নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে. এম. রাফসান রাব্বি

যান্ত্রিক নগরীর যান্ত্রিক মানুষগুলোর ভিড়ে আমি এক অযান্ত্রিক পথচারী। ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/km.rafsaan

কে. এম. রাফসান রাব্বি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু লালরঙ্গা আবির আর একটি লাল গোলাপ

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৮

আজ মহাষষ্ঠী।



এই দিনেই অর্পিতার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল তানিমের। ঘটনাটা অনেকটা এরকম, তানিম ও তার বন্ধুরা মিলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পুজো দেখতে গিয়েছে। এর আগে কখনো সামনে থেকে পুজো দেখা হয়নি, যেটুকু দেখা হয়েছে তা টিভিতেই। তাই বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচাইতে বড় উৎসব দেখতে আসা। কিন্তু দেখতে এসেই বিপত্তিটা ঘটে গেল। এবারের ঈদে ২০০০ টাকা দিয়ে সাদা রঙের পাঞ্জাবী কিনেছিল তানিম। সেই পাঞ্জাবী পড়েই এসেছিল পুজো দেখতে। মন্দিরে এসে এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে একটু দল ছাড়া হয়ে যায় তানিম। আর এরই মধ্যে একটি মেয়ে আবিরের ডালা নিয়ে তার সাথে ধাক্কা খায়। আর ওতেই তানিমের সাদা পাঞ্জাবী লাল রঙ্গে মাখামাখি।



প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করে তানিম যখনই কিছু বলতে যাবে তখনই সে লক্ষ্য করল লালপেড়ে সাদা শাড়ী পরে এক অপ্সরী যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে। আর তার মুখে এসে যেন ভর করেছে জগতের সব সুন্দর। ঈশৎ বিচলিত আর এক নরম হাসি যে সেই সুন্দরকে বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে। আর সেই অপ্সরীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ‘সরি’ যেন এক দখিনা বাতাস বইয়ে দিল তানিমের মনে। অনেক রাগ করতে যেয়েও যেন কিছু সময় সম্মোহিতের মত দাঁড়িয়ে থাকল তানিম। আর তাতেই যেন সব রাগ জল হয়ে আছড়ে পরতে লাগল তানিমের মনে।



তানিমের সম্বিত ফেরানোর জন্য মেয়েটি আবার বলে উঠল,



-‘সরি! ইচ্ছে করে করিনি। আক্সিডেন্টালি হয়ে গেছে। বাই দ্য ওয়ে আমি অর্পিতা। আপনি?’



-আমি তানিম। ইটস ওকে।



-ইসসস! আপনার পাঞ্জাবীটা একদম নোংরা হয়ে গেল।



-না, এটা কোন ব্যাপার না। আপনি তো আর ইচ্ছা করে করেননি। আর অ্যাক্সিডেন্ট তো আর বলে কয়ে হয়না। আপনি এত লজ্জিত হবেননা। বাই দ্য ওয়ে আপনি কি পুজোর প্রত্যেকদিন এখানে আসেন?



-হুম। আমরা প্রতিবছর পুরো ফ্যামিলি নিয়ে ৬ষ্ঠী থেকে ১০মী এখানে পুজো করি। তাই এই ৫ দিন নিয়মিতই আসি। আপনি?



-আমি অ্যাকচুয়ালি পুজো দেখতে এসেছিলাম ফ্রেন্ডদের নিয়ে। আর এসেই আপনার সাথে দেখা। যাই হোক অ্যাক্সিডেন্টটা হয়ে মন্দ হয়নি। না হলে তো আপনার সাথে দেখায় হত না।



-অ্যাক্সিডেন্টটা নিয়ে আমাকে খোটা দিচ্ছেন বুঝি?



-না না। এমনি মজা করলাম আরকি।



-আচ্ছা আমি তাহলে যাই। ওদিকে মা ডাকছে। বাই।



-বাই।



এভাবেই অর্পিতার সাথে দেখা হয়েছিল তানিমের। আর প্রথম দেখাতেই কেমন একটা অনুভব হয়েছিল। এক স্নিগ্ধ অনুভব যা বারবার মনে এক শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে আর চোখের সামনে নিয়ে আসছে সেই মেয়েটির ছবি। কিন্তু একইসাথে কাজ করছে এক চাপা উত্তেজনা। সে যেভাবে মেয়েটিকে অনুভব করছে মেয়েটিও কি তাকে একইভাবে...। নাহ! আর ভাবতে পারছে না তানিম। এমন ভাবনা ভাবলেও সমস্যা, না ভাবলেও সমস্যা। কিন্তু এই দোটানা সমস্যাটাও কত না মধুর.........



এরপরদিনই অর্থাৎ মহাসপ্তমীতে তানিম আবার যাই সে মন্দিরে। সাথে ছিল একটি লাল গোলাপ। কিন্তু অনেক খুজেও সে আর মেয়েটাকে পায় না। বাধ্য হয়ে একজনের কাছে অর্পিতার কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, কালকে পুজো শেষ করে গাড়ি করে বাড়িতে ফেরার পথে তাদের গাড়ির সাথে আরেকটি বাসের অ্যাক্সিডেন্ট হয়। সেই অ্যাক্সিডেন্টে তাদের গাড়ির আর কেউ বেঁচে নেই।



এক অ্যাক্সিডেন্টেই তানিমের সাথে প্রথম ও শেষ দেখা হয়েছিল অর্পিতার। আবার এক অ্যাক্সিডেন্টেই সে চলে গেল। তারপর.........



প্রত্যেক বছরই দূর্গাপুজা হয়। নানা রঙ্গে সাজে বিভিন্ন মন্দিরগুলো। কিন্তু একটি ছেলের কাছে সেই সব রঙ একাকার হয়ে যায় একটি রং এ, লাল সে রং, সেদিনের সেই আবির কিংবা লাল গোলাপের চাইতেও তীব্র সে লাল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.