারাই অট্টলিকায় থাকে তারাই বড় কিছু । সত্যি বলতে জনগণ হয়ে গেছে বড় আমলা, বড় ব্যবসায়ি, বড় নেতার বলীর পাঠা । রক্ত ঝরবে জনগণের , ক্ষতি সাধন হবে জনগণের, আঙুর চুষবে ঐ সব ভদ্রলোক গুলো । যে অভিনেতা তার অভিনয় যত সুন্দর করতে পারে হাত তালি তারই প্রাপ্য হয় । একটা শরীরে যদি তার মাথা পচে যায় তাহলে শরীরের কোন মূল্য থাকে না । বিল্লার মা ক্লাস নাইন পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ।রাজনৈতিক কৌশল ভাল না বুঝলেও কিছুটা যে বোঝে তার ভাবনাতে বোঝা যায় । কয়েক জন নেতা বিল্লার মা’র কাছে এসেছিল । তারা বলেছে , আমরা প্রশাসনকে ১২ঘন্ট সময় দিয়েছি এই ১২ঘন্টার মধ্যে বিল্লারকে ফেরত না দিলে ,আজ ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমস্ত শহরে হরতাল পালিত হবে । বিল্লার মত একজন দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ এই ভাবে নিখোজ হয়ে যাবে আর আমরা ঘরে বসে থাকব তা হতে পারে না । নিশ্চয় আমাদের বিরোধী পক্ষরা এই কাজটি করেছে । বিল্লার মা’রও মনটা আরো বেশি ভারী হয়ে গেল । কী জানি কী হয় । বিল্লার মা অবাক হলো বিল্লা আবার দেশের জন্য জনগণের জন্য এমন কী কাজ করেছে বুঝতে পারলো না । যা করেছে নিজের জন্য, যার ছত্রছায়ায় থাকতো তার জন্য । ঘরে টিভি ছিলো না, বিল্লা টিভি নিয়ে এলো । ঘরে খাট ছিলো না খাট নিয়ে এলো । সারাদিন ঘুরে বেড়ায় ,ওর বারার মত রিক্সা চালাত না আবার দিন মজুরির কাজও করতো না , জানি না টাকা কোথায় পেত । শুনেছি দূর্নীতি নামে একটা ব্যবসা আছে, ঐ ব্যবসা করলে রাতা রাতি ধনী হওয়া যায় । পাকা অট্টলিকা না হলেও চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে বাড়ি করেছে বিল্লা । আমার ছেলেটার বুদ্ধি ভাল ছিল, ও অনেক উন্নতি করতে পারবে । বিল্লা যাদের সাথে উঠা বসা করে তাদের বেশ উন্নতি হয়েছে । এখন সকাল ।

বিল্লা তো এখনো এলা না , তাহলে শহরে হরতাল শুরু হয়ে গেছে । বিল্লার মা ঘর থেকে বের হয়ে প্রধান সড়কে এলো , সত্যি সত্যিই তো রাস্তা ফঁকা কোন যানবাহন চলছে না, দোকানপাট বন্ধ । এক কাজ করি থানায় যায় । থানার বড়কর্তাকে বলি ,বড়কর্তা হয়তো আমার ছেলেটার খোঁজ দিতে পারবে । এক অটোগাড়ি দাড়িয়ে আছে , কাছে গিয়ে বললো,“ থানার সামনে যাবে ?”

“না।”

“ক্যান?”

“হরতাল জানো না?”

“আমার ছেলের জন্যই তো হরতাল !”

“তোমার ছেলে?”

“বিল্লা ,বিল্লা আমার ছেলে।”

“মিছা কথা ।”

“মিছা না, বিল্লা, বিল্লাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

“ক্যা বিল্লাতো থানায় মরে পড়ে আছে!”

“কী কইলা ?” বলে বিল্লার মা কেঁদে উঠলো । অটোগাড়ির ড্্রাইভারের মন নরম হলো, মনে করলো যার জন্য হরতাল তার মাকে নিয়ে যেতে কেউ বাধা দেবে না । এই ভেবে বিল্লার মাকে চড়িয়ে থানার অভিমুখে রওনা দিলো । কিছুদুর যেতেই একদল হরতাল সমর্থক তেড়ে এসে অটোগাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলো । ইটের আঘতে বিল্লার মা লুটিয়ে পড়লো । আটেগাড়ির ড্্রাইভারকে আচ্ছামত লাটি, রড দিয়ে পেটাতে লাগলো । একজন বললো এ্যাই এই মহিলার শরীরে কেরোসিন ঢাল, বিল্লা ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই হবে আমাদের । আমরা প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে চায় ।” এক প্রিকেটার বিল্লার মা’র শরীরে কেরোসিন ঢাললো , অটোগাড়ির আগুনের ফুলকি ছুটে এসে বিল্লার মা’র শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো । মূর্হুতে শেষ হলো আর একটি জীবন । অটোগাড়ির ড্রাইভার দৌড়ে পালালো । শ্লোগানে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে উঠলো পুরো শহর । মিছিলে দাবি বিল্লার ভায়ের হত্যার বিচার চায় ,বিচার চায় । পুলিশ এলো, মিছিলকারীরা দৌড়ে পিছন হটলো ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.