নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।
৯
৮
৭
৬
৫
৪
৩
২
১
‘মাদুলির কিনা দামই তো পঞ্চাশ টাকা?’
‘দেড়শো টাকার বেশি এক আনা দেব না।’
‘দুইশো দিলে অর্ধেক ছুমন্তর পড়ে ফুঁ দেব। রাজি হলে বল আমার হাতে সময় নেই।’
‘একশো নব্বই দেব।’ বলে সরসী হাসার চেষ্টা করলে আয়মান কাঁথা টেনে হাঁটতে শুরু করে বলল, ‘তোকে আর তাবিজ দেব না।’
এমন সময় তার দাদি পাশের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। উঠানে ভিড় দেখে দ্রুত যেয়ে ব্যস্তকণ্ঠে বললেন, ‘ছাওয়ালপির কখন এসেছেন?’
কেউ কিছু না বললে দাদি সবিনয়ে বললেন, ‘ছাওয়ালপির সাহেব, দয়া করে আমার নাতির জন্য একটা তাবিজ দেবেন?’
‘ছাওয়ালপির!’ বলে সরসী প্রায় দৌড়ে আসে এবং আয়মান কপাল কুঁচকে, ‘দা…।’ বললে তার সমরূপী হেঁকে বলল, ‘সরসী! ওখানে কী করছিস?’
‘আয়মান ভাই! তুমি কোথায় ছিলে?’ বলে সরসী পিছমোড় দিলে ছাওয়ালপির বেশী আয়মান ঝাঁপটে সরসীর হাত ধরে পিছনে টেনে ভোজালি বার করে হেঁকে বলল, ‘আরেক দিন আমার ভেক ধরে সরসীর বাড়ি আসলে আমি তোকে মাটিতে গাঁথব। এখন উধাও হ!’
‘আজ তোর বরাত ভালা।’ বলে বর্ণচোরা বাতাসে লীন হয়। সরসী অজ্ঞান হয়ে এলিয়ে পড়লে আয়মান ওকে বাহুতে তুলে। সবাই দৌড়ে যেয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে হেঁকে বলল, ‘হাঁ করে কী দেখছ?’
তার দাদি কম্পিতকণ্ঠে বললেন, ‘ছাওয়ালপির সাহেব, আপনি কে এবং ও কী ছিল?’
‘দাদিজান! আমি আয়মান।’
‘তুই আয়মান হলে ও কে ছিল?’
‘উদ্দেশ্যসাধনের জন্য খপুষ্প এসেছিল।’ বলে আয়মান মা’র দিকে তাকিয়ে অবাককণ্ঠে বলল, ‘আম্মা কী হয়েছে, এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?’
‘আমরা তোকে চিনতে পারছি না কেন?’
আয়মান গামছা খুলে ব্যস্তকণ্ঠ বলল, ‘এখন চিনতে পারছেন?’
তার মুখে হাত বুলিয়ে মা অবাককেন্ঠ বললেন, ‘ছোটকালে ছাওয়ালপিরের নাম শুনেছিলাম। তুই ছাওয়ালপির হলে কেমনে?’
‘আমি ঢং করছিলাম তো।’ বলে আয়মান দ্রুত হেঁটে তার কামরায় যেয়ে সরসীকে বিছানায় শুয়িয়ে মুখে পানি ছিটা দিয়ে দু হাতে ওর গালে আস্তে আস্তে থাবা দেয়। মাথা ঝাড়া দিয়ে সরসী চোখ মেলে ভয়ে চিঁক দিলে আয়মান রেগে ওর বাজুতে কিল বসিয়ে দাঁত কটমট করে বলল, ‘আমি! ছাওয়ালপির নয়।’
‘তোমার ভেক ধরে কে এসেছিল?’
‘ভোজবাজি করে তোর চোখে ভেলকি লাগাবার জন্য ভেলকিবাজ এসেছিল।’
‘ছাওয়ালপির কে, ও কে ছিল?’
আয়মান ভোজালি বার করে সরসীর হাতে দিয়ে বলল, ‘আমি জানি না। এই নে, আমার বুকে আঁচড় দে।’
তার বুকে ভোজালি লাগাতে চেয়ে ছুড়ে ফেলে সরসী বলল, ‘আয়মান ভাই! আমাকে একটা তাবিজ দাও। আমি তোমাকে এক হাজার টাকা নগদ দেব।’
‘সত্যি বলছিস?’
‘হ্যাঁ, আমাকে একটা তাবিজ দাও। আমার খুব ভয় হচ্ছে।’
সবাই হাঁ করে তাকিয়ে তাদের কাণ্ডকারখানা দেখছেন। কেউ কিছু বলতে পারছেন না। হাতের বালা খুলে তার হাতে দিয়ে সরসী বলল, ‘নগদ একহাজার টাকা দিয়ে পরে ফেরত নেব। এখন জলদি একটা তাবিজ দাও।’
আয়মান বিছানায় বসে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘তোকে কিলাবার জন্য ভেক ধরেছিলাম তো। আমি তাবিজ লিখতে পারি না।’
‘আয়মান ভাই গো, ছুমন্তর পড়ে টোটকায় ভরে জলদি তাবিজ দাও। তোমাকে আমি দশ হজার টাকা দেব।’
আয়মান চিন্তিত হয়ে চোখ বুজে বিড়বিড় করে চোখ মেলে শান্তগম্ভীরকণ্ঠে বলল, ‘নগদ বিশহাজার দিলে ধ্যানাসনে বসে ধ্যানমগ্ন হব। টাকা এনে দে।’
সরসী হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে ওর দাদির দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মত বলল, ‘মাত্র একটা তাবিজের জন্য বিশহাজার টাকা নগদ চাইছেন। এত টাকা দিয়ে তাবিজ কিনলে কারবার বেসাত চালাব কেমনে?’
‘শুনেছি ভালো তাবিজের দাম বেশি এবং গুণী পিরকে লাখ টাকা আজুরা দিতে হয়। আনকোরা পির হয়েছে তো, আজুরা দিতে হবে না।’ স-দাদি আয়মানের দিকে তাকিয়ে নাক সিঁটকিয়ে বললে সরসীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আয়মান বলল, ‘জি না! আমি আনকোরা পির নয় এবং আমার ধার্য আজুরা দুই লাখ মাত্র। বালিকা আমার মনোরঞ্জন করেছে। মনোরঞ্জিত হয়ে আমি টোটকার দাম বলেছিলাম মাত্র।’
এমন সময় বাবা চাচা দাদারা বাড়ি ফিরে সবাইকে আয়মানের কামরার সামনে একাট্টা দেখে দাদা রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁত কটমট করে বললেন, ‘আজ আবার মারামারি করেছিলে কেন?’
দাদির পিছনে লুকিয়ে কপটহেসে আয়মান বলল, ‘ওরা আমাকে আক্রমণ করেছিল। বেজুতে পড়ে আমি শুধু আত্মরক্ষা করেছিলাম। দাদিজান, ওদের সাথে খপুষ্প ছিল।’
‘তুই তাজিব লেখ। জুতসই করে তোর দাদাকে আমি সামলাচ্ছি।’ বলে দাদি এক গাল হেসে বললেন, ‘জানেন! চোখে ভেলকি লাগাবার জন্য ভেলকিবাজ এসেছিল।’
‘পঞ্চায়েত ডেকেছিল কেন? আর তোমাকে কতবার বলেছি ভেলকি টোটকা আমি বিশ্বাস করি না।’
‘এমন ভেলকি লাগিয়েছিল যে আয়মানকে আমরা চিনতে পারিনি। আয়মান বলেছিল, উদ্দেশ্যসাধনের জন্য খপুষ্প এসেছিল। খপুষ্প কী আমি জানি না।’
‘খপুষ্পের খপ্পরে পড়েছিলে বিধায় আজকের জন্য বেকুবি মকুব করে দিলাম। আগামীতে এমন করলে পিটিয়ে দাদি নাতিকে ধুম্বা বানাব।’ বলে দাদা দ্রুত হেঁটে চলে গেলেন। সরসীর দাদা জানতে চাইলে ঘটনার বিবরণ শুনে উনিও রেগে মেগে ধমাৎ ধমাৎ করে চলে যান। কিছু বলতে চেয়ে সরসীর করুণ চাহনি দেখে বাবা চাচা চলে গেলেন। আয়মানের পাশে যেয়ে সরসী মেঝেতে বসে পা টিপতে টিপতে বলল, ‘সুন্দর মুন্দর পিরসাব গো, জলদি একটা তাবিজ দাও।’
টিপাটিপি এবং পীড়াপীড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে চোখ বুজে বিড়বিড় করে ফুঁর সাথে কবচের ভিতর থু থু দিয়ে মোম গলিয়ে মুখ বন্ধ করে তাগা দিয়ে বেঁধে সরসীর গলায় ঝুলিয়ে বলল, ‘বালিকা! এই নে, খপুষ্প আর তোর খপ্পরে পড়বে না।’
তাবিজের দিকে তাকিয়ে আনন্দে হেসে সরসী বলল, ‘আয়মান ভাই! এ কবচ কোথায় পেলে?’
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: এখন মসজিদে যাব। চার দোকানে গেলে সমস্যা হবে।
কেমন আছনে ভাইজান?
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৫
প্রামানিক বলেছেন: ১ম হইছি চা দেন।