নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরবানীর ঈদঃ মনের পশুকে করহে জাবাই, সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১


ঈদুল আযহা ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড দু'টো ধর্মীয উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ এবং বকরা ঈদ নামেও পরিচিত। এ উৎসবের আনন্দ বিশ্বের সমগ্র মুসলিমের। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর আদেশে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর আপন পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার ঘটনাকে স্বরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এই দিবসটি পালন করে। এ এক অনাবিল আনন্দ, যে আনন্দের কোনো তুলনা নেই। এ আনন্দ আল্লাহর নৈকট্য লাভের আনন্দ। এ আনন্দ গুনাহ মাফের এবং বৈষয়িক ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে পরলৌকিক জগতের পাথেয় সংগ্রহ করার আনন্দ। এ আনন্দ গরিব-দুঃখীর সাথে একাত্ত্ব হওয়ার আনন্দ। এ আনন্দ পশু কোরবানীর সাথে সাথে মনের পশুকে পরাস্থ করার আনন্দ।

ঈদুল আযহা (আরবীতে:عيد الأضحى) মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। আসলে এই ঈদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয নিযমানুযায়ী উট,গরু,দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে চলে ঈদুল আজহার ঈদ উৎসব। হিজরী চন্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সবোর্চ্চ ৭০ দিন হতে পারে।

ধর্মমতে যাঁর ওপর যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব, তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করাও ওযাজিব। ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত গরু বা খাসী কুরবানি করা হয। এক ব্যক্তি একটি গরু বা খাসি কুরবানি করতে পারেন। তবে গরুর ক্ষেত্রে ভাগে কুরবানি করা যায। ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরীক হতে পারেন। কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরীব-মিসকিনদের মধ্যে ও ১ ভাগ আত্মীয স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করত: তৃতীয ১ ভাগ নিজেদের খাওযার জন্য রাখা যায। তবে প্রয়োজন সবটাই নিজেদের জন্য রাখা দুরস্ত আছে। কুরবানির পশুর চামডা বিক্রির অর্থ সাদকা করে দিতে হয।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বর্গীয় এ ঈদ আনন্দ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের জায়গা এখন দখলে নিতে চাচ্ছে লৌকিকতা। ব্যবসায়ীরা ওঁৎ পেতে থাকেন কখন ঈদ আসবে। উদ্দেশ্য দুই পয়সা বেশি কামানো। তাই ্ঈদের মাসে বাজার থাকে চরম উত্তাপে। কোন প্রয়োজনীয় পণ্যই স্পর্শ করার সাধ্য থাকে না সাধারণ গরিব ও মধ্যবিত্তের। গরিবেরা ঈদ উৎসব পালন করে বাজারের উত্তাপ সহ্য করেই, আর ব্যবসায়ীরা দাঁত কেলিয়ে হাসেন বাড়তি আয়ের আনন্দে। সারা বছর ধর্মকর্মে মতি না থাকলেও বাজারের বড় গরু বেশী দামে কিনে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জানান দিই আমরা কত বড় মুত্তাকি। প্রতি বছর কোরবানীর ঈদে বড় বড় গরু ও উটের সাথে তাদের ক্রেতাদের ছবি প্রকাশিত হয় পত্র-পত্রিকায়। এলাকায় শোডাউন হয়। গরীবদের মাঝে কাপড় বিতরণের নামে নিজের অহমিকা প্রকাশে ব্যস্ত থাকেন অনেকে। পকেটে নতুন টাকা নিয়ে ঈদের ময়দানে যেতে হবে। হোক না সে টাকা অবৈধ। ঈদের ময়দানে লোক দেখানো কোলাকুলি আর সালাম বিনিময়। মাঝে মধ্যে গরিবদের কিছু পয়সা হাদিয়া।

ঈদকে উপলক্ষ্য চলে পটকাবাজি আর আতশবাজি। চাঁদাবাজি তো আছেই। বাজারে বাজারে, অলিগলিতে তরুণ-তরুণীরা নেমে পড়বে ঈদ আনন্দে ধুমধাড়াক্কা গানের তালে। মোবাইলগুলো হঠাৎ সচল হয়ে যাবে। কে কার আগে প্রেমিকার কাছে ঈদবার্তা প্রেরণ করবে, চলে তার লড়াই। সারা বছর খোঁজ না রাখতে পারলেও ঈদের অছিলা করে কেউ কেউ স্বজনদের কাছে ফোন দেন। দায়সারা খোঁজখবরও নেন বটে!

ঈদকে পুঁজি করে নানা ধরণের অনুষ্ঠানের পসরা নিয়ে পাঁচ-সাত দিন ঈদ উৎসব পালন করে জাতীয় টেলিভিশন সহ প্রাইভেট চ্যানেল যার মাঝে থাকে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন। মুসলমানের ঈদের সাথে টেলিভিশনে প্রচারিত ওইসব অনুষ্ঠানমালার সামঞ্জস্য খুঁজতে যাওয়া বাতুলতা। ঈদ উপলক্ষ্যে সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি পাওয়া নতুন নতুন ছবিগুলোরও সেই একই অবস্থা। ঈদের আগেই প্রায় প্রতিটি পত্র পত্রিকা আলাদা আলাদা ম্যাগাজিন ছাপবে। নিদেন পক্ষে পত্রিকার ভেতরেই বিশেষ ঈদ সংখ্যা ছাপা হবে। তবে দুঃখের বিষয় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উপলে প্রকাশিত এই সব ঈদ সংখ্যার কোনো কোনটির প্রচ্ছদে শোভা পাবে, অর্ধ উলঙ্গ নারীর ছবি কিংবা নানা ধরনের অশ্লীল দেহের কারুকার্য। ঈদ সংখায় প্রকাশিত লেখাগুলোর সাথে ঈদের তাৎপর্য নিয়ে কোন মৌলিক লেখা খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে।

এভাবেই আধুনিকতা ও লৌকিকতার মাঝে হারিয়ে যায় আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের ঈদ আনন্দ। কালের গড্ডালিকা প্রবাহে হারিয়ে যাই আমরা। যে আনন্দের বারতা নিয়ে মুসলমানদের ঈদ আসে সে অন্তরালে ডুকরে কাঁদে। কোরবানীর ঈদেও শিক্ষাও থেকে যায় অন্তরালে। ,মনের পশুকে জবেহ করার পরিবর্তে আমরা হয়ে উঠি পশু হন্তারক। অশান্তির প্রচণ্ডতায় দগ্ধ হই আমরা। কিন্তু এটাতো ইসলামের শিক্ষা নয়। এই ঈদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয হচ্ছে ত্যাগ করা। তাই আসুন আমরা ভোগে নয় ত্যাগের মহিমা কির্ত্তন করি আর নিজের ভিতরের পশুকে জবেহ করে শুদ্ধ মানুষ হয়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা গাই।

কুরবানীর শিক্ষা, পশু জবাইয়ের সাথে সাথে মনের পশুকেও কর জবাই। আজ ঈদুল আযজহার প্রথম দিন। ব্লগের সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা আর ঈদী।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++
মনের পশু জবাই করাই আসল কুরবানি ।

ঈদ মুবারক ভ্রাতা !:#P

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০

দ্বীপ ১৭৯২ বলেছেন: ঈদ মোবারক!!!

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

সাফকাত আজিজ বলেছেন: ঈদকে উপলক্ষ্য চলে পটকাবাজি আর আতশবাজি। এই পয়েন্ট টা একটু এড়ানো যায় না অনেক বছর এগুলা করিনা কিন্তু এই বিষয় গুলোর প্রতি এখনো আমার দুর্বলতা বিদ্যমান........ ;) B-)) :) :P

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩

রিফাত ২০১০ বলেছেন: ভালো লাগলো দারুণ পোস্টটি।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার কথা তুলে ধরেছেন ।

ঈদ মোবারক । :)

৬| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০৬

আবু শাকিল বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপনা ।

ঈদের শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.