নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা (উপন্যাস) ৯

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৬












আয়মান ভোজালি নিশানা করে বলল, ‘তোর নিশ্চয় জানা আছে, আমার হাতের ভোজালি তোর গতরে লাগলে পলকে ভোজবাজি বন্ধ হবে।’
‘কী চাস?’
‘প্রেমাসনে বসে আমি আমার প্রিয়তমার সাথে প্রেমালাপ করতে চাই।’
‘এই! তোর রোমবিকার হচ্ছে কেন রে?’
‘রক্তকণায় শিহরন জেগে আমার তনুমনে কাতুকুতু হচ্ছে। আমি চনমনে হচ্ছি।’
‘তোর সাথে আমি আর কথা বলতে চাই না।’ বলে বাতাস সঞ্চালন বন্ধ হয়ে প্রকৃতি স্তব্ধ হয়।
‘দৌড়ে বাড়ি যা! কোন্দলি কোথাকার।’ বলে আয়মান ঝিলে নামবে এমন সময় সরসী তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে রুষ্টকণ্ঠে বলল, ‘বনমানুষের মত গড়াগাড়ি করে আমার ফুলবিছানা আউলাঝাউলা করেছ কেন?’
লাফ দিয়ে উঠে বসে চোখ রগড়ে বিছানা থেকে নেমে আয়মান বলল, ‘দাঁড়া! তোর বিছানা তুলছি। যা! নাস্তা নিয়ে আয়। অট্টগরম চা এনে দিলে আজ তোকে পিটিয়ে লম্বা করব না।’
‘দৌড়ে গোয়ালঘরে যেয়ে মেড়া গরু নিয়ে মাঠে যাও।’
‘দাদিজান!’ আয়মান হেঁকে বলে সরসীর দিকে তেড়ে ফুঁড়ে এগুলে এক হাতে হাতাবেড়ি এবং অন্য হাতে তাড়ু নিয়ে স-দাদি এসে দাঁতে দাঁত পিষে চ্যাটাং করে বললেন, ‘এই বনমানুষ! আমার নাতনিকে দাবড়াচ্ছিস কেন রে?’
‘শব্দটা তাইলে আপনি ওকে শিক্ষা দিয়েছেন? জুতসই করে আজ তোমাকে পেটির ভিতর সামলিয়ে রাখব।’
তার হাবভাব দেখে দাদিকে নিয়ে সরসী দৌড়ে পালায়।
‘চাচি! আমি যাচ্ছি। দুপুরে আসব।’ হেঁকে বলে আয়মান দৌড়ে তাদের পাকঘরে যেয়ে দাদির পাশে বসে বলল, ‘জানেন দাদিজান, মেদামারার দাদি আজ আমাকে বনমানুষ ডেকে দাবড়িয়েছেন। কী করব?’
‘ভরদুপুরে বটতলে বসিয়ে রাখলে, মাথাগরমের মাথা ঠাণ্ডা হবে।’
‘জানেন দাদিজান, চ্যাটাং চ্যাটাং করে অবলা বলেছিল, দৌড়ে গোয়ালঘরে যেয়ে মেড়া গরু নিয়ে মাঠে যাও।’
‘গুণ দিয়ে হাত পা বেঁধে দামড়ার পাশে বসিয়ে লগি দিয়ে খুঁচিয়ে গোবশাকে চেতালে, হাম্বা ডাক শুনে ষাড় যেয়ে গুঁতালে বুদ্ধিভোঁতা দাদি নাতনির আক্কেল ধার হবে।’
‘আমি বলছিলাম কী! চোখ পাকিয়ে দোনা একটা হাতে দিয়ে বলব, ছাগলীর দুধ দোহন করো।’
‘কেন?’
‘ছাগলীর লাথি এবং পাঠার ঢুস খেলে ম্যাড়মেড়ে হাড়গোড় শক্ত হবে।’ বলে আয়মান বিদ্রূপ হাসলে দাদি তাড়া দিয়ে বললেন, ‘জলদি আয়। আজ আমরা ছাগলীর দুধে চা খাব।’
‘আসছি দাদিজান! জপযিকির করে তুমি চা’র পানি উৎলাও। গরম চা খাওয়ার জন্য আমি ছাগলীর দুধ আনতে যাচ্ছি।’ পরিচারিকার দিকে তাকিয়ে বলে কলশি থেকে পানি পান করে দোনা একটা হাতে নিয়ে দৌড়ে যেয়ে আয়মান বলল, ‘দাদিজান! বদরাগী ছাগলীর দুধে অট্টগরম চা খেলে গায়ে মাস লাগবে। আজ এক কাপ খেতে চাই।’
‘এই জন্য তোকে দুই চোখে দেখতে পারে না, গুণ করে বশ করতে চায়। অদ্য অবলারা বেজুতে আছে বিধায় তোকে জুতসই করতে পারছে না।’ বলে দাদি মৃদু হেসে দ্রুত হেঁটে সরসীর উঠানে যেয়ে হাঁক দিলেন, ‘এই সরসী! তোর দাদি কোথায় লো?’
দাদি নাতনি দৌড়ে বেরোলে আ-দাদি চোখ পাকিয়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘যা! ছাগলীর দুধ দোহন করে নিয়ে আয়। আমার নাতি ছাগলীর দুধে চা খেতে চায়।’
‘স্বামীর ভাবী জা আমার ভাশুরের অর্ধাঙ্গ আপনি এসব কী বলছেন?’ বলে সরসীর দাদি কাঁধ ঝুলালে আয়মান চোখ পাকিয়ে বলল, ‘দৌড়ে গোয়ালঘরে যেয়ে জোয়ান ছাগলীর দুধ দোহন করে নিয়ে আসো। গরম পানি উৎলিয়ে ঠাণ্ডা হচ্ছে।’
‘জোয়ানটাকে তোর দাদাও দোহন করতে পারেন না।’ বলে সরসীর দাদি মুখ বিকৃত করলে আয়মান আঙুল দিয়ে ইশার করে বলল, ‘বেশি কথা না বলে চা’র জন্য দুধ নিয়ে আসো, যাও!’
‘জোয়ান ছাগলীর দুধে চা খেতে চাস কেন?’
‘জোয়ান ছাগলীর দুধে গরম চা খেলে মন চনমনে হয়। যাও! দৌড়ে নিয়ে আসো।’ বলে সরসীর দিকে তাকিয়ে আয়মান পাষাণের মত বিদ্রূপ হাসে।
‘আমার বাপ চাচা কোথায়?’ বলে সরসী চারপাশে তাকিয়ে গলার জোরে চিক্কুর দিয়ে ডাক দেয়, ‘চাচাজান! জলদি আসুন।’
‘তোর আর তোর দাদির মত অবলার কারণে বাংলার বিরাঙ্গনাকে আবাংগালরা মিয়নো ডাকে।’ বলে আ-দাদি মুখ ভেংচিয়ে দোনা হাতে নিয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘আয়মান আয়, ঠারেঠোরে ঝাঁপটে ধরে থুত্থুড়ে ছাগলী দোহন করব।’
‘একমাত্র আপনার মত সুবিধাবাদী মহিলার কারণে আমাদের মত অসহায় নারীরা নির্যাতিত হয় গো।’ বলে সরসী মুখ ভেংচি দেয়।
‘আয়! আমার উরে আয়, আজ তোকে জুতসই করব।’ বলে আ-দাদি দাঁত কিড়িমিড়ি করে মাথা দিয়ে ইশারা করলে সরসী হাত এবং মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘যাও! ঝাঁপটে ধরে থুত্থুড়ে ছাগলী দোহন করো যেয়ে, মিনমিনের দাদি মিয়নো।’
আয়মান চোখ পাকিয়ে হেঁকে বলল, ‘এই অগাচণ্ডী! আমার ধারে আয় আমি তোকে গুণ্ডামি দেখাব। আয়!’
‘দৌড়ে গোয়ালঘরে যেয়ে ছাগলী দোহন করে গরম দুধ নিয়ে আসো, দেরি করলে ল্যাজে গোবরে এক করে আজ দাদি নাতিকে তুরুমঠোকা দেব।’ বলে সরসী চোখ পাকিয়ে কিল দেখায়।
‘দাঁড়া মিয়নো! এখনি তোকে যমের বাড়ি পাঠাব।’ বলে আয়মান কোঁদা দেয়। এমন সময় বাবা চাচা দাদারা বাড়িতে আসেন। আয়মানকে নিয়ে দাদি গোয়ালঘরে চলে যান এবং সরসীকে নিয়ে উনারা অন্তঃপুরে যেয়ে নাস্তা খেয়ে নিজ কাজে সবাই ব্যস্ত হন। আয়মান রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে সরসীকে সাবুদ করার জন্য ধারি দেউড়ি দেহলিতে হাঁটাহাটি করছে। ফন্দিফিকিরে দাদি নাতনিকে জুতসই করতে পারছে না। তার উদলা গতরের গন্ধ বাতাসে শুঁকে দাদিকে নিয়ে সরসী দূরত্ব বজায় রাখে। পরেরদিন মারামারি করে দাঙ্গা বাঁধালে বাবা চাচা দাদারা পঞ্চায়েতে গিয়েছেন বিচার করার জন্য। সে বাড়ি ফিরে দাদার সাধা লুঙ্গি পাঞ্জাবি পরে কাঁথা কম্বলে ধ্যানাসন বানিয়ে চোখ বুজে সাধুর মত বসে জোরে জোরে ‘হাক মাওলা!’ জপতে শুরু করে। বাড়ির নারী ছুঁড়ি বুড়িরা উঠানে একাট্টা হয়ে কাকুতি মিনতি করে বলছেন, ‘বাবা আমাকে একটা তাবিজ দাও। বাবা আমাকে একটা ফুঁ দাও। বাবা আমাকে এক ফোঁটা পানি পড়ে দাও।’
সরসী যেয়ে কপাল কুঁচকে পরখ করে তাকিয়ে মাথা নেড়ে নিম্নকণ্ঠে বলল, ‘ভণ্ডামি করে আয়মান ভাই এত সুন্দর পিরসাব হতে পারবে না।’
আয়মান আড়চোখে দেখছে। সরসী তার পাশে যেয়ে ‘বা…।’ বলতেই ‘হাক মাওলা!’ বলে লাফ দিয়ে উঠে চোখ পাকিয়ে ধমকে বলল, ‘এই ছুঁড়ি! তুই আমাকে বা ডাকলি কেন লো?’
‘ভাইসাব গো!’ চিক্কুর দিয়ে বলে সরসী ছিটকে পড়ে চিৎপটাং হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে দেখে অন্যরা ফুঁ তাবিজ ভুলে চিক্কুর প্রতিযোগিতা শুরু করে লম্ফঝম্প। আয়মান রেগে ব্যোম হয়ে কাঁথা টেনে ধামৎ ধামাৎ করে হেঁটে সরসীর পাশে যেয়ে চোখ পাকিয়ে দাঁত খিচিয়ে ধমকে বলল, ‘এই ছুঁড়ি! আমার ধারে আয়।’
সরসী হামাগুড়ি দিয়ে দাদির দিকে যেতে চায়।
‘হাক মাওলা!’ বলে আয়মান লাফ দিয়ে সরসীর সামনে যেয়ে স-দাদির দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘বুড়ি তুমি দূরে যাও। হাক মাওলা!’
স-দাদি ভয়ে থরহরি শুরু করেন। চোখ পাকিয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করে আয়মান বলল, ‘এই ছুঁড়ি! তুই কী চাস?’
‘কাঁথাওয়ালা পিরসাব গো, আমাকে একটা ফুঁ দাও। বুকের ভিতর থেকে ডর ভয় দূর হওয়ার জন্য।’ কম্পিতকণ্ঠে বলে সরসী দাদির দিকে তাকিয়ে হাত প্রসারিত করে কান্নার ভান করে বলল, ‘দাদি গো আমাকে বাঁচাও।’
‘হাক মাওলা!’ বলে আয়মান বিড়বিড় করে সরসীর মাথায় হাত বুলিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফুঁ দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ দিয়ে ইশারা করে গায়ের জোরে পিঠে থাপ্পড় বসায় এবং বাজুতে ধরে উঠিয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘যা ছুঁড়ি! দিগ্ভ্রান্ত ভূতরা তোকে আর ধাওয়া করবে না।’
ডরের চোটে সরসী পড়ি কি মরি করে উঠে দৌড় দিতে চেয়ে ‘হাক মাওলা!’ শুনে ভয়ে থরহরি করে পায়ে পায়ে হোঁচট খায়। সরসীকে ঝাঁপটে ধরে, ‘হাক মাওলা!’ বলতে চেয়ে আয়মান পেটে ধরে মাটিতে বসে হেসে কুটিপাটি হলে সবাই পিছু হাঁটে। সরসী কপাল কুঁচকে তার মুখের দিকে তাকায়। আয়মান মুখের ভাব বদিলে কাঁথা টেনে ধমাৎ ধমাৎ করে হেঁটে বলল, ‘হাক মাওলা! এই ছুঁড়ি, আজুরা দে নইলে বদদোয়া করব।’
‘গাট্টাগোট্টা পেটমোটা পিরসাব গো, আমাদের বাড়ি এসেছেন কেন? আর এসেই যখন গিয়েছেন তখন দয়া করে বলুন আজুরা কত দিতে হবে এবং বনমানুষকে বশ করব কেমনে?’ সরসী ইনিয়ে বিনিয়ে বললে আয়মান আসনে বসে বিড়বিড় করে বলল, ‘হাক মাওলা! এক হাজার নগদ দে, তারপর ছুমন্তর পড়ে ফুঁ দিয়ে টোটকার ভিতর তাবিজ ভরে দেব। তার ডান বাজুতে বেঁধে দিলে তোর বশ্য হবে বউআ। খবরদার! বাম হাতে বাঁধবি না। উল্টা মন্ত্র জপে তোকে বশ করবে।’
‘গামছাওয়ালা পিরসাব গো, তাবিজ টোটকা আর লাগবে না।’
‘হাক মাওলা! এই ছুঁড়ি, আগড়-বাগড় বকছিস কেন?’
‘মারধর করলেও একটা তাবিজের জন্য একহাজার টাকা দেব না।’
‘হাক মাওলা! এই ছুঁড়ি, তুই এত কঞ্জুস কেন লো?’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫

প্রামানিক বলেছেন: ভাইজান পড়ে ভাল লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.