নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"আছে ফেল আছে পাস
আছে শিক্ষার পরিহাস
ওরা বড় হয়ে চড়বে গাড়ি
আর আমি কাটব ঘাস।"
কলকাতার জনপ্রিয় গায়ক অনুপম রায়ের চমৎকার একটি গানের কয়েকটি লাইন।
এ বছর বাংলাদেশে রেকর্ড ১৪২৫৭০ জন এ্+ পেয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী উচ্ছসিত হয়ে বলেই ফেলেছেন, "দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে দেশে আর কোন ফেল থাকবে না।"
চমৎকার যুক্তি! এ+ বাড়ছে, পাসের হার বাড়ছে। সুতরাং শিক্ষার মানও বাড়ছে।
আমার বাবার সময় পুরো বাংলাদেশে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিল সর্বসাকুল্যে হাজার দুয়েক। তখনকার ফার্স্ট ডিভিশন আর এখনকার এ- সমান কথা। অথচ তাদের সময় ফার্স্ট ডিভিশনের যে মূল্য ছিল এখনকার গোল্ডেন এ+ এরও সেই মূল্য নেই।
সে সময় সত্যিকারভাবেই শিক্ষার মান যাচাই করা হত। এখন সচেতন মানুষমাত্র সকলেই জানেন এত এ+ কিভাবে পাচ্ছে অথবা এত পাস কিভাবে বাড়ছে। আর দেশে যদি এতই পাশের হার বেড়ে যায় তাহলে দেশতো উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাবার কথা! কই তেমন কিছুতো চোখে পড়তেছে না। টেস্ট পরীক্ষার ৪ সাব্জেক্টে ফেল করা ছেলেও ফাঁস করা প্রশ্ন পেয়ে অথবা তার পাশের জনের সহযোগীতায় গোল্ডেন পেয়ে যাচ্ছে অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অনেক ভাল ছাত্রই গোল্ডেন মিস করছে।
হ্যা, সত্য কথা ৪ সাব্জেক্টে ফেল করা ছেলেটি যতই গোল্ডেন পাক না কেন তার চাইতে জীবনে অনেক ভাল কিছু করবে ঐ দুর্ভাগ্যবান ছেলেটি। কিন্তু এখানে যোগ্যতার যাচাইটা কোথায় হল? পরীক্ষার হলে গার্ড কেনা, প্র্যাটিকালে নাম্বার কেনা এগুলোতো সব পুরোনো রীতি। এখন আবার যোগ হয়েছে প্রশ্নফাঁস।
যে শিক্ষাব্যবস্থার মান এখনো সাংখ্যমানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় সেই শিক্ষাব্যবস্থার মূল্য আসলে কতটুকু? যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষই যাচাই করা হয় না সেই শিক্ষাব্যবস্থার কি আদৌ কোন মূল্য আছে?
এতক্ষণ আমাদের মেরুদন্ডহীন শিক্ষাব্যবস্থার পিন্ডি চটকালাম। এখন আসা যাক, আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক পরিমন্ডলের দিকে।
আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকেই ছোটছোট ছেলেমেয়েদের একগাদা বই কাধে করে ক্লাসে পাঠানো হয়। মস্তিষ্ক ঠিকভাবে বিকশিত হবার আগেই তাকে পড়াশুনার ইঁদুর দৌড়ে শামিল হতে হয়। অনেকে এই দৌড়ে সামনের দিকে থাকে, তাদের জন্য জয়মাল্য নিয়ে ছুটে আসে তাদের পরিবার আর সমাজ। এরপরে কয়েকজন অনেক কশ্তহে দৌড়ে টিকে থাকে, তাদের অবস্থা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতই নিষ্ক্রিয়। আর শেষের দিকে যারা পড়ে থাকে তাদের কপালে থাকে শুধুই হতাশা।
কিন্তু এখনো আমাদের সমাজ বা পরিবারগুলোর মস্তিষ্কে এটি বদ্ধমূল হয়নি যে, "Every child is special." "তারে জামিন পার" বা "চলো পাল্টাই" এর মতো মুভিগুলোও এই দৃষ্টিভঙ্গিটাকে এতটুকু পরিবর্তন করতে পারেনি।
সাকিব আল হাসান, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের গর্ব। পড়াশুনায় তেমন ভাল ছিলেন না বলে বাবা-মা ক্লাস সেভেনে বিকেএস্পিতে ভর্তি করে দেন। পরের ইতিহাসতো সবারই জানা। পড়াশুনায় ভাল হলে হয়তো তিনি ঐ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারই হতেন, সাকিব আল হাসান হতেন না।
ক্রিকেটার মুমিনুল হককে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনি ক্রিকেটার কেন হলেন?" তার অকপট উত্তর, "পড়াশুনায় ভাল ছিলাম না তাই।"
সবাই পড়াশুনায় ভাল হয় না, একেকজন একেকদিকে ভাল হয়। কোন শিক্ষাব্যবস্থার উচিত তার সেই প্রতিভাটাকে উন্মোচিত করা আর সমাজ ও পরিবারের উচিত তাকে সাপোর্ট করা।
আমাদের সাথে একটা ছেলে পড়ে যে পড়াশুনায় কখনো ভাল ছিল না। কিন্তু চমৎকার ফুটবল খেলতো। কিন্তু সে কখনো তার ফ্যামিলি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তার এই খেলার জন্য কোন সাপোর্ট পায়নি। যদি পেত তাহলে হয়তো সে হতে পারত একজন ভাল ফুটবলার। কিন্তু পরিহাসের বিষয় তার দ্বারা পড়াশুনা এবং ফুটবল খেলা কোনটিই হয়নি।
একজন ছেলের মুভি বানানোর অনেক শখ, কিন্তু তাকে সাপোর্ট দেবার মত তেমন কোন অবকাঠামো আমাদের নেই। কালেভদ্রে জহির রায়হান, তারেক মাসুদ, হুমায়ুন আহমেদের মত প্রচন্ড প্রতিভাবান লোকেরা আমাদের মাঝে আসবেন যারা স্রোতের বিপরীতে লড়াই করেও নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন।
অনেকেই অনেক উদ্যম নিয়ে তার প্যাশন অনুযায়ী এগিয়ে যেতে গেলেও এই স্রোতের বিপরীতে লড়াই করতে যেয়ে তার বেশিরভাগই ঝিমিয়ে পড়েন, কয়েকজন অনেক কষ্টে তীরে উঠলেও লড়াই করার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলে। আর অসম্ভব প্রতিভাবান কিছু লোক এই তীব্র স্রোতের বিপরীতে লড়াই করেও তাদের সঞ্জীবনী শক্তিটুকু বাঁচিয়ে রাখে।
শিক্ষাব্যবস্থা এমন হোক যেখানে সাধারণেরা প্রতিভাবানদের কাতারে দাঁড়াবে, প্রতিভাবানেরা সাধারনের কাতারে নয়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: একটি কথাতেই বুঝাতে চাচ্ছি আমাদের সময়ে রেলওয়ে স্কুল থেকে শুধু একটি মেয়ে পাস করেছিলো।। নাম মনে হয় বেবী।।
সুতরাং এতে গর্বের কিছু নেই।।