নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ব্যঙ্গ-সাহিত্যের অগ্রদূত আবুল মনসুর আহমদের ১১৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩২



আধুনিক ও প্রগতিশীল সাংবাদিকতার অগ্রপথিক আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ। ব্যঙ্গ রচনায় তিনি ছিলেন ঈর্ষণীয় ক্ষমতার অধিকারী।যিনি হাস্য-রসাত্বক, শাণিত বিদ্রুপাত্বক লেখার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ব্যঙ্গ রচনার মাধ্যমে তিনি সমাজের মুখোশধারী মানুষের অন্তরের রূপ সার্থকভাবে উন্মোচন করেছেন। ব্যঙ্গ রচনাও যে উঁচু স্তরের সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে তার বাস্তব প্রমাণ আবুল মনসুর আহমদের ব্যঙ্গাত্মক গল্পগ্রন্থ 'আয়না' ও 'ফুড কনফারেন্স'। এ দু'টি রচনায় তার অসাধারণ ব্যঙ্গ শক্তির পরিচয় ফুটে ওঠে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের ১১৭তম জন্মদিন আজ। ১৮৯৭ সালের আজকের দিনে তিনি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচনার রচয়িতা আবুল মনসুর আহমদ ১৮৯৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৭ সালে তিনি মেট্রিক ও ১৯১৯ সালে ইন্টার মেডিয়েট পরীক্ষায় উত্তির্ন হন। এর পর ১৯২৬ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার রিপন কলেজে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেন এবং ১৯২৯ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি ময়মসনসিংহে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকতাকে বেছে নিলেন পেশা হিসেবে। তিনি ছিলেন আধুনিক ও প্রগতিশীল সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক। তিনি কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায় কাজ করেছেন এবং ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিক পেশায় যুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের আগপর্যন্ত তিনি এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি কলকাতায় একজন পেশাদার সাংবাদিক এবং সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। আবুল মনসুর আহমদ শুধু সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের দেশের জনপ্রিয় লেখকদেরও অন্যতম। ব্যঙ্গাত্মক রচনার ক্ষেত্রে তার পারদর্শিতা তাকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি স্থায়ী আসন দান করেছে। মুক্তদৃষ্টি ও গভীর সমাজবোধসম্পন্ন এ লেখক তীক্ষল্ফ পর্যবেক্ষণ শক্তির মাধ্যমে তৎকালীন মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা ও নানা কুসংস্কার অত্যন্ত নির্মম অথচ বাস্তবসম্মতভাবে চিত্রিত করেছেন। তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন কোথায় সমাজের গোঁড়ামি, কোথায় ধর্মান্ধতা কিংবা তথাকথিত হুজুর কেবলাদের ভণ্ডামি। এসব দিক থেকে তার ব্যঙ্গ রসাত্মক রচনাগুলো মূল্যবান সামাজিক দলিল।

আবুল মনসুর আহমদ তার ব্যঙ্গ রসাত্মক রচনার মাধ্যমে কেবল ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ভণ্ডামিরই সমালোচনা করেননি। সমাজের বহুবিধ অনাচার ও অব্যবস্থাপনাকেও শাণিত কশাঘাতে জর্জরিত করেছেন। তার এসব রচনায় সামাজিক ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতি, কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও কূপমণ্ডু কতাকে সাহসিকতার সাথে তুলে ধরে বিমূঢ় সমাজকে আত্মসচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার শ্লেষাত্মক এসব রচনায় এক দিকে তিনি যেমন সে সময়কার কপট ও স্বার্থানেষী সমাজসেবীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন অন্য দিকে সে সময়কার জনপ্রিয় ও দেশবরেণ্য নেতাদের ভুলত্রুটি দ্বিধাহীন সাহসিকতায় প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। আবুল মনসুর আহমদ ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হলে আবুল মনসুর আহমদকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং ১৯৫৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগ সরকারের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে আবুল মনসুর আহমদকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ূব খানের সামরিক শাসন জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পূর্ববাংলার স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে তিনি আপোসহীন ভূমিকা পালন করেন।

আবুল মনসুর আহমদের পরিচয় শুধু রাজনীতিক ও সাংবাদিক হিসেবেই নয়, বরং সাহিত্যিক হিসেবেই তিনি বেশি সমাদৃত। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে-সত্য-মিথ্যা, জীবন ক্ষুধা, আবে হায়াৎ, আয়না, ফুড কনফারেন্স এবং তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আত্ম কথা' ও 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর'। তাঁর দীর্ঘ জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল এ দুটি গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের এক অমর কীর্তি। এ দু'টি গ্রন্থের একত্রে মিশ্রণ ঘটেছে End of a Betrayal নামক তাঁর লেখা বিশালকার ইংরেজী গ্রন্থে। এছাড়াও তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ "শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২)" উল্লেখযোগ্য। এসব গ্রন্থের বদৌলতে মুসলিম সাহিত্যে তো বটেই সমগ্র বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান অনেক দৃঢ় হয়ে ওঠে। এ কারণে বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক এবং ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা দিবস (মরণোত্তর) পদকসহ অসংখ্য পদকে তিনি ভূষিত হন।



উপমহাদেশের এই খ্যাতনামা সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ব্যঙ্গ সাহিত্যের অগ্রদূতের আজ ১১৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৯

আলম 1 বলেছেন: ভাল পোষ্ট।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

প্রামানিক বলেছেন: ব্যঙ্গ সাহিত্যের অগ্রদূতের আজ ১১৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ।

পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: শুভ জন্মদিন আবুল মনসুর আহমদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.