নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

culture and heritage activiti

কাজী চপল

সংষ্কৃতিকর্মী

কাজী চপল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাটি ও মানুষের কবি জসীম উদদীন

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭

‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে
আমাদের ছোটো গাঁয়।
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়….

এই জনপ্রিয় কবিতাটির রচয়িতা কবি জসীম উদ্দীন। তিনি জন্মেছিলেন ১ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে। কবির জন্ম নানাবাড়িতে। ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। তার পৈত্রিক ভিটা তাম্বুলখানার পাশের গ্রাম গোবিন্দপুরে। এই গোবিন্দপুরেই কবির বাল্যকাল ও কৈশোর অতিবাহিত হয়েছে। কুমার নদীর তীরে এই গোবিন্দপুর গ্রাম। এই গোবিন্দপুরেই কবি জসীম উদ্দীনের তিন পুরুষের ভিটা। জানা যায় কবির পিতা, পিতামহ ঐ অঞ্চলের প্রভাবশালী লোক ছিলেন। গ্রামীণ সমাজের রাজনীতি ও ধর্মীয় ব্যাপারে এলাকায় তাদের পরিবার দীর্ঘকাল আধিপত্য করেছে। তবে ফরিদপুর জেলা শহর থেকে একটু দূরে তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়ি। সেই তাম্বুলখানায় বর্তমানে আর কবির মামাদের কোনো উত্তরাধিকার নেই। এই গ্রামে কবি জসীম উদ্দীনের নামে সম্প্রতি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কবির পিতার নাম মৌলানা আনছার উদ্দিন মোল্লা। কবির পিতার নামে গোবিন্দপুর রেলস্টেশনের কাছে একটি হাইস্কুল আছে। কবিরা ছিলেন মোট চার ভাই। বড়ো ভাই আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন মোল্লা, সেজ ভাই নূরুউদ্দীন আহম্মদ। নূরুননাহার সাজু নামে কবির একমাত্র বোন। ১৯২১ সালে মোসলেম ভারত পত্রিকায় কবির ‘মিলন গান’ নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এই কবিতাটিই কবির প্রকাশিত প্রথম লেখা। ১৯২৫ সালে প্রগতিশীল সাহিত্য পত্রিকা কল্লোল তার বিখ্যাত কবিতা ‘কবর’ প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয়। এর প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন ‘কল্লোল’ পত্রিকার সম্পাদক জনাব দীনেশ রঞ্জন দাশ। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় তার আলোড়িত কাহিনী কাব্য ‘নকশীকাঁথার মাঠ।’ এর পর কবি এমএ পাস করেন।

১৯৩৩ সালে প্রবাদ প্রতিম পুরুষ এবং ময়মনসিংহ গীতিকার সম্পাদক ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে লাহিড়ী রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ট পদে যোগ দেন। এ বছরই তার কাব্যগ্রন্থ ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ প্রকাশিত হয়। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৪৩ সালে মহসীন উদ্দীনের মেয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রী মমতাজ-এর সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারপর থেকে মমতাজ হলেন মমতাজ জসীম উদ্দীন। তার ডাক নাম মণিমালা। ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী তাকে সম্মানসূচক ডিলিট প্রদান করে।

১৯৭৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন এবং এ বছরই কবি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কবির লাশ গোবিন্দপুরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ওখানে কবরস্থ করা হয়। গোবিন্দপুর এখন কবিতীর্থ ফরিদপুর জেলা শহর থেকে মাত্র দশ বারো টাকায় রিকশা কিংবা ভ্যান গাড়িতে যাওয়া যায়। কুমার নদীর তীরে কবির পৈতৃক ভিটা গোবিন্দপুর। আর এই গোবিন্দপুরে এবং কুমার নদীর কাদা জলে লালিত পালিত হয়েছিলেন কবি জসীম উদ্দীন। কবি শুয়ে আছেন, তার শিয়রে একটি ডালিম গাছ আছে।

কবর কবিতায় কবির সেই জনপ্রিয় লাইন….

‘ঐখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।’

কবির পাশেই আরও এগারটি কবর। কবরের বেদি ছাড়িয়ে গেলেই দক্ষিণ মুখো কবির বাড়ি। ভিটায় পাকা বাড়ি একটি, সেখানে লেখা আছে কবি ভবন। কিন্তু কবি যে ঘরে থাকতেন সে বাড়ির ভিতরে উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি চৌচালা টিনের ঘর। এই ঘরের সামনে সিঁড়ি, সিঁড়ির দু’দিকে লেবু গাছ, মাঝখানে ডালিম। একটু দূরে পেয়ারা গাছ। বাড়িতে আরও দুটো চৌচালা ঘর আছে। একটির অবস্থা একেবারেই করুণ। যে কোনো সময় ঝড়-বাতাসে ভেঙে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বাড়িতে কবির উত্তরাধিকার কেউ থাকে না। দীর্ঘ বছর ধরে এ বাড়িটি দেখাশুনা করেন ফিরোজ বানু ও তার স্বামী শাহজাহান মোল্লা। কবির পত্নী এবং ছেলেমেয়েরা মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসেন গোবিন্দপুরে। কবি সেকালে তার লেখনির মাঝে পল্লী মানুষের জীবন ও চালচিত্র, শ্রমিক দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের কথা ছাড়াও তার কবিতায় দোল খায় কুমড়োর ডগা, কচি পাতা, ছোট্টো নদীর মাঠের রাখাল, সাপুড়ের মেয়েকে নিয়ে তিনি অপূর্ব অনুপম কাব্য গাঁথা রচনা করেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেখা।
++++

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০২

কাজী চপল বলেছেন: বিজন রায় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.