নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে. এম. রাফসান রাব্বি

যান্ত্রিক নগরীর যান্ত্রিক মানুষগুলোর ভিড়ে আমি এক অযান্ত্রিক পথচারী। ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/km.rafsaan

কে. এম. রাফসান রাব্বি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওরাও মানুষ

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

আজকে সারাদিন বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি হলে অন্তুর মন খারাপ থাকে। ও ভাবে আকাশের যেন মন খারাপ, তাই সে কান্না করছে। আর সে কান্নাতে সবাই ভিজছে। কেউ ঠেলায় পড়ে আবার কেউবা আনন্দে। কিন্তু কারো কষ্টে আনন্দ করা অন্তুর পছন্দ না। তাই সে বৃষ্টির দিনে মন খারাপ করে জানালার ধারে বসে থাকে আর বসে বসে আকাশের কান্না দেখে।



কিন্তু আজকে তার কান্না দেখার উপায় নেই। কারন সামনে পরীক্ষা। তাই এখনকার ক্লাসগুলো মিস দেয়া চলবে না। এখন অনেক সাজেশন দেবে ক্লাসে। তাই ইচ্ছা না থাকলেও তাকে বেরসিক ক্লাসগুলো করতে হবে। বৃষ্টির দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করেনা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তার ইচ্ছার যে খুব একটা মুল্যায়ন হয়না সে এখন ঢের বুঝে গেছে। মা তাই সাত সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠে একটু বৃষ্টি দেখতে বসেছিল, কিন্তু মা তাও দেখতে দেননি। কারন সকাল ৮ টা থেকে ক্লাস শুরু। তাই বৃষ্টি দেখে সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।



অন্তুরা থাকে ধানমন্ডিতে। একটা নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। ওর বেশিরভাগ বন্ধুরই গাড়ি আছে। অন্তুদেরও আছে। কিন্তু আজকে ড্রাইভার আংকেল অসুস্থ। তাই আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যাওা হবে না, যেতে হবে রিকশায় করে। সকালে ও মায়ের সাথে স্কুলে যায়। আসার সময় ড্রাইভার আংকেল না হয় আয়শা আন্টির সাথে বাসায় আসে। আয়শা আন্টি অন্তুদের বাসায় কাজ করে।



আজকে গাড়ি না থাকায় ৭.২০ এ বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। সকালে রিকশা পাওা খুব কঠিন ব্যাপার। আর বৃষ্টির দিন হলে তো কথায় নেই। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর অন্তুর চেয়ে বড়জোর বছর দুয়েক বড় একটি ছেলে খালে রিকশা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। অন্তুর মা রিকশাওয়ালাকে ডাক দিল,



-এই খালি যাবে?



-কই?



-এইতো ধানমন্ডি ২৭ এ।



-হ যামু। তই ২৫ টাকা দেওন লাগব।



-আচ্ছা চল।



এম্নিতেই স্কুলের টাইম হয়ে গেছে। তাই আর ভাড়া নিয়ে কথা না বলে ২৫ টাকা ভাড়ায় রিকশাতে উঠতে হল।



অন্তু এই বয়সের একটা ছেলেকে রিকশা চালাতে দেখে অবাক। কারন সে এত কম বয়সের কাউকে কখনো রিকশা চালাতে দেখেনি। তাই সে কৌতুহল দুর করার জন্য ইজ্ঞেস করেই ফেলল,



-এই ছেলে, তুমি এত ছোট, কিন্তু এত সকালে বৃষ্টির দিনে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছ কেন?



-আমগোর আর বয়স। জন্মের পর থেইকায় আমগোরে ভাতের লাইগ্যা যুদ্ধ করতে হয়।আর এহন বহুত বড় হইয়া গেছি। পেট বাচাইতে গেলে তো কাম করতেই হইব। পেট তো আর ঝড়-বৃষ্টি মানে না।



-তা তোমার বাব-মা নেই?



-অই আছে কুনুরকম।



-মানে?



-বাপ তো থাইক্যাও নাই। হুনছি নতুন বিয়া কইরা ভাগছে। গত ২ বছর হের কুনু দেহা নাই। আর মার তো অসুখ। কুনু কাম-কাজ করতে পারে না। আরো দুইডা ছোড ভাই-বোন আছে। হ্যাগর সকল খরচ তো আমারই চালান লাগে।



-কেন? তুমি লেখাপড়া কর না?



-হিহিহিহি। হাসাইলেন ছোড বাইয়া। গরীবের আর লেহাপড়া। আমি লেহাপড়া করলে আমার মা, ভাই,বইনরে খাওয়াইবো ক্যাডা। ইচ্ছা আছিল লেহাপড়া করার। দুই বছর পড়ছিও একটা ইশকুলে। কিন্তু গরীবের তো আর ইচ্ছা থাকতে নাই। তাই ইচ্ছারে গলাটিইপ্যা মাইরা ফ্যালাইছি। হিহিহিহি...



এরই মধ্যে রিকশা স্কুলে পৌছে গেল। আরো কিছু প্রশ্ন করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু স্কুলের সময় হয়ে গেছে। তাই আর প্রশ্ন করার উপায় নেই।



কিন্তু একটি প্রশ্ন বারবার অন্তুর মনে আসছে। ‘আমরাও মানুষ, ওরাও মানুষ। কিন্তু ওদের সাথে আমাদের এত তফাৎ কেন?’ আসলেই কি অন্তুর ছোট মনে দানাবাধা এই প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর আছে? হয়তো তার উত্তর স্বয়ং বিধাতায় ভালো জানেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু অন্তু কিন্তু একটা উত্তর ঠিকই বের করেছে। আকাশটা এসব মানুষের জন্যই কান্না করে। আর সে কান্নাতেই ভিজে যায় সবকিছু, সব.........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.