নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে. এম. রাফসান রাব্বি

যান্ত্রিক নগরীর যান্ত্রিক মানুষগুলোর ভিড়ে আমি এক অযান্ত্রিক পথচারী। ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/km.rafsaan

কে. এম. রাফসান রাব্বি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ান ক্যালেন্ডার ও পৃথিবীর ধ্বংস

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৯

গত কয়েক বছরে প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে ওঠা আতঙ্কের নাম মায়ান ভবিষ্যদ্বানী। সেই সহস্র বছর আগে রেখে যাওয়া এক সভ্যতার ভবিষ্যদ্বানী নিয়ে মেতে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস, এমন ঘোষণা করতেও অনেকে ছাড়েন নি। এমনকি সারা বিশ্বের মিডিয়া ও গনমাধ্যম গুলোতেও এ নিয়ে ওঠে তীব্র আলোড়ন। মুল ব্যাপারটা কতখানি যে আমরা তা জানিনা, কিনতু মিডিয়ার কল্যাণেই হয়ত গুজবে আর আতঙ্কে ফুলে ফেপে ওঠে ২০১২। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষেরা।এখনি ধ্বংস হচ্ছেনা পৃথিবী, জানিয়ে দিল মায়ান সভ্যতা নিয়ে নবতম এক আবিষ্কার। দেখা যাক কি ছিল সেই আবিষ্কার।



প্রায় ৪০০০ বছর আগের কথা। কলম্বিয়া,হন্ডুরাস,এল সালভাদোর থেকে শুরু করে গুয়েতেমালা,মেক্সিকো পর্যন্ত মায়ান সভ্যতার আত্নপ্রকাশ ঘটে। সে সময় তারা সৃস্টির রহস্য সম্পর্কে প্রভুত জ্ঞান অর্জন করে। তাদের সভ্যতার একটি গুরুত্বপুরণ নিদর্শন হচ্ছে ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জিকা। দক্ষিন আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে এ বর্ষপঞ্জি অনুসরন করত এ অঞ্ছলের মানুষেরা। এমনকি আধুনিক গুয়েতেমালা ও মেক্সিকোর কোন কোন অংশে এটি এখনো ব্যবহৃত হয়। সে সময়কার মানুষের গড় আয়ুর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মায়ান জনগোষ্ঠী ৫২ বছরের(১৮৯৮০ দিনের) পঞ্জিকা চালু করে। তারা নিজেদের ঘটনা-দুর্ঘটনা এবং মহাকাশ সম্পরকিত বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ করে রাখআর জন্য বিভিন্ন পঞ্জিকা চালু করে। তবে এদের মধ্যে পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন পঞ্জিকাগুলোর মধ্যে হাব,তুনউক ও তযোকিন উল্লেখযোগ্য। তবে তযোকিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন এবং এর প্রভাব পৃথিবীর উপর অনেক বেশি। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ-



হাবঃ এটি পৃথিবীর পরিক্রমন পথের উপর রচিত। এতে সর্বোমট ৩৬৫ দিনের হিসাব আছে। হাব এ ২০ দিন করে মট ১৮ মাসের উল্লেখ আছে।এভাবে গেল ৩৬০ দিন। আর বাকি ৫ দিন নিয়ে আরেক্ টি মাস হিসাব করা হয়েছে যার নাম উঐব।প্রতিটি মাসের নিজস্ব একটি করে নাম আছে।প্রতিটি দিনের আবার ধর্মীয় তাৎপর্যও আছে।



তুনউকঃ এটি হচ্ছে চাঁদের পত্রিকা। এ চক্রটি হিসাব করা হয়েছে ২৮ দিন দিয়ে যাতে নারীদের রজঃচক্রের প্রতিফলন দেখা যায়। এই চক্রানুসারে প্রতি ৭ দিন পরপর আর ৪টি করে ছোটো ছোটো দশা সপন্ন হয় যা চাঁদের ৪ টি দশা নির্দেশ করে।



তযোকিনঃ এটি মায়ানদের একটি পবিত্র পঞ্জিকা।এ চক্রানুসারে সম্পুরন অরবিট ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ২৬০০০ বছর।আর এ পঞ্জিকাতে ২৬০ দিনে একেক্টি বছর পুরন করা হয়েছে। এতে মায়ান দের দুটি পবিত্র সংখ্যার বিন্যাস ঘটেছে। একটি হল ১৩ আরেকটি হল ২০। এ ক্যালেন্ডারে মায়ান সপ্তাহের হিসাব দুইভাবে রাখত। একটি হল ১৩ দিনে ১ সপ্তাহ আর আরেকটি হল ২০ টি নামের দিন নিয়ে। এতে ৪ টি ছোট ছোট চক্র আছে যাদের বলা হয় ৬৫ দিনের সিজন বা ঋতু। এদের নাম গুলো হল চিকচ্যান, ওক, মেন, আহউ। অধিকাংশ প্রত্নতাত্বিকগণ মনে করেন মায়ানরা খ্রিষ্টের জন্মের ৩১১৪ বছর আগে থেকে সময় গনণা শুরু করেছে। এই পঞ্জিকা তে ৫১২৬ বছরের উল্লেখ আছেযার শেষ হবে ২০১২ সালে।



মায়ান পঞ্জিকার সাধারন বিষয়সমূহ

এখন মনে হতে পারে মায়ানরা কি পদ্ধতিতে এত বিশাল সময়ের হিসাব করেছিল। তারা এত বিশাল সময়ের হিসাব করেছিল ভিজেসিমাল সিস্টেম অনুযায়ী। ভিজেসিমাল সিস্টেম হলো এক ধরনের গণনা পদ্ধতি যাতে ২০ ভিত্তি করে গণনা করা হয়। মায়ানরা কোন বস্তু গণনা করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিই ব্যবহার করত।

আমরা যেমন একেক্টি বিশেষ সময়কে একেক নামে সূচিত করি মায়ান্ রাও তাই করত। যেমন তারা ১ দিন কে বলত ১ কিন, ২০ কিন তৈরি করত ১ উইনাল, ১৮ উইনালে ১ তুন, ২০ তুনে ১ কাতুন, ২০ কাতুনে ১ বাক্তুন।

অর্থাৎ -

১ কিন=১ দিন

১ উইনাল=২০কিন=২০ দিন

১ তুন=১৮ উইনাল=৩৬০ দিন

১ কাতুন=২০ তুন =৭২০০ দিন

১ বাক্তুন=২০ কাতুন=১৪৪০০০ দিন



তারা এভাবে তাদের পঞ্জিকা হিসাব করত।







মায়ান ক্যালেন্ডার এবং ২০১২ সাল

২০১২ সাল বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসের আলোছনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মায়ান ক্যালেন্ডার এবং পৃথিবীর ধ্বংস। অনেকেই মনে করেছিল ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর হবে পৃথিবীর শেষ দিন। কেননা মায়ান ক্যালেন্ডারে লিপিবদ্ধ এখন পরযন্ত সকল ভবিষ্যদ্বানীই সত্য হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই ঘটেনি। কিন্তু আসলেই কি মায়ানরা পৃথিবীর মানুষ্ কে বোকা বানিয়েছে নাকি পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে তাদের আরো ভবিষ্যদ্বানী আছে সে কথাই আবিষকার করেছেন কিছু মার্কিন প্রত্নতত্ববিদ।



অবশেষে পৃথিবীর আয়ু বৃদ্ধি!!!

২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালার জঙ্গলে একটি ধ্বংসস্তুপের মধ্যে মায়ান সভ্যতার প্রাচীনতম একটি ক্যালেন্ডারের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি বাড়ির পাথুরে দেয়ালে পাওয়া যায় ক্যালেন্ডারটি। এতে মায়ান সভ্যতার এক রাজার প্রতিকৃতিও আছে। তবে মজার ব্যপার হলো ২০১২ সালের ২১ শে ডিসেম্বর নিয়ে কোন তথ্য এখানে পাওয়া যায়নি।



মার্কিন প্রত্নতত্ববিদ উইলিয়াম স্যাটারনোর নেতৃত্বে জুলতানের পাহাড়টিতে প্রত্নতত্বের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে তারা এই ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন।উইলিয়াম স্যাটারনো বলেন, “আমরা এই দিনপঞ্জির সাহায্যে মহাজাগতিক সময়ের বিশাল চক্র বোঝার চেষ্টা করছি।“ আবিষ্কৃত মায়ান ক্যালেন্ডার বিশ্লেষন করে উইলিয়াম স্যাটারনো অবশেষে ঘোষণা করেছেন, প্রাচীন মায়ান লোকজনের ভবিষ্যদ্বানী হল পৃথিবী বর্তমান সময় থেকে আরো সাত হাজার বছর অক্ষুন্ন থাকবে।









পরিশেষে বলা যায় যে, গণিত, লেখনী, মহাকাশ, স্থাপত্য ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে অগাধ জ্ঞান ছিল যে জাতির, তারা কেনই ধ্বংস হয়ে গেল সেই প্রশ্নের উত্তর এখন মেলেনি। বিভিন্ন মায়ান সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান ঘটবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.