নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।
অনেকদিন আগের কথা শুনলে আমরা পরিকথা অথবা ইতিকথা বুঝি, অথচ ভানুমতীর খেলা দেখলে আজো আমাদের বুদ্ধিভোঁতা হয়। দুর্ভাগ্যবশত ভূতপূর্ণিমায় পোড়াবাড়ির উঠানে একা দাঁড়ালে, ভূতের ভয়ে ভীষিত হয়ে মোচড়ে পড়ে মাথা ফাটে। রাত নিশায় কিম্ভূতকিমাকারের মুখোমুখি হলে কলিজায় ছ্যাঁত করে উঠে পেঠের ভিতর হাত সিঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। গপসপ করার জন্য বটতলে বসলে প্রায় কানাঘুষো শুনা যায়, খালিবাড়িতে ভূতের গুরু জিনের নবদোয় হয়েছে। ছেলেপুলেকে একলা পেলে মুণ্ডু দিয়ে নগরঘণ্ট বানিয়ে খায়। ভরদুপুরে খোঁপা খুলে ঠাঁট ঠমক ঠসক করে হাঁটলে, ডানাকাটা পরীর রূপে মজে রসিক হয়ে রসের গান গায়।
আষাঢ়ে গল্প হলেও সত্য, আমাদের গ্রামের এক পালোয়ান মল্লযুদ্ধে গিয়েছিল। নিশারাতে বাড়ি ফিরার পথে অবসন্ন হয়ে বাঁশ ঝাড়ের জড়ে জিরাতে বসলে, উপরিভার গতরে পড়ে তার মাথায় ভর উঠেছিল। খবরটা জবরজং হলেও আমি জবর খুশি হয়েছিলাম। আহা সে কী মজা! ভরদুপুরে আধা নেংটা হয়ে খেমটা তালে নাচানাচি করে টপ্পা তালে গান গাইত, ‘টপ টপ করে পানি পড়ে টপাটপ টপাস, টট্টর করে টেকো টপকায় ঠুকুস-ঠুকুস ঠাস।’
তার নাচগানের যন্ত্রণায় পরগণার লোকজন পরচার চিন্তা বাদ দিয়ে পরগাছার গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করতেন। লোকমুখে শুনেছিলাম এবং তত্ত্বানুসন্ধানে বিনিশ্চিত হয়েছিলাম, বিদুষী ভূতনীর ভরে বিভ্রাটে পড়ে সে বিভ্রান্ত হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিমর্ষ হয়ে বিমার্গে হেঁটে বিমর্দিত হয়েছিল। ওসব বৃথা কথিত কথায় আমি কান দিতাম না। কিন্তু মিয়োনারা যখন আমাকে মিনমিনে ডাকত তখন রাগে রগরগ করে রোমোদ্গম হত। মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে আমতলে বসে আমি পাকা জাম খেয়ে নুন লাগিয়ে চুকা বড়ুই চিবাতাম। মাঠের মতো উঠানে ঘুড়ি উড়াতাম। দৌড়াদৌড়ি করে ঘামে ভিজে তালপুকুরে ঝাঁপ দিয়ে গোসল করতাম। ছুটির দিন দাদীজানের বগলে বসে মিঠাই মণ্ডা আর তিলকুট কিনতাম। ছোটরা যখন খো খো করে কানামাছি; ইচকি মিচকি, এক্কা দোক্কা আর চু কিত কিত খেলত তখন সত্যি সাংঘাতিক বিরক্ত হতাম। হাড্ডাহাড্ডি করতে চাইলে, বহ্বারম্ভে বহুড়িরা কড়ি খেলা জিতার জন্য ছকের পাশে বহেড়া বাজি রেখে পাশায় দান ফেলত। ফলে গলাবাজি অথবা ডিগবাজি ভালো লাগত না। ভরদুপুরে দাঁও মারার জন্য নবযুবতীরা দোফাঁদ বিছিয়ে গুটি ছুড়ে কাটাকুটির সময় ‘হাক মাওলা’ বলে দাঁড়ালে ওরা দৌড়ে নানির বগলে লুকাত। তা দেখে আমি হেসে কুটিপাটি হয়ে বলতাম, ‘আমার উরে আয়! আমি তোদেরকে অঘটন পটীয়সী বানাব।’
আমার কথা শুনে ওরা মুখ ভেংচিয়ে বলত, ‘বুকের পাটা শক্ত হলে পোড়াবাড়ির উঠানে যা।’
আমরা সবাই জানি, ত্রিসন্ধ্যায় পোড়াবাড়ির আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করলে সাহসের বারটা বাজে এবং যত অসমসাহসী হোক না কেন, অমানিশায় আচকা মচ মচ শব্দ শুনলে বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে উঠে গলা শুঁকিয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে রক্ত জমে। বুকে থু থু দিয়ে মাথা তুলে সাদা পাঞ্জাবিওয়ালা দেখলেত সেরেছে, ‘ও মা গো!’ বলে শ্বাস রুদ্ধ করলে মাস তিনেক লাগে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে। আর হলেও দুরদুরানি বন্ধ হয় না। পেটের ভিতর হাত-পা সিঁধনো থাকে জীবনভর দাবিয়ে রাখার জন্য অনঙ্গ দাবিদাররা দাবিদাওয়া ছাড়ে না। নিরালায় একলা বসলে বুকে ধুকপুক করে। এক দণ্ডে তিন পলক মেরে, বাড়ির কাজ শেষ করে বিছানায় উঠে হাত পা গুটিয়ে আবার নামতে চাইলে ডরের চোটে কলিজা কাঁপে। কপাৎ করে পা ধরলে সর্বনাশ হবে। নানি দাদীর সাথে খুশগল্প করে রাতের খাবার খেয়ে আস্তেধীরে বিছানায় উঠে বাতি নিবালে, আলগোছে দরাজের ওপাশ থেকে কী যেন বেরিয়ে আসে? পালঙ্কের নিচে কিছু একটা গড়াগড়ি খায়। টুইয়ে টুইয়ে আচাভুয়ারা বারান্দায় হাঁটহাঁটি করে। কান পাতলে মনের কানে খট্ খট্ শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়। যত সব দুনিয়ার বার অরুচিকর ছায়াকৃতি মনের চোখের সামনে ভাসে। অনিন্দ্যকান্তি হওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করেও কান্তিবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া যায় না। কিম্ভূতকিমাকাররা এত জবরজং। তাদের উপচ্ছায়া দেখলে ঢিসঢিস করে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সোজা হয়ে বসে সিধা দেয়ালের দিকে তাকালে, চোখের কোণে কী যেন কিসের আবছায়া দেখা যায়। রেজাই দিয়ের মুখ ঢাকতে চাইলে, ইনিয়ে বিনিয়ে মন বারণ করে। হাত বার করলে যদি কিছু একটায় কামড় দেয়? পিঠের ব্যথায় কাতর হয়ে পাশমোড় দেওয়ার জন্য চেষ্টাকষ্ট করে ব্যর্থ হতে হয়। পাশ ফিরে ভয়দ কিছু দেখলে শুকনো গলা দিয়ে চিক্কুর বেরোবে না।
তা ছিল শৈশবলীলা। কৈশোরে এক সন্ধায় লালফুফুর বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। মাঝপথে মেড়ামেড়ির পাল দেখে আমি তো ভড়কে ভেকু। বণিত আছে, ভরসন্ধ্যা অথবা নিশারাতে ভূতরা নাকি মেড়ামেড়ির ভেক ধরে আক্রমণ করে। ওরে বাপরে, সন্ধ্যা সাঁঝে মেড়ামেড়ির পাল দেখে আমার অন্তরাত্মা প্রায় অধরা হওয়ার উপক্রম। শমদমে আল্লাহ বিল্লাহ জপে মিঠাই মণ্ডা মানত করে নিস্তার পেয়েছিলাম।
তারুণ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলাম। দুইটা দোকান নিয়ে একটা রেস্তোরাঁ। দশ এগারো জনে কাজ করতাম। রাত হলে ব্যবসা উঠত তুঙ্গে। কাঁটা চামচের ঝন ঝন। গেলাসের টন টন। হাসির হা হা শব্দ এবং উজ্জ্বলাদের হাবভাবে রোমবিকার হত। কিন্তু! নিশির ডাক শুনে টং করে ঘণ্টি বাজলে সাহসের বারটা বাজত। শহর জনমানবশূন্য হয়ে লোকজন কোথায় যে উধাও হত, চিন্তকের মত ধেয়াচিন্তা করেও জবাব মিলত না। একদা কারণ বশত আমাকে একা রেখে সবাই চলে গিয়েছিল। আমিও বুক ফুলিয়ে বলেছিলাম, যাও! যাও! ভূতপ্রেত্নী আমি বিশ্বাস করি না। হায় রে! কী সর্বনাশইনা করেছিলাম। সবাই চলে গেলে পরিকথা স্মরণ হয়। মনের চোখে ডানাকাটা পরীর অশরীরী দেখতে পাই। ও একজনকে ভালোবাসত। বয়সকালে ওর মনের বনে বিয়ের ফুল ফুটে কিন্তু মালাবদলের জন্য বরণমালা গেঁথে বরের গলায় দিতে পারেনি। প্রেমীকের কাছে প্রতারিত হয়ে অকালবসন্তে পটোলতোলা যাওয়ার পথে বিরহিণীর আত্মা বিপদসঙ্কুল বাঁকে আঁটকেছিল, যা কেউ টের পায়নি। সেই থেকে এক মায়াবীর আবির্ভাব হয়েছিল এবং ঠিক মধ্যরাতে একা হাঁটত। ওর জেল্লার তাপে ভীমরতিতেও নাকি দপ করে কামাগ্নি জ্বলে। ভূতপূর্ণিমায় কেউ ওকে উদলা হাঁটতে দেখেছে। কেউ বা ধেই ধেই ধিন ধিনাত, তাইরে নাইরে না তাতা থৈ থৈ করে ন্যাংটা নাচতে দেখে, হাঁ করে ঘাড় বাঁকিয়ে গাড়ি চালিয়ে খাঁদে পড়ে মরেছে। যাদের মনে কামেচ্ছা নেই ওরা ওর পরনে ন্যাতা ছেঁড়া কাপড়চোপড় দেখে। আমি অবশ্য ওর দেখা পাইনি এবং রসে ঠাসা দেহাংশ দেখার ইচ্ছাও আমার মনে নেই। কিন্তু! আমার মগজে সুড়সুড়ি দিয়ে অগাচণ্ডি বলেছিল, ‘ওই ভেকু! হাবার মত কী দেখছিস?’
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৬
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: ধন্যবাদ।
কেমন আছ?
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪০
মাটিরময়না বলেছেন: ভালাছি।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪২
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: বইমেলার থাকার কথা আশা ছিল।
কী আর করা।
এখানে মেলা করতে হবে? টাকা লাগবে।
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০১
নিষ্কর্মা বলেছেন: এইটা কি উপন্যাসের অংশ?
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১২
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: জি, শুরু করেছি।
ই বই চাইলে আমার সাইটে আছে। এখানে লিংক দিলে ডিলিট করে দেয়।
bookorebook.কম
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভালো লেখা। +++
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৩
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: পড়ার জন্য ধ্যনবাদ
৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩১
বিদ্যুৎ বলেছেন: ভাই ভুত পেত্নির গল্পে তো বিমোহিত করে দিলেন। আপনার নাম দেখেই বুঝেছিলাম নামের মত আপনারও বিশেষত্ব আছে। তা এবার বই মেলায় কয়টি বই প্রকাশিত হল? এখানেও বই মেলা হবে অপেক্ষা করেন! শুভ কামনা নিরন্তর।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনার জন্য দোয়া করি, আপনার মঙ্গল হবে। আপনার মন্তব্যে আমার মন খুশি হয়েছে। নিশ্চয় আপনি হাসিখুশি থাকবেন।
আমাজনে প্রকাশ করেছি। দেশে প্রকাশ করে টাকা নষ্ট হয়।
কিছূ করার নেই তাই ব্লগে পোস্ট করেছি।
আমার সাইটে আরো ৪টা আছে। চাইলে পড়তে পারবেন।
মতমতা দিলে সত্যি উপকৃত হব। আমার সাথে লোকজন কথা বলে না। এড়িয়ে চলে।
সময় হলে দেখা করবেন। গপসপ করব।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৫
মাটিরময়না বলেছেন: শুভকামনা রইলো মিয়াভাই।